Translate

মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

অশ্বত্থ গাছ



       সরকারি চাকরির পরীক্ষার ফলাফলে not qualified দেখতে দেখতে হতাশ হয়ে পড়েছে অনু৷খোলা ছাদের নিচে একটা মাদুর পেতে শুয়ে উন্মুক্ত রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে কোনও হিসাবই মেলাতে পারছেনা সে৷কেন কোয়ালিফাই করতে পারছিনা৷গ্র্যাজুয়েশনের পর ৩বছর ধরে ঘরে বসে আছি  শুধু একটা সরকারি চাকরির আশায়৷ছোটবেলা থেকে কোনও দিন তো ফেল করিনি তবে এখন কেন এমন হচ্ছে৷কোচিং ক্লাসে স্যার বলেছেন.১ নম্বরের জন্যও নাকি পিছিয়ে পড়তে হয় কি জানি সমস্যাটা কোথায়৷
        সকালে উঠে লিকার খেতে খেতে পড়ে ,রাত জেগে কফি মগে চুমুক দিয়ে দিয়ে পড়ে, কোচিং পাল্টে ,কোচিং ক্লাসের সব নোট মুখস্থ করেও যখন কোনও ফল পাওয়া গেল না তখন অনুর মা স্মরাণাপন্ন হলেন এক জ্যোতিষীর কাছে৷পাড়ার মন্দিরা বৌদির কাছ থেকে পাওয়া ঠিকানা নিয়ে অনুকে সঙ্গে করে উপস্থিত হলেন জ্যোতিষীর বাড়ি৷বেশ বড় বাড়ি৷বসার ঘরে তাদের আগেও দুজন বসে অপেক্ষা করছে৷এরপর অনুদের পালা আসে৷জ্যোতিষী মশাই একটি ল্যাপটপ টেবিলের উপর রেখে চেয়ারে বসে আছেন৷অনুর মা বললেন"নমস্কার আমি আমার মেয়ের জন্য এসেছিলাম"৷গম্ভীর সুরে জ্যোতিষ বাবু বললেন"মেয়ের নাম ডেট অফ বার্থ"৷সব শুনে ভ্রূ দুটো কপালে তুলে বললেন"শনির সাড়ে সাতি চলছে৷"সাড়ে সাতি মানে কিছুই জানেনা অনু৷অনুর মনে হল যেন কোন রাক্ষস তার কপালে নাচছে তাই পরীক্ষায় কোয়ালিফাই করতে পারছেনা৷অনুর মা চিন্তিত হয়ে বলল"উপায় বলুন আমরা এখন কি করব"৷
—"গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থা খুব একটা ভালোনা৷প্রচুর বাঁধা রাহুর অবস্থা ভালোনা৷এদিকে বৃহস্পতি দুর্বল হয়ে পড়েছে৷রবির ঘরে রাহু"৷
—"আপনি উপায় বলুন"৷
—"আপনি একটা পান্না ৬থেকে৭ রত্তির দিয়ে দিন"৷
—"পান্না তা কত খরচ পড়বে"৷
            জ্যোতিষ বাবু যা এস্টিমেট দেন তা শুনে অনুর মা জ্যোতিষীর ফি ৩০০ টাকা দিয়ে বাড়ি চলে আসে৷মনে মনে ভাবতে থাকে অত টাকা নেই এখনই অত খরচ করতে পারব না৷কোচিং ক্লাসে ভর্তি বাবদ একেবারে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে৷এদিকে যা সব শুনে এলাম তাতে চুপ করে বসেও থাকতে পারিনা৷পড়াশোনায় এত ভালো মেয়েটা ঐ সাড়ে সাতি না কি হাতির জন্য মেয়েটার কিছুই হবেনা৷সন্ধ্যে বেলায় পাড়ার কালী মন্দিরে গিয়ে পুরোহিত মশাইকে বললেন"ঠাকুর মশাই মেয়েটার জন্য কি করি সরকারি চাকরির কত চেষ্টা করছে কিছুই হচ্ছেনা৷ঠাকুর মশাই বিধান দেন চাকরি পেতে গেলে প্রতি শনি বার অশ্বত্থ গাছের নিচে সর্ষের তেলের প্রদীপ জ্বালাতে হবে৷অনুর মা খুশী হয়ে বাড়ি ফিরতেই অনুকে বলল"মা কালির কাছে সব উপায় আছে মাকেই সব ঠিক করে দিতে হবে"অনু অবাক"সে কি  মা ,মাকালি তোমায় দর্শন দিয়েছে নাকি গো"৷অনুর মা অনুকে সব বিস্তারিত ভাবে জানায়৷পরের দিন সকাল বেলায় জল খাবারের রুটি ঘুগনি খেতে খেতে অনু জিজ্ঞাস করল"মা চারিদিকে এত ফ্ল্যাট অশ্বত্থ গাছ কোথায়?"অনুর মা বললেন "খুজলে তো ঈশ্বরও পাওয়া যায় আর অশ্বত্থ গাছ পাবি না৷"
             খুজেপেতে অনু একটা বিশাল অশ্বত্থ গাছ পেল কিন্তু ঐ গাছের পাশে একটা চায়ের দোকান ৷সব চ্যংড়া ছেলেদের ভিড় ওখানে কি প্রদীপ জ্বালা যায়৷মাকে এসে বলে কি করা যায় বলত ৷আমি এখন ঘুমলেও স্বপ্নে অশ্বত্থ গাছ খুজি৷অনুর মা বললেন"সব গাছ কেটে ফ্ল্যাট বাড়ি দোকান রাস্তা হবে তো কি হবে তাই অশ্বত্থ গাছও নেই ছেলে মেয়ে গুলোর সরকারি চাকরিও জোটেনা৷"গুগল সার্চ করলে সবকিছু চোখের সামনে চলে আসে আর একটা অশ্বত্থ গাছ পাইনা যার নিচে প্রদীপ জ্বালা যায়৷
                 অনু একটা কুর্তি বানাতে দিয়েছিল সেটা দর্জি বেটা এমন বেঢপ বানিয়েছে অনু সকাল বেলা ঐ কুর্তি নিয়ে রওনা হল টেলারের কাছে৷ফুটপাথের উপর দিয়ে হাঁটছে রাস্তার ওপারে দোকান আজ সকাল থেকে ওয়েদারটা একদম ভালো না গুমোট গরম তেমনি রোদ৷অনু আবার ছাতা নিয়ে বেড়তে ভুলে গেছে৷স্কিন ট্যান হবেই আজ৷তেমনি ট্রাফিক জ্যাম চারিদিকে  গাড়ির ধোঁয়া ধূলোয় অসহ্য লাগছে হাঁটতে৷এই অস্বস্তির মধ্যেই অনুর চোখে পড়ল শ্রীলেদার্স শো রুমের উপর সাড়ীর নতুন বুটিক খুলেছে আবার শ্রীলেদার্স ২০%অফ দিচ্ছে৷অনুর মনে হল এবছর চাকরি হলে মাকে বুটিকের সবথেকে দামী সাড়ীটা কিনে দেব৷কাঁধের ওড়নাটা তুলে মুখটা আকাশের দিকে করতেই হঠাৎ একটা অশ্বত্থ পাতা অনুর গায়ে এসে পড়ল৷একি অশ্বত্থ পাতা এখানে৷চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখে ফুটপাথের পাশে একটা বিরাট অশ্বত্থ গাছ তার নিচে ছোট্ট একটা শিব মন্দির৷এতদিন ধরে এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছা কোনও দিন খেয়াল করিনি৷নতুন খাদিমের শোরুম সেনকোর শোরুম বা রেস্টুরেন্ট খুললে আমাদের চোখে ঠিক পড়ে যায় অথচ এতদিন ধরে এই অশ্বত্থ গাছটা অবিরাম অক্সিজেন সরবরাহ করে নিজের অস্তিত্ব জানান দিয়ে যাচ্ছে তবুও আমাদের নজরে পড়ছে না৷অনু জুতো খুলে অশ্বত্থ গাছের নিচে এসে দাঁড়াল শীতল ছায়ায় শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল৷হাতজোড় করে অনু সংকল্প করল চাকরির জন্য না হোক পরিবেশকে তোমার নিঃশর্ত দানের জন্য আমি একখানা প্রদীপ নিশ্চয় জ্বেলে যাব৷

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন