Translate

বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৭

আলু কাবলী

           




                  রাস্তার উপর সারি সারি ছোট বড় দোকানের মাঝে সাদা সবুজ রঙ দিয়ে লেখা"নিরোগ প্যাথলজি সেন্টার" ৷এই প্যাথলজি ল্যাবেই কাজ করে অচিন্ত বর্মন৷ব্যস্ত রাস্তার উপর ল্যাব ৷আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে বেশীর ভাগ পরীক্ষা নিরীক্ষা অনত্র করাতে হয়৷সাধারণ রক্ত পরীক্ষা যেমন হিমোগ্লোবিন,টি.সি.ডি.সি,ই.এস.আর,ব্লাড সুগার,সোয়াপ,স্টুল,ইউরিন টেস্ট ইত্যাদি গুলো এখানেই হয়৷অন্য প্যাথলজির তুলনায় এই ল্যাবে ভিড়ও কম৷তবে সকালের দিকে ভালোই ভিড় হয় আর বিকেল পাঁচটা ছটা নাগাদ লোকে রিপোর্ট নিতে আসে৷অলস দুপুর অচিন্তের ঝিমিয়েই কাটে৷ল্যাবের সামনে একটা ফুচকায়ালা বসে৷ল্যাবের থেকে ফুচকার ঠেলায় ভিড় বেশী হয়৷অচিন্ত মাঝে মধ্যে  দাঁড়িয়ে পরে শাল পাতা হাতে নিয়ে ৷বেশ  কয়েক দিন হল অচিন্তর  ফুচকা আলুকাবলী খাওয়া হয় না৷বর্ষার সময় জল ভালো থাকেনা নানা জীবাণুর সংখ্যা বাড়ে তাই ঐ বর্ষার সময়টা শত ইচ্ছে হলেও অচিন্ত ঠেলার ছায়া মাড়ায় না৷বর্ষা পেরিয়ে শরৎ এর আগমন হয়েছে৷আকাশ বাতাসে শরৎএর হাওয়া৷কদিন ধরে  অচিন্তর মন চাইছে একটু আলুকাবলী খেতে৷কদিন ধরে কাজের চাপটাও বেড়েছে সময় বেড় করতে পারছে না৷একদিন বিকেল বেলায় এক পা দু পা করে হাঁটতে হঁটতে ঠেলার কাছে আসতে দেখে দুজন তরুনী অচিন্তকে দেখে একেঅপরের দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হাসছে তাদের হাতের শালপাতার তলা দিয়ে তেঁতুল জল গড়িয়ে পড়ছে মাটিতে৷অচিন্তকে এই এলাকার সকলে 'প্যাথোলজির লোকটা' হিসাবে চেনে৷তাই অচিন্তর কেমন একটু লজ্জা করল সে আবার ল্যাবে ফিরে গেল৷আজও তার আলুকাবলী খাওয়া হল না৷পরের দিন সকাল থেকে ল্যাবে খুব একটা ভিড় নেই ৷অচিন্ত আজ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ আজ ঠেলার সামনে যেই থাকুক আজ সে আলুকাবলী খেয়েই ছাড়বে৷ল্যাবে বসে সামনের রাস্তায় চোখ পড়তেই দেখে ফুচকায়ালা সেদ্ধ আলু গোল গোল করে কাটে তারমধ্যে লঙ্কা গুড়ো ,বিটনুন,তেঁতুল জল দিয়ে ভালো করে মেখে শালপাতায় ঠেসে ঠেসে ভরে উপর থেকে কুচনো ধনে পাতা আর লেবুর রস ছড়িয়ে দেয়৷আজ অচিন্তকে কেউ আটকাতে পারবেনা৷টক খেতে অচিন্ত বরাবর ভালোবাসে তারপর বর্ষার জন্য আলুকাবলীর সঙ্গে অনেকদিনের বিরহ আর সহ্য হচ্ছে না৷ভাবতে ভাবতে দেখে এক তন্বী সবুজ রঙের কুর্তি আর সানগ্লাস চোখে তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে৷অচিন্ত জিজ্ঞাসা করল "বলুন"৷তরুনী উত্তর দিল"আপনাদের এখান থেকে কেউ বাড়িতে রক্ত নিতে যায়৷ আমার ঠাকুমা অসুস্থ্য উনি এখানে আসতে পারবেনা"৷এই বলে তরুনী সানগ্লাস খুলতেই অচিন্ত বলল"পারোমিতা না?চিনতে পারছনা"৷তরুনীও হেসে বলল"ওমা অচিন্তদা তুমি"৷অচিন্ত পারোমিতার থেকে দুবছরের সিনিয়ার ওরা একই স্কুলে পড়ত৷অচিন্ত নিজে উদ্যোগ নিয়ে পারোমিতাদের বাড়ি গিয়ে তার ঠাকুমার রক্ত নিয়ে আসে৷রিপোর্ট পৌছেদেয় তারপর মাঝে মধ্যে ফোন করে কথা বলে দুজনে৷অচিন্তর একঘেয়ে জীবনে বসন্তের ছোয়া নিয়ে আসে পারোমিতা৷ল্যাব,সামনের রাস্তা ,ফোনের রিংটোন সবকিছুই হঠাৎ করে রোমান্টিক লাগতে থাকে অচিন্তর কারণ তার হৃদয়ে অনুপ্রবেশ করেছে পারোমিতা৷একদিন বিকেলে পারমিতা অচিন্তর ল্যাবে এসে বলল "কাল ঠাকুমার ইউরিন টেস্ট আছে একটা কন্টেনার দাও৷"অচিন্ত ড্রয়ার থেকে কন্টেনার বের করে পারোমিতার হাতে ধরিয়ে বলল"পারোমিতা আলুকাবলী খাবে?"পারোমিতা হেসে বলল"আলুকাবলী"
—"হ্যা চল না সামনের ফুচকায়ালা ব্যপক বানায় আমি ভীষন ভালোবাসি চল না"৷পারোমিতা একটু ভ্রূ কুঁচকে সামন্য  ইতস্তত  হয়ে বলল"না আমি না, তুমি খাও গো আমার আজ একটু তাড়া আছে৷"
              অচিন্তর একদিন মনে হয় মনের মধ্যে পারোমিতাকে না রেখে একবার বলেইদি যে আমার ওকে ভালোলাগে আর আমি ওর জন্য সিরিয়াস৷ফোন করে পারোমিতাকে বলে "পারোমিতা কেমন আছো"
—"ভালো আছিগো অচিন্তদা"৷
—"তোমার সঙ্গে আজ বিকেলে একটু দরকার ছিল আসতে পারবে?"
—"দেখছি "৷এই বলে পারোমিতা ফোন রাখে৷বিকেলে অচিন্তর ল্যাবে পারোমিতা কথামত আসে৷অচিন্ত বলে —"চল একটু ঘুরে আসি৷"
—"কেন তুমি তো বলেছিলে তোমার দরকার ছিল"৷
—"হ্যা বলছিলাম ,আসলে কদিন ধরে ভাবছিলাম তোমায় বলব পারোমিতা, আমার তোমায় খুব ভালোলাগে আমি তোমাকে....."পারোমিতা অচিন্তর কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বলল "আমি এখন আসছি"৷অচিন্তর সব বোঝা হয়ে গেল৷পারোমিতার মুখের অভিব্যক্তিতে অচিন্তর মুখ শুকিয়ে গেল৷
                  অন্য ল্যাব থেকে  ব্লাডরিপোর্ট  আনে শেখরদা ৷শেখরদার মেয়ের জ্বর তাই অচিন্ত ঐ রিপোর্ট আনতে বাসে উঠেছে৷খুব একটা ভিড় নেই তাই একটা সিট দেখে বসে পড়ল৷বাস ঘটিবাড়ি স্টপেজে থামতে বাসের গেটে চোখ পড়তে অচিন্ত দেখল পারোমিতা এক বান্ধবীর সঙ্গে বাসে উঠল৷দুজনের চোখিচোখি হতে পারোমিতা চোখ সরিয়ে নিল৷বাস চলছে ফাঁকা বাস তাই বারবার অচিন্তর চোখ পারোমিতার দিকেই যাচ্ছে৷পারোমিতা তার বান্ধবীকে কথা শোনাবার ছলে বলল"জানিস তো অনুষ্কা কিছু ছেলে আছে দেখবি মেয়ে দেখলে হাঁ করে থাকে আর মেয়েদের মত আলুকাবলী ফুচকা খায় আমার এসব ছেলে গুলোকে একদম অসহ্য লাগে"৷এই বলে পরের স্টপেজে ওরা দুজন নেমে গেল৷অচিন্তর ভগ্ন হৃদয়ে আরেকটু আঘাত লাগলেও সে নিজেকে সামলে সেই দিনই একগোছা ব্লাডরিপোর্ট ব্যাগে করে নিয়ে বাস থেকে নেমে সোজা গিয়ে পৌছাল ফুচকায়ালার কাছে৷তখন দুজন মহিলা শালপাতায় চুমুক দিয়ে টক জল খাচ্ছে একজন যুবতী ফাউ এর অপেক্ষায়৷অচিন্ত তাড়িতাড়ি এগিয়ে গিয়ে বলল"দাও ভাই আমায় ভালো করে আলুকাবলী মেখে দাও"আলুকাবলী হাতে নিয়ে অচিন্তর মনে হল আজ বিরহের দিন শেষ আলুকাবলী, আজ প্রানখুলে আমি তোমার স্বাদ নেব৷পারোমিতার টিপ্পনীর জন্য আমি আলুকাবলীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারব না৷

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন