Translate

শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ডায়েরি

         
             "কাল রাত অবধি আমার ডায়েরিটা এই শোকেজের উপর ছিল আর এখন উধাও"৷এই বলে ভায়েরির খোঁজে বাড়ির সকলকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলল মুকুল দে৷মেয়ে বৌ খানিক এদিক ওদিক খুঁজে আবার যে যার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল৷এক সময় রেলের কর্মী ছিলেন মুকুল দে এখন অবসরপ্রাপ্ত৷অবসরের কয়েক বছর আগের থেকে উনি ডায়েরি লেখা অভ্যেস করেছেন৷তাতে অবশ্য দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপ লেখেন না ঐ ডায়েরিতে রোজকার বাজার দোকানের খরচের হিসেব নিকেশ লেখেন উনি৷খুঁজতে খুঁজতে হাঁটু গেড়ে বসে নিচু হয়ে খাটের তলা  শোকেজের তলা ভালো করে দেখলেন না..কোথায় গেল৷এমন সময় পাড়ার রাস্তা দিয়ে ঠেলা গাড়ি করে"সবজি...সবজি .."হাকতে হাকতে সবজিয়ালা উপস্থিত৷ডায়েরি খোঁজাবন্ধ করে  জানলায় উঁকি দিয়ে সবজিয়ালাকে জিঞ্জেস করলেন"পটল কত করে আর ঢেঁড়স কত করে দিচ্ছ?"
—"বাবু পটল ৩০ টাকা আর ঢেঁড়স ৪০"৷সবজির দর পোশাল না৷অাজ সকালে উনি বাজারে গিয়েছিলেন ব্যাগ ভর্তি বাজির করেছেন৷তাই পাড়ার সবজির দরের সঙ্গে বাজারের দরের তফাৎটা দেখে নিলেন৷আজ সকালে ২কেজির একটা কাতলা মাছ কিনেছেন স্ত্রী শর্মিলাকে বাজার থেকে ফিরে বলেছিলেন"আজ জিরের পাতলা ঝোল করো কদিন ধরে গ্যাস অম্বলের প্রকোপটা বেড়েছে"৷সকালে বাজারের হিসেব লিখতে গিয়েই ডায়েরির খোঁজ৷এরই মধ্যে পায়েল "মা আসছি"বলে কম্পিউটার ক্লাসের জন্য বেড়ল৷মুকুল নিজের মনে মনে বলতে লাগল মেয়েটাও তেদড় হয়েছে৷ছোটবেলায় বাবা বাবা করে ঘুরত এখন মায়ের ভক্ত হয়েছে৷বাপের কোনও কাজে আসেনা৷কাজের বৌ লতা ঝাঁটা হাতে ঘরে ঢুকে ফ্যানের সুইচটা বন্ধ করল৷মুকুল লতাকে বলল"ভালো করে ঝাঁটা দিয়ে সব তলা গুলো দেখতো একটা ডায়েরি পাচ্ছি না"লতা ঘরির কাঁটার মত ঝাঁটাটা এপাশ থেকে ওপাশ ঘুরিয়ে বলল"কই কিছু নেই তো"৷
             ডায়েরি খুঁজতে খুঁজতে পুরনো খবরের কাগজের মধ্যে থেকে কতগুলো পুরনো ডায়েরি পেল৷পটল ১০টাকা কেজি ঢেঁড়স ১০৷বাবা দিনে দিনে দাম বাড়ছে৷ডায়েরিটা পাওয়া গেলনা৷বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুকুলকে কাবু করেছে হাইব্লাড প্রেসার আর স্পনডিলোসিস৷মুকুলের আবার হোমিওপ্যাথিতে খুব বিশ্বাস৷ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখল ঔষুধ খাওয়ার সময় হয়েগেছে কাপে অল্প জল ঢেলে ঔষুধের শিশি থেকে ফোঁটা গুনে গুনে ঔষুধ ফেলে খেয়ে নিল তারপর শিশি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখল হোমিওপ্যাথি ওষুধের দামও দিনে দিনে বাড়ছে৷এই প্রেসারের ঔষুধের দাম ছিল৬৮টাকা লাফিয়ে লাফিয়ে দামবেড়ে হল ৮৫টাক৷খাটের উপর শুয়ে গড়াতে বেশ ভালো লাগে৷বেলা হয়েছে শর্মিলা এসে বলল"চান সেরে নাও আমার রান্না হয়ে গেছে"
—"বুঝলে ডায়েরিটা পেলাম না"৷শর্মিলা বিরক্ত হয়ে বলল"উফ্ কি করবে অত হিসাব করে"৷মুকুল অবসরের পর যা টাকা পেয়েছে তাতে একটা ২বেডরুম ফ্ল্যাট কিনেছে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছে৷ছোটজন এখনও পড়ছে৷তাদের সকলের ভবিষ্যত এখন পেনশন আর পোস্ট অফিসের এম.আই.এস এর উপর নির্ভর তার উপর বাজার দর আগুন৷
             যতই বেলা বাড়ুক মুকুলের স্নান করতে বড় আলস্য আসে৷মনে হয় সবথেকে পরিশ্রমের কাজ৷জানলায় উঁকি দিয়ে দেখে দুটো হুলো বিড়াল ম্যাও ম্যাও করে গজড়াচ্ছে৷দুজনই গা ফুলিয়ে লেজ ফুলিয়ে ঢোল৷সামনের বাড়ি থেকে কে বেশ জল ছুড়তেই দুজন পাঁচিল টপকে দুদিকে পালাল৷শর্মিলা পিঠে হাত দিয়ে ডেকে বলল"চোখের সামনে জিনিস থাকলেও দেখতে পাও না"৷এই বলে ডায়েরিটা মুকুলের সামনে ধরল৷

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন