Translate

বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

সস্তা মেয়ে

            

             সুপ্রিয়া সকাল থেকে বার বার জানলার সামনে দাঁড়াচ্ছে মাঝে   মাঝে দরজাটা খুলে বাইরে বেড়িয়ে একটু পায়চারী করে আবার ঘরে ঢুকে পরল৷আয়নায় নিজেকে ভালো করে দেখে চোখে মোটা করে কাজল টেনে নিয়ে বিভিন্ন কোণ থেকে মুখটা পর্যবেক্ষণ করে চুলের সামনেটা ঠিক করছে এমন সময় বাইকের পিপ্ পিপ্ শব্দ শুনে ছুটে গেল৷বাইক আরোহীকে দেখে উচ্ছল হয়ে বলল"এই আজ আসতে দেরি করলে যে"৷বাইক আরোহী বাইক থেকে নেমে বাইকের চাবি আঙুলে ঘোরাতে ঘোরাতে সুপ্রিয়াদের ঘরে ঢুকল৷সুপ্রিয়ার বয়স সতেরো কি আঠারো৷ভর যৌবনের এই বয়সে সকলেই রূপবতী হয় সুপ্রিয়াও যৌবনের রূপে ধনী৷
           এই বয়স আবার কিছু পরিবর্তন আনে সকলের জীবনে যেমন বার বার নিজেকে আয়নার সামনে দেখতে ভালোলাগে ৷এই বয়সের মেয়েরা প্রসাধনী ব্যবহার করতে শেখে তারপর বিউটি পার্লারে গিয়ে নতুন নতুন হেয়ার কাট,আই ব্রো প্লাগিং, হাতে নখ বড় করা এই সকল সখ জন্মায় যৌবনের হাত ধরে৷যৌবন মেয়েদের রূপের পরিবর্তন ঘটায় আর মেয়েরাও রূপ সচেতন হয়ে যায়৷ব্যসন দিয়ে ফেসপ্যাক তৈরী করে মুখে লাগায় চুলের জন্য মাথায় ডিম দেয়৷বাচ্চা বয়সে যেগুলো অসহ্য লাগে যৌবনের ছোঁয়ায় সেগুলো সহনীয় হয়ে যায়৷ছেলেদেরও পরিবর্তন হয় বইকি তারা শরীর সচেতন হয়ে যায় দেহ গঠণ করতে ব্যয়াম কসরত শুরু করে, পেশী প্রদর্শণ করে৷এগুলো প্রকৃতির নিয়ম৷মনের কোণায় একটা অচেনা অনুভূতি উঁকি দেয় ঐ অনুভূতি উপভোগ করতে করতে মনও স্বপ্নের ডানা মেলে পাড়ি দেয় অচেনা দিগন্তে৷এই অচেনা অনুভূতিকে পরিপক্ক হৃদয় প্রেম নামে চিহ্নিত করে৷প্রেমের আবেগে আনকোরা মন খারাপ ভালোর তফাৎটা বিচার করতে পারেনা৷অনেকেই হয়ত পারে কিন্তু সুপ্রিয়া বিচার বোধের দিকে বড্ড বেশী অপরিণত ছিল৷সুপ্রিয়ার ঐ বাইক আরোহী বিরাট বড়লোক বাড়ির ছেলে বাবা ব্যবসাদার সে একমাত্র সন্তান৷ইন্দ্রজিৎ সান্যাল৷পোশাক পরিচ্ছদ চালচলনে ইন্দ্রজিৎ কে দেখে যে কেউ ধনী পরিবারেরই বলবে কিন্তু চেহারার দিক থেকে সে একবারেই সাধারণ৷মানে বাহারী কায়দায় পোশাকের পরিবর্তে কম দামের প্যান্ট শার্ট পরলে তারদিকে হত দরিদ্রও দৃষ্টিপাত করবে না৷
             সোফায় বসে ইন্দ্রজিৎ সুপ্রিয়ার হাত টেনে পাশে বসিয়ে নিল৷দুজনে নিবিড় ভাবে একেঅপরের সংলগ্নে বসে৷সুপ্রিয়ার মা ঘরে ঢুকে একগাল হেসে বলল"ওমা ইন্দ্র কখন এলে,তোমার জন্য আজ লুচি করেছি৷"ইন্দ্র একটু বিরক্তির সুরেই বলল"না না লুচি ঠুচি খাবনা আজ সুপ্রিয়াকে নিয়ে সিনেমা দেখতে যাব"৷সুপ্রিয়া এক লাফ দিয়ে সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল—"ইন্দ্র আমায় আগে বলনি তো"৷
—"এই তো বলছি যাও যাও তৈরী হয়ে নাও"৷
       সুপ্রিয়া তাড়াহুড়ো করে মেরুন রঙে উপর সোনালী জরির কাজ করা একটা সিন্থেটিকের সালোয়ার কামিজ পরে নিল৷কিন্তু ম্যাচিং নেল পলিশ আর লিপস্টিক ছাড়া তো সুপ্রিয়ার সাজই অসম্পূর্ণ৷ওরই মধ্যে  সুপ্রিয়া সুন্দর ভাবে নেলপলিশ লাগিয়ে ফ্যানের সামনে হাত দুটো মেলে ধরল৷ইন্দ্রজিৎ অপেক্ষার পাত্র নয় বাইকে চড়ে স্টার্ট দিয়েছে৷সুপ্রিয়াও পড়ি কি মরি দৌড়ে বাইকের পেছনে চাপল৷ইন্দ্র স্পীডে বাইক চালাচ্ছে৷সুপ্রিয়া ইন্দ্রকে জড়িয়ে ধরে বলল"ইন্দ্র তোমার সঙ্গে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত আমার স্বপ্নের মতো লাগে৷তোমার বাইকটা হল রূপকথার পক্ষীরাজের ঘোরা আর তুমি আমার perfect dream man"৷সিনেমা হলে বসে সুপ্রিয়া দেখল নেল পলিশটা পুরো থেবড়ে গেছে৷এবার সিনেমা দেখায় আর কি করে মনযোগ দেয়৷নখ দিয়ে খুঁটে খুঁটে নেলপলিশ তুলতে তুলতে সিনেমার স্ক্রীনে "The End"ভেসে উঠল৷
                সুপ্রিয়ার বাবা পেশায় স্কুলের ক্লার্ক নেহাতই শান্ত নিরীহ প্রকৃতির মানুষ৷সংসারে সব দায়দায়িত্ব ভালোমন্দ উনি তার স্ত্রীর উপর দিয়ে খালাস৷স্ত্রীর মুখের উপর কোনও কথা বলার সাহসও নেই তার৷বাড়ি ফিরে মেয়ের কথা স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করায় উনি জানান"সুপ্রিয়া ইন্দ্রর সঙ্গে সিনেমা গেছে ফিরতে রাত হবে"৷পছন্দ না হলেও সব কিছু চুপ করে মেনে নেয় সুপ্রিয়ার বাবা৷
               ইন্দ্রজিৎ পুজোর শপিং করিয়ে দিয়েছে সুপ্রিয়াকে৷দামী দামী ড্রেস,জুতো,পারফিউম আরও অনেক কিছু যা ক্লার্ক বাবা কোনও দিন দিতে পারত না৷এই সকল সামগ্রীর বিনিময়ে সুপ্রিয়া নিজেকে অনেকটাই সপে দিয়েছে ইন্দ্রের কাছে৷ইন্দ্র ইচ্ছে মত সুপ্রিয়াদের বাড়িতে আসে নিজের মনোরঞ্জন আর ইন্দ্রিয় তৃপ্তির জন্য সুপ্রিয়ার শরীরকে খেলার সামগ্রীর মতো ব্যবহার করে৷সুপ্রিয়ার বড়দাদা,মা,বাবা সকলেই সবকিছু নিজ স্বার্থে মেনে নেয়৷বড় স্বার্থ বা বড় আশা বড়লোক বাড়ির ইন্দ্র সুপ্রিয়াকে বিয়ে করে নিয়ে যাবে৷
              শপিং এর প্যাকেট খুলে খুলে সুপ্রিয়া আনন্দের সঙ্গে সব ড্রেস গুলো একে একে দেখছে ,আয়নার সামনে নিজের গায়ে ধরছে ঠিক এমন সময় পাড়ার ছোট্ট মেয়ে চুমকি এসে হাজির৷
"কি করছ সুপ্রিয়া দি"এই বলে সে ঘরে ঢুকল৷চুমকি ইন্দ্রজিৎকেও ভালোভাবে চেনে৷বছর চারের চুমকিকে ইন্দ্র বলল"এই চুমকি একটা খেলা দেখবি"৷চুমকি আনন্দের সঙ্গে বলল "কি খেলা দেখব দেখব"৷ইন্দ্র নতুন জুতোর বাক্স থেকে একটা চকচকে হাই হিল ল্যডিজ স্যান্ডেল বের করে সুপ্রিয়ার ঠোঁটে হালকা করে আঘাত করল৷তারপর জোড়ে আরও জোড়ে হাসতে হাসতে বলতে থাকল"দেখ মজাটা দেখ"৷সুপ্রিয়ার ঠোঁট ব্যাথায় লাল হয়ে গেল তবু 'হি হি হি'করে হেসে ও ইন্দ্রর খেলায় অংশ নিল কোনও প্রতিবাদ করল না৷ইন্দ্রজিৎ চুমকির দিকে তাকিয়ে বলল"কিরে চুমকি খেলাটা মজার না"৷
                দিনের পর দিন এভাবেই চলে ওদের জীবন৷তারপর ধীরে ধীরে ইন্দ্রজিতের আসা যাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়৷চারিপাশের লোকজনের আলোচনার বস্তু হয়ে দাঁড়ায় সুপ্রিয়া৷পরিস্থিতির অবনতি দেখে  সুপ্রিয়ার মা ইন্দ্রজিৎকে ফোনে অনেক অনুরোধ করে বাড়ি ডাকে৷ইন্দ্র বাড়ি এলে সুপ্রিয়ার মা বলে"ইন্দ্র এবার তুমি সুপ্রিয়াকে বিয়ে কর নানা রকম কথা কানে আসছে মেয়েটার বদনাম হয়ে যাচ্ছে"৷ইন্দ্র তীক্ষ্ণ ভাবে হেসে বলল"বিয়ে,আমি তো কোনও দিন বলিনি যে আমি সুপ্রিয়াকে বিয়ে করব৷"সুপ্রিয়ার মা হতচকিত হয়ে বলে"একি বলছ ইন্দ্র,আমি সুপ্রিয়াকে তোমার সঙ্গে খোলামেলা ভাবে মিশতে দিয়েছি কারণ আমি তোমায় বিশ্বাস করেছিলাম তুমি নিশ্চই...."সুপ্রিয়ার মায়ের কথার মাঝেই ইন্দ্র উঠে দাঁড়াল৷"আমি চললাম মাসিমা৷আমার অনেক সখের মধ্যে সুপ্রিয়া একটা সখ ছিল৷আর ওর মত সস্তা মেয়েকে বিয়ে করার কথা আমি কোনও দিনও ভাবিনি"৷ইন্দ্র ঘর থেকে বেড়তেই দরজার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল সুপ্রিয়া৷ইন্দ্রর হাতটা ধরে বলল"ইন্দ্র তুমি আমায় কখনও ভালোবাসনি"৷চোখের তলায় কালি রোগাটে চেহারার সুপ্রিয়ার দুচোখ ভর্তি জল ছাড়া কিছুই ছিলনা সেদিন৷ইন্দ্র বিদ্রূপাত্মক ভাবে তাকিয়ে বলল"কি চেহারা করেছ গো"পিছন ঘুরে সুপ্রিয়ার মাকে বলল"ওর বিয়ের ব্যবস্থা করুন আমি খরচ দিয়ে দেব৷"এই বলে ইন্দ্র নির্বিকারে বাইকে চেপে তীব্র গতিতে সুপ্রিয়াদের বাড়ি থেকে চলে গেল৷ইন্দ্র চলে গেল সুপ্রিয়াকে ছেড়ে ইন্দ্রর জীবনে আজ সুপ্রিয়ার কোনও স্থান নেই৷
              অতি সহজে যে জিনিস আমরা পেয়ে যাই তার প্রতি কদর বা আদর কোনওটাই থাকেনা আমাদের৷তা সাফল্য হোক,অর্থ হোক বা অতি সামান্য সেলের জিনিস হোক৷সস্তার জিনিস যা স্বল্প মূল্যে পাওয়া যায় তার আকর্ষনে আমরা সবাই যাই কিন্তু যত্ন করে রাখি কষ্ট করে পাওয়া দামি জিনিসটা৷সুপ্রিয়াও ইন্দ্রজিতের কাছে সস্তার ব্যবহারের দ্রব্য হয়ে গিয়েছিল যাকে ইন্দ্র ব্যবহার করে গেল কিন্তু যখন সম্মান দেওয়ার সময় এল তখন পিঠ দেখিয়ে চলে গেল৷সময়ের গতিতে এই সকল ঘটনা অনেক পিছিয়ে যাবে৷সুপ্রিয়ার জীবনে ইন্দ্রর আধিপত্য এক সময় অতীত হয়ে যাবে৷ইন্দ্রও হয়ত কোনও দেবী মূর্তির সম্মুখে হাত জোড় করে কৃপাপ্রার্থী হবে৷কিন্তু অতি সহজলভ্য কোনও কিছুই কি বাস্তবে সম্মান পায় নাকি শুধুই সস্তা হিসাবেই থেকে যায়৷


শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ডায়েরি

         
             "কাল রাত অবধি আমার ডায়েরিটা এই শোকেজের উপর ছিল আর এখন উধাও"৷এই বলে ভায়েরির খোঁজে বাড়ির সকলকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলল মুকুল দে৷মেয়ে বৌ খানিক এদিক ওদিক খুঁজে আবার যে যার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল৷এক সময় রেলের কর্মী ছিলেন মুকুল দে এখন অবসরপ্রাপ্ত৷অবসরের কয়েক বছর আগের থেকে উনি ডায়েরি লেখা অভ্যেস করেছেন৷তাতে অবশ্য দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপ লেখেন না ঐ ডায়েরিতে রোজকার বাজার দোকানের খরচের হিসেব নিকেশ লেখেন উনি৷খুঁজতে খুঁজতে হাঁটু গেড়ে বসে নিচু হয়ে খাটের তলা  শোকেজের তলা ভালো করে দেখলেন না..কোথায় গেল৷এমন সময় পাড়ার রাস্তা দিয়ে ঠেলা গাড়ি করে"সবজি...সবজি .."হাকতে হাকতে সবজিয়ালা উপস্থিত৷ডায়েরি খোঁজাবন্ধ করে  জানলায় উঁকি দিয়ে সবজিয়ালাকে জিঞ্জেস করলেন"পটল কত করে আর ঢেঁড়স কত করে দিচ্ছ?"
—"বাবু পটল ৩০ টাকা আর ঢেঁড়স ৪০"৷সবজির দর পোশাল না৷অাজ সকালে উনি বাজারে গিয়েছিলেন ব্যাগ ভর্তি বাজির করেছেন৷তাই পাড়ার সবজির দরের সঙ্গে বাজারের দরের তফাৎটা দেখে নিলেন৷আজ সকালে ২কেজির একটা কাতলা মাছ কিনেছেন স্ত্রী শর্মিলাকে বাজার থেকে ফিরে বলেছিলেন"আজ জিরের পাতলা ঝোল করো কদিন ধরে গ্যাস অম্বলের প্রকোপটা বেড়েছে"৷সকালে বাজারের হিসেব লিখতে গিয়েই ডায়েরির খোঁজ৷এরই মধ্যে পায়েল "মা আসছি"বলে কম্পিউটার ক্লাসের জন্য বেড়ল৷মুকুল নিজের মনে মনে বলতে লাগল মেয়েটাও তেদড় হয়েছে৷ছোটবেলায় বাবা বাবা করে ঘুরত এখন মায়ের ভক্ত হয়েছে৷বাপের কোনও কাজে আসেনা৷কাজের বৌ লতা ঝাঁটা হাতে ঘরে ঢুকে ফ্যানের সুইচটা বন্ধ করল৷মুকুল লতাকে বলল"ভালো করে ঝাঁটা দিয়ে সব তলা গুলো দেখতো একটা ডায়েরি পাচ্ছি না"লতা ঘরির কাঁটার মত ঝাঁটাটা এপাশ থেকে ওপাশ ঘুরিয়ে বলল"কই কিছু নেই তো"৷
             ডায়েরি খুঁজতে খুঁজতে পুরনো খবরের কাগজের মধ্যে থেকে কতগুলো পুরনো ডায়েরি পেল৷পটল ১০টাকা কেজি ঢেঁড়স ১০৷বাবা দিনে দিনে দাম বাড়ছে৷ডায়েরিটা পাওয়া গেলনা৷বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুকুলকে কাবু করেছে হাইব্লাড প্রেসার আর স্পনডিলোসিস৷মুকুলের আবার হোমিওপ্যাথিতে খুব বিশ্বাস৷ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখল ঔষুধ খাওয়ার সময় হয়েগেছে কাপে অল্প জল ঢেলে ঔষুধের শিশি থেকে ফোঁটা গুনে গুনে ঔষুধ ফেলে খেয়ে নিল তারপর শিশি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখল হোমিওপ্যাথি ওষুধের দামও দিনে দিনে বাড়ছে৷এই প্রেসারের ঔষুধের দাম ছিল৬৮টাকা লাফিয়ে লাফিয়ে দামবেড়ে হল ৮৫টাক৷খাটের উপর শুয়ে গড়াতে বেশ ভালো লাগে৷বেলা হয়েছে শর্মিলা এসে বলল"চান সেরে নাও আমার রান্না হয়ে গেছে"
—"বুঝলে ডায়েরিটা পেলাম না"৷শর্মিলা বিরক্ত হয়ে বলল"উফ্ কি করবে অত হিসাব করে"৷মুকুল অবসরের পর যা টাকা পেয়েছে তাতে একটা ২বেডরুম ফ্ল্যাট কিনেছে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছে৷ছোটজন এখনও পড়ছে৷তাদের সকলের ভবিষ্যত এখন পেনশন আর পোস্ট অফিসের এম.আই.এস এর উপর নির্ভর তার উপর বাজার দর আগুন৷
             যতই বেলা বাড়ুক মুকুলের স্নান করতে বড় আলস্য আসে৷মনে হয় সবথেকে পরিশ্রমের কাজ৷জানলায় উঁকি দিয়ে দেখে দুটো হুলো বিড়াল ম্যাও ম্যাও করে গজড়াচ্ছে৷দুজনই গা ফুলিয়ে লেজ ফুলিয়ে ঢোল৷সামনের বাড়ি থেকে কে বেশ জল ছুড়তেই দুজন পাঁচিল টপকে দুদিকে পালাল৷শর্মিলা পিঠে হাত দিয়ে ডেকে বলল"চোখের সামনে জিনিস থাকলেও দেখতে পাও না"৷এই বলে ডায়েরিটা মুকুলের সামনে ধরল৷

মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

অযথা দেরি

             "কি গো টিয়ার চব্বিশ বছর বয়স হল সম্বন্ধ না খুজলে পাত্র এমনি এমনি পাবে?"গিন্নীর প্রশ্নে একটু চিন্তিত হয়ে হাতের খবরের কাগজটা পাশে টেবিলে রেখে সোফায় গা হেলিয়ে অমর মিত্র বলে উঠল"পাত্র সন্ধানের উপায় তো অনেক আছে কিন্তু কোন উপায়টাকে বাছব তাই ভাবছি"৷গিন্নী গামছা দিয়ে মাথার চুল মুছতে মুছতে বলল"কেন খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দাও না"৷সেই মত বিজ্ঞাপন দেওয়া হল৷বিজ্ঞাপনের ফলও ভালোএল৷ডজন ডজন চিঠি আসতে শুরু করল৷ঐ ডজন থেকে কিছু বাছাই চিঠির মধ্যে একজন ব্যাঙ্ক কর্মীর সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ হল৷
             অমর মিত্র চিঠিতে দেওয়া কনট্যাক্ট নম্বর থেকে মোবাইলে ডায়েল করতেই খানিক্ষণ"ওম জয় জগদীশ হরে..."বাজার পর একজন গম্ভীর সুরে হ্যালো বললেন৷অমর মিত্র এপাশ থেকে বললেন"আমি শ্রীরামপুর থেকে অমর মিত্র বলছি সম্বন্ধের ব্যাপারে ফোন করেছিলাম"৷
—"হ্যা বলুন"
—"তা এখানে শ্রীরামপুরে একদিন আসুন পাত্রী দেখে যান আপনার ছেলের বায়ো ডাটা আমাদের পছন্দ হয়েছে"৷
—"কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিল আপনারা আগে আমাদের বাড়ি মানে ব্যারাকপুর ঘুরে যান"৷
         ফোন রেখে অমর গান্নীকে বলে"হ্যা গো এতো দেখছি উল্টো নিয়ম,পাত্র পক্ষই তো আগে আসে"৷গিন্নী বেশী গভীর চিন্তায় না গিয়ে বললেন"আজ কাল দিন বদলেছে ঘুরেই এসনা"৷অমর তার শালা আর ছোট মেয়ে তিতাসকে নিয়ে ব্যারাকপুর উপস্থিত হয়৷বড় একতলা বাড়ি সুন্দর ভাবে গোছ গাছ করা দামী ফার্ণিচার দিয়ে সাজানো৷ছিমছাম পরিবার ৷ভদ্রলোক একসময় খুবই ভালো চাকরি করতেন৷ভদ্রলোক এবং ভদ্রমহিলা দুজনেই অমর মিত্রের একটা ছোট খাট ইন্টারভিউ নিয়ে নিলেন৷তিতাস অনেক চেষ্টা করেও পাত্রের ঝলক পেলনা ড্রয়িং রুমে একটা ছবিও নেই৷রবিবার পাত্রের ছুটি তাই সেই দিন পাত্রী দেখতে আসার দিন স্থির হল৷রবিবার সকাল থেকেই টিয়াদের বাড়িতে নানা প্রস্থুতি চলছে৷পর্দা বদলান হল৷সযত্নে তুলে রাখা বোনচায়নার ফুলদানীটা বেড়িয়ে পড়েছে৷ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য তাজা রজনীগন্ধা আর গোলাপ ঐ ফুলদানীর শোভা আরও বাড়িয়ে তুলেছে৷সোফার লাল ভেলভেট কাভার পরাতে পরাতে অমিতকে যথেষ্ট  গলদঘর্ম হতে হয়৷সবকিছু ঠিক ঠাক এবার পাত্রের অপেক্ষা৷টিয়াকে খুবই মিষ্টি দেখতে তারপর ইংরাজীতে এম.এ করেছে৷কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে অতিথিদের আগমন হল৷তিতাস পাত্র দেখে ছুট্টে গিয়ে টিয়াকে বলল"দিদি কি দেখতেরে যেমন কালো তেমন মোটা তুই না করে দিবি "৷টিয়া কানে দুল পরতে পরতে বলল"রিয়েল লাইফে এরকমই হয় তিতাস,বলিউডের সলমান সম্বন্ধ দেখতে আসে না"৷টিয়া আর তিতাস হালে 'হাম্ দিল দ্যে চুকে সনম'দেখেছে৷তিতাস হতাশ ভাবে বলল"তবে আমার বিয়ে করে কাজ নেই ভগবান আমায় বাঁচিও"৷দেখাশোনা চলছে ৷সুশ্রী টিয়াকে দেখে পাত্র বেশীক্ষণ আবেগ চেপে রাখতে পারল না৷প্রানখুলে অফিস বাড়ির সব কথা বলতে বলতে ছেলেবেলার এক ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলল"আমি দুষ্টামি করে দাদুর তাড়া খেয়ে মামাবাড়ির গরুঘরে লুকিয়ে পরতাম"বলে একাই হাহা করে হাসতে থাকে তাকে সঙ্গ দিতে সবাই একে একে হি হি হা হা করে হাসে৷তারপর বেশ কিছুদিন গেল কিন্তু পাত্র পক্ষের থেকে কোনও খবর পাওয়া গেল না হয়ত পাত্র পক্ষ বলে তারা নিজেদের প্রয়োজনাতিরিক্ত গুরুত্ব দিচ্ছিল৷তিতাস হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে দিদির তো বোধ কম আছে ঐ হাতির ছানা যেন আর ফোন না করে সে আবার গোয়াল ঘরকে গরুঘর বলে৷অমরেরও তেমন পাত্র পছন্দ হয়নি তাই সে অন্যত্র মেয়ের সম্বন্ধ স্থির করে৷সুদর্শণ অবস্থাপন্ন পাত্রের সঙ্গে টিয়ার বিয়ে হয়ে যায়৷অষ্টমঙ্গলার দিন বাড়িতে মেয়ে জামাই এসেছে অমরের মোবাইল বেজে ওঠে৷হ্যালো বলতেই ফোনের ওপাশ থেকে গম্ভীর সুরে ভদ্রলোক বললেন"কি হল আপনারা তো আর যোগাযোগ করলেন না"৷অমর বুঝতে পারে ইনি সেই ভদ্রলোক৷"সে তো আপনাদের করার কথা ছিল৷আমরা ভাবলাম আপনাদের পাত্রী পছন্দ হয়নি তাই অন্যত্র সম্বন্ধ করলাম"৷ভদ্রলোক হতচকিত হয়ে সামান্য উত্তেজিত হয়ে বললেন"সে কি মশাই আমরা তো আপনাদের অপেক্ষায় ছিলাম,আমার ছেলেকে নিশ্চই আপনাদের ভালোলেগেছে তাই আমরা যথেষ্ট আশাবাদী ছিলাম"৷অমর শান্ত ভাবে বলল"কিন্তু মেয়ের তো বিয়ে হয়ে গেছে দাদা bad luck আপনি অযথা দেরি করলেন৷"

সিদ্ধান্ত

           


          আজ সকালে ঘুম থেকে উঠতে খুব দেরি হয়ে গেছে৷কাল রাতে  জোড় বৃষ্টি এসেছিল ঘুমটাও খুব গাঢ় হয়েছিল৷আয়নার সামনে ঝুঁকে চোখে eye liner টানতে টানতে মহুয়া বলে উঠল "মা টিফিন প্যাক করে দাও আমি এক্ষুণি বেড়ব৷রিক্সা ডেকে উঠে পরল মহুয়া৷আজ খুব দেরি হয়ে গেছে আজ আর বাসের জন্য দাঁড়াতে পারব না ট্যাক্সি করেই চলে যাব৷হাতে চক ডাস্টার বোর্ডে ছবি এঁকে ভঙ্গিল পর্বত বোঝাচ্ছে মহুয়া ৷সব ছাত্রীরা মহুয়াকে খুব মেনে চলে৷মহুয়া তার প্রত্যেক ছাত্রীকে যত্নের সঙ্গে পড়া বোঝায় কখনও বিরক্ত হয় না৷ধীর স্থির ধৈর্যশীল চরিত্রের মালিক  হল মহুয়া রায়৷স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাস স্ট্যান্ডে একজন ভদ্রলোক প্রায়ই দাঁড়িয়ে থাকেন৷মহুয়া ৫৬ নম্বর ধরে চলে যায়৷ঐ ভদ্রলোক কোন বাসে ওঠে তা মহুয়া জানেনা প্রায়দিনই লক্ষ্য করেছে ভদ্রলোক মহুয়ার দিকে একবার তো তাকাবেনই ৷বেশী বয়স না ভদ্রলোকের লম্বা ছিপ ছিপে চেহারা কিন্তু মুখটা কেমন তা দেখেনি মহুয়া ৷একজন অচেনা পুরুষ মানুষের মুখের দিকে হাঁ করে দেখতে কেমন যেন বাধো বাধো লাগে৷তবে ফর্সা গয়ের রং গোঁফ আছে৷বাড়িতে ফিরে আর কোনও কাজ করতে ভালো লাগেনা৷সাড়ী ছেড়ে গা ধুয়ে সোজা বিছানায়৷কানে হেডফোন লাগিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে শুনতে কখন যে চোখ লেগে যায় টেরই পায়না৷
              সুলেখা মহুয়াদের স্কুলে নতুন বাংলার টিচার৷আজ মহুয়া আর সুলেখা একসঙ্গে বাড়ি ফিরবে৷বাসস্ট্যান্ডে রোজকার মত সেই ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে৷৫৬ নম্বরে আজ সুলেখা আর মহুয়া উঠে পরল৷সুলেখা বলল"মহুয়া বাসস্ট্যান্ডের ঐ ভদ্রলোক তোমায় দেখছিল৷"মহুয়া লজ্জা পেয়ে বলল "দ্যাত্ কি যে বল সুলেখাদি"৷একদিন হঠাৎই বাসস্ট্যান্ডের অচেনা ভদ্রলোক মহুয়ার কাছে এসে এক নিশ্বাসে বলতে লাগল"নমস্কার,আমি আপনাকে রোজ দেখি আমার নাম কার্তিক ঘোষ আমি ট্রেজারীতে ক্লার্কের চাকরি করি আমার আপনাকে খুব ভালো লাগে"এই বলে পকেট থেকে একটা কাগজে ফোন নাম্বার লিখে মহুয়ার দিকে এগিয়ে বলে "এটা আমার contact number"৷এরপর থেকে বাসস্ট্যান্ডে তাদের দেখা হলেই হাসির বিনিময় কিছু আলাপচারিতা তারপর কথা গল্প বাস মিস হয়ে যাওয়া এবং হোয়াটসআপ ফেসবুকের মাধ্যমে বন্ধুত্ব তারপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে৷এদিকে মা তো সব টের পায়৷একদিন জিঞ্জাসা করলেন"মৌ তোর বাড়ি ফিরতে প্রায়ই দেরি হয় কেন বলত"৷মহুয়াকে বাড়িতে মৌ নামেই ডাকা হয়৷মৌ একটু ইতস্তত করে বলে উঠল"কই দেরি না তো"৷তারপর খানিক সামলে"মা আমি একজনকে পছন্দ করি তুমি আর বাবা একবার দেখা করবে ওর সঙ্গে"৷কার্তিক তার বাবা মার সঙ্গে চলে আসে মহুয়ার বাড়ি৷মহুয়ার মাথায়  ঘন মোটা চুল কপালটা ছোট্টো মোটা মোটা ভ্রূ৷হাতে পায়ে লোমের আধিক্য একটু বেশী৷ফর্সা গায়ের রঙে হয়ত একটু বেশী লোমশ বলে মনে হয়৷মহুয়াকে দেখে কার্তিকের মা বললেন"আজ কাল ছেলে মেয়েরা নিজেই দেখাশোনা করে নিচ্ছে আমরা তো কিছুই নই৷তবে মেয়েদের গায়ে এমন লোম কিন্তু ঠিক লক্ষ্মীমন্ত লাগে না৷"মহুয়া বাবার অমতেই জেদ করেই কার্তিককে বিয়ে করে৷
               মহুয়া চাকরির সঙ্গে সংসার ভালোই সামঞ্জস্য করে চলে৷ব্যাগ ভর্তি বাজার করে কলিং বেল বাজাতে কার্তিক দরজা খুলেই প্রশ্ন করে"রিক্সার হর্ণের আওয়াজ পেলাম তুমি কি রিক্সা করে এলে নাকি?"মহুয়া ব্যাগ বোঝাই বাজার নিয়ে ঘরে ঢুকে আচল দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে বলল"হ্যা গো এত বোঝা"৷সঙ্গে সঙ্গে কার্তিক গম্ভীর সুরে বলল"এসব আর  হবেনা রিক্সায় পয়সা নষ্ট আমি বরদাস্ত করব না"৷মহুয়া যেন প্রথম একটা হোঁচট খেল৷বিয়ের কয়েকদিন পরই মহুয়া দেখে কার্তিকের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আছে অথচ ভালোমন্দ খাওয়া চোখের সামনে দেখলে কোনও সময়ই সংযম করতে পারেনা তাই স্বামীর স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে সেও পাতলা ঝোল ভাত খেয়েই থাকে৷দুটো ছেলে মেয়ে হয়ে গেছে তারাও বাবার ভালো স্বাস্থ্যের জন্য লুচির বায়না করতে পারেনা৷একদিন লুচি করার অপরাধে কার্তিক সব খাবার ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিল তার সঙ্গে তুমুল অশান্তিও করে৷মহুয়া রিক্সা করলে বাড়ির সামনে দাঁড় করায় না দূরে রিক্সা ছেড়ে বাকি পথ হেঁটে বাড়ি আসে৷কার্তিক জানলে আবার অশান্তি করবে৷পুজোর ছুটিতে সবাই মিলে পুরি বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান হয়৷অনেকদিন পর বাইরের হাওয়ায় যদি রোজকার অশান্তি থেকে কিছুদিন ছুটি পাওয়া যায় এই আশা নিয়ে ছেলে মেয়ের হাত ধরে ট্রেনে উঠে পরল মহুয়া৷হোটেলের রুমে ভোর বেলায় ঘুমন্ত কার্তিকের মাথার আলতো করে  হাত বুলিয়ে  কানের কাছে আস্তে করে মহুয়া বলল"শুনছো চলনা এক সঙ্গে sun rise দেখে আসি"৷কার্তিক মুখটা বিরক্ত করে ওপাশ ফিরে শুয়ে পরল৷দুপুর বেলা ছেলে মেয়েদের পছন্দের খাবার অর্ডার করে মহুয়া হঠাৎ দেখে একজন অপরিচিত মহিলার সঙ্গে কার্তিক খুব সাবলিল ভাবে কথা বলছে যেন অনেক দিনের চেনা৷মহুয়া কাছে গিয়ে জিজ্ঞাস করল "উনি কে গো"কার্তিক খোশ মেজাজে বলল"ও সুস্মিতা এখানেই আলাপ হল শোন আমি কাল ওর সঙ্গে কোনারক যাচ্ছি৷৷"মহুয়া যেন এবার একটা জোড়ে ধাক্কা খেল৷বাড়ি ফেরার সময় ট্রেনে কলেজের বন্ধু দেবরাজের সঙ্গে দেখা হল মহুয়ার৷"আরে দেব কেমন আছিস কত বছর পর দেখা"৷অনেক দিন পর পুরনো বন্ধুকে দেখে পুরনো দিনে ফিরে গিয়েছিল মহুয়া৷প্রাণখুলে হেসেছিল সেদিন৷বাড়ি ফিরতেই কার্তিক সব কিছু ছুড়ে ছুড়ে ফেলছে"ট্রেনে ঐ বজ্জাত লোকটার সঙ্গে অত হাসা হাসি করছিলে কেন এই তোমার চরিত্র "বলে দাঁত মুখ খিঁচিয়ে ওঠে৷মহুয়া মাথা ঠান্ডা রাখতে না পেরে চিৎকার করে বলে"চরিত্র..চরিত্রের সার্টিফিকেট তুমি দেবে"৷প্রথমবার মহুয়ার কাছ থেকে জবাব শুনে রাগে কার্তিক মহুয়ার গালে সজড়ে এক থাপ্পড় মাড়ে৷ছোট মেয়েটা ভয়ে কেঁদে ওঠে৷মহুয়া স্তম্ভিত হয়ে খাটে বসে পড়ে৷ছেলে মেয়ের প্রতি কুপ্রভাব পরবে ভেবে মহুয়া চুপ হয়ে যায়৷
            কার দোষ আমার?আমি জেদ করে এই লোকটাকে বিয়ে করেছিলাম৷আমি আমার সুন্দর জীবনটাকে নিজে হাতে তছ নছ করলাম৷এখন স্কুলের মেয়েদেরও আগের মত গুছিয়ে পড়াতে পারিনা৷একটা প্রশ্ন কেউ দুবার জিজ্ঞাস করলেআমি বিরক্ত হই৷স্কুল থেকে বাড়ি ,বাড়িতে এসে অমানুষিক পরিশ্রম করি রিক্সার পয়সা বাঁচাই৷আমি বদলে যাচ্ছি,আমি ফুরিয়ে যাচ্ছি,শুধু এই লোকটার জন্য?এই অজস্র চিন্তায় মাথাটা ভার হয়ে আসে মহুয়ার৷হঠাৎ কলিং বেল বাজে দর্জা খুলে দেখে"বাবা এস এস ভর দুপুরে এত রোদে কেন এলে বাবা৷"মহুয়ার বাবার চোখ মুখ শুকনো বললেন"আমি retire করেছি পেনশন নেই কিন্তু কষ্টে শিষ্টে তোর মায়ের আর আমার খরচ চালাবার মত আমার ক্ষমতা আছে রে মৌ তাই তুই মাস গেলে তোর মায়ের হাতে আর খরচের টাকা দিস না"৷"কেন বাবা হঠাৎ এমন কথা কেন বলছ আমার এমন কথা শুনলে বড় কষ্ট হয়৷"মহুয়ার বাবা সেদিন জল পর্যন্ত না খেয়ে চলে যায়৷পরে মহুয়া জানতে পারে কার্তিক ওদের বাড়িতে গিয়ে টাকা পয়সার ব্যাপারে খুব চিৎকার চেঁচামিচি করেছে এমনকি পাড়ার লোক জড়ো হয়ে গিয়েছিল৷
               স্কুলে সুলেখাদি মহুয়াকে বলে"কিরে মহুয়া কেমন শুকনো দেখাচ্ছে শরীর খারাপ৷" "সুলেখাদি আজ তোমার সঙ্গে যাব মায়ের সঙ্গে অনেক দিন দেখা করিনি৷"বাসে বসে মহুয়া সুলেখাকে বলে"সুলেখাদি আমি বোধ হয় কার্তিকের সঙ্গে সম্পর্কটা টানতে পারব না৷এই বলে হঠাৎ বাসের জানলার দিকে চোখ পড়ে, দেখে ফুটপাথের ঝুপড়িতে এক কম বয়সী স্ত্রীলোক চিৎকার করে ঝগড়া করছে আর তার স্বামীকে বার বার ধাক্কা দিয়ে অনর্গল গালাগাল দিয়ে যাচ্ছে আসে পাশের লোকজন সবাই ঐ স্ত্রীলোককেই সমর্থন করছে৷ট্রাফিকের জন্য বাসটা ক্ষানিকক্ষন দাঁড়িয়েছিল তাই এ দৃশ্য দেখল মহুয়া আর সুলেখা৷মহুয়া বলতে লাগল— "ও যখন আমার বাবা মা কে অপমান করেছে তখন ওর সঙ্গে থাকা মানে আমি আমার রুচী শিক্ষা সংস্কার সব কিছুর অপমান করছি৷" —"বোকামি করিসনা মহুয়া তুই ব্যাঙ্কে হোম লোন নিয়ে বাড়ি করলি তাও আবার কার্তিকের নামে ৷এখন বলছিস আলাদা হবি৷"
— "কেন সুলেখাদি ঐ ফুটপাথের ঝুপড়ির মেয়েটার যদি সাহস থাকে তবে আমার কেন থাকবে না৷"
—"আরে ও তো লেখা পড়া জানেনা একটা ছোটলোকের সঙ্গে তুই নিজেকে গুলোচ্ছিস৷"
—"হ্যা গো সুলাখাদি ঐ মেয়েটা অক্ষর চেনেনা কিন্তু ঠিক বেঠিক জানে প্রতিবাদ করতে জানে বিচার পেতে জানে"৷
           সকালবেলা ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে মহুয়া কার্তিকের সামনে ধরে৷খবরের কাগজের শেয়ার বাজারের খবরে মগ্ন কার্তিক খবরের কাগজ থেকে চোখ সরিয়ে জিজ্ঞাস করল"কি এটা"মহুয়া একটা বড় নিশ্বাস ফেলে বলল"আমি সই করে দিয়েছি তুমি সই করলে ডিভোর্সটা মিউচুয়ালী হয়ে যাবে ৷না হলে কোর্টে গেলে বৃথা সময় নষ্ট হবে৷"কার্তিক ঔদ্ধত্য হয়ে বলে"তোমার খুব সাহস হয়েছে আমায় ডিভোর্স দেবে"৷মহুয়া আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলে "সাবধান"রাগে অপমানে খেঁকিয়ে বলে" আমি টাকা পয়সা খোরপোশ কিচ্ছু দেব না"৷মহুয়া তাচ্ছাল্যর সঙ্গে হেসে বলল"তোমার মত হা ঘরের ছেলে দেবে আমায় টাকা পয়সা এই বাড়িটা আমি তোমায় তোমার আশ্রয় হিসাবে দান করে গেলাম৷"এই বলে দুই ছেলে মেয়ের হাত ধরে বেরিয়ে গেল মহুয়া৷
           সকালবেলা  ঠাণ্ডা একটা হাত মহুয়ার কপাল স্পর্শ করল৷"মৌ আজ ঘুম থেকে উঠতে দেরি করলি মা"৷মহুয়া ওর মায়ের হাতে চুমু খেয়ে বলল"না মা এত দিন পর আমি ঠিক সময়ে উঠেছি"৷

পুরনো দিন

         


            অনেকদিন পর এদিকে এলাম হ্যা প্রায় দশ বারো বছর তো হবেই৷ফুটপাথের উপর হাঁটতে হাঁটতে প্যান্টের পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট ধরাল বিবেক৷সিগারেটে টান দিয়ে ধুয়ো ছাড়তে  ছাড়তে চারিদিকটা দেখতে বেশ লাগছে৷একেবারে অামূল পরিবর্তন হয়েছে রাস্তা ঘাট দোকান পাট সব বদলে গেছে৷আজ থেকে দশ বারো বছর আগে বিবেক এই রাস্তা দিয়ে কত গেছে তখন সে কলেজ স্টুডেন্ট৷সামনেই কলেজ একটু এগিয়ে কলেজের সামনে যেতেই মনে পরে গেল পুরোন সব স্মৃতি৷কলেজটা নতুন রঙ হয়েছে গেটের সামনে পড়ুয়াদের ভিড়৷কলেজের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে একটা সোজা রাস্তা এই রাস্তা ধরে আবার মেন রোডে ওঠা যায়৷মেন রোডে উঠে ফুটপাথ ধরে বিবেক আবার হাঁটতে লাগল৷ফুটপাথের পাশে একটা চাউমিনের ঠেলা ছিল বিবেক আর অর্পিতা এখানে অনেকবার এসেছে৷ঠেলা এখন দোকানের রূপ নিয়েছে৷এই দোকানের বেঞ্চে বসে বিবেক বলল দাও ভাই এক প্লেট চাউমিন৷অনেক কিছু বদলে গেছে ঠেলা দোকান হয়েছে ছোট দোকানগুলো বড়  হয়েছে৷পুরনো ইঁট বার করা একটা পেল্লাই বাড়ি ছিল সামনের গলিতে সেটা এখন পাঁচতলা ফ্ল্যাট হয়ে গেছে এখন তো প্রোমোটারের যুগ চলছে৷দোকানদার চাউমিনের প্লেটে টমেটো সস ঢেলে বিবেকের হাতে ধরাল এক চামচ চাউমিন মুখে তুলে বিবেকের হঠাৎ মনে পরে গেল অর্পিতা আর বিবেক প্রায়ই আসত এখানে সেই সময় পকেটে বেশী পয়সা থাকতনা তাই এক প্লেটে দুজনে ভাগাভাগি করে খেত৷অর্পিতা খুব ফুচকা খেতে ভালোবাসত ওকে খুশী করতে বিবেকও দাঁড়িয়ে পরত ফুচকার লাইনে৷ এখন এখানকার পরিবেশটা অন্যরকম হয়েগেছে সবকিছুর সঙ্গে সঙ্গে অর্পিতার সঙ্গে সম্পর্কটাও বদলে গেছে এখন কোনও যোগাযোগ নেই ৷বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পারা গেছে অর্পিতার বিয়ে হয়ে গেছে৷এখন নাকি কেরালাতে থাকে৷বিবেকও বিবাহিত৷বিবেকের হঠাৎ মনে পরে ফুটপাথের ওপারে একটা চায়ের গুমটি ছিল আর ওখানে একটা পাগল বসে থাকত৷যেই চা খেতে আসত সে পাগলটাকে অর্ধেক খাওয়া সিগারেট দিলে পাগল আপন মনে টান দিত৷চাউমিনের দাম মিটিয়ে বিবেক উঠল চা এর গুমটির দিকে৷গুমটির থেকে পাগলের খোজ করাটাই অবশ্য  আসল উদ্দেশ্য৷কালো জীর্ণ চেহারা বড় বড় চুল খোচা খোচা দাড়ি মাটি ভর্তি বড় নখ৷অর্পিতা বেজায় ভয় পেত৷ ওকে দেখে বিবেকের হাতটা চেপে ধরত৷অল্প বয়সে একজন ভয় নিবৃত্তির জন্য ওর ভরসা করছে ভেবে নিজের মধ্যে পুরুষত্ব ভাবের প্রকাশ পেয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যেত৷চা এর গুমটির সামনে এসে দেখল বিগত বারো বছরে গুমটির কোনও পরিবর্তন হয়নি৷শুধু চাওয়ালার ছোট ছেলেটা জোয়ান হয়েছে৷এক ভাঁড় চা হাতে নিয়ে চুমুক দিয়ে বিবেক এদিক ওদিক তাকাল খানিক দূরে পাগল বসে আছে৷সব বদলে গেলেও কিছু কিছু জিনিসের কোনও পরিবর্তন নেই৷বিবেক পকেট থেকে সিগারেট বের করে  পাগলের সামনে ধরল৷

সুন্দরী বৌ

           ছেলেবেলা থেকেই দুই ভাইয়ের মধ্যে পড়াশোনায় ভালো ছিল ঘনশ্যাম বাগচী৷বাগচী পরিবারে আয়ের উৎস হল সদানন্দ বাগচীর মুদী দোকান৷দোকানে যা আয় হয় তাতে স্ত্রী গায়েত্রি বাগচী ও দুই ছেলের ভালোমন্দে চলে যায়৷এই পরিবারের খুবই কাছের মানুষ হলেন গায়েত্রির আপন দাদা রঘুবীর রথ৷ বোনের প্রতি রঘুবীরের ভালোবাসা উপমা দেওয়ার মত৷
              পড়াশোনায় ভালো হওয়ার দরুন ঘনশ্যাম মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে মুম্বাইতে ভালো চাকরি পেয়ে যায়৷বরাবর ঘরকুনো ঘনশ্যাম কোলকাতা ছেড়ে মুম্বাই যেতে চায়নি কিন্তু বাবার চাপেই তাকে যেতে হয়৷নিজের মুদি দোকান হলে কি হবে ছেলে ইঞ্জিনিয়ার একথা ভাবলেই  সদানন্দ বাগচীর ছাতি চওড়া হয়ে যায়৷তাদের বাড়ির দুঘর পরেই রায়দের বাড়ি৷এককালে বিশাল অবস্থা ছিল৷পাড়ার সবাই বড়লোক বলেই জানত৷সব সময় বড় গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকত বাড়ির সামনে কিন্তু ছেলেরা ব্যাবসা সামলাতে না পাড়ায়  এখন অবস্থা খুবই পড়ে গেছে৷ঐ রায় বাবু একদিন তার বড় কন্যা শ্রীতমার সম্বন্ধ নিয়ে আসে..."বাগচীদা আপনার বড় ছেলে ঘনশ্যামকে আমার বেশ পছন্দ৷শ্রীতমার জন্য ওর কথা ভাবছিলাম৷তা আপনি কি বলেন"৷শ্রীতমা রীতিমত সুন্দরী গৌরবর্ণা পাতলা চেহারা লম্বা চুল নাক মুখ চোখা৷সদানন্দ তো আকাশ থেকে পড়ে ঘনশ্যাম বেঁটে কালো চেহারার৷মোটা নাক মোটা ঠোঁট৷এমন ছেলেকে শ্রীতমা পছন্দ করবে?সদানন্দ বলে..."রায়দা আপনি যখন বলছেন তা নিশ্চয় ভেবে চিন্তে বলছেন ঠিক আছে এই দিওয়ালীর ছুটিতে ঘনা এলে আমি আপনাকে জানাব৷
             সদানন্দ খাটে শুয়ে পড়ে স্ত্রীকে বলে..."দেখলে লেখা পড়া শিখিয়ে ইঞ্জিনিয়ার করেছিলাম বলে অত বড় লোক বাড়ির মেয়ের সম্বন্ধ এসেছে"৷এমন সময় রঘুবীর বাজারের ব্যাগ হাতে হাজির৷ঘরে ঢুকেই বলল..."আজ বোনটার কথা বড্ড মনে পড়ছিল বাজারে ভালো কোলাঘাটের ইলিশ উঠেছিল তাই নিয়ে এলাম৷সঙ্গে মিষ্টি দইও এনেছি..."বাজারের ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে গায়েত্রিকে বললেন..."ধর ধর ভালো করে সর্ষে দিয়ে ভাপা ইলিশ করত"৷সদান্দ উঠে বসে বলল..."বলি ভালো দিনে এসেছো দাদা আজ তো বড় ভাগ্নের সম্বন্ধ এসেছে"৷রায় বাড়ির সুন্দরী মেয়ের সম্বন্ধ পেয়ে তো বাগচীদের আনন্দের অন্ত নেই৷
              দিওয়ালীর সময় চারিদিকে বাজি পটকার আওয়াজ৷সন্ধ্যেবেলায় ঘনশ্যাম পাত্রী দেখতে গেল৷সেইদিন সারা রাত ঘনশ্যামের স্বপ্নের মত লাগছিল৷অমন স্বপ্ন সুন্দরী হবে আমার বৌ তারপর বড়লোকের মেয়ে৷এখন হয়ত অবস্থা পড়েগেছে কিন্তু বড়লোকি চালেই মানুষ হয়েছে৷বিয়ের পরও ঘনশ্যামের বিশ্বাস হয়না এমন সুন্দরী বৌ তার নিজের৷শ্রীতমার জগ থেকে গলায় জল ঢেলে খাওয়া৷সোফায় বসে টিভি দেখতে দেখতে অন্যমনস্ক ভাবে হাসা সবই ভালোলাগে ঘনশ্যামের৷কিন্তু কোথাও যেন বাধো বাধো পাছে বৌ যদি রুষ্ট হয়৷গায়েত্রিও বৌকে খুব যত্নে রাখে কোনও কাজ কর্ম করতে দেয়না৷হাটুঁ ব্যাথা কোমর ব্যাথা নিয়েও রান্না বান্না সব নিজেই করে৷একদিন সিনেমার টিকিট কিনে আনে ঘনা৷সবাই মিলে সিনেমা দেখতে যায়৷সিনেমার হলে ইন্টারভলের সময় শ্রীতমা মাথার যন্ত্রণায় হল থেকে বেড়িয়ে যায়৷ঘনশ্যাম বৌয়ের পেছন পেছন ছোটে৷কোল্ডড্রিঙ্ক মাথা ব্যাথার ঔষুধ কি করলে মাথা ব্যাথা কমবে৷ সবচেষ্টায় বিফল হয়ে তারা বাড়ি ফিরে যায়৷ছুটির মেয়াদ শেষ ঘনশ্যম মুম্বাই ফিরে যাবে৷পরের বার এসে শ্রীতমাকে সঙ্গে নিয়ে যাবে৷এদিকে রঘুবীরের হঠাৎ স্ট্রৌক হওয়ায় গায়েত্রি দাদার বাড়ি চলে যায়৷গায়েত্রির দাদা মারা যায়৷থম্ থম্ এ মুখ নিয়ে গায়েত্রি বাড়ি ফিরে আসে৷ছোটবেলা থেকেই দাদা গায়েত্রির বড় কাছের মানুষ ছিল এই শোকটা সামলাতে পারছিলনা সে৷খুব কাঁদতে ইচ্ছে  করছে অথচ কাঁদতে পরছে না৷চোখ দুটো রক্তের মত লাল হয়ে রয়েছে৷খাটের এক কোণায় চুপচাপ বসে আছে৷এমন সময় ঘনশ্যাম ঘরে ঢুকে বলতে থাকে..."মা শ্রীতমা আমার সঙ্গে মুম্বাই যাবে ও এখানে থাকতে চাইছেনা।কান্নাকাটি করছে ওর আবার কান্নাকাটি করলে মাথা ধরে। "গায়েত্রী এবার কেঁদে উঠল কান্না কিছুতেই থামাতে পারছে না৷শত চেষ্টা করেও ওনার কান্না থামানো যাচ্ছেনা তারপর হাসি একই ভাবে হেসে চলেছে অনেক বকাবকি করে মুখে জল ছিঁটিয়ে ওনাকে স্বাভাবিক করা হয়৷ঘনশ্যাম ব্যাগ পত্তর গুছিয়ে বৌকে সঙ্গে করে সেইদিনই মুম্বাই রওনা দেয়৷
           নতুন সংসার ঘনশ্যাম অফিস থেকে ফিরেই বৌএর মুখের দিকেই চেয়ে থাকে৷এমন সুন্দরী বৌ পেয়ে মনে মনে গর্ব হয় তার৷একদিন রাত২টো নাগাদ ঘনশ্যামের মোবাইল বেজে ওঠে৷তাড়াতাড়ি করে ফোন ধরে বেড রুম থেকে বেড়িয়ে ড্রয়িং রুমে যায়৷ফোনের ওপাশ থেকে দাদা শোনা মাত্রই বলে ওঠে..."কোনও কাণ্ডজ্ঞান নেই তোদের এত রাত্রে কেউ ফোন করে তোর বৌদির পাতলা ঘুম তারপর আজ ওর শরীরটা ভালো নেই ৷যদি তোর বৌদির ঘুম ভেঙে যেত৷"ফোনের ওপাশ থেকে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে..."দাদা মা আর নেই মা মারা গেছে"৷ঘনশ্যাম খানিকক্ষণ চুপ করে বসে রইল ড্রয়িং রুমের সোফায়৷তারপরে আস্তে করে উঠে বেড রুমের দরজাটা সন্তপর্ণে বন্ধ করে শুয়ে পড়ল৷

অশ্বত্থ গাছ



       সরকারি চাকরির পরীক্ষার ফলাফলে not qualified দেখতে দেখতে হতাশ হয়ে পড়েছে অনু৷খোলা ছাদের নিচে একটা মাদুর পেতে শুয়ে উন্মুক্ত রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে কোনও হিসাবই মেলাতে পারছেনা সে৷কেন কোয়ালিফাই করতে পারছিনা৷গ্র্যাজুয়েশনের পর ৩বছর ধরে ঘরে বসে আছি  শুধু একটা সরকারি চাকরির আশায়৷ছোটবেলা থেকে কোনও দিন তো ফেল করিনি তবে এখন কেন এমন হচ্ছে৷কোচিং ক্লাসে স্যার বলেছেন.১ নম্বরের জন্যও নাকি পিছিয়ে পড়তে হয় কি জানি সমস্যাটা কোথায়৷
        সকালে উঠে লিকার খেতে খেতে পড়ে ,রাত জেগে কফি মগে চুমুক দিয়ে দিয়ে পড়ে, কোচিং পাল্টে ,কোচিং ক্লাসের সব নোট মুখস্থ করেও যখন কোনও ফল পাওয়া গেল না তখন অনুর মা স্মরাণাপন্ন হলেন এক জ্যোতিষীর কাছে৷পাড়ার মন্দিরা বৌদির কাছ থেকে পাওয়া ঠিকানা নিয়ে অনুকে সঙ্গে করে উপস্থিত হলেন জ্যোতিষীর বাড়ি৷বেশ বড় বাড়ি৷বসার ঘরে তাদের আগেও দুজন বসে অপেক্ষা করছে৷এরপর অনুদের পালা আসে৷জ্যোতিষী মশাই একটি ল্যাপটপ টেবিলের উপর রেখে চেয়ারে বসে আছেন৷অনুর মা বললেন"নমস্কার আমি আমার মেয়ের জন্য এসেছিলাম"৷গম্ভীর সুরে জ্যোতিষ বাবু বললেন"মেয়ের নাম ডেট অফ বার্থ"৷সব শুনে ভ্রূ দুটো কপালে তুলে বললেন"শনির সাড়ে সাতি চলছে৷"সাড়ে সাতি মানে কিছুই জানেনা অনু৷অনুর মনে হল যেন কোন রাক্ষস তার কপালে নাচছে তাই পরীক্ষায় কোয়ালিফাই করতে পারছেনা৷অনুর মা চিন্তিত হয়ে বলল"উপায় বলুন আমরা এখন কি করব"৷
—"গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থা খুব একটা ভালোনা৷প্রচুর বাঁধা রাহুর অবস্থা ভালোনা৷এদিকে বৃহস্পতি দুর্বল হয়ে পড়েছে৷রবির ঘরে রাহু"৷
—"আপনি উপায় বলুন"৷
—"আপনি একটা পান্না ৬থেকে৭ রত্তির দিয়ে দিন"৷
—"পান্না তা কত খরচ পড়বে"৷
            জ্যোতিষ বাবু যা এস্টিমেট দেন তা শুনে অনুর মা জ্যোতিষীর ফি ৩০০ টাকা দিয়ে বাড়ি চলে আসে৷মনে মনে ভাবতে থাকে অত টাকা নেই এখনই অত খরচ করতে পারব না৷কোচিং ক্লাসে ভর্তি বাবদ একেবারে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে৷এদিকে যা সব শুনে এলাম তাতে চুপ করে বসেও থাকতে পারিনা৷পড়াশোনায় এত ভালো মেয়েটা ঐ সাড়ে সাতি না কি হাতির জন্য মেয়েটার কিছুই হবেনা৷সন্ধ্যে বেলায় পাড়ার কালী মন্দিরে গিয়ে পুরোহিত মশাইকে বললেন"ঠাকুর মশাই মেয়েটার জন্য কি করি সরকারি চাকরির কত চেষ্টা করছে কিছুই হচ্ছেনা৷ঠাকুর মশাই বিধান দেন চাকরি পেতে গেলে প্রতি শনি বার অশ্বত্থ গাছের নিচে সর্ষের তেলের প্রদীপ জ্বালাতে হবে৷অনুর মা খুশী হয়ে বাড়ি ফিরতেই অনুকে বলল"মা কালির কাছে সব উপায় আছে মাকেই সব ঠিক করে দিতে হবে"অনু অবাক"সে কি  মা ,মাকালি তোমায় দর্শন দিয়েছে নাকি গো"৷অনুর মা অনুকে সব বিস্তারিত ভাবে জানায়৷পরের দিন সকাল বেলায় জল খাবারের রুটি ঘুগনি খেতে খেতে অনু জিজ্ঞাস করল"মা চারিদিকে এত ফ্ল্যাট অশ্বত্থ গাছ কোথায়?"অনুর মা বললেন "খুজলে তো ঈশ্বরও পাওয়া যায় আর অশ্বত্থ গাছ পাবি না৷"
             খুজেপেতে অনু একটা বিশাল অশ্বত্থ গাছ পেল কিন্তু ঐ গাছের পাশে একটা চায়ের দোকান ৷সব চ্যংড়া ছেলেদের ভিড় ওখানে কি প্রদীপ জ্বালা যায়৷মাকে এসে বলে কি করা যায় বলত ৷আমি এখন ঘুমলেও স্বপ্নে অশ্বত্থ গাছ খুজি৷অনুর মা বললেন"সব গাছ কেটে ফ্ল্যাট বাড়ি দোকান রাস্তা হবে তো কি হবে তাই অশ্বত্থ গাছও নেই ছেলে মেয়ে গুলোর সরকারি চাকরিও জোটেনা৷"গুগল সার্চ করলে সবকিছু চোখের সামনে চলে আসে আর একটা অশ্বত্থ গাছ পাইনা যার নিচে প্রদীপ জ্বালা যায়৷
                 অনু একটা কুর্তি বানাতে দিয়েছিল সেটা দর্জি বেটা এমন বেঢপ বানিয়েছে অনু সকাল বেলা ঐ কুর্তি নিয়ে রওনা হল টেলারের কাছে৷ফুটপাথের উপর দিয়ে হাঁটছে রাস্তার ওপারে দোকান আজ সকাল থেকে ওয়েদারটা একদম ভালো না গুমোট গরম তেমনি রোদ৷অনু আবার ছাতা নিয়ে বেড়তে ভুলে গেছে৷স্কিন ট্যান হবেই আজ৷তেমনি ট্রাফিক জ্যাম চারিদিকে  গাড়ির ধোঁয়া ধূলোয় অসহ্য লাগছে হাঁটতে৷এই অস্বস্তির মধ্যেই অনুর চোখে পড়ল শ্রীলেদার্স শো রুমের উপর সাড়ীর নতুন বুটিক খুলেছে আবার শ্রীলেদার্স ২০%অফ দিচ্ছে৷অনুর মনে হল এবছর চাকরি হলে মাকে বুটিকের সবথেকে দামী সাড়ীটা কিনে দেব৷কাঁধের ওড়নাটা তুলে মুখটা আকাশের দিকে করতেই হঠাৎ একটা অশ্বত্থ পাতা অনুর গায়ে এসে পড়ল৷একি অশ্বত্থ পাতা এখানে৷চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখে ফুটপাথের পাশে একটা বিরাট অশ্বত্থ গাছ তার নিচে ছোট্ট একটা শিব মন্দির৷এতদিন ধরে এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছা কোনও দিন খেয়াল করিনি৷নতুন খাদিমের শোরুম সেনকোর শোরুম বা রেস্টুরেন্ট খুললে আমাদের চোখে ঠিক পড়ে যায় অথচ এতদিন ধরে এই অশ্বত্থ গাছটা অবিরাম অক্সিজেন সরবরাহ করে নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়ে যাচ্ছে তবুও আমাদের নজরে পড়ছে না৷অনু জুতো খুলে অশ্বত্থ গাছের নিচে এসে দাঁড়াল শীতল ছায়ায় শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল৷হাতজোড় করে অনু সংকল্প করল চাকরির জন্য না হোক পরিবেশকে তোমার নিঃশর্ত দানের জন্য আমি একখানা প্রদীপ নিশ্চয় জ্বেলে যাব৷

মনের ব্যথা

           
           দূর থেকে ভেসে আসা অস্পষ্ট সুর ধীরে ধীরে পরিষ্কার ভাবে শ্রুতি গোচরে এল"বালতি...গামলা..."৷রান্না ঘর থেকে লতিকা চেঁচিয়ে বলল"মোম ডাকত বাসনয়ালা কে"৷ছুম ছুম করে নুপুরের তালে ছুটে গিয়ে জানলার শিখ ধরে ফর্সা  টুকটুকে মোম হাকল "এই বালতি গামলা দাঁড়াও মা ডাকছে৷"দরজা খুলে বাসনয়ালার সঙ্গে ব্যস্ত লতিকা এমন সময় পাড়ার মিশ্র মাসিমা বলে উঠলেন" মোম নয় গো মোমের মুতুল কি মিষ্টি কি মিষ্টি" "আর বলবেন না মিশ্রমাসিমা  মিষ্টি না দুষ্টু তারপর দশ বছর বয়স হয়েছে বুদ্ধি হয়নি বলি বোন ছোট আমায় এত জালাস না৷দুজনকে নিয়ে আমি নাজেহাল হয়ে যাচ্ছি"৷মোম আর মাম্পির দশ বছরের তফাৎ৷মোমের একছত্র রাজত্বে মাম্পির অনুপ্রবেশ মোমের মোটেই ভালো লাগেনা"বাবা এত জামা এত পুতুল সব আমার জন্য এনেছ তো"এই বলে মোম ছুট্টে গিয়ে বাবার গলা জড়িয়ে ধরল৷মোমের বাবা সুরেশ নাগ ব্যাঙ্কের ম্যানেজার৷সুরেশ মোমের কপালে চুমু খেয়ে মোম কে কোলে তুলে বলল"তোমারও আছে কিন্তু তুমি তো বড় হয়ে গেছ মা কাল বনুর প্রথম জন্ম দিন৷"
            সকাল থেকে প্রচুর লোকজনের আগমন বড় কেক এসেছে মোম ছুট্টে গিয়ে দিদার কোলে বসল"দিদা মাম্পির জন্য এত গুলো জামা কেন এনেছ"৷স্থুলকায় স্নেহময়ী মোমের দিদা সস্নেহে মোমের গালে স্পর্শ করে বললেন"বনু তো খুব  ছোট হিসু করে জামা ভিজিয়ে দেয় তাই এত জামা৷"চারিদিকে হৈ চৈ সবাই ছোট্ট মাম্পিকে নিয়ে ব্যাস্ত৷লতিকা মোমের হাত ধরে সকলের কাছে নিয়ে আসে "দেখ দেখ এত বড় মেয়ে জামাটাকে কিভাবে ভিজিয়েছে বলে নাকি toilet করতে গিয়ে ভিজে গেছে"এই কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে ওঠে৷ছুটির দিনের এক অলস সন্ধ্যে বেলায় মোম বাবার কোলে বসে আছে হঠাৎ আবদার করল "বাবা মনে আছে আমি যখন ছোট ছিলাম তখন তুমি কিরকম ঘোরা হতে"৷সুরেশ আনন্দের সঙ্গে বলে উঠল"যাও যাও বনুকে আজ আমার পিঠে বসিয়ে দাও খুব মজা  পাবে মাম্পি"বাবা আমি ৷তুমি বড় হয়ে গেছ মোম ৷সময় এগোতে থাকে তার সঙ্গে সঙ্গে বয়স বৃদ্ধি পায় জীবনেরও পরিবর্তন হয়৷মোমের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল খুব খারাপ হয়েছে৷মোমের বাবা অনেক আশা করেছিলেন  মোমের কাছ থেকে৷ভালো বই প্রতি বিষয়ে মাস্টার মশাই কোনও কিছুর ত্রুটি রাখেননি৷রেজাল্ট হাতে নিয়ে সুরেশ মোম কে বলে"এত খারাপ কি করে হয় মোম তোমার পড়া শোনার কোনও ত্রুটি রাখিনি আমি৷মাম্পি অত ছোট স্কুলের admission test এ first হয়েছে৷বোনের থেকে কিছু শেখে"৷মোম বিদ্রোহী হয়ে বলে ওঠে "মাম্পি মাম্পি আমার সঙ্গে ওর তুলনা করবে না৷মাধ্যমিক ওত সোজা নয়৷"মোম শৈশব থেকে সদ্য যৌবনে পা রেখেছে এই সময় স্বভাবে চেহারায় না না পরিবর্তন আসে ৷মোম ছেলে বেলা থেকেই সুন্দর যুবতী মোমের রূপে সকলেই আকর্ষিত হয়৷সুন্দর করে কাটা চুল নিখুঁত ভাবে শেপ করা নখ৷সাজ পোশাকেও পরিপাটি মোম৷
             কয়েকদিন ধরে মোমের মা খুবই অশান্তিতে ভুগছেন৷সেদিন বাজারে মিশ্র মাসিমা বলেছেন বাড়িতে কেউ না থাকলে একটা ছেলে মোমের সঙ্গে দেখা করতে আসে৷যদিও মিশ্র মাসিমা কে উনি বলেছেন "আমার মোমের উপর পুরো বিশ্বাস আছে৷"কিন্তু তারপর থেকে মোমের উপর কড়া নজর রাখতে শুরু করেছে লতিকা৷মার তার প্রতি কড়াকড়ি আর বোনের জন্য মমতা মোমের কাছে অসহনীয় লাগে৷কোথায় যেন কিছু হারিয়ে যাচ্ছে৷মোম খুঁজতে থাকে তার জীবনের হরিয়ে যাওয়া গুরুত্ব৷বাবা মা র কাছে প্রাধাণ্য আদর বায়না সব৷হঠাৎ করে তুমি বড় হয়ে গেছ এই কথাটা মোটেই ভালো লাগেনা তার বোন ছোট তাই ও আদর খাবে বায়না করবে আর আমি বড় তাই বোঝদার হব এই সমীকরণ মেলাতে পারেনা মোম৷পড়ায় মন নেই উচ্চমাধ্যমিকে দুটো বিষয়ে ফেল করে মোম৷প্রত্যেক নতুন বছরের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বয়স বাড়ে অভিজ্ঞঁতা বাড়ে কিন্তু মোম আজও অনেক পিছিয়ে রয়েগেছে৷
               রাত প্রায় ৮টা তখনও মোম ঘরে ফেরেনি৷লতিকা সুরেশ সর্বত্র খুঁজেও মোমের দেখা পায় নি৷পুলিশে খবর দেওয়া ছাড়া উপায় নেই দেখে দুজনে পুলিশে missing diary করে৷পরের দিন সন্ধ্যে বেলায় পুলিশ সুরেশকে জানায় মোমের সন্ধান পাওয়া গেছে তাকে সঙ্গে যেতে হবে৷তৎক্ষনাৎ সুরেশ পুলিলের জিপে উঠে পরে৷লতিকা  মোমের জন্য অধির অপেক্ষায় বসে থাকে৷পুলিশের জিপ গলি ঘুপচি দিয়ে একটা অন্ধকার গলিতে এসে দাঁড়ায়৷সুরেশের হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায় এ আমাকে কোথায় আনলেন স্যার৷পুলিশ কর্তা জানায় আপনার মেয়ে এখানেই আছে৷একটা নীচু ছোট দরজায় পুলিশ কড়া নাড়ায় এক মহিলা দরজা খোলে ৷পুলিশ ঘরে ঢোকে সঙ্গে সুরেশ ৷ছোট একটা ঘর হাওয়া বাতাস নেই ৷ঘরের মাঝখানে একটা চৌকি তাতে একটা রং ওঠা চাদর পাতা টিম টিম করছে একটা বাল্ব আর ঐ চৌকির উপর   পুরো ঘর আলো করে বসে আছে মোম৷পুলিশ জানায় আপনার মেয়ে ওনার ছেলে আলতাভ কে বিয়ে মানে নিকা করেছে ওর তো এবছরই আঠারো হয়েছে তাই ও সাবালিকা৷সুরেশ যেন আকাশ থেকে পড়ল সুরেশের চোয়াল শক্ত হয়ে যাচ্ছে কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না৷ দু হাত বাড়িয়ে মোমকে বলে"আয় মা বাড়ি চল  এমন ছেলে মানুষি করতে নেই মা"বলতে বলতে সুরেশের চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে গলা নোনতা লাগে ৷মোমের চোখে মুখে কোনও অভিব্যক্তি নেই স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেয়"মোম না আমি এখন রেশমা বাবা আমি তো বড় হয়ে গেছি আমি নিজের ডিসিশন নিজেই নিতে পারি৷"সুরেশ উত্তেজিত হয়ে যায় ঝাপসা করা চোখের জল হঠাৎ শুকিয়ে যায়৷সুরেশ বলে"আজ যদি তুমি আমার সঙ্গে ফিরে না চল মোম তবে কোনও দিন বাড়ি ফিরতে পারবে না আমি তোমায় আর ঐ বাড়িতে ঢুকতে দেব না৷"মোম দৃঢ়তার সঙ্গে বলে"বাড়ি ফিরব বলে তো আলতাভ কে বিয়ে করিনি"৷সুরেশ মেয়ের ঔদ্ধ্যত্ততা সহ্য করতে পারে না সেখান থেকে বাড়ি ফিরে যায়৷
           আলতাভের বিরাট পরিবার ৷মোম আলতাভের বাবা মা কে আব্বা আম্মি বলে ডাকে৷তামাটে গায়ের রং বাদামি চুল কোলে এক শিশু বিছানায় আরেকজন৷এই মেয়ে মোম নয় রেশমা৷দুপুর বেলায় অন্যমনস্ক ভাবে শিশুকে স্তন পান করাচ্ছিল রেশমা শুষ্ক রুক্ষ চুল চোখের কোনে কালি মাঝে মাঝে পেটের কোনায় খুব ব্যথা হয়৷কোমর ব্যথায় একটানা বেশীক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা৷জানলার দিকে তাকিয়ে থাকা রেশমার ফ্যকাসে  চোখ  দুটো খোঁজা বন্ধ করে দিয়েছে৷হঠাৎ দূর থেকে ভেসে এল"বালতি...গামলা...."সুর করে ভেসে আসা শব্দ গুলো ধীরে ধীরে দূরে কোথাও মিলিয়ে গেল৷

বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

এক দিন রাত্রে

সালটা ১৯৬৪ সেই সময় কোলকাতায় হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা লেগেছিল৷তখন বাংলা দেশ নিজ অস্তিত্ত্বে আসেনি৷পাকিস্থানে অন্তর্ভুক্ত ছিল৷পাকিস্থানের হিন্দুদের হত্যা করায় ভারতবর্ষে মুখ্যত কোলকাতায় রয়েট লাগে৷যেহেতু ভৌগলিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গ সেই সময়ের পাকিস্থানের  কিছু অংশ যা বর্তমানে বাংলাদেশ তার পাশা পাশি অবস্থান করে সেহেতু  এই রায়টের প্রভাব বঙ্গের মানুষকে প্রত্যক্ষ ভাবে সামনা করতে হয়েছিল৷সাধারণ বাড়ির মানুষজন সবসময় আতঙ্কে দিন কাটাত৷মুসলমানদের আল্লাহ হো আকবর রব শোনা মাত্রই হিন্দুরা তট্স্থ হয়ে যেত আবার বন্দেমাতরম রবে মুসলমানরা আতঙ্কিত হত৷ঘটনা বয়ে গেলেও কিছু কিছু ঘটনা মানুষের মনে নাড়া দিয়ে যায়৷জায়গাটা কোলকাতা থেকে অনেকটাই দূরে ৷আশে পাশে বাড়ি ঘরের সংখ্যা খুবই কম৷একটি বাড়ির বেশ খানিকটা দূরে আরেকটি বাড়ি৷খোলা মাঠ বনজঙ্গলের আধিক্যও বেশী৷কিছু কিছু পাকা বাড়ি তৈরীর কাজ চলছে ৷এই খানেই বাস দেব চৌধুরীর৷দেব বাবু পেশায় সরকারি ড্রাফ্টস ম্যান ছিলেন৷অনেক দিন হল অবসর প্রাপ্ত৷দীর্ঘ্য শীর্ণকায় দেব বাবুর বিশাল পরিবার৷তখনকার দিনে অবশ্য সকলেরই বড় পরিবার হত৷দেব বাবুর ছয় কন্যা ও দুই পুত্র৷কন্যারা সকলেই বিবাহিত৷দুই পুত্র নবীন চৌধুরী ও তারক চৌধুরী ৷নবীনের চেহারা হাট্টা গোট্টা লম্বা চওড়া শ্যাম বর্ণ আর তারক ছিপ ছিপে স্বল্প দৈর্ঘ্য৷তারক ছোটবেলা থেকে খুব ডানপিটে তেমন সাহসী৷দেব বাবুর বড় ছেলে নবীন কোলকাতার এক মিলের হেড ক্লার্ক আর তারক রেলে চাকরি করে৷দু জনেই বিবাহিত তারকের স্ত্রী অন্তসত্ত্বা তাই বর্তমানে উনি বাপের বাড়িতে আছেন৷নবীনের তিন কন্যা তুলী বয়স ৮ গৌরী ৬ আর ননী সবে ৩ মাস৷নবীনের স্ত্রী রমা খুবই সাদা মাটা সারা দিন গৃহ কর্মে যুক্ত৷রমা বেশীর ভাগ সময় ননীকে দেব বাবুর কাছে শুয়ে রেখে নিশ্চিন্ত মনে সংসারের কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেন৷দেব বাবুর স্ত্রী অর্থাৎ রমার শাশুড়ি সংসারের ঝামেলায় থাকেন না৷ উনি পাড়ায় আড্ডা দিয়ে আর তাস খেলে সময় কাটান৷দেব বাবু তার নাতনীদের প্রাণের বন্ধু৷বয়সের কারণে এখন ভালোভাবে হাঁটা চলা করতে পারেন না বেশীর ভাগ সময় বিছানায় শুয়ে কাটান আর নাতনীদের গল্প শোনান৷তুলী ও গৌরী স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতেই দাদুর কাছে সব অভিযোগ দিনের বৃত্যান্ত নিয়ে বসে পরে৷দেব বাবুর বাড়ির সামনে একটা খোলা মাঠ আছে ঐ খানেই পাড়ার সব ছেলে মেয়েরা খেলা করে৷মাঠ পেরলে এক বিরাট অট্টালিকা৷এই অট্টালিকা এলাকার বিখ্যাত ডাক্তার ডঃব্যাণার্জীর৷আশে পাশের লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছে কোন বিপদ দেখলে এই ডাক্তার বাবুর বাড়িতে এসেই জড়ো হতে হবে৷ ডাক্তার বাবু সুরক্ষার নানা ব্যবস্থা করে রেখেছেন আবার ওনার কাছে বন্দুকও আছে৷আল্লাহ হো আকবর ধ্বণিত হলেই সকলে এই খানে এসেই আত্মরক্ষার জন্য আশ্রয় নেবে৷এই খোলা মাঠের কিছু অংশ হরেণ মল্লিক নামে এক ব্যবসায়ী কিনে নিয়েছেন৷হালেই তার বাড়ি তৈরীর কাজ শুরু হয়েছে অনেকটা মাটি খোড়াও হয়েগেছে৷রাত্রেবেলা চারিদিক অন্ধকারই থাকে৷সকলের বাড়িতে electric connention  প্রায়ই আসেনি৷দেব বাবুর নাতনীরা বিকেলে খেলা ধুলা করে এসে যখন পড়তে বসে তখন ঐ পড়ার টেবিলেই বই এর মধ্যে মাথা গুজে ঘুমিয়ে পরে৷ওদের মা পড়ার টেবিল থেকে তুলে নিয়ে ঘুমের মধ্যেই ভাত,ডাল,তরকারি এক সঙ্গে মেখে খাইয়ে দেয় তারপর বিছানায় শুয়ে দেয় ওরা কোনও কিছুই টের পায়না৷তখন বাচ্চাদের জীবনের বেশীর ভাগ সময়টাই খেলা ধূলায় কাটত৷দৌড়া দৌড়ি ঝাপা ঝাপি করে তারা এতটাই ক্লান্ত হয়ে পরত যে সন্ধ্যে হতে না হতেই ঘুমে তাদের চোখ টেনে ধরত৷রাত ৮ র মধ্যে সকলেই গভীর নিদ্রায়৷ঘুমের ঘোরে যাতে বিছানা ভিজিয়ে না দেয় সেইজন্য রমা নিত্যই রাত ১০টা নাগাদ তাদের বাথ রুমে নিয়ে যেতেন৷তারাও ঘুমের মধ্যে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে আবার নির্বিঘ্নে বিছানায় শুয়ে অঘোরে ঘুমিয়ে পরত৷নবীন আর তারকের বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত সারে নয়টা দশটা হয়৷রমা শশুর শাশুড়ি কে ৯টার মধ্যে রাতের খাবার দিয়ে দেয় ৷তারপর স্বামী আর দেওর এলে তাদের গরম গরম রুটি সেঁকে দেয় তাই রাত অবধি ঊননে আঁচ ধরিয়ে রাখতে হয় ৷সব কাজ মিটিয়ে শুতে শুতে রাত ১১টা হয়৷এভাবেই এদের দিন যাপন হয়৷একদিন রাত ১০টা নাগাদ হঠাৎই আল্লাহ হো আকবর চিৎকার শোনা যায়৷হঠাৎ এমন চাৎকার যেন একদল মুসলমান বলপূর্বক এই এলাকায় অনুপ্রবেশ করে ফেলেছে৷ রাতের বেলায় সকলের শীথিল হয়ে যাওয়া স্নায়ু হঠাৎই উত্তেজিত হয়ে যায়৷ভয়ে আতঙ্কে কে কি করবে দিশা পায়না৷ নবীন তাড়া হুড়ো করে দুই মেয়ে তুলী আর গৌরীর হাত ধরে টেনে তোলে৷বলে"তাড়াতাড়ি  ওঠ সামনে বিশাল বিপদ৷"এই বলে তাদের হাত ধরে টানতে টানতে ঘর থেকে বার করে আনে৷ এমন অবস্থায় যে করেই হোক ডঃ ব্যাণার্জীর বাড়ি পৌছতেই হবে৷কিন্তু রোজকার নিয়ম মাফিক তুলী ও গৌরী মনে করে নিশ্চয় তাদের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য ডাকা হয়েছে৷তাই তারা দুজনেই উঠানে বসে পরে৷নবীন হতবম্ভ হয়ে বলে"সামনে এমন বিপদ আর তোরা প্রস্রাব করছিস৷এদের এই প্রকৃতির ডাক শেষ হতে হতে মুসলমানরা আমায় না শেষ করে দেয়৷"তারপর নিদ্রাচ্ছন্ন দুই মেয়ের হাত ধরে টানতে টানতে দৌড় দেয় ডাক্তার বাবুর বাড়ির উদ্দেশ্যে৷তারক আগেই তার মা ও বৌদি কে নিয়ে রওনা হয়েছে আর নবীনের দায়িত্বে পরেছে তার নিদ্রাচ্ছন্ন দুই কন্যা৷চারিদিকে হই হই সকলেই যে যার বাড়ি থেকে যে যেমন অবস্থায় ছিল ডঃ ব্যাণার্জীর বাড়ির পথে দৌড়াচ্ছে৷নবীন ভয়ে আতঙ্কে দৌড়াতে দৌড়াতে হরেণ মল্লিকের জমির গর্তে পরে কুপকাত৷নিদ্রাচ্ছন্ন তুলী আর গৌরীর এতক্ষণে ঘুমের ঘোর কাটে একে অপরের দিকে চেয়ে বলে"আমরা কোথায়"৷নবীন ব্যাথায় চেঁচিয়ে ওঠে গর্তে পড়ে তার বাঁ পা মোচকে গেছে৷বিপদ সামনে এলে শরীরে এক আশ্চর্য শক্তি চলে আসে তাই কোনও রকমে ঐ গর্ত থেকে উঠে খোড়াতে খোড়াতে দুই মেয়ের হাত ধরে ডাক্তার বাবুর বাড়ি পৌছায়৷ডঃব্যাণার্জীর বাড়ি তখন একটা ছোট খাটো রিফিউজি ক্যাম্প৷ছোট বাচ্চার কান্নার আওয়াজ সকলের নানা বক্তব্য আলোচনা৷নবীনকে দেখে মনে হচ্ছে উনি তো বেশ কয়েক জনের সঙ্গে হাতাহাতি করে এত দূর এসেছেন৷চুল উস্কো খুস্কো পাঞ্জাবীতে মাটির দাগ বাঁ পা ফুলে উঠেছে৷রমা দেবী ছুটে এসে বললেন"কি হল একি অবস্থা তোমার"৷ডঃব্যাণার্জীর যুবতি কন্যা শকুন্তলা খুবই তৎপর সে দ্রুত মলম নিয়ে এসে নবীনের পায়ে লাগিয়ে দেয়৷এরই মধ্যে সব মেয়েদের চিৎকার শুনে শকুন্তলা ছুটে যায়৷হল ঘরে গিয়ে দেখে হল ঘরের এক কোনায় সব মেয়েরা জড়ো হয়েছে কেউ হাত দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছে কেউ চোখ বন্ধ করে কেউ হেসে গড়াচ্ছে৷তার ঠিক উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে রয়েছে বছর ১৩কি ১৪র এক কিশোর৷সেও ঐ পাড়ারই বাসিন্দা নাম তার ডিব্বা৷কিন্তু ডিব্বাকে দেখে এই চিৎকারের কারণ ডিব্বা সম্পূর্ণ উলঙ্গ অবস্থায় জড় সড় হয়ে দাঁড়িয়ে৷ঐ বিছানা ভেজাবার ভয়ে ডিব্বার মা তাকে জামা কাপড় ছাড়া ঘুমানোর অভ্যেস করিয়েছেন৷তাই এই দুরবস্থা৷মুসলমানদের আতঙ্কে সেও গায়ে কিছু না দিয়ে,যেই অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায় চলে আসে৷শকুন্তলা চোখের পলকে একটা বিছানার চাদর এনে ডিব্বার দিকে ছুড়ে ডিব্বার লজ্জা নিবারণ করে৷এই সব হৈ হট্টোগোলের মধ্যে রমা ননীর খোজ করে"ননী ননী কোথায় ওকে তো আনা হয়নি ও তো বাবার কাছে রয়ে গেছে"৷এই বলে রমা কান্নায় ভেঙে পড়ে৷কি করা যায় নবীনের পায়ের যা অবস্থা সে তো কোনও ভাবেই এতটা পথ যেতে পরবে না৷তখন দুর্দান্ত সাহসী তারক বলে"আমি যাব,আমি গিয়ে ননীকে নিয়ে আসব"৷তুলী গৌরী অঝোর নয়ণে কাকার কাছে বিনীত অনুরোধ করে"কাকা ননীকে যখন আনবে তখন দাদুকেও নিয়ে এস"৷সবাই মিলে তুলী আর গৌরীকে বোঝায় দাদুর বরস হয়েছে উনি এতটা পথ পায়ে হেঁটে কোনও মতেই আসতে পারবেন না৷তারক বাড়ি ফিরে যায়৷চারিদিক নিঃঝুম চুপ চাপ৷শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকা ডাকার আওয়াজ৷রাস্তা ঘাট ঘুটঘুটে অন্ধকার৷বাড়ি পৌছে তারক সিঁড়ির তলায় জড়ো করে রাখা নানা কাজের অকাজের জিনিসের মধ্যে থেকে আত্মরক্ষার জন্য একটা সাবল বেছে নেয়৷তারপর নিজের ঘরে ঢুকে আলমারি খুলে বিয়ের স্যুট আর নতুন কেনা রেডিওটা একটা ব্যাগে পুরে নেয়৷এই চরম আতঙ্কের মুহুর্তেও সে বিয়েতে পাওয়া স্যুট আর সখের রেডিওটার মোহ ছাড়তে পারেনা৷তারপর দেব বাবুর ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত দেববাবুর পাশে শুয়ে থাকা ঘুমন্ত ননীকে কোলে তুলে নেয়৷আজ তারক প্রায় দশভুজা অস্ত্র সজ্জিত এক হাতে স্যুট ও রেডিওর ব্যাগ আর কোলে ননী৷এমন ব্যতিক্রমী প্রস্তুতি তো সয়ং মা দূর্গাও নেননি৷জিনিসের মায়া যেমন ত্যাগ করতে পারেনি তেমন ভাইঝিকেও ভুলে যায়নি৷এদিকে ডাক্তার বাবুর বিশাল ছাদে সারি সারি থান ইঁট ও কাঁচের বোতল সাজানো রয়েছে যাতে দূর থেকে আক্রমণকারীদের দেখলে ঐ গুলো ছুড়ে  মেরে আক্রমণকারীদের আটকানো যায়৷এরই মধ্যে অস্ত্র সুস্বজ্জিত তারক ননীকে কোলে নিয়ে ডাক্তার বাবুর বাড়ি এসে পৌছায়৷ঐ রাতটা এঅভাবেই কেটে গেল কোনও মুসলমান আক্রমণকারীর ছায়াও দেখা গেল না৷পরের দিন সকালে জানা গেল দু তিনটে মাইক লাগিয়ে বেশ কয়েক জন মিলে আল্লাহ হো আকবর চেঁচিয়ে ছিল যাতে সব হিন্দুরা ভয় পেয়ে যায়৷তুলী গৌরী খুব ভয় পেয়েছিল তাদের প্রিয় দাদুকে মুসলমানরা হয়ত মেরে ফেলবে৷দাদুকে পেয়ে গলা জড়িয়ে ধরে গৌরী বলে"জান দাদু কাল মুসলমানরা এসেছিল আমরা সবাই ডাক্তার বাবুর বাড়ি চলে গিয়েছিলাম তুমি তো কিছুই জাননা তুমি তো ঘুমিয়ে ছিলে৷তুলি আর আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম,দাদু আমরা তোমার জন্য খুব কেঁদেছি৷"দেব বাবু নাতনীদের বললেন" না গো দিদি আমি তো ঘুমের ভান করে চুপ করে শুয়ে ছিলাম আমি তো বুড়ো হয়েছি আজই মরি কি কাল তাই মুসলমানরা মেরে ফেললেই কি যায় আসে৷"এই হট্টগোলে সবাই যে যার চিন্তা করেছে নিজের প্রাণের,সম্পত্তির,প্রিয় জনের কিন্তু বৃদ্ধ দেব বাবুর কথা হয়ত সকলের মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল৷দেব বাবুর তাতে কোনও নালিশ নেই৷এটাই সত্য ঐ পরিস্থিতিতে সত্যিই দেব বাবু কে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না৷এটাই বাস্তব ঠিক যেমন মৃত্যুটা একটা বাস্তব সত্য৷কিন্তু দেব বাবুর মতো খোলা মনে সবকিছু সরলতার সঙ্গে গ্রহণ করার ক্ষমতা কজনের আছে৷

শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

শান্তি

ঘোর গ্রীষ্ম মে মাস৷মানিকতলার রাস্তার উপর এক বিশাল বাড়ি৷সেই বাড়িতে ভাড়াটেও অনেক৷বাড়িটি চারতলা দ্বিতীয় তলায় থাকেন দত্তবাবুর পরিবার ৷গত বছর উনি নতুন এই বাড়িতে ভাড়া এসেছেন পেশায় ব্যাবসায়ী৷ফুলবাগানে রাস্তার উপর দত্ত বাবুর একটি জেন্টস কাপড়ের দোকান৷প্যন্টের পিস শার্টের পিস বিক্রি হয় আবার টেলারিং এর কাজও হয়৷উনি নিজে বড় টেলার৷আসামের হাইলাকান্দি জেলা থেকে উনি কাটিং শিখেছিলেন৷সেই সময় রেডি মেড পোশাকের আধিক্য এখনকার মতো ছিলনা৷ঘটনাটি আজ থেকে বেশ কিছু বছর আগেকার৷দত্ত বাবু রোজ সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে স্নান আহ্নিক সেরে বাড়ির সামনের দিকের ব্যালকনি তে বসে চা খান আর খবরের কাগজ পড়েন৷তারপর সকাল ৯ টা বাজতেই দত্ত বাবুর স্ত্রী তাকে সাজিয়ে জলখাবার খেতে দেন উনি তাই খেয়ে দোকানে রওনা হন৷দত্ত বাবুর চেহারাটা বেশ৷লম্বায় প্রায় ৬ফুট সোজা টানটানে৷বয়সের কারণে শরীরে কিছু মেদ জমেছে ,গায়ের রং কালো কিন্তু বয়সের কারণে ত্বকে একটিও ভাঁজ পরেনি টানটানে মসৃণ ত্বক আর মুখশ্রীও সুন্দর৷এক কথায় সুপুরুষ বলা যায়৷ওনার নিজের প্যান্ট শার্টের দোকান থাকলেও উনি সব সময় সাদা ফক্ ফকে ধুতি পাঞ্জাবী পরতেন৷দত্ত বাবুর চার মেয়ে তিন ছেলে ও স্ত্রী৷সংসারে অভাব নেই স্বচ্ছল পরিবার কিন্তু ঐ একটি দোকান থেকে যা আয় হয় তাতে সকলের সবরকম চাহিদা সখ আল্হাদ মেটান কষ্টকর হয়৷তারপর বড় ও মেজ কন্যা তো বিবাহযোগ্যা৷বাকি ছেলে ও মেয়েদের পড়ার খরচ ছেলেদের ভবিষ্যৎ এই সকল চিন্তা তো সব সময় রয়েছে৷তাই আর্থিক অবস্থার উন্নতি হলে এই সব চিন্তাগুলো দূর হত এই ভাবনা সব সময় দত্ত বাবুর মনে আসে৷স্বভাবে মিশুকে কিন্তু খুব কম কথা বলেন উনি৷দোকান খুলে ঠাকুর কে ধূপ দেখিয়ে কাউন্টারে বসেছেন ৷চারজন কর্মচারী রয়েছে তারা তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে৷বেলা তখন বারোটা হঠাৎ এক লটারী টিকিট বিক্রেতা দত্ত বাবুর দোকানে এসে হাজির৷সে দত্ত বাবুকে বলে" দাদা একটা টিকিট নিন না৷"দত্ত বাবু এমনিতে সাংঘাতিক হিসেবী মানুষ উনি অপ্রয়োজনীয় খরচ করাকে নানান অপরাধের মধ্যে একটি অপরাধ হিসাবে গণ্য করেন৷তাই লটারির টিকিট নৈব নৈব চ৷ উনি এতটাই হিসেবী যে মন্দিরের প্রনামী বাক্সে টাকা না দিয়ে ঘরের ঠাকুর ঘরে একটি ঘটের স্থাপন করেছেন এবং প্রত্যেক দিন ঐ ঘটেই প্রণামি মানে আধুলী সিঁকি যখন যা থাকে তা জমা করেন এবং পরিবারের সকলকে এই নির্দেশ দিয়েছেন বছর শেষে ঐ ঘট ভেঙে ঠাকুরের কাজের যাবতীয় জিনিস কেনা হবে৷এমন হিসেবি মানুষ কি আর লটারীতে অর্থ ব্যয় করতে পারে৷কিন্তু লটারী বিক্রেতা নাছোড়  বান্দা "একটা টিকিট দাদা আপনাকে নিতেই হবে৷বেশী দাম নয় একটাকা মাত্র৷নিন না আরে দেখুন না হয়ত লাখপতি হয়ে গেলেন৷আরে কখন কার ভাগ্য ঘোরে বলা যায়৷"লাখপতি এই শব্দ যেন বুকের ভিতর মনের দরজায় একটা ধাক্কা দিল৷লাখপতি৷এবার দত্ত বাবুর মন একটু confuse হয়ে গেছে৷আমতা আমতা করে উনি বললেন" তা দাও দেখি এত বলছ যে কি করি৷"উনি টিকিট টা পাঞ্জাবীর বুক পকেটে রেখে কাউন্টার থেকে একটা টাকা টিকিট বিক্রেতার হাতে ধরিয়ে দিলেন৷এরপর নানা কাস্টমার তাদের কাপড় দেখান৷কেউ কেউ আবার শার্ট বানাতে আসছে সামনে পয়লা বৈশাখ অনেকেই আগের থেকে বানাতে না দিয়ে সেই মুখে মুখে অর্ডার দিতে আসে তারপর ডেলিভারী পয়লা বৈশাখের আগে  করতে হবে  এই আব্দার করে৷তাই পুরোদিনটা প্রায় ব্যস্ততায় কাটল৷আজ বাড়ি ফিরতে বেস বেলা হয়ে গেছে ৷তারাতারি করে হাত মুখ ধুয়ে ধুতি পাঞ্জাবী ছেড়ে উনি খেতে বসলেন৷ছেলে মেয়েরাও না খেয়ে বাবার জন্য অপেক্ষা করছিল ৷সবাই মিলে মাটিতে আসন পেতে খেতে বসেছে৷দত্ত বাবুর স্ত্রী খুব ভালো রাঁধেন৷গরম কাল পাখা ঘুরছে তাতেও সকলের ঘাম হচ্ছে৷দত্ত বাবুর স্ত্রী কাঁসার থালা বাটিতে সাজিয়ে খেতে দিলেন৷ভাত পটলের দোরমা কাতলা মাছের ঝোল কাঁচা আমের টকের ডাল আর তার সঙ্গে ঢেঁড়স ভাজা৷খাওয়ার পর দত্ত বাবু একটু দুপুরের ঘুম ঘুমোন তারপর বিকেল চারটে বাজতেই  চা খেয়ে আবার দোকানের জন্য রওনা হন৷আজ এমনিতেই বেলা হয়ে গেছে তাই আজ আর শুলেন না৷ভেতেরর ঘরে চেয়ারে বসে সকলের সঙ্গে গল্প করছেন৷হঠাৎ খেয়াল হল আজ সকালে উনি একটা লটারীর টিকিট কেটেছেন৷বাড়ির লোকেদের সেকথা জানাতে সকলেই তো নানা আব্দার শুরু করে দেয়৷যেন লটারীর টিকিট কেনেনি লটারীতে টাকাই পেয়ে গেছেন৷কে পুজোর সময় কোথা থেকে দামি শাড়ি কিনবে কটা গয়না বানাবে এই নিয়ে নিজেরাই গল্প জুড়ে দেয়৷দত্ত বাবু ছেলে মেয়েদের ক্ষাণিকের এই উল্লাস দেখে নিজেকেও ওদের আনন্দে ভাসিয়ে দেন৷তারপর আবার দোকানের জন্য রওনা হলেন৷এই বেলাতেও কাজের ভালো চাপ ছিল৷বাড়ি ফিরতে প্রায় রাত ১১টা বাজল৷দোকানের হিসাব মিলিয়ে কর্মচারীদের পাওনা মিটিয়ে দোকানে তালা দিয়ে ফিরতে ফিরতে প্রায় রোজদিনই দেরি হয় এখন তো আবার পয়লা বৈশাখের সিজিন চলছে৷রাত্রে বেলায় খাওয়ার খেয়ে ঐ বাড়ির সামনের ব্যালকনিতে  বসার অভ্যাস আছে উনার তাই সেই জন্য একটা easy chair সবসময় ব্যালকনিতে রাখা থাকে৷easy chair এ গা হেলিয়ে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সারা দিনের কথা উনি এই সময় বসে বসে ভাবেন৷আজও এই নিয়মের ব্যতিক্রম হল না৷তবে আজকের ভাবনাটা যেন একটু অন্য রকম৷আচ্ছা লটারীতে যদি সত্যি লাখ টাকা পাই৷তখনকার দিনে লাখ টাকার যথেষ্ট মূল্য ছিল৷তা দিয়ে গাড়ি বাড়ি অনায়াসে কেনা যেত৷তখন সোনার দরই ছিল ৫০০টাকা৷দত্ত বাবু এবার স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করলেন৷টাকাটা যদি সত্যিই পাই মেয়ে গুলোর বিয়ে বিরাট ধুমধাম করে দেব সব আত্মীয়দের দশদিন আগের থেকে নেমন্তন করব৷বাড়িতে ঠাকুর দিয়ে রান্না হবে৷কি আনন্দ৷দত্ত বাবুরা পাঁচ বোন তিন ভাই তাদের ছেলে মেয়ে নিয়ে বিশাল পরিবার৷উনি মনে মনে ভাবতে শুরু করলেন,একটা বড় বাড়ি বানাবো সেইখানে বিবাহিত দিদিদের জন্য কতগুলো আলাদা ঘর রাখব ওরা যখন ইচ্ছে এসে এখানে থাকবে৷দত্ত বাবুর স্ত্রীর নাম কমলাদেবী৷সকাল থেকে রাত অবধি উনি সংসারের কাজে ব্যস্ত থাকেন৷প্রচুর পরিশ্রম করেন নিজের জন্য সময় বার করতে পারেন না৷স্বামি স্ত্রী একসাঙ্গে বসে গল্প করেননি প্রায় বহু বছর৷তাই এবার থেকে কমলা আর কোনও কাজ করবে না ওর আগে পিছে ঘুরবে এমন দুটো লোক রাখব আর ছেলে গুলোকে এই দোকানের কাজে ঢোকাব না ওদের অনেক লেখা পড়া করাব যাতে বড় চাকরি করতে পারে৷এই সব ভেবে দত্ত বাবুর বুক আনন্দে ভরে গেল সেই দিন উত্তেজনায় সারা রাত ঘুম হল না৷পরের দিন সকাল বেলা রোজকার রুটিণ অনুযায়ী সেই দোকানে যাওয়া দোকানের কাজের ব্যস্ততা এইভাবে গেল বেশ ক দিন৷এবার এল সেই বিশেষ দিন যেদিন টিকিটের রেজাল্ট বেড়ল পয়লা বৈশাখ বাম্পার৷সকালে উঠে এক হাতে খবরের কাগজ আর অন্য হাতে লটারীর টিকিট নিয়ে বসে পরলেন ব্যালকনির চেয়ারে৷প্রচণ্ড উত্তেজনায় হাতটা সামান্য কাঁপছে বুকটাও ধুকধুক করছে৷ছেলে মেয়ে স্ত্রী সকলেই আজ ঐ ব্যালকোনিতে দত্ত বাবুকে ঘিরে রয়েছে৷টিকিটটা মিলিয়ে দেখলেন ৬টা নাম্বারই মিলে গেছে৷উত্তেজনার শেষ নেই যেন৷চারিদিক বোঁ বোঁ করে ঘুরছে৷ছোট ছেলে দুটো তো আনন্দে চিৎকার করে উঠেছে মেয়ে গুলোর হাসিও থামে না৷দত্ত বাবুর চেটো ঘামে ভিজে গেছে কপালেও বিন্দু বিন্দু ঘাম৷এও কি সম্ভব৷হঠাৎ চেঁচিয়ে ছেলে মেয়েদের ধমকের সুরে বললেন "চুপ কর৷সবাই কে জানিয়ে ছাড়বি ,আমার কাছে এতগুলো টাকা আছে"৷ছোট ছেলেটির বয়স ৬ নাম হল নিমাই৷নিমাই করুণ ভাবে বলল "লোকে জানলে কি হবে বাবা৷"এই প্রশ্নের উত্তর দত্ত বাবুর কাছে ছিলনা কিন্তু এই প্রশ্নটা যেন অবচেতন মনের দুশ্চিন্তা গুলোকে মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দিল৷খানিক্ষন চুপকরে থাকার পর উনি বললেন "তোরা আমায় একটু একা থাকতে দে৷একি হল এত দিনের অপেক্ষা যেটা চাইছিলাম সেটা পাওয়ার পর আমার মন অশান্ত কেন৷দিন কাল ভালো না আমার বাড়িতে এত গুলো মেয়ে আছে তার মধ্যে দুজন তো বিবাহযোগ্যা৷এত টাকার খবর পেয়ে বাড়িতে যদি ডাকাত পরে৷নানা এমন কেন হবে৷ছোট ছেলে দুটো তো হামেশাই এদিক ওদিক খেলতে যায় যদি কেউ টাকার জন্য  অপহরণ করে না না এসব হবে কেন৷এসব ভাবতে ভাবতে দত্ত বাবুর শরীরটা যেন পাঁক দিয়ে উঠল৷মাথাটা ঘুরছে৷বাথরুমে গিয়ে ঘাড়ে মুখে জল দিলেন৷আজ জল খাবারে কিছুই খেলেন না চা বিস্কুট খেয়ে দোকানে রওণা হলেন৷দোকানে কাজ চলছে বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাৎ দত্ত বাবুর বড় মেয়ে কুসুম হন্ত দন্ত হয়ে এসে বলল "বাবা নীতা কোন সকালে স্কুলে গেছে এখনও ফেরেনি৷নীতা হল দত্ত বাবুর ছোট কন্যা৷দত্ত বাবু আঁতকে উঠলেন "সেকি বাড়ি ফেরেনি মানে৷"না এখনও ফেরেনি" কুসুম উত্তর দিল৷দত্ত বাবু দর দর করে ঘামতে শুরু করেছেন৷বুকের ভেতর কেউ যেন হাতুরী পেটাচ্ছে৷এক কারিগর কে বললেন "রহিম মিঞাঁ যাও তো একবার স্কুল চত্বরটা দেখে এস৷"কারিগরও শোনামাত্র কাজ ফেলে পায়ে  চটি গলিয়ে শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে ছুটল স্কুলের পথে৷দত্ত বাবু কারিগরদের ভরসায় দোকান ফেলে ছুটলেন বাড়ি৷বাড়িতেও সকলে উদ্বিগ্ন কমলা দেবী সাধারণতঃ সব বিষয়ে নিরুত্তাপ থাকেন৷এই লটারীর ব্যাপারেও ওনার বিশেষ আগ্রহ ছিলনা কিন্তু আজ উনিও বাড়ির বাইরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন৷দত্ত বাবু আর বাড়িতে ঢুকলেন না৷রাস্তায় রাস্তায় কোথায় মেয়েকে খুজব৷হাঁটতে হাঁটতে আবার ফুলবাগানের মোড়ে এলেন৷সেখানে কালী মন্দির আছে৷মন্দিরে মায়ের কাছে হাত জোড় করে প্রার্থনা করলেন "হে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান তুমিই আমার ভরসা৷মাগো আমার টাকা পয়সা ধন দৌলত কিছু চাই না৷আমার আজ বিশাল বিপদ তুমি আমায় রক্ষা কর৷"বুকের বাঁ পাশটা চিন্ চিন্ করে ব্যথা করে উঠল৷প্রচন্ড গরম পাঞ্জাবী ঘামে ভিজে গেছে শরীর মাথা আর চাপ নিতে পারছে না৷"তবে কি পুলিশে missing diary করব৷আমি কেন লোভে পড়ে লটারীর টিকিট কিনলাম৷ঐ থেকেই এত বিপত্তি৷ থানায় যাওয়ার আগে একবার বাড়ি যেতে হবে৷থানায় যদি ছবি চায় তা পাব কোথা থেকে"৷বেলা তখন গড়িয়ে প্রায় দুটো৷ঘরে ঢুকে দেখেন নীতা খাটের উপর বসে পাশের চেয়ারে দত্ত বাবুর জামাইবাবু মানে নীতার পিশেমসাই৷জামাই বাবুর নাম সতীশ সরকার৷উনি কাছাকাছি থাকেন৷সতীশ বাবু জানান"ওর স্কুল থেকে ফেরার পথে আমার সঙ্গে দেখা হল আমি বললাম কিরে পিসির কাছে যাবি?নীতা রাজি হয়ে গেল তাই নিয়ে গিয়েছিলাম৷"দত্ত বাবু বললেন"সেকি সতীশদা এ দিকে আমরা তো প্রায় থানা পুলিশ করব এমন অবস্থা৷"সতীশ বাবু জানালেন "না না এ তো আমারই ভীমরতি হয়েছিল৷"দত্ত বাবুর মেজদি নিঃসন্তান তাই দত্ত বাবুর ছেলে মেয়ে কে মেজদি ও জামাই বাবু নিজ সন্তানের মতো স্নেহ করেন৷যাক গিয়ে ঐ দিন মেয়ে কে ঘরে দেখতে পেয়ে দত্ত বাবুর বুকের চিন্ চিনে ব্যাথাটা কমল৷দুপূর বেলা খেতে বসে তেমন কিছু খাওয়া হল না৷সারাটা দিন যা গেছে তাতে কমলাদেবী বিশেষ কিছু রান্না করতে পারেন নি৷মুসুরির ডাল আলু সেদ্ধ মাখা মাছ ভাজা দিয়ে সকলের আহার সম্পন্ন হল৷বিকেল চারটে বাজতেই মেজ মেয়ে ডালিয়া বাবা কে চা করে দিল৷আলমারি থেকে পাট করা কাচা ধুতি পাঞ্জাবী বের করে দিল৷চা খেয়ে কাচা ধুতি পাঞ্জাবী পড়ে মৃদু হেসে ডালিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দত্ত বাবু বেড়িয়ে পরলেন সঙ্গে নিলেন লটারীর টিকিট৷সন্ধ্যে ৭ টা কোলকাতার রাস্তা ঘাটের ব্যাস্ততা৷একটা হালকা হাওয়া ছেড়েছে মনে হয় কোথাও বৃষ্টি হয়েছে৷হাসফাঁসের গরমটা আজ নেই৷কাউন্টারে বসে দত্ত বাবু বাইরের রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছেন৷এমন সময় ঐ টিকিট বিক্রেতা বিভূতি ঘোষ দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল৷দত্ত বাবু লাফ দিয়ে চেয়ার থেকে নেমে দোকানের গেটের সামনে এসে জোড়ে হাকলেন৷"ঐ বিভূতি চলে যাচ্ছিস যে"৷বিভূতি ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে৷"আরে দত্ত দা বলুন বলুন"৷"বলুন মানে আমাকে লটারীর টিকিট টা গছালি তারপর৷আমার তো সব নম্বর গুলো মিলে গেছে৷"বিভূতি অবাক হয়ে বলে কই ঐ টিকিট টা যে এ চত্বরে লেগেছে এমন খবর তো আমার কাছে নেই কই দেখান টিকিটটা৷"৷দত্ত বাবু কম্পিত হস্তে টিকিট টা বিভূতির সামনে ধরে৷বিভূতি ঝোলা ব্যাগ থেকে একটা খবরে কাগজ বেড় করে মিলিয়ে দেখে বলে "দূর মশাই এত নম্বর মিলেছে সিরিজ মিলল কই৷"দত্ত বাবু অবাক হয়ে বলে" মানে সেটা আবার কি"বিভূতি বোঝায় এই যে দেখছেন ৬ টা নম্বর ৭৮৫৩৯২ তার আগে A আছে৷এইA টা হল সিরিজ আর যে নম্বরটা জিতেছে C৭৮৫৩৯২ তাই আপনি কোনও টাকা পাননি৷এই বলেই বিভূতি প্রস্থান করে৷দত্ত বাবুর উত্তেজনায় টান টান সব শিরা উপশিরা পেশী গ্রন্থি যেন এতক্ষণ পর ধীরে ধীরে শিথিল হল৷আস্তে করে চেয়ারে বসলেন৷একটা চরম শান্তির অনুভূতি হচ্ছিল৷বুকটা হালকা লাগছে৷বাইরের ঠান্ডা হাওয়া মাথা কপাল ছুঁয়ে গেল মনে হল কেউ যেন সস্নেহে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷মাথায় কোনও চাপ নেই৷ঈশ্বর তুমি আমার প্রার্থনা শুনেছ৷আমি আমার দৈনন্দিন জীবন দোকানের কাজ আমার নূন্যতম যা আয় হয় তাতেই খুশী বড় শান্তি৷আমার হঠাৎ করে বড়লোক হয়ে কাজ নেই৷আজ বড় হালকা লাগছে সব কিছু আবার আগের মত হয়ে গেছে৷আমি দিব্যি ছিলাম আর এরকমই থাকতে চাই৷শান্তি চাই৷শান্তির থেকে বড় উপহার এই বিশ্বে আর দ্বিতীয় কিছু নেই৷দোকানে কাজ মিটিয়ে রোজকার মত বাড়ি ফিরে রাতের খাওয়া সেরে ব্যালকোনির easy chair এ বসে আজ দত্ত বাবু যেন পরম শান্তি অনুভব করলেন৷বাইরের হাওয়া গায়ে লাগছে নিজেকে খুব হালকা লাগছে৷মনে হচ্ছে যেন ঐ হাওয়ার সাঙ্গে নিজেকে উড়িয়ে দিতে পারবেন৷আজ রাতে দত্ত বাবুর খুব স্বস্থির ঘুম হল৷