Translate

মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

সুন্দরী বৌ

           ছেলেবেলা থেকেই দুই ভাইয়ের মধ্যে পড়াশোনায় ভালো ছিল ঘনশ্যাম বাগচী৷বাগচী পরিবারে আয়ের উৎস হল সদানন্দ বাগচীর মুদী দোকান৷দোকানে যা আয় হয় তাতে স্ত্রী গায়েত্রি বাগচী ও দুই ছেলের ভালোমন্দে চলে যায়৷এই পরিবারের খুবই কাছের মানুষ হলেন গায়েত্রির আপন দাদা রঘুবীর রথ৷ বোনের প্রতি রঘুবীরের ভালোবাসা উপমা দেওয়ার মত৷
              পড়াশোনায় ভালো হওয়ার দরুন ঘনশ্যাম মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে মুম্বাইতে ভালো চাকরি পেয়ে যায়৷বরাবর ঘরকুনো ঘনশ্যাম কোলকাতা ছেড়ে মুম্বাই যেতে চায়নি কিন্তু বাবার চাপেই তাকে যেতে হয়৷নিজের মুদি দোকান হলে কি হবে ছেলে ইঞ্জিনিয়ার একথা ভাবলেই  সদানন্দ বাগচীর ছাতি চওড়া হয়ে যায়৷তাদের বাড়ির দুঘর পরেই রায়দের বাড়ি৷এককালে বিশাল অবস্থা ছিল৷পাড়ার সবাই বড়লোক বলেই জানত৷সব সময় বড় গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকত বাড়ির সামনে কিন্তু ছেলেরা ব্যাবসা সামলাতে না পাড়ায়  এখন অবস্থা খুবই পড়ে গেছে৷ঐ রায় বাবু একদিন তার বড় কন্যা শ্রীতমার সম্বন্ধ নিয়ে আসে..."বাগচীদা আপনার বড় ছেলে ঘনশ্যামকে আমার বেশ পছন্দ৷শ্রীতমার জন্য ওর কথা ভাবছিলাম৷তা আপনি কি বলেন"৷শ্রীতমা রীতিমত সুন্দরী গৌরবর্ণা পাতলা চেহারা লম্বা চুল নাক মুখ চোখা৷সদানন্দ তো আকাশ থেকে পড়ে ঘনশ্যাম বেঁটে কালো চেহারার৷মোটা নাক মোটা ঠোঁট৷এমন ছেলেকে শ্রীতমা পছন্দ করবে?সদানন্দ বলে..."রায়দা আপনি যখন বলছেন তা নিশ্চয় ভেবে চিন্তে বলছেন ঠিক আছে এই দিওয়ালীর ছুটিতে ঘনা এলে আমি আপনাকে জানাব৷
             সদানন্দ খাটে শুয়ে পড়ে স্ত্রীকে বলে..."দেখলে লেখা পড়া শিখিয়ে ইঞ্জিনিয়ার করেছিলাম বলে অত বড় লোক বাড়ির মেয়ের সম্বন্ধ এসেছে"৷এমন সময় রঘুবীর বাজারের ব্যাগ হাতে হাজির৷ঘরে ঢুকেই বলল..."আজ বোনটার কথা বড্ড মনে পড়ছিল বাজারে ভালো কোলাঘাটের ইলিশ উঠেছিল তাই নিয়ে এলাম৷সঙ্গে মিষ্টি দইও এনেছি..."বাজারের ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে গায়েত্রিকে বললেন..."ধর ধর ভালো করে সর্ষে দিয়ে ভাপা ইলিশ করত"৷সদান্দ উঠে বসে বলল..."বলি ভালো দিনে এসেছো দাদা আজ তো বড় ভাগ্নের সম্বন্ধ এসেছে"৷রায় বাড়ির সুন্দরী মেয়ের সম্বন্ধ পেয়ে তো বাগচীদের আনন্দের অন্ত নেই৷
              দিওয়ালীর সময় চারিদিকে বাজি পটকার আওয়াজ৷সন্ধ্যেবেলায় ঘনশ্যাম পাত্রী দেখতে গেল৷সেইদিন সারা রাত ঘনশ্যামের স্বপ্নের মত লাগছিল৷অমন স্বপ্ন সুন্দরী হবে আমার বৌ তারপর বড়লোকের মেয়ে৷এখন হয়ত অবস্থা পড়েগেছে কিন্তু বড়লোকি চালেই মানুষ হয়েছে৷বিয়ের পরও ঘনশ্যামের বিশ্বাস হয়না এমন সুন্দরী বৌ তার নিজের৷শ্রীতমার জগ থেকে গলায় জল ঢেলে খাওয়া৷সোফায় বসে টিভি দেখতে দেখতে অন্যমনস্ক ভাবে হাসা সবই ভালোলাগে ঘনশ্যামের৷কিন্তু কোথাও যেন বাধো বাধো পাছে বৌ যদি রুষ্ট হয়৷গায়েত্রিও বৌকে খুব যত্নে রাখে কোনও কাজ কর্ম করতে দেয়না৷হাটুঁ ব্যাথা কোমর ব্যাথা নিয়েও রান্না বান্না সব নিজেই করে৷একদিন সিনেমার টিকিট কিনে আনে ঘনা৷সবাই মিলে সিনেমা দেখতে যায়৷সিনেমার হলে ইন্টারভলের সময় শ্রীতমা মাথার যন্ত্রণায় হল থেকে বেড়িয়ে যায়৷ঘনশ্যাম বৌয়ের পেছন পেছন ছোটে৷কোল্ডড্রিঙ্ক মাথা ব্যাথার ঔষুধ কি করলে মাথা ব্যাথা কমবে৷ সবচেষ্টায় বিফল হয়ে তারা বাড়ি ফিরে যায়৷ছুটির মেয়াদ শেষ ঘনশ্যম মুম্বাই ফিরে যাবে৷পরের বার এসে শ্রীতমাকে সঙ্গে নিয়ে যাবে৷এদিকে রঘুবীরের হঠাৎ স্ট্রৌক হওয়ায় গায়েত্রি দাদার বাড়ি চলে যায়৷গায়েত্রির দাদা মারা যায়৷থম্ থম্ এ মুখ নিয়ে গায়েত্রি বাড়ি ফিরে আসে৷ছোটবেলা থেকেই দাদা গায়েত্রির বড় কাছের মানুষ ছিল এই শোকটা সামলাতে পারছিলনা সে৷খুব কাঁদতে ইচ্ছে  করছে অথচ কাঁদতে পরছে না৷চোখ দুটো রক্তের মত লাল হয়ে রয়েছে৷খাটের এক কোণায় চুপচাপ বসে আছে৷এমন সময় ঘনশ্যাম ঘরে ঢুকে বলতে থাকে..."মা শ্রীতমা আমার সঙ্গে মুম্বাই যাবে ও এখানে থাকতে চাইছেনা।কান্নাকাটি করছে ওর আবার কান্নাকাটি করলে মাথা ধরে। "গায়েত্রী এবার কেঁদে উঠল কান্না কিছুতেই থামাতে পারছে না৷শত চেষ্টা করেও ওনার কান্না থামানো যাচ্ছেনা তারপর হাসি একই ভাবে হেসে চলেছে অনেক বকাবকি করে মুখে জল ছিঁটিয়ে ওনাকে স্বাভাবিক করা হয়৷ঘনশ্যাম ব্যাগ পত্তর গুছিয়ে বৌকে সঙ্গে করে সেইদিনই মুম্বাই রওনা দেয়৷
           নতুন সংসার ঘনশ্যাম অফিস থেকে ফিরেই বৌএর মুখের দিকেই চেয়ে থাকে৷এমন সুন্দরী বৌ পেয়ে মনে মনে গর্ব হয় তার৷একদিন রাত২টো নাগাদ ঘনশ্যামের মোবাইল বেজে ওঠে৷তাড়াতাড়ি করে ফোন ধরে বেড রুম থেকে বেড়িয়ে ড্রয়িং রুমে যায়৷ফোনের ওপাশ থেকে দাদা শোনা মাত্রই বলে ওঠে..."কোনও কাণ্ডজ্ঞান নেই তোদের এত রাত্রে কেউ ফোন করে তোর বৌদির পাতলা ঘুম তারপর আজ ওর শরীরটা ভালো নেই ৷যদি তোর বৌদির ঘুম ভেঙে যেত৷"ফোনের ওপাশ থেকে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে..."দাদা মা আর নেই মা মারা গেছে"৷ঘনশ্যাম খানিকক্ষণ চুপ করে বসে রইল ড্রয়িং রুমের সোফায়৷তারপরে আস্তে করে উঠে বেড রুমের দরজাটা সন্তপর্ণে বন্ধ করে শুয়ে পড়ল৷

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন