Translate

মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

অযথা দেরি

             "কি গো টিয়ার চব্বিশ বছর বয়স হল সম্বন্ধ না খুজলে পাত্র এমনি এমনি পাবে?"গিন্নীর প্রশ্নে একটু চিন্তিত হয়ে হাতের খবরের কাগজটা পাশে টেবিলে রেখে সোফায় গা হেলিয়ে অমর মিত্র বলে উঠল"পাত্র সন্ধানের উপায় তো অনেক আছে কিন্তু কোন উপায়টাকে বাছব তাই ভাবছি"৷গিন্নী গামছা দিয়ে মাথার চুল মুছতে মুছতে বলল"কেন খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দাও না"৷সেই মত বিজ্ঞাপন দেওয়া হল৷বিজ্ঞাপনের ফলও ভালোএল৷ডজন ডজন চিঠি আসতে শুরু করল৷ঐ ডজন থেকে কিছু বাছাই চিঠির মধ্যে একজন ব্যাঙ্ক কর্মীর সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ হল৷
             অমর মিত্র চিঠিতে দেওয়া কনট্যাক্ট নম্বর থেকে মোবাইলে ডায়েল করতেই খানিক্ষণ"ওম জয় জগদীশ হরে..."বাজার পর একজন গম্ভীর সুরে হ্যালো বললেন৷অমর মিত্র এপাশ থেকে বললেন"আমি শ্রীরামপুর থেকে অমর মিত্র বলছি সম্বন্ধের ব্যাপারে ফোন করেছিলাম"৷
—"হ্যা বলুন"
—"তা এখানে শ্রীরামপুরে একদিন আসুন পাত্রী দেখে যান আপনার ছেলের বায়ো ডাটা আমাদের পছন্দ হয়েছে"৷
—"কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিল আপনারা আগে আমাদের বাড়ি মানে ব্যারাকপুর ঘুরে যান"৷
         ফোন রেখে অমর গান্নীকে বলে"হ্যা গো এতো দেখছি উল্টো নিয়ম,পাত্র পক্ষই তো আগে আসে"৷গিন্নী বেশী গভীর চিন্তায় না গিয়ে বললেন"আজ কাল দিন বদলেছে ঘুরেই এসনা"৷অমর তার শালা আর ছোট মেয়ে তিতাসকে নিয়ে ব্যারাকপুর উপস্থিত হয়৷বড় একতলা বাড়ি সুন্দর ভাবে গোছ গাছ করা দামী ফার্ণিচার দিয়ে সাজানো৷ছিমছাম পরিবার ৷ভদ্রলোক একসময় খুবই ভালো চাকরি করতেন৷ভদ্রলোক এবং ভদ্রমহিলা দুজনেই অমর মিত্রের একটা ছোট খাট ইন্টারভিউ নিয়ে নিলেন৷তিতাস অনেক চেষ্টা করেও পাত্রের ঝলক পেলনা ড্রয়িং রুমে একটা ছবিও নেই৷রবিবার পাত্রের ছুটি তাই সেই দিন পাত্রী দেখতে আসার দিন স্থির হল৷রবিবার সকাল থেকেই টিয়াদের বাড়িতে নানা প্রস্থুতি চলছে৷পর্দা বদলান হল৷সযত্নে তুলে রাখা বোনচায়নার ফুলদানীটা বেড়িয়ে পড়েছে৷ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য তাজা রজনীগন্ধা আর গোলাপ ঐ ফুলদানীর শোভা আরও বাড়িয়ে তুলেছে৷সোফার লাল ভেলভেট কাভার পরাতে পরাতে অমিতকে যথেষ্ট  গলদঘর্ম হতে হয়৷সবকিছু ঠিক ঠাক এবার পাত্রের অপেক্ষা৷টিয়াকে খুবই মিষ্টি দেখতে তারপর ইংরাজীতে এম.এ করেছে৷কলিং বেল বাজতেই দরজা খুলে অতিথিদের আগমন হল৷তিতাস পাত্র দেখে ছুট্টে গিয়ে টিয়াকে বলল"দিদি কি দেখতেরে যেমন কালো তেমন মোটা তুই না করে দিবি "৷টিয়া কানে দুল পরতে পরতে বলল"রিয়েল লাইফে এরকমই হয় তিতাস,বলিউডের সলমান সম্বন্ধ দেখতে আসে না"৷টিয়া আর তিতাস হালে 'হাম্ দিল দ্যে চুকে সনম'দেখেছে৷তিতাস হতাশ ভাবে বলল"তবে আমার বিয়ে করে কাজ নেই ভগবান আমায় বাঁচিও"৷দেখাশোনা চলছে ৷সুশ্রী টিয়াকে দেখে পাত্র বেশীক্ষণ আবেগ চেপে রাখতে পারল না৷প্রানখুলে অফিস বাড়ির সব কথা বলতে বলতে ছেলেবেলার এক ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলল"আমি দুষ্টামি করে দাদুর তাড়া খেয়ে মামাবাড়ির গরুঘরে লুকিয়ে পরতাম"বলে একাই হাহা করে হাসতে থাকে তাকে সঙ্গ দিতে সবাই একে একে হি হি হা হা করে হাসে৷তারপর বেশ কিছুদিন গেল কিন্তু পাত্র পক্ষের থেকে কোনও খবর পাওয়া গেল না হয়ত পাত্র পক্ষ বলে তারা নিজেদের প্রয়োজনাতিরিক্ত গুরুত্ব দিচ্ছিল৷তিতাস হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে দিদির তো বোধ কম আছে ঐ হাতির ছানা যেন আর ফোন না করে সে আবার গোয়াল ঘরকে গরুঘর বলে৷অমরেরও তেমন পাত্র পছন্দ হয়নি তাই সে অন্যত্র মেয়ের সম্বন্ধ স্থির করে৷সুদর্শণ অবস্থাপন্ন পাত্রের সঙ্গে টিয়ার বিয়ে হয়ে যায়৷অষ্টমঙ্গলার দিন বাড়িতে মেয়ে জামাই এসেছে অমরের মোবাইল বেজে ওঠে৷হ্যালো বলতেই ফোনের ওপাশ থেকে গম্ভীর সুরে ভদ্রলোক বললেন"কি হল আপনারা তো আর যোগাযোগ করলেন না"৷অমর বুঝতে পারে ইনি সেই ভদ্রলোক৷"সে তো আপনাদের করার কথা ছিল৷আমরা ভাবলাম আপনাদের পাত্রী পছন্দ হয়নি তাই অন্যত্র সম্বন্ধ করলাম"৷ভদ্রলোক হতচকিত হয়ে সামান্য উত্তেজিত হয়ে বললেন"সে কি মশাই আমরা তো আপনাদের অপেক্ষায় ছিলাম,আমার ছেলেকে নিশ্চই আপনাদের ভালোলেগেছে তাই আমরা যথেষ্ট আশাবাদী ছিলাম"৷অমর শান্ত ভাবে বলল"কিন্তু মেয়ের তো বিয়ে হয়ে গেছে দাদা bad luck আপনি অযথা দেরি করলেন৷"

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন