Translate

শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

শান্তি

ঘোর গ্রীষ্ম মে মাস৷মানিকতলার রাস্তার উপর এক বিশাল বাড়ি৷সেই বাড়িতে ভাড়াটেও অনেক৷বাড়িটি চারতলা দ্বিতীয় তলায় থাকেন দত্তবাবুর পরিবার ৷গত বছর উনি নতুন এই বাড়িতে ভাড়া এসেছেন পেশায় ব্যাবসায়ী৷ফুলবাগানে রাস্তার উপর দত্ত বাবুর একটি জেন্টস কাপড়ের দোকান৷প্যন্টের পিস শার্টের পিস বিক্রি হয় আবার টেলারিং এর কাজও হয়৷উনি নিজে বড় টেলার৷আসামের হাইলাকান্দি জেলা থেকে উনি কাটিং শিখেছিলেন৷সেই সময় রেডি মেড পোশাকের আধিক্য এখনকার মতো ছিলনা৷ঘটনাটি আজ থেকে বেশ কিছু বছর আগেকার৷দত্ত বাবু রোজ সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে স্নান আহ্নিক সেরে বাড়ির সামনের দিকের ব্যালকনি তে বসে চা খান আর খবরের কাগজ পড়েন৷তারপর সকাল ৯ টা বাজতেই দত্ত বাবুর স্ত্রী তাকে সাজিয়ে জলখাবার খেতে দেন উনি তাই খেয়ে দোকানে রওনা হন৷দত্ত বাবুর চেহারাটা বেশ৷লম্বায় প্রায় ৬ফুট সোজা টানটানে৷বয়সের কারণে শরীরে কিছু মেদ জমেছে ,গায়ের রং কালো কিন্তু বয়সের কারণে ত্বকে একটিও ভাঁজ পরেনি টানটানে মসৃণ ত্বক আর মুখশ্রীও সুন্দর৷এক কথায় সুপুরুষ বলা যায়৷ওনার নিজের প্যান্ট শার্টের দোকান থাকলেও উনি সব সময় সাদা ফক্ ফকে ধুতি পাঞ্জাবী পরতেন৷দত্ত বাবুর চার মেয়ে তিন ছেলে ও স্ত্রী৷সংসারে অভাব নেই স্বচ্ছল পরিবার কিন্তু ঐ একটি দোকান থেকে যা আয় হয় তাতে সকলের সবরকম চাহিদা সখ আল্হাদ মেটান কষ্টকর হয়৷তারপর বড় ও মেজ কন্যা তো বিবাহযোগ্যা৷বাকি ছেলে ও মেয়েদের পড়ার খরচ ছেলেদের ভবিষ্যৎ এই সকল চিন্তা তো সব সময় রয়েছে৷তাই আর্থিক অবস্থার উন্নতি হলে এই সব চিন্তাগুলো দূর হত এই ভাবনা সব সময় দত্ত বাবুর মনে আসে৷স্বভাবে মিশুকে কিন্তু খুব কম কথা বলেন উনি৷দোকান খুলে ঠাকুর কে ধূপ দেখিয়ে কাউন্টারে বসেছেন ৷চারজন কর্মচারী রয়েছে তারা তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে৷বেলা তখন বারোটা হঠাৎ এক লটারী টিকিট বিক্রেতা দত্ত বাবুর দোকানে এসে হাজির৷সে দত্ত বাবুকে বলে" দাদা একটা টিকিট নিন না৷"দত্ত বাবু এমনিতে সাংঘাতিক হিসেবী মানুষ উনি অপ্রয়োজনীয় খরচ করাকে নানান অপরাধের মধ্যে একটি অপরাধ হিসাবে গণ্য করেন৷তাই লটারির টিকিট নৈব নৈব চ৷ উনি এতটাই হিসেবী যে মন্দিরের প্রনামী বাক্সে টাকা না দিয়ে ঘরের ঠাকুর ঘরে একটি ঘটের স্থাপন করেছেন এবং প্রত্যেক দিন ঐ ঘটেই প্রণামি মানে আধুলী সিঁকি যখন যা থাকে তা জমা করেন এবং পরিবারের সকলকে এই নির্দেশ দিয়েছেন বছর শেষে ঐ ঘট ভেঙে ঠাকুরের কাজের যাবতীয় জিনিস কেনা হবে৷এমন হিসেবি মানুষ কি আর লটারীতে অর্থ ব্যয় করতে পারে৷কিন্তু লটারী বিক্রেতা নাছোড়  বান্দা "একটা টিকিট দাদা আপনাকে নিতেই হবে৷বেশী দাম নয় একটাকা মাত্র৷নিন না আরে দেখুন না হয়ত লাখপতি হয়ে গেলেন৷আরে কখন কার ভাগ্য ঘোরে বলা যায়৷"লাখপতি এই শব্দ যেন বুকের ভিতর মনের দরজায় একটা ধাক্কা দিল৷লাখপতি৷এবার দত্ত বাবুর মন একটু confuse হয়ে গেছে৷আমতা আমতা করে উনি বললেন" তা দাও দেখি এত বলছ যে কি করি৷"উনি টিকিট টা পাঞ্জাবীর বুক পকেটে রেখে কাউন্টার থেকে একটা টাকা টিকিট বিক্রেতার হাতে ধরিয়ে দিলেন৷এরপর নানা কাস্টমার তাদের কাপড় দেখান৷কেউ কেউ আবার শার্ট বানাতে আসছে সামনে পয়লা বৈশাখ অনেকেই আগের থেকে বানাতে না দিয়ে সেই মুখে মুখে অর্ডার দিতে আসে তারপর ডেলিভারী পয়লা বৈশাখের আগে  করতে হবে  এই আব্দার করে৷তাই পুরোদিনটা প্রায় ব্যস্ততায় কাটল৷আজ বাড়ি ফিরতে বেস বেলা হয়ে গেছে ৷তারাতারি করে হাত মুখ ধুয়ে ধুতি পাঞ্জাবী ছেড়ে উনি খেতে বসলেন৷ছেলে মেয়েরাও না খেয়ে বাবার জন্য অপেক্ষা করছিল ৷সবাই মিলে মাটিতে আসন পেতে খেতে বসেছে৷দত্ত বাবুর স্ত্রী খুব ভালো রাঁধেন৷গরম কাল পাখা ঘুরছে তাতেও সকলের ঘাম হচ্ছে৷দত্ত বাবুর স্ত্রী কাঁসার থালা বাটিতে সাজিয়ে খেতে দিলেন৷ভাত পটলের দোরমা কাতলা মাছের ঝোল কাঁচা আমের টকের ডাল আর তার সঙ্গে ঢেঁড়স ভাজা৷খাওয়ার পর দত্ত বাবু একটু দুপুরের ঘুম ঘুমোন তারপর বিকেল চারটে বাজতেই  চা খেয়ে আবার দোকানের জন্য রওনা হন৷আজ এমনিতেই বেলা হয়ে গেছে তাই আজ আর শুলেন না৷ভেতেরর ঘরে চেয়ারে বসে সকলের সঙ্গে গল্প করছেন৷হঠাৎ খেয়াল হল আজ সকালে উনি একটা লটারীর টিকিট কেটেছেন৷বাড়ির লোকেদের সেকথা জানাতে সকলেই তো নানা আব্দার শুরু করে দেয়৷যেন লটারীর টিকিট কেনেনি লটারীতে টাকাই পেয়ে গেছেন৷কে পুজোর সময় কোথা থেকে দামি শাড়ি কিনবে কটা গয়না বানাবে এই নিয়ে নিজেরাই গল্প জুড়ে দেয়৷দত্ত বাবু ছেলে মেয়েদের ক্ষাণিকের এই উল্লাস দেখে নিজেকেও ওদের আনন্দে ভাসিয়ে দেন৷তারপর আবার দোকানের জন্য রওনা হলেন৷এই বেলাতেও কাজের ভালো চাপ ছিল৷বাড়ি ফিরতে প্রায় রাত ১১টা বাজল৷দোকানের হিসাব মিলিয়ে কর্মচারীদের পাওনা মিটিয়ে দোকানে তালা দিয়ে ফিরতে ফিরতে প্রায় রোজদিনই দেরি হয় এখন তো আবার পয়লা বৈশাখের সিজিন চলছে৷রাত্রে বেলায় খাওয়ার খেয়ে ঐ বাড়ির সামনের ব্যালকনিতে  বসার অভ্যাস আছে উনার তাই সেই জন্য একটা easy chair সবসময় ব্যালকনিতে রাখা থাকে৷easy chair এ গা হেলিয়ে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সারা দিনের কথা উনি এই সময় বসে বসে ভাবেন৷আজও এই নিয়মের ব্যতিক্রম হল না৷তবে আজকের ভাবনাটা যেন একটু অন্য রকম৷আচ্ছা লটারীতে যদি সত্যি লাখ টাকা পাই৷তখনকার দিনে লাখ টাকার যথেষ্ট মূল্য ছিল৷তা দিয়ে গাড়ি বাড়ি অনায়াসে কেনা যেত৷তখন সোনার দরই ছিল ৫০০টাকা৷দত্ত বাবু এবার স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করলেন৷টাকাটা যদি সত্যিই পাই মেয়ে গুলোর বিয়ে বিরাট ধুমধাম করে দেব সব আত্মীয়দের দশদিন আগের থেকে নেমন্তন করব৷বাড়িতে ঠাকুর দিয়ে রান্না হবে৷কি আনন্দ৷দত্ত বাবুরা পাঁচ বোন তিন ভাই তাদের ছেলে মেয়ে নিয়ে বিশাল পরিবার৷উনি মনে মনে ভাবতে শুরু করলেন,একটা বড় বাড়ি বানাবো সেইখানে বিবাহিত দিদিদের জন্য কতগুলো আলাদা ঘর রাখব ওরা যখন ইচ্ছে এসে এখানে থাকবে৷দত্ত বাবুর স্ত্রীর নাম কমলাদেবী৷সকাল থেকে রাত অবধি উনি সংসারের কাজে ব্যস্ত থাকেন৷প্রচুর পরিশ্রম করেন নিজের জন্য সময় বার করতে পারেন না৷স্বামি স্ত্রী একসাঙ্গে বসে গল্প করেননি প্রায় বহু বছর৷তাই এবার থেকে কমলা আর কোনও কাজ করবে না ওর আগে পিছে ঘুরবে এমন দুটো লোক রাখব আর ছেলে গুলোকে এই দোকানের কাজে ঢোকাব না ওদের অনেক লেখা পড়া করাব যাতে বড় চাকরি করতে পারে৷এই সব ভেবে দত্ত বাবুর বুক আনন্দে ভরে গেল সেই দিন উত্তেজনায় সারা রাত ঘুম হল না৷পরের দিন সকাল বেলা রোজকার রুটিণ অনুযায়ী সেই দোকানে যাওয়া দোকানের কাজের ব্যস্ততা এইভাবে গেল বেশ ক দিন৷এবার এল সেই বিশেষ দিন যেদিন টিকিটের রেজাল্ট বেড়ল পয়লা বৈশাখ বাম্পার৷সকালে উঠে এক হাতে খবরের কাগজ আর অন্য হাতে লটারীর টিকিট নিয়ে বসে পরলেন ব্যালকনির চেয়ারে৷প্রচণ্ড উত্তেজনায় হাতটা সামান্য কাঁপছে বুকটাও ধুকধুক করছে৷ছেলে মেয়ে স্ত্রী সকলেই আজ ঐ ব্যালকোনিতে দত্ত বাবুকে ঘিরে রয়েছে৷টিকিটটা মিলিয়ে দেখলেন ৬টা নাম্বারই মিলে গেছে৷উত্তেজনার শেষ নেই যেন৷চারিদিক বোঁ বোঁ করে ঘুরছে৷ছোট ছেলে দুটো তো আনন্দে চিৎকার করে উঠেছে মেয়ে গুলোর হাসিও থামে না৷দত্ত বাবুর চেটো ঘামে ভিজে গেছে কপালেও বিন্দু বিন্দু ঘাম৷এও কি সম্ভব৷হঠাৎ চেঁচিয়ে ছেলে মেয়েদের ধমকের সুরে বললেন "চুপ কর৷সবাই কে জানিয়ে ছাড়বি ,আমার কাছে এতগুলো টাকা আছে"৷ছোট ছেলেটির বয়স ৬ নাম হল নিমাই৷নিমাই করুণ ভাবে বলল "লোকে জানলে কি হবে বাবা৷"এই প্রশ্নের উত্তর দত্ত বাবুর কাছে ছিলনা কিন্তু এই প্রশ্নটা যেন অবচেতন মনের দুশ্চিন্তা গুলোকে মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দিল৷খানিক্ষন চুপকরে থাকার পর উনি বললেন "তোরা আমায় একটু একা থাকতে দে৷একি হল এত দিনের অপেক্ষা যেটা চাইছিলাম সেটা পাওয়ার পর আমার মন অশান্ত কেন৷দিন কাল ভালো না আমার বাড়িতে এত গুলো মেয়ে আছে তার মধ্যে দুজন তো বিবাহযোগ্যা৷এত টাকার খবর পেয়ে বাড়িতে যদি ডাকাত পরে৷নানা এমন কেন হবে৷ছোট ছেলে দুটো তো হামেশাই এদিক ওদিক খেলতে যায় যদি কেউ টাকার জন্য  অপহরণ করে না না এসব হবে কেন৷এসব ভাবতে ভাবতে দত্ত বাবুর শরীরটা যেন পাঁক দিয়ে উঠল৷মাথাটা ঘুরছে৷বাথরুমে গিয়ে ঘাড়ে মুখে জল দিলেন৷আজ জল খাবারে কিছুই খেলেন না চা বিস্কুট খেয়ে দোকানে রওণা হলেন৷দোকানে কাজ চলছে বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাৎ দত্ত বাবুর বড় মেয়ে কুসুম হন্ত দন্ত হয়ে এসে বলল "বাবা নীতা কোন সকালে স্কুলে গেছে এখনও ফেরেনি৷নীতা হল দত্ত বাবুর ছোট কন্যা৷দত্ত বাবু আঁতকে উঠলেন "সেকি বাড়ি ফেরেনি মানে৷"না এখনও ফেরেনি" কুসুম উত্তর দিল৷দত্ত বাবু দর দর করে ঘামতে শুরু করেছেন৷বুকের ভেতর কেউ যেন হাতুরী পেটাচ্ছে৷এক কারিগর কে বললেন "রহিম মিঞাঁ যাও তো একবার স্কুল চত্বরটা দেখে এস৷"কারিগরও শোনামাত্র কাজ ফেলে পায়ে  চটি গলিয়ে শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে ছুটল স্কুলের পথে৷দত্ত বাবু কারিগরদের ভরসায় দোকান ফেলে ছুটলেন বাড়ি৷বাড়িতেও সকলে উদ্বিগ্ন কমলা দেবী সাধারণতঃ সব বিষয়ে নিরুত্তাপ থাকেন৷এই লটারীর ব্যাপারেও ওনার বিশেষ আগ্রহ ছিলনা কিন্তু আজ উনিও বাড়ির বাইরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন৷দত্ত বাবু আর বাড়িতে ঢুকলেন না৷রাস্তায় রাস্তায় কোথায় মেয়েকে খুজব৷হাঁটতে হাঁটতে আবার ফুলবাগানের মোড়ে এলেন৷সেখানে কালী মন্দির আছে৷মন্দিরে মায়ের কাছে হাত জোড় করে প্রার্থনা করলেন "হে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান তুমিই আমার ভরসা৷মাগো আমার টাকা পয়সা ধন দৌলত কিছু চাই না৷আমার আজ বিশাল বিপদ তুমি আমায় রক্ষা কর৷"বুকের বাঁ পাশটা চিন্ চিন্ করে ব্যথা করে উঠল৷প্রচন্ড গরম পাঞ্জাবী ঘামে ভিজে গেছে শরীর মাথা আর চাপ নিতে পারছে না৷"তবে কি পুলিশে missing diary করব৷আমি কেন লোভে পড়ে লটারীর টিকিট কিনলাম৷ঐ থেকেই এত বিপত্তি৷ থানায় যাওয়ার আগে একবার বাড়ি যেতে হবে৷থানায় যদি ছবি চায় তা পাব কোথা থেকে"৷বেলা তখন গড়িয়ে প্রায় দুটো৷ঘরে ঢুকে দেখেন নীতা খাটের উপর বসে পাশের চেয়ারে দত্ত বাবুর জামাইবাবু মানে নীতার পিশেমসাই৷জামাই বাবুর নাম সতীশ সরকার৷উনি কাছাকাছি থাকেন৷সতীশ বাবু জানান"ওর স্কুল থেকে ফেরার পথে আমার সঙ্গে দেখা হল আমি বললাম কিরে পিসির কাছে যাবি?নীতা রাজি হয়ে গেল তাই নিয়ে গিয়েছিলাম৷"দত্ত বাবু বললেন"সেকি সতীশদা এ দিকে আমরা তো প্রায় থানা পুলিশ করব এমন অবস্থা৷"সতীশ বাবু জানালেন "না না এ তো আমারই ভীমরতি হয়েছিল৷"দত্ত বাবুর মেজদি নিঃসন্তান তাই দত্ত বাবুর ছেলে মেয়ে কে মেজদি ও জামাই বাবু নিজ সন্তানের মতো স্নেহ করেন৷যাক গিয়ে ঐ দিন মেয়ে কে ঘরে দেখতে পেয়ে দত্ত বাবুর বুকের চিন্ চিনে ব্যাথাটা কমল৷দুপূর বেলা খেতে বসে তেমন কিছু খাওয়া হল না৷সারাটা দিন যা গেছে তাতে কমলাদেবী বিশেষ কিছু রান্না করতে পারেন নি৷মুসুরির ডাল আলু সেদ্ধ মাখা মাছ ভাজা দিয়ে সকলের আহার সম্পন্ন হল৷বিকেল চারটে বাজতেই মেজ মেয়ে ডালিয়া বাবা কে চা করে দিল৷আলমারি থেকে পাট করা কাচা ধুতি পাঞ্জাবী বের করে দিল৷চা খেয়ে কাচা ধুতি পাঞ্জাবী পড়ে মৃদু হেসে ডালিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দত্ত বাবু বেড়িয়ে পরলেন সঙ্গে নিলেন লটারীর টিকিট৷সন্ধ্যে ৭ টা কোলকাতার রাস্তা ঘাটের ব্যাস্ততা৷একটা হালকা হাওয়া ছেড়েছে মনে হয় কোথাও বৃষ্টি হয়েছে৷হাসফাঁসের গরমটা আজ নেই৷কাউন্টারে বসে দত্ত বাবু বাইরের রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছেন৷এমন সময় ঐ টিকিট বিক্রেতা বিভূতি ঘোষ দোকানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল৷দত্ত বাবু লাফ দিয়ে চেয়ার থেকে নেমে দোকানের গেটের সামনে এসে জোড়ে হাকলেন৷"ঐ বিভূতি চলে যাচ্ছিস যে"৷বিভূতি ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে৷"আরে দত্ত দা বলুন বলুন"৷"বলুন মানে আমাকে লটারীর টিকিট টা গছালি তারপর৷আমার তো সব নম্বর গুলো মিলে গেছে৷"বিভূতি অবাক হয়ে বলে কই ঐ টিকিট টা যে এ চত্বরে লেগেছে এমন খবর তো আমার কাছে নেই কই দেখান টিকিটটা৷"৷দত্ত বাবু কম্পিত হস্তে টিকিট টা বিভূতির সামনে ধরে৷বিভূতি ঝোলা ব্যাগ থেকে একটা খবরে কাগজ বেড় করে মিলিয়ে দেখে বলে "দূর মশাই এত নম্বর মিলেছে সিরিজ মিলল কই৷"দত্ত বাবু অবাক হয়ে বলে" মানে সেটা আবার কি"বিভূতি বোঝায় এই যে দেখছেন ৬ টা নম্বর ৭৮৫৩৯২ তার আগে A আছে৷এইA টা হল সিরিজ আর যে নম্বরটা জিতেছে C৭৮৫৩৯২ তাই আপনি কোনও টাকা পাননি৷এই বলেই বিভূতি প্রস্থান করে৷দত্ত বাবুর উত্তেজনায় টান টান সব শিরা উপশিরা পেশী গ্রন্থি যেন এতক্ষণ পর ধীরে ধীরে শিথিল হল৷আস্তে করে চেয়ারে বসলেন৷একটা চরম শান্তির অনুভূতি হচ্ছিল৷বুকটা হালকা লাগছে৷বাইরের ঠান্ডা হাওয়া মাথা কপাল ছুঁয়ে গেল মনে হল কেউ যেন সস্নেহে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷মাথায় কোনও চাপ নেই৷ঈশ্বর তুমি আমার প্রার্থনা শুনেছ৷আমি আমার দৈনন্দিন জীবন দোকানের কাজ আমার নূন্যতম যা আয় হয় তাতেই খুশী বড় শান্তি৷আমার হঠাৎ করে বড়লোক হয়ে কাজ নেই৷আজ বড় হালকা লাগছে সব কিছু আবার আগের মত হয়ে গেছে৷আমি দিব্যি ছিলাম আর এরকমই থাকতে চাই৷শান্তি চাই৷শান্তির থেকে বড় উপহার এই বিশ্বে আর দ্বিতীয় কিছু নেই৷দোকানে কাজ মিটিয়ে রোজকার মত বাড়ি ফিরে রাতের খাওয়া সেরে ব্যালকোনির easy chair এ বসে আজ দত্ত বাবু যেন পরম শান্তি অনুভব করলেন৷বাইরের হাওয়া গায়ে লাগছে নিজেকে খুব হালকা লাগছে৷মনে হচ্ছে যেন ঐ হাওয়ার সাঙ্গে নিজেকে উড়িয়ে দিতে পারবেন৷আজ রাতে দত্ত বাবুর খুব স্বস্থির ঘুম হল৷

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন