Translate

বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৮

ফিরে আসা ***


          #ফিরে_আসা
      #রচনায় #প্রিয়ম্বদাপ্রিয়া
         "সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি সারা দিন যেন আমি ভালো হয়ে ..."জোরে জোরে পড়তে পড়তে বই থেকে চোখ সরিয়ে রাজু দেখল মা কাজে ব্যস্ত। বই বন্ধ করে পায়ে চটি গলিয়ে বেরিয়ে গেল বাইরে। পল্লী গ্রাম এলাকা চারিদিকে গাছ গাছালি দু পাশে বাঁশ বন মাঝ খানে চওড়া রাস্তা। রাজু একা একাই বেশী ঘোরে।ধান  খেতের আল বেয়ে হাঁটে। খেতের পাশে সারি সারি কলা গাছ লাগান। বংশি কাকা পুকুরে গরু চান করায় এসব কিছু দেখতে ও'র খুব ভালো লাগে। গাছ পালা ও'র বন্ধু যেন খোলা আকাশ উন্মুক্ত বাতাস ঐ হাওয়ায় দোল খাওয়া ধান খেত ও'কে হাতছানি দিয়ে ডাকে। রাজুর একটি বন্ধু আছে সে হল ময়না। ময়না পাখি নয় সুন্দর ফুট ফুটে একটি মেয়ে। ময়নার বাবার গুড়ের ব্যবসা।শীত কালে পাটালি ,ঝোলা গুড় বেঁচে গরম পড়তে তালপাটালি আর বাকি সময় খেতের চাল থেকে মুড়ি চিড়ে। রাজুর বাবা চাষি। এক সময় ওদের অনেক জমি জায়গা ছিল ফসল ভালো না হওয়ায় ধার দেনায় পড়ে অর্ধেক জমি এখন মহাজনের কাছে বন্দক।ময়নার কাছে এসে রাজু বলল ..."কি রে তালপাটালি আনিস নি। "ময়না হাত বাড়িয়ে তালপাটালি বের করে বলল ..."অত সহজে নয়। তোর না খুব বুদ্ধি!আগে আমায় কাঠবেড়ালি ধরে দে তারপর। "ওর বয়সী আর পাঁচটা ছেলের থেকে রাজুর বুদ্ধি অনেকটাই বেশী তা ওদের এলাকার অনেকে জানে।স্কুলের পড়াশোনায় এগিয়ে না থাকলেও কারিগোরিতে বেশ পটু। নিজে হাতে ফাঁদ তৈরী করে বিন্দু পিসির বাড়িতে ইঁদুর ধরেছে। আরও অনেক ফন্দি জানে রাজু। ময়না আবার চ্যালেলঞ্জ করেছে বুদ্ধির প্রমাণ দিলে তবে তালপাটালি দেবে। রাজু একটু চিন্তা করে সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধি খাটিয়ে নিল। একটা ছোট্ট কুড়াল এনে মাটি খুড়ে গর্ত করল। তারপর পাতলা দুটো কাঠের পাটাতন জোগাড় করল। কুড়াল দিয়ে ওগুলোকে সাইজ করে কেটে পাটাতনের দুই প্রান্ত লম্বা আর মাঝখান চওড়া রাখল লম্বা দিকটা মাটিতে লম্বা চ্যানেল করে বসাল পাটাতনে ফুটো করে সুতো দিয়ে বাঁধল।সুতো দিয়ে বাধায় পাটাতন দুটো জানলা বন্ধ হওয়ার মতো রইল এদিকে নীচে গর্ত। রাজু এবার পেয়ারাটা পাতলা পাতলা করে কেটে পটাতনের উপর রেখে দিল। যেই কাঠবেড়ালি পেয়ারা খেতে আসবে অমনি শরীরের ভারে গর্তে পড়ে যাবে আর জানলার মতো পাটাতন বন্ধ হয়ে যাবে। ময়না ওর কারিগোরি মন দিয়ে দেখল। রাজু জামায় হাত ঝেড়ে বলল ..."এবার দে ময়না আমি কত খাটলাম। "ময়না অত সহজে ভোলার নয় ..."এই বুঝি তোর কাঠবেড়ালি। দাঁড়া আগে কাঠবেড়ালি তোর ফাঁদে আসুক তারপর। "দুজনে ফাঁদ পেতে আবার ঝাপা ঝাপি ছোটা ছুটি করতে করতে চলে এল পুকুর পাড়ে। রাজুর মা কাপড় কাচছিল।ছেলের নাচা নাচি দেখে ধমকালো ..."রাজু তোর পড়াশোনা নেই ?এবার মার খাবি ঘরে যা!"বকা খেয়ে বাড়ি ফেরার পথে একবার ফাঁদের কাছে গিয়ে দেখে ঠিক গর্তে কাঠবেড়ালি।  গর্ত থেকে তুলে ময়নার হাতে দিয়ে বলল ..."নে তোর কাঠবেড়ালি।আর দে আমার তালপাটালি!"বাধ্য হয়ে ময়না ওর হাতে ধরাল তালপাটালি।



       পড়াশোনায় মন নেই রাজুর। প্রতি ক্লাসে একবার করে ফেল করে। এখন ক্লাস থ্রি যদিও সিক্সে পড়ার কথা। ময়না ক্লাস ফাইভে পড়ে যদিও সে রাজুর থেকে ছোট। সব ছেলে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে অথচ রাজু এক জায়গায় দাঁড়িয়ে। উঁচু ক্লাসের ছেলেরা রোজই খেপায়।একদিন ফেলুয়া ফেলুয়া খেপাতে বেজায় চটে রাজু। ওর চেয়ে লম্বা একটা ছেলের গলা ধরে ঝুলে পড়ল। তারপর সবাই মিলে মার লাগাল বেচারাকে। এই রকম অপমান সহ্য হয় না কোনও রকমে পড়াশোনায় মন বসিয়ে মাধ্যমিক অবধি পড়ল রাজু।এদিকে বাড়িতে দিনে দিনে অভাব বাড়ছে। নিজের জমি বলতে এখন তিন বিঘা মতো। সেখানে রাজুর বাবা মরসুমি সবজি চাষ করে। লাভ খুবই কম হয়। মায়ের চেহারাটাও দেখলে মায়া হয় রাজুর। গাল দুটো ভেঙে গেছে গলার হাড় গুলো বেরিয়ে।ফর্সা গায়ের রং তামাটে হয়ে গেছে।এত বয়স তো হয়নি মায়ের। বাবার চোখে মুখে বড় হতাশা। দুঃখী দুটো চোখ জমি গুলো দেখে। রাজুর মনে হয় বই খাতা ফেলে টাকা কামায়। অনেক টাকা ।ওদের জমি গুলো ছাড়ায়। মাকে সোনার গয়না গড়ে দেয় কিন্তু কোথায় পাবে এত টাকা। বাবা বলে ..."চাষ করে কি করবি? পেট ভরতে হলে চাকরি করতে হবে ।রাজু পড়াটা ভালো করে কর।অনেক কষ্ট করে পেটে গামছা বেঁধে তোকে পড়াচ্ছি। "রাজু শোনে। এক এক সময় বড্ড চাপ বেড়ে যায় ওর। ও ভরসা ওদের বাড়ির। কি করবে রাজু! পারবে তো সব সমস্যা মেটাতে! 



     ক্লাস টুয়েলভ হল রাজুর। পুজো আসছে। আকাশে প্যাঁজা তুলোর মতন মেঘের মাঝে সূর্যের ঝলকে চারিদিকে ঝক ঝক করছে। নদীর ধারে কাশ ফুল,শিউলি গাছ ভরা শিউলি ফুল, জানান দিচ্ছে শরতের আগমনের। সকাল বেলা রাজু মাঠের ধার দিয়ে হেঁটে চলল। সামনের শিউলি গাছের নীচে শিউলি ফুল বিছিয়ে রয়েছে। যেন নিদ্রাচ্ছন্ন শিশু মায়ের কোল থেকে পড়ে আরেক মায়ের কোলে মিশে আছে। শিশির ভেজা সকালে যুবতী ময়না শিশির ভেজা শিউলি ফুল কুড়চ্ছিল। রাজুর ছেলেবেলার সঙ্গী ময়না।এখন ও'রা দুজনেই বড় হয়ে গেছে। আগের মতো মেলা মেশা হয় না। তবে মাঝে মধ্যে দেখা হয়।আজ হঠাৎই ময়নাকে দেখে রাজুর কদমটা থেমে গেল। ও'র খোলা লম্বা চুল, পাতলা কোমর,চেহারায় সদ্য যৌবনের ছোঁয়া হয়ত আকৃষ্ট করল রাজুকে। ময়না রাজুর দিকে তাকাতে রাজু চোখ নামিয়ে নিল। যেন ময়না ও'র চুরি ধরে ফেলেছে। ময়না ডাকল ..."এই রাজু শোন। "
..."আমি তোর থেকে বড় আমায় তুই বলবি না। "একটু মেজাজে বললো রাজু।
..."তাহলে কি বলব এই যে শুনছ। "বলে ময়না হেসে গড়াল। তন্বী শরীর হাসির সঙ্গে নুইয়ে পড়ছিল এদিক ওদিক। ময়না হাসছে ওর খোলা চুল দুলছে ও আনমনে চুল গুলো সরাচ্ছে পেছন দিকে।রাজুর লজ্জায় ফর্সা কান দুটো লাল হয়ে গেল। ময়না বলে ..."কি রে তুই যে উচ্চমাধ্যমিক দিবি তা আমি ভাবি নি।আমি ভেবেছিলাম তুই জীবন ভর ফাইভেই থাকবি! "
..."তা ভাববি কেন? গরিবের অনেক জ্বালা পেটে খিদে নিয়ে পড়া সহজ নয়। বুঝল! "বলে হঠাৎই জ্বলে উঠল রাজু।ময়না বুঝল হয়ত ও'র দুর্বল জায়গায় চোট পড়েছে।চুপ করে গেল ও। ধীর স্বরে বললো..."রাজু আমি তা বলি নি। আমিও কি বড়লোক বাড়ির মেয়ে। "রাজু কি বুঝল কে জানে হাঁটা ধরল হনহনিয়ে।
    



      দেখতে দেখতে পুজো এসে গেল। ওদের গ্রামে আবার প্রতি পুজোয়  রামলীলা হবেই । অষ্টমীর সন্ধ্যায় 'রামলীলা 'হচ্ছে।ময়নাও দেখছিল কিন্তু বসে বসে একঘেয়ে লাগায় মাঝখান থেকেই উঠে এল।মাঠ পেরতে ফাঁকা রাস্তায় দুটো ছেলে বাইকে করে যাচ্ছিল। নারী শক্তি আরাধনার দিন নিজের যৌন লালসা তৃপ্ত করার জন্য নারী শরীর উপভোগ করার সুন্দর সুযোগ তারা হাতছাড়া করতে চাইল না। হামলা করল ময়নার উপর। ময়নার মুখ চেপে ধরল। দুজন মিলে একজনকে শিকার করা সহজ।যেন ময়না একটা উপাদেয় খাদ্য বা এমন নিরীহ জীব যাকে যে করে হোক বাগে আনতে পারলেই কার্যসিদ্ধি করতে পারবে।যেমন করে কশাই ধরে ছাগল পাঁঠা বা মুরগী ঠিক তেমনই। ময়না ছটফট করছিল। ছাড়াতে চাইছিল নিজেকে।কিন্তু পারছিল না ওদের সঙ্গে।তখনই আচমকা পেছন থেকে রাজু ছুটে এল।করল দুটোকেই চিৎ। পাশে পড়ে থাকা বাঁশ তুলে বেদম পিটিয়ে রক্তাক্ত করল  দুজনকে। ময়না কাঁদছিল অঝরে।রাজুর উন্মত্ততা দেখে ময়না ছুট্টে গিয়ে থামালো রাজুকে ।
..."রাজু ছেড়ে দে ঐ নোংরা রক্তে তুই হাত ময়লা করিস না। "তাও যেন নিজেকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছিল না রাজু। ক্লান্ত হয়ে আসছে শরীর তাও মেরে চলেছে ওদের পা দিয়ে বাঁশ দিয়ে। দুটো ওলট পালট হচ্ছিল মাঠে। মদ খাওয়ায় হুঁশ কম ছিল ওদের।রাজুর উচিত রাগের কাছে হেরে যাচ্ছিল ওদের কামুক শক্তি। ময়না জড়িয়ে ধরল রাজুকে..."শান্ত হ রাজু শান্ত হ! "অঝোরে কাঁদে ময়না ভিজে যায় রাজুর বুকের কাছের শার্ট। রাজু ময়নাকে সামলে নিজে শান্ত হয়। 



    শীতের এক পড়ন্ত বেলায় আকাশটা রাঙা। চারিদিকে লাল আলোর ছটা। ময়না  রাজুর গায়ে হেলান দিয়ে বসেছিল।বলল...."রাজু বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য দেখা শোনা শুরু করছে।" দরিদ্র বাবা। বেকার রাজু। কোন মুখে ময়নাকে নিজের জীবনে চাইবে।তবে ময়নাকে যে ভালবাসে রাজু চুপচাপ  বসে থাকেই বা কি করে।ময়না আবার বললো ..."কি রে বল!আমি কি করব এখন।"নীরব রাজু তাকাল ময়নার দিকে। কি বলবে ওকে! কাজ চাই যে করেই হোক টাকা রোজগার করতেই হবে।নইলে কি ভরসা দেবে ময়নাকে।লম্বা শ্বাস ছেড়ে রাজু উঠে দাঁড়াল। জিগ্যাসু নয়নার দিকে চেয়ে বললো ..."একটু সময় দে নয়না! "



বেশ কিছুদিন ভাবল রাজু। একদিন দেখা হল বিনায়কদার সঙ্গে। গাঁয়েরই ছেলে।আগে তো কোনো কাজকম্ম তেমন করত না। ঘুরে বেরাত এদিক সেদিক। কখনও খেতের সবজি কখনও বাগানের ফল লোকের বাড়ির মুরগী চুরি করে বেরাত। স্কুলেও যেত মুখ দেখাতে তাও ক্লাস ফোর পর্যন্ত গেছে।কিন্তু বিনায়কদাকে দেখে তো মনে হচ্ছে অবস্থা বেশ ভালো। জামা কামড় দামি। পকেট থেকে বড় মোবাইল বের করে কথা বলছে কারো সঙ্গে। কবজি ঘড়িটাও অনেক দামী।এগিয়ে গেল বিনায়কদার কাছে। নাকে এল বডি স্প্রের তীব্র গন্ধ।..."বিনায়কদা যে! ''হেসে বললো রাজু। 
..."আরে রাজু! কি খবর বল! "
..."তুমি একদম বদলে গেছ বিনায়কদা।অনেক বড়সড় মানুষ হয়েগেছ মনে হচ্ছে! "বিনায়ক প্যান্টটা কোমরের উপর টেনে তুললো। হাসছে বিজ্ঞের মতন ..."হুম। সময়! সবই সময়! "বলে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করল বিনায়ক। কায়দা করে একটা সিগারেট ধরল ঠোঁটের ফাঁকে একটা সিগারেট এগিয়ে দিল রাজুর দিকে। রাজু মাথা নাড়ল ..."আমি খাই না এসব। সিগারেটের প্যাকেটেই লেখা থাকে ইনজুয়েরাস টু হেল্থ! তাও কি কারণে লোকে খায় কে জানে। আদি ফুসফুসে আর তামাকের ধোঁয়া ভরতে চাই না! "
..."ধুস! ওগুলো বাচ্চা বাচ্চা কথা। পুরুষ মানষদের সিগারেট না খেলে হয়! অত তুতু পুুতু করলে পুরুষ মানুষদের চলে না! "
..."সিগারেট খেয়ে আমায় পুরুষ হওয়া প্রমাণ করতে হবে না বিনায়কদা। ঐ কথা গুলো আমার কাছে বাচ্চাদের মতন অযৌক্তিক। "
..."আচ্ছা আচ্ছা বাদদে ওসব এখন কি করছিস বল! "প্রসঙ্গ বদলে বললো বিনায়ক।লম্বাশ্বাস ফেললো রাজু..."কিছু না! একটা কাজ দিতে পারবে? "
..."বলছিলি না পুরুষ মানুষ হওয়া তোকে সিগারেট খেয়ে প্রমাণ করতে হবে না। ''বলে এদিক ওদিক তাকাল বিনায়ক। রাজুর দিকে এগিয়ে এল কিছুটা ..."দম আছে তো বল! কাজ আছে আমার কাছে! "কোনো রকম চিন্তা ভাবনা না করে রাজি হয়েগেল রাজু। বললো ..."হ্যাঁ হ্যাঁ আমি রাজি কি করতে হবে শুধু বলো!"ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসল বিনায়ক। কাঁধ চাপড়াল রাজুর।



বিনায়কের  সঙ্গে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে এল রাজু।বিনায়ক ওর মালিকের কাছে রাজুকে নিয়ে এল।উনি বললেন শুধু উনি যে ঠিকানা দেবেন সেখানে পার্সেল পৌছাতে হবে। ও'র সঙ্গে দুজন ছেলেও থাকবে। প্রত্যেকবার পার্সেল ডেলিভারির সঙ্গে পাঁচ হাজার করে দেবে তারপর বেতন বাড়বে।শুনে অবাক হল রাজু।দারুণ ব্যাপার!এত সহজে যদি টাকা রোজগার করা যায় তবে বাবা কেন হাল টানে।কেন লোকের এত অভাব। না কি সবাই জানে না সঠিক লাইন ধরতে! রাজুর ভাগ্য ভাল তাই না বিনায়কের সঙ্গে দেখাটা হল।রাজু মন দিল কাজে। সব মন সব ধ্যান এখন শুধু এই নতুন কাজ। তবে এই কাজে ঢুকে রাজু জানল ধীরে ধীরে যে অজান্তেই ও স্মাগলিংএর দুনিয়ায় ঢুকেগেছে ।আরো যত গভীরে ঢুকল তত জানল পার্সেলে অস্ত্র থাকে। গাঁজা, ড্রাগ থাকে থাক। তাতে কি ওর। ওর টাকার দরকার। ও না করলে অন্য কেউ করবে। কিন্তু রাজুর পয়সা চাই।বন্দকের জমি ছাড়াবে।ময়নাকে বিয়ে করবে। মাকে গয়না বানিয়ে দেবে।রাজু বড়লোক হবে। ওর তো বিচার করার দরকার নেই। সিগারেট স্মোকিং ইজ ইনজুরিয়স টু হেল্থ লোকে তা জেনেও সিগারেট খায় তবে রাজুই বা এমন কি অপরাধ করছে! এই কাজে ঢুকে ও দেখেছে কত বড় বড় লোক আছে এখানে। তাদের কাছে রাজু নস্যি! ক্ষুদ্র জীব মাত্র! 



      বেশ কিছু টাকা জমিয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরল রাজু। বাপ মায়ের গর্বে ছাতি চওড়া হয়ে গেল। ছেলে লায়েক হয়ে শহর থেকে টাকা কামিয় এনেছে।রাজু দামি প্যান্ট শার্ট পরে সবার নাম করে জিনিস নিয়ে  ময়নাদের বাড়িতে গেল। ময়নার মা তো খুশিতে আটখানা গ্রামের ছেলের এমন উন্নতি। ওদের অবস্থাও তো ভালো না। বিয়ে দিতে গেলে কত খরচ। কিন্তু রাজু তো কিছু নেবে না শুধু ময়না কে বিয়ে করবে। তাই রাজুকে মানা করার কারণই নেই।সকলে খুশি গাঁয়ের দোকান থেকে মিষ্টি আনানো হল কত গল্প করল সকলে।



        ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গ্রামের খেতে এসে বসল দুজন। ময়না আর রাজু। যেমন বসত খেলাধুলোর দিন গুলোতে।রাজুর মনে অনেক শান্তি। ময়না ওর পাশে বসে পেয়ারা খাচ্ছিল।ওর হাত থেকে ও'র আধ খাওয়া পেয়ারাটা নিয়ে এক কামড় দিয়ে খেতের জমিতে চিৎ হয়ে শুল রাজু । ময়না জিজ্ঞাস করল ..."শহরে তুই কি করিস রাজু? "
..."বড় চাকরি। "
..."সোজা পথে এত কম সময়ে এত টাকা রোজগার করা যায় না। কি করে তুই এত টাকা করলি তা আমি জানি। "বলে ময়না মুখ ঘুরিয়ে নিল।রাজু রেগে গেল।সোজা হয়ে উঠে বসল টানটান হয়ে..."তুই বেশী বুঝিস। "ময়না শ্বাস ছেড়ে বলে ..."তোর শার্টের গন্ধ শুঁকে বুঝেছি।তুই আর সেই রাজু নেই। দুর্গন্ধ ঢাকার জন্য তুই সুগন্ধি লাগিয়েছিস। তোর চেখে সেই সরলতা নেই। তুই চোর রাজু ।তোর চোখে মুখে সব ধরা পড়ে গেছে।তুই সেই রাজু নস যাকে আমি ভালবাসিতাম । যদি আবার আমার চেনা রাজু হতে পারিস তখন আমার কাছে আসিস। রাজু আমি গরিবের মেয়ে।কলমি শাক সেদ্ধ করে খেতে পারব। আমার একটাও সোনার গয়না চাই না। আমার বাপের গুড়ের ব্যাবসা চালাব বা কোনও সৎ পাত্রকে হয়ত বিয়েও করব কিন্তু তোর টাকায় জীবন কাটাব না তুই নষ্ট হয়ে গেছিস।"বলে উঠে দাঁড়াল ময়না।রাজু উত্তেজিত হয়ে যায়। বলে ..."খিদে পেটে অত বড় বড় কথা বলতে নেই ময়না। পারবি না ওভাবে থাকতে।বলা সহজ পেটে যখন টান পরবে সব সৎ অসৎ এক হয়ে যাবে।  "ময়না শান্ত ভাবে বললো ..."তবে সেদিন ঐ জন্তু গুলোর থেকে আমায় বাঁচালি কেন। ওরা যা অন্যায় করে ছিল তুইও তাই করছিস। তোর সঙ্গে ঐ জন্তু গুলোর কোনও তফাত নেই। " বলে ঝড়ের বেগে ওখান থেকে চলে গেল ময়না। 




      বুক ভরা চাপ  আর বোঝা নিয়ে  রাজু ঘরে ফিরে এল। ঘরে এসে দেখে স্কুলের শ্যমল মাস্টার এসেছে। মা গর্ব করে বলছে ..."মাস্টার মশাই আপনারই দান। আপনি পড়িয়ে লিখিয়ে রাজুকে লায়েক করেছেন। কত বড় চাকরি করে আমার রাজু। কত গুণ থাকলে এত টাকা রোজগার করে মানুষ। "রাজু শুনছিল। যত শুনছিল তত কষ্টটা দলা পাকিয়ে আসছিল বুকের ভিতর।খাটে শুয়ে চোখ তুলে দেখল জানলার দিকে।মাঠে একটা গরুর পিঠে শালিক বসে আছে। গরু হাঁটছে শালিক গরুর পিঠে চড়ে এগোচ্ছে ।খানিক পরে শালিকটা উড়ে পালাল চলে গেল ও'র ঝাঁকে। ফিরে গেল নিজ বাসায়। রাজু খাটে শুয়ে চোখ বুজল। ও গ্রামের ছেলে। মাটির সোঁদা গন্ধে ওর প্রাণ ভরে যায়। ও' চাষার ছেলে ও'র রক্তে চাষ বাস। পড়াশোনা শিখেছে ।ও'র বাবা যে সব ভুল করেছে ও করবে না। বিজ্ঞানের পথ ধরে চাষ করবে। ঐ জমিতেই ভালো ফলন হবে। লাভ হবে ।পরিশ্রম করবে। কম রোজগার হবে ভরপেট হয়ত খেতে পারবে না কিন্তু গ্রমের মাটি কোনও দিন ও'র শরীর ও'র আত্মাকে মলিন হতে দেবে না।বুক ভরে বাইরের সতেজ বাতাস ভরে নিল ফুসফুসে। বেশ হালকা লাগছে এতদিন কোথাও যেন জমে ছিল একটা অজানা বোঝা আজ যেন সরে গেল সেই বোঝাটা। চোখের সামনে ভেসে এল ময়নার মুখটা বুকে ছেয়ে গেল ভাললাগা ভালবাসা আর শান্তির একটা হালকা আবরণ।©Pryamboda priya 
অনুভূতির আসর-Anuvutir asor ফেসবুক পেজ 

মঙ্গলবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৮

রঙের ছোঁয়া

#রঙের_ছোঁয়া
#রচনায়#প্রিয়ম্বদাপ্রিয়া
        রায়না স্নান সেরে আয়নার সামনে বসে হাতে পায়ে ময়শ্চারাইজার লাগাচ্ছিল তখনই ওর মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল। তাড়া তাড়ি করে হাতের মশ্চারাইজারটা দু হাতের তালুতে ঘষে হাতটাকে শুকনো করে ফোনটা ধরল।পিয়ালীর ফোন।ইদানীং রায়নার বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে কথা বলতে বিশেষ ভালো লাগে না।পিয়ালী বলল ..."কি রে আজকাল কি রকম যাচ্ছে তোর দিন।"রায়না একটু ঠাণ্ডা ভাবেই বলল ....''ঠিকই আছে।"ওর কথার মাঝের শীতলতা যেন পিয়ালীকে  বেশী উত্তেজিত করে দিল..."সে কি রে ,নতুন বিয়ের পর কেউ এমন হালকা ভাবে ঠিকই আছে বলে নাকি? আমি আর শুভ তো এখনও সেই কলেজ লাইফের মতনই রঙীন প্রেমিক যুগল। এই উইক এণ্ডে শুভ আমাকে মন্দারমনি নিয়ে যাচ্ছে।উফ্ এত এক্সাইটেড লাগছে তাই তোকে ফোন করলাম।"রায়না বেশী কিছু উচ্ছাস প্রকাশ না করে চুপ করে রইল কিন্তু পিয়ালী চুপ করার নাম নিল না ও বলেই গেল..."রায়না এই জন্য তোকে বলেছিলাম প্রেম কর প্রেম কর ঐ সম্বন্ধ করে বিয়েতে কোনও এক্সাইটমেন্ট নেই।তুই তো শুনলি না দেখ ধীরে ধীরে যদি তোর বেরঙ জীবনে রঙ আসে।"ফোনটা খাটে ছুড়ে মন মরা হয়ে খাটের উপর শুল রায়না। পাখার ব্লেডের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল। বরাবরই ও চাইত ওর বন্ধুদের মতন ওর জীবনে কেউ আসবে।অচেনা অজানা সেই পুরুষ যে ওকে প্রেমের অনুভূতি করাবে কিন্তু সেই প্রেম সেই সকল অনুভূতি মন আর অনুভব করতেই পারল না। রায়নার জীবনে কেউ অনুপ্রবেশ করার আগেই বাড়ি থেকে সম্বন্ধ করে বিয়ে দিয়ে দিল।এখনও ধ্রুবজ্যোতির সঙ্গে ও ঠিক সাবলীল হয়েই উঠতে পারেনি।দুপুর বেলা লাঞ্চ টাইমে ধ্রুবজ্যোতি ওকে একবার ফোন করে কিন্তু রায়না যেন কিছু কথাই খুঁজে পায় না শুধু কি করছিলে? লাঞ্চ করেছ? শরীর ভালো আছে? এই রকম গতানুগতিক বোকা বোকা প্রশ্নের বাইরে আর কোনও কথা পায় না।ধ্রুবজ্যোতিও তাই।গুনে গুনে কথা বলে। বাড়িতে শ্বশুর শাশুড়ি আর দেওরের মাঝে রায়না আরও জড়ো সড়ো হয়ে যায়।ধ্রুবজ্যোতি তো তখন ওর দিকে তাকাতেও লজ্জা পায়।এই রকম নিরস প্রেমহীন সাদা কালো জীবন মোটেও চায়নি রায়না।খাটের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে ফেসবুক খুলে দেখে সায়নী আর পার্থ গালে গাল লাগিয়ে ঠোঁট পাউট করে ছবি পোস্ট করেছে।শুধু কি সায়নী আর পার্থ! ওর বন্ধুরা তো রোজই নিত্য নতুন কায়দায় ছবি তুলেই যাচ্ছে। কিন্তু রায়নার জীবনে এগুলো দুর্ঘটনার মতন। সেদিন ধ্রুবজ্যোতি বলল ..."এই বুধবার আমি দিল্লি যাচ্ছি।"মনে অনেক রঙীন স্বপ্ন জেগে উঠেছিল রায়নার। ভেবেছিল এবার হয়ত ধ্রুবজ্যোতি বলবে ..."তুমিও চল আমরা তো হানিমুনেও যায়নি।"কিন্তু ওর সকল আশায় জল ঢেলে অত্যন্ত নিরস ভাবে ধ্রুবজ্যোতি জানাল ..."অফিস ট্যুরে যাচ্ছি এক সপ্তাহ পর ফিরব।"শুনতে এত বিরক্ত লেগেছিল তাও মুখে কিছু প্রকাশ করেনি।কোনও রকম মান অভিমান না করেই কর্তব্য করার মতন ওকে ওর লাগেজ প্যাকিংএ সাহায্য করেছে।উফ লাইফটা এত নিরস রঙ হীন হবে সত্যি ভাবেনি রায়না।
         




 সকাল থেকে  রায়না মুডটা আজ বেশ ভালো।রান্নাঘরে গিয়ে নিজেই সব গুছিয়ে বসেছে কেক বানাবে বলে। আজ বসুন্ধরাদির জন্মদিন।ওর সেই ছোট্ট বেলার গানের শিক্ষিকা বসুন্ধরাদির জন্মদিনে প্রত্যেক বছর নিজে হাতে কেক বানিয়ে নিয়ে যায় রায়না। বিয়ের পর এটা প্রথম বসুন্ধরাদির জন্মদিন ওর ইচ্ছে ছিল ধ্রুবজ্যোতিকে সঙ্গে নিয়ে যাবে কিন্তু সে তো দিল্লিতে তাই রায়না একাই গেল। সঙ্গে বানিয়ে নিয়ে গেল দিদির প্রিয় চকোলেট কেক।বসুন্ধরাদির বয়স ষাট ওনার ছাত্র ছাত্রীরাই উদ্যোগ নিয়ে ওনার জন্মদিনের অনুষ্ঠান করে। ফর্সা গোল গাল চেহারার স্নেহশীল বসুন্ধরা ওনার কোমল হাতটা যদি কারও মাথায় রাখে সঙ্গে সঙ্গে সেই ব্যক্তি তার অনুগত হয়ে যায়।রায়না ওর বানানো কেক নিয়ে বসুন্ধরাদির বাড়িতে ঢুকতেই দেখে বাড়িতে নানান বয়সের ছাত্র ছাত্রীর ভিড়। ক্ষুদ দের েরা শোর গোল করছে। ওদের নেতৃত্ব করছে জিতেন। সবার হাতে একটা বেলুন ধরিয়ে বলছে ফোলাও কে কত বড় বেলুন ফোলাতে পার।বর্ষা বসুন্ধরাদির বাড়িটা ফুল আর নীল লাল গোল্ডেন স্ট্রীমার দিয়ে সাজিয়েছে ।রায়না ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সবাই চেঁচিয়ে উঠল..."বেকারীর লোক এসেগেছে। "বরাবর রায়নার কেকই কাটা হয় তা জানে সকলে।




      সন্ধে বেলা কেক কাটা হল।বসুন্ধরাদি আর কাজলী মাসি বাড়িতেই অনেক পদ রেঁধেছিল।ক্ষুদে সদস্যরা পড়েছিল রায়নার দায়িত্বে। ভালো করে খেতে পারে না অথচ কি সুন্দর হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গায়।রায়না আবার ওদের নিজে হাতে খাইয়ে দিলে। রাতে সবাই বাড়ি ফিরে গেল।রায়না বলল আজ দিদি তোমার কাছেই থাকব দিদি বললেন ..."সেকিরে নতুন বরকে ছেড়ে এই বুড়িটার সঙ্গে থাকতে ইচ্ছে করছে।"রায়না ঠোঁট বেঁকাল।রাতে বিছানায় দিদি আর রায়না পাশাপাশি শুয়ে।ঘুম আসছিল না কারই।একটু বেশী পরিশ্রম হলে এক এক দিন ঘুমটা উবে যায়। রায়না হঠাৎ জিগ্যেস করল ..."দিদি তুমি আরেকটা বিয়ে করলে না কেন? কত অল্প বয়সে তোমার হাজ়বেন্ড মারা গিয়েছিল। তুমি এত সুন্দর দেখতে ছিলে সোনার মত তোমার গায়ের রঙ কি নরম কোমল চেহারা তোমার।তুমি এখনও কত সুন্দর তবে তো অল্প বয়সে আরও রূপবতী ছিলে। কেন আরেকটা বিয়ে করলে না।"দিদি হাসল..."ওকে যে ভালোবেসে ছিলাম। তাই আর কাউকেই ওর জায়গটা দিতে পারব না ও আজও আমার সঙ্গে আছে। ও তো আমার মনের বল আমার শক্তি সব ও। "রায়না আগ্রহের সঙ্গে বলল ..."তোমরা লাভ ম্যারেজ করেছিলে।"দিদি হাসল আবার বলল ..."বাবা মা পাত্র ঠিক করেছিল সম্বন্ধ করেই বিয়ে হয় তারপর ওকে ভালোবেসে ফেলি।"রায়নাকে আস্তে করে একটা শ্বাস ছাড়তে দেখে উনি বললেন ..."কি ব্যাপার বল তো! সকাল থেকেই দেখছি তুই কেমন যেন আনমনা। সব কাজ করছিস কিন্তু কোথাও যেন উচ্ছাসের অভাব।"রায়না ঠোঁট উল্টে বলে..."আমার কেমন একটা বিয়ে হল বসুন্ধরাদি আমি কিছু বুঝতেই পারছি না কেমন যেন যন্ত্রের মতন জীবন আমাদের কোনও আবেগ নেই প্রেম নেই আমার একদম ভালো লাগে না।সব বন্ধু বান্ধবরা কি আনন্দে আছে বেশীর ভাগ বন্ধুরই লাভ ম্যারেজ হয়েছে ওরা তো সেই গায়ে হলুদ থেকে বৌ ভাত পর্যন্ত কত সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করেছে আবার বিয়ের পরেও না না ভাবে দিন কাটাচ্ছে কিন্তু আমি তো আমার বরের সঙ্গে একেবারেই ফ্রি হতে পারি না।"বসুন্ধরাদির কপালে ভাঁজ পড়ল।একটু উদ্বিগ্ন হয়ে জিগ্যেস করলেন..."কেন? ধ্রুবজ্যোতির কথা বার্তা কি খুব রুক্ষ।"রায়না বলল ..."না সেরকম কিছু নয়।"বসুন্ধরা ওর জাদুময় স্নেহের ছোঁয়ায় রায়নার মাথায় হাত রেখে বললেন ..."তুই কি চাস? "রায়না বলে ..."সবাই যেমন আনন্দ উৎফুল্লে নিজের জীবন সঙ্গীকে নিয়ে দিন কাটায় আমি তাই চাই।আমি জীবনে রঙ চাই। কিন্তু ধ্রুবজ্যোতি ভীষণ বোরিং ও বেশী কথা বলে না আর একেবারেই রোম্যান্টিক নয়।"
..."তুই রোম্যান্টিক? "রায়না চনমনে মুখে তাকাল।সোজা উঠে বসে বলল ..."ভীষণ!আমি তো দিন রাত স্বপ্ন দেখি কিন্তু বাস্তবটা একদম আলাদা।"বসুন্ধরাদি ঠোঁট চেপে হাসল। বলল ..."তাহলে তোকেই প্রথম পদক্ষেপটা নিতে হবে।"ভ্রূ কুঁচকে রায়না বলে ..."কেমন করে?"
..."তুই শুরু কর।হয়ত ও ভাবছে এখনকার মেয়ে তুই হঠাৎ করে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা অপছন্দ করতে পারিস তাই হয়ত তোকে বোঝার চেষ্টা করছে।তাই তুই ওর সঙ্গে প্রথমে বন্ধুত্বটা সেরে ফেল।এবার যখন ও দিল্লি থেকে ফিরবে বলবি চল দুজনে বাইরে কোথাও যাই।তারপর তোর পছন্দ অপছন্দ গুলো বলবি। একে অপরকে বোঝার চেষ্টা কর।মনে কর ধ্রুবজ্যোতি তোর বয়ফ্রেণ্ড এই ভাবেই প্রেমের আরম্ভ কর।দেখবি তোদের প্রেম সকলকে ছাপিয়ে যাবে।"রায়না দিদির কথায় বেশ উদ্যোম পেল।মনে মনে ঠিক করে নিল এবার ওকেই উদ্যোগী হতে হবে। অধীর আগ্রহে ধ্রুবজ্যোতির অপেক্ষায় বসে রইল।




   দিল্লি থেকে ফিরেই ধ্রুবোজ্যোতি সবার আগে বাড়ির লোকের সঙ্গে বেশ অনেকটা সময় কাটাল। তারপর ঢুকল নিজের ঘরে। বেশ অভিমান হল রায়নার। নতুন বউএর সঙ্গে কোনও রকম কথা না বলে মা বাবার সঙ্গেই সব কথা বলে চলেছে।আরে লোকে আগে তো নতুন বউকে গুরুত্ব দেয়।তারপর ভাবল না ঠিকই আছে ফ্যামিলিকেও টাইম দেওয়া দরকার। নইলে ব্যালেনস হবেই বা কি করে!ধ্রুবজ্যোতি ওর ব্যাগ থেকে একটা বক্স বের করে একটু সঙ্কোচের সঙ্গে বলল ..."দেখো তো এই সেট টা কেমন? "রায়না ঠোঁট বেঁকাল। কি জানি কার জন্য এনেছে।যা ফ্যামিলি প্রীতি এখুনি হয়ত বলবে অমুকের মেয়ের জন্য এনেছি বা তমুকের নাতীর জন্য এনেছি।ওর মুখের আব ভাব দেখে ধ্রুবোজ্যোতি একটু নিরাশ হল ।মন দিল নিজের প্যাকিং আনপ্যাক করতে।রায়না বাক্স খুলে দেখল খুব সুন্দর একটা চেন সঙ্গে পেন্ডেন্ট তার সঙ্গে কানের দুল।রায়না নিজের মনে বিড় বিড় করল আমার জন্য মোটেও আনেনি।ধ্রুবজ্যোতি ওর দিকে তাকাল আড় চোখে।রায়না নিরুত্তাপ ভাবে বলল ..."ভালো।"ধ্রুবজ্যোতি আবার লাগেজ আনপ্যাক করতে লাগল। রায়না ওর এইরকম উদাসীন ব্যবহারেই বেশী রুষ্ট হয়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বসুন্ধরার কথা মনে পড়াতে নিজেই ওকে জিগ্যেস করল ..."কার জন্য এনেছ এই সেট টা? "ধ্রুবজ্যোতি খানিকক্ষণ চুপ করে রইল।তারপর বলল ..."কেন তোমার ভাল লাগেনি।"রায়না আবার বিরক্ত হয়। উফ্ এই ছেলেটা সোজা কথার উত্তর দেয় না কেন।বলল ..." খুব ভাল।"
..."এটা তোমার জন্য এনেছি। "মৃদু হেসে বললো ধ্রুবজ্যোতি। ওর কথাটা শুনে মনটা নেচে উঠল রায়নার।তাহলে ধ্রুবজ্যোতি দিল্লিতে গিয়েও ওর কথা ভেবেছে। তাই মনে করে ওর জন্য গিফট নিয়ে এসেছে। রায়না বলল..."আজ রাতে বাইরে ডিনার করবে।"ধ্রুবোজ্যোতি বলে ..."বাবা মাকে বলেছ। "রায়নার আবার বিরক্ত লাগে। উফ এই ছেলেটা কি কখনই বাবা মা কাকা মেসো এই পল্টন ছাড়া কিছুই ভাবতে পারে না।রায়না ওর কাছে এসে বলল ..."শুধু তুমি আর আমি আর কেউ না।"ধ্রুবজ্যোতি লাজুক ভাবে হাসল।বলল ..."ঠিকাছে।"



       রায়না মাঝে মধ্যেই ধ্রুবজ্যোতিকে খুঁটি নাটি সব জিগ্যেস করে। ওর সঙ্গে কথা বলে রায়না বুঝতে পেরেছে ধ্রুবজ্যোতি স্বভাবগত ভাবে চাপা। তাই নিজে থেকে মনের কথা প্রকাশ করতে পারে না। রায়নাই এগিয়ে এসে শুরু করে বন্ধুত্ব।রোজ অফিসের যাওয়ার আগে নিজেই পছন্দ করে ধ্রুবজ্যোতির শার্ট প্যান্ট বের করে দেয়।ফেসবুকে ছবি পোস্ট করবে বলে ধ্রুবজ্যোতির গলা জড়িয়ে  দুজনে এক সঙ্গে না না রকম ছবি তুলে পোস্ট করে।তা দেখে ফেসবুকের বন্ধুরা  বিশেষ উৎসাহ না দেখালেও বসুন্ধরাদি মাঝে মধ্যে ফোনে রায়নাকে বেশ এনকারেজ করেন।




একদিন দুপুরে ধ্রুবজ্যোতি রেস্ট নিচ্ছিল।রায়না এসে শুল ওর পাশে।বলল ..."আমি তোমায় ধ্রুব বলে ডাকব অত বড় নাম ডাকতে আমার ভালোলাগে না। "ধ্রুবজ্যোতি বলে..."যেমন তোমার ভাল লাগে তাই ডেকো। " ..."ধ্রুব তুমি আমায় প্রপোজ করলে না তো।"একটু আদুরে সুরে বললো রায়না।ধ্রুবজ্যোতি হাসে।বলে ..."বউকে কেউ প্রপোজ করে? "
..."কেন করবে না? বিয়ে হয়েগেছে বলে তোমার মনে হয় আমাকে পাওয়ার চেষ্টা করার দরকার নেই।"ধ্রুবজ্যোতি বলে ..."তুমি এখনও ছেলে মানুষ ঐ সব স্কুল কলেজে হয়।বিয়ের পর মানুষ ফ্যামিলি প্ল্যানিং করে।বউকে প্রপোজ করে?"খুব রাগ হয় রায়নার।বেচারি নিজে উদ্যোগ নিয়ে ওর এত কাছে আসার চেষ্টা করে চলেছে অথচ এই বেরসিক লোকটা কিছুতেই একটুও প্রেম টেম করতে ইন্টারেস্ট দেখায় না। রায়না মুখ গোমড়া করে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।সব চেষ্টা বেকার। যার মধ্যে বিন্দুমাত্র প্রেম ভাব নেই সে হবে রোম্যান্টিক। রায়নাই বোকা বেশী বেশী আশা করে বসেছিল। সব বেকার।এখন মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। যে স্বভাবগত ভাবে রোম্যান্টিক  হয় না তাকে জোর করে কিছুই শেখান যায় না।





জীবন আবার আগের ধারায় বইতে শুরু করল।রায়না আবার নিরুত্তাপ।শুধু মুখ বুজে ঘরের কাজ করে। শাশুড়ির সঙ্গে সঙ্গে রান্নায় হাত লাগায়। যেমনটা ধ্রুবজ্যোতি মেপে ঝেপে কথা বলে ও ততটুকুই মেপে ঝেপে উত্তর দেয়।আগের মতন যখন তখন ধ্রুবজ্যোতিকে নিয়ে এটা ওটা ট্রাই করে না। এদিক সেদিক ঘুরতে যাওয়ার বায়নাও করে না। হঠাৎ করেই নিবে গেছে ওর সব উচ্ছাস।
               একদিন বেশ রাত হয়েগেছে ধ্রুবজ্যোতি তখনও বাড়ি ফেরেনি।অনেক বার ফোন করেও ওকে ফোনে পায়নি রায়না।অফিসে ফোন করে জেনেছে ধ্রুবজ্যোতি অনেক্ষণ বেরিয়ে গেছে। আজব ব্যাপার তবে গেল কোথায় ছেলেটা! চিন্তায় চিন্তায় পাগল হচ্ছে  রায়না অথচ বাড়ির লোক নিশ্চিন্তে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।রায়না একবার বারান্দায় দাঁড়াচ্ছে একবার ঘরে ঢুকছে।স্বস্তি পাচ্ছে না কিছুতেই।রাত বাড়ছে অথচ ধ্রুবজ্যোতির কোনো পাত্তা নেই।শ্বশুর শাশুড়ির ঘরে ঢুকে শাশুড়িকে জাগাল।জিগ্যেস করল..."ও এখনও ফিরল না কেন? "উনি বললেন ..."ও ফিরবে খন তুমি শুয়ে পড়।"অবাক হল রায়না। এরা কেমন সব লোকজন। ছেলেটা বাড়ি ফিরল না তাতে কোনো চিন্তা নেই এদের।নিজের ঘরে এসে খুব কাঁদল রায়না। রোজ যেখানে সাতটা সাড়ে সাতটায় ধ্রুবজ্যোতি বাড়ি ফেরে সেখানে রাত প্রায় সাড়ে বারোটা বাজে তাও বাড়ি ঢোকেনি ধ্রুবজ্যোতি। রাগও হচ্ছে ফোনটা ধরছে না কেন? আবার ভয় হল  বাজে কিছু ঘটল না তো।কাউকে কিছু বলতে না পেরে  একাই কেঁদে গেল রায়না।প্রায় রাত একটা নাগাদ ঘরে ঢুকল ধ্রুবজ্যোতি। ওকে দেখেই  রায়না এক পলকে ছুট্টে গিয়ে জড়িয়ে ধরল ধ্রুবজ্যোতিকে।জড়িয়ে ধরেই কান্না । ধ্রুবজ্যোতি বলে..."এ কি কাঁদছ কেন? "চোখের জল দুহাতে মুছে কাঁদো কাঁদো গলায় রায়না বলে ..."তুমি আসছিলে না আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।"ধ্রুবজ্যোতি আলতো করে রায়নার চোখের জল মুছে বলল ..."তুমি বলেছিলে না তোমার স্টোনের নূপুর ভালো লাগে তাই অফিস থেকে বেরিয়েই সোনার দোকানে যাই একটা দোকানেও লেটেস্ট ডিজাইনের স্টোনের নূপুর নেই সব মোটা মোটা তোড়া নয়ত সিঙ্গল চেন। খুঁজতে খুঁজতে পুরো উল্টো দিকে চলে আসি গড়িয়াহাট থেকে চলে আসি বউ বাজার।ওখানে একটা দোকানে ঠিক তোমার যেমন পছন্দ সেইরকম নূপুর পেলাম।আসার পথে দেখি বাস ট্যাক্সি কিচ্ছু চলছে না ধর্মঘট।অনেক হুজ্জুতি করে বাড়ি ফিরলাম।"বলে ও পকেট থেকে নূপুর বের করে রায়নার হাতে দিল।জ্বল জ্বল চোখে তাকিয়ে রইল রায়নার দিকে।মৃদু হেসে জিগ্যেস করল ..."পছন্দ হয়েছে? "
 ..."তুমি ফোন ধরছিলে না কেন? "অধৈর্য ভাবে বললো রায়না।ধ্রুবজ্যোতি বলে ..."কেন তুমি যে বল তোমার সারপ্রাইজ ভালো লাগে তাই তোমার ফোন ধরিনি।বাড়িতে বলে দিয়েছিলাম যেন সবাই খেয়ে নেয় তোমায় কিছু না বলে।"বলেই ধ্রুবজ্যোতি এক গাল হাসল।ভ্রূ নাচিয়ে বলল ..."কি কেমন লাগল আমার সারপ্রাইজ। বেশ রোম্যান্টিক না। "ওকে দেখে মনে হচ্ছে যেন বিশ্বজয় করে এসেছে নয় তো একটা ওয়ার্ল্ড কাপ তো এনেইছে।রায়নার খুব রাগ হল নূপুরটা ছুড়ে ফেলে দুমা দুম ধ্রুবজ্যোতির বুকে দিল কয়েক ঘা। ধ্রুবজ্যোতি বলে ..."কি গো খেপে গেলে নাকি? "রায়না বলে ..."এই তোমার রোম্যান্স? এমন রোম্যান্সে দরকার নেই। আমি চিন্তায় চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম আরেকটু দেরি করলে আমার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেত। তুমি যেমন আছ তেমনই থাক।কোনো সারপ্রাইজ চাই না আমার। "বলে ও খাটে ধপ করে বসল রায়না । ধ্রুবজ্যোতি ওর পাশে বসল ওর গা ঘেঁসে। রায়না মুখ বেঁকাল। ধ্রুবজ্যোতি বলল ..."একটা বিষয় পরিষ্কার হল।"রায়না কর্কশ ভাবে বলে ..."কি? "
..."তুমি আমায় খুব ভালবাস।"রায়নার চোখ বেয়ে আবার জল গড়িয়ে পড়ল। ধ্রুবজ্যোতি মাটিতে পড়ে থাকা নূপুরটা তুলে রায়না পায়ে পরিয়ে দিয়ে বলল ..."আই লাভ মাই রোম্যান্টিক ওয়াইফ।"©Pryamboda priya
অনুভূতির আসর-Anuvutir asor(ফেসবুক পেজ)

রবিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৮

কর্ম ফল *


        #কর্ম_ফল  
  #রচনায় #প্রিয়ম্বদাপ্রিয়া
       দুপুরের সময় লোকাল ট্রেনে সামান্য ভিড়। তারমধ্যে এক ফেরিয়ালা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ডালি সাজিয়ে গ্রেব হ্যান্ডেলে ঝুলিয়ে যাত্রীদের মুখের দিকে তাকিয়ে। এক এক জনের মুখের আব ভাবে নিজের বিক্রির সম্ভবনা আন্দাজ করতে লাগল। এক মহিলা সেফটি পিন কিনলেন এক জন প্লাস্টিকের কাভার হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন। গ্যাঞ্জির দড়ি, টর্চ, চাবির রিং, ক্লিপ, টিপের পাতা ,ইমিটিশনের হার দুল আরও হরেক রকম জিনিস রয়েছে তার কাছে।কোনও কোনও যাত্রী হাত দিয়ে সরিয়ে নিজের প্রোয়জনের বস্তুর সন্ধান করছে। কেউ আবার চলন্ত ট্রেনের দোলায়  ঝিমচ্ছে। খোলা দরজার মুখের সামনে দুজন কামিন বসে আনমনে বাইরের চলন্ত দৃশ্যে মহিত। স্টেশনে ট্রেন থামতে আবার যাত্রীর ওঠানামার ভিড়ের মাঝে এক মহিলা চেঁচিয়ে উঠল ..."আমার চেন ...আমার চেন..."ট্রেনটা সবে ছেড়েছে প্লাটফর্মের বিপরীত দিকের ট্রেনের দরজা দিয়ে লাফ মেরে বড় বড় পা ফেলে লাইন টপকে ছুটল পটা।হাতের চেনটা শূন্যে ছুড়ে আবার হাতের মুঠোয় আবদ্ধ করে জয়ের হাসি হাসল। 




        আস্তানায় ফিরে সবার সামনে আজকের পরিশ্রমের উপার্জন মেলে ধরল পটা। নন্টা বলে..."বস কি মাল পেয়েচ তোমার তো গুরু আজ বরাত ভালো। "উসমান ওদের দলের লিডার চেনটা হাতে নিয়ে বলল ..."বেবকুফ বনে গেছিস। শালা মাল চিনিস না রূপার উপর সোনার জল চড়ানো আছে। "পটা ভ্রূ কুঁচকে মাথা চুলকে বলে..."তাতে কি আছে আজকাল ট্রেনে কেউ সোনা পরে না।রূপা বেঁচলেও দাম পাব। "উসমান চেনটা ছুড়ে বলল ..."বেঁচে ভাগের মাল দিয়ে যাবি। "পটা এক লাফে উসমানের কাছে গিয়ে ও'র ঘাড় পিঠ টিপতে টিপতে বলল ..."উস্তাদ মেয়েটার শরীর ভালো না যদি কটা দিন...। "
..."ঠিকাছে লেকিন হর বখক্ত উ সব শুনব না পুরো টাকা লিব। "বললো উসমান।
      




     রাস্তার ধারে জীর্ণ ঝুপড়ি পটা ঢুকতেই দেখল খাটের উপর মেয়েটা শুয়ে। বিন্দি ভাত নামাচ্ছে। পটা খাটে বসে মেয়ের মাথায় হাত রাখে দেখে গা গরম বিন্দকে বলে ..."কি রে জ্বর সারে নি। "রোগা ছোটো খাটো চেহারার বিন্দি বালতির জলে হাত ধুয়ে জল ভরা পুরনো একটা বোতল পটার সামনে ধরল।বললো..."ওষুধ লাগবে। এমনি সারবে না। " সারা রাত ভালো করে ঘুম হল না পটার। কাল অফিস টাইমে ভারি পকেট খালি করতে হবে।বড় হাত না মারলে চলবে না। কদিন ধরেই বাজার মন্দা যাচ্ছে।





      সকালে  অফিস টাইমে পটা উঠে পড়ল ভিড় ট্রেনে।ভিড়ের মাঝে একজনের উঁচু পকেট তাক করে হাতটা সন্তপর্নে   ঢুকিয়ে পার্স বের করে ঢুকিয়ে নিল নিজের শার্টের ভিতর। স্টেশনে নেমে তড়িঘড়ি ব্যাগ খুলে দেখে কাগজ বেশী টাকা কম। মাথায় আগুন জ্বলে গেল। শালার কপাল! ভাবল মোটা হাত মারবে তা না। শালা ট্রেনে ওঠে ভিখারি সাহেব। গজ গজ করতে করতে ওষুধের দোকানে এসে ওষুধ নিল,জ্বরের টেবলেট দিয়ে দিন তো! দোকানী দুটো ট্যাবলেট রূপালী ফয়েল থেকে কাঁচি দিয়ে কেটে রাখল পটার সামনে।ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফিরে দেখে বিন্দি নেই।মেয়েটা ঘুমচ্ছে ।রান্না করা ঝোল ভাত চাপা দেওয়া।রাগ হল পটার। মেয়েটাকে ফেলে গেল কোথায় বিন্দি। গোটা দুপুর কাটল উশখুশ করে।ঝুপড়ির বাইরে এসে বিড়ি ধরিয়ে টানল ধুঁয়া।পেটে ডাক পড়তে ঢাকা দেওয়া খাবার খেয়ে নিল গোগ্রাসে। খাওয়ালো মেয়েটাকেও।বিকালে বিন্দি ঢুকতেই পটা খেপা কুকুরের মতো তেড়ে এল ..."সকাল থেকে কোথায় ছিলি? মেয়েটার জ্বর আমি ঘর বাইর সব সামলাব!"বিন্দি হাতের বিস্কুটের প্যাকেট খুলে বিস্কুট গুলো ঢেলে রাখল কৌটয়।পটার কথার উত্তর দিল না। পটা আরও খেপে গেল।বিন্দির হাত টেনে ধরল।বললো..."বল কোথায় গিছলি।"
..."তোর টাকায় আমার মেয়ের জ্বর সারবে না আমি লোকের বাড়ি ঘর মোছা বাসন মাজার কাজ ধরেছি। তোকে অনেক বলেছি তুই শুধরাবি না ।চোর সারা জীবন চোর হয়ে থাকবি। "পটা বিচলিত হয়ে খাটে বসে দুলতে লাগল। খাট থেকে নেমে এক লাফে এগিয়ে এল বিন্দির কাছে ..."এই চোর তোকে বিয়ে করেছিল বিন্দি!তোর বাপ তো মাল খেয়ে তোকে বেঁচে দিচ্ছিল। "পুরনো কথা মনে করাতে বিন্দির চোখটা ছল ছল করে উঠল। গলার স্বরটা নরম হল।..."পটা তুই জেলে গেলে আমার অার নিতার কি হবে। "পটা বিন্দির হাত দুটো চেপে ধরল।  ..."একটা লম্বা হাত মারতে দে বিন্দি মাইরি বলছি এ লাইন ছেড়ে দিয়ে ট্রেনে মাল বেঁচব। সত্যি বলছি। "বিন্দি একটা লম্বা শ্বাস ছেড়ে নিজের রান্নার কাজে চলে গেল।
           





পটা ঠিক করে নিয়েছে ওকে কিছু করতেই হবে। এই ভাবে পকেটমারি করে আর চলবে না। বড় হাত মারতেই হবে।আস্তানায় গিয়ে সবাইকে বললো ..."এভাবে ছোট খাটো হাত মেরে লাভ নেই বড় পার্টি ধরে লুঠতে পারলে তবে লাভ।"উসমান রাজি হল না বললো..."অতে অনেক খতরা আছে।"জমল না দেখে মেজাজ খাট্টা হল নন্টার।





      দিনকয়েক পর নন্টা পটার ঝুপড়িতে এল। নন্টাকে দেখে সঙ্গে সঙ্গে ঝুপড়ির বাইরে নিয়ে গেল পটা। দুজনে ঝুপড়ির বাইরে ফন্দি আটল। নন্টা  বলে ..."উসমান বুড়ো হয়ে গেছে যা করার আমাদের করতে হবে। একটা রাম দাঁ বা ভোজালি যোগার করে রাতে ফাঁকা রাস্তায় সুযোগ বুঝে মাল ধরতে পারলে তবে লাভ। "ফস করে একটা বিড়ি ধরাল পটা। ফুসফুসে ভরে নিল তামাকের ধোঁয়া।মাথা ঝাঁকিয়ে বললো ..."ঠিক বলেছিস।"কিছুটা তফাতে বিন্দি দাঁড়িয়েছিল।শুনল ওদের সব কথা।পটা ঝুপড়িতে ফিরতে বিন্দি বলে..."আমি থাকা পরার কাজ পেয়েছি নিতাকে নিয়ে চললাম তোর পাপের টাকায় আর এক দানা ভাত দাঁতে কাটব না। চুরি ছেড়ে খুন করবি। তারপর আমার মেয়ে খুনির মেয়ের পরিচয়ে বড় হবে আমি হতে দেব না। "
..."অত বেশী কথা বলিস না। টাকা ছাড়া কিছু আসে না দুনিয়ায়! "
..."টাকা রোজগার তুই তোর মতন কর আমি আমার মতন করে নেব। "বিন্দিকে অনেক ভাবে আটকাতে চাইল পটা বোঝাল। কিন্তু বিন্দি ওর কোনো যুক্তি শুনল না।মেয়ে নিয়ে বেরিয়ে গেল। বিন্দিকে আটকাতে না পেরে  রাগে গজ গজ করল।চেঁচাল একাই ..."যা! যাবি তো। যখন অনেক পয়সা করব তখন ঠিক আসবি।ঘুরবি আমার আশে পাশে। দেখব তখন কোথায় যায় তোর তেজ।"
     



  প্ল্যান মাফিক রাতের বেলায় ফাঁকা রাস্তার ধারে পটা আর নন্টা ভোজালী হাতে মুখ গামছায় বেঁধে যাত্রীর অপেক্ষায় রইল।  অন্ধকার চিড়ে স্কুটারের হেড লাইটের আলো এগিয়ে এল ওদের দিকে।এক তরুণ আর বয়স্ক আসছিল ।ওরা হঠাৎ করে রাস্তার মাঝে রে রে করে ছুটে এসে স্কুটার দাঁড় করাল।যাত্রীরা আতঙ্কে কি করবে না করবে বোঝার আগেই ভেজালি দেখল নন্টা। পটা বললো ..."ঘড়ি, আংটি মানিব্যাগ মোবাইল সব দে! "ভীত আতঙ্কিত তরুণ আর বয়স্ক দিয়ে দিল ওদের চাহিদার সব জিনিস পত্র।জিনিস পত্র লুটে দুজনে চম্পট দিল অন্ধকারে। 




      ভালো টাকার লাভ। কিন্তু চুরির জিনিস এত সহজে বেঁচা যায় না। দামও সেরকম মেলে না।তবে পকেটমারির থেকে লাভ অনেক বেশী। নন্টা বলে..."পটা শালা ট্রেনে ছিনতাই এর থেকে এটা তো বেশী ভালো রে চল আজও যাব। "পটা এই পেশায় নবাগত হলেও বুদ্ধি রাখে বলে ..."রোজ রোজ লুঠ করলে ধরা পড়ে যাব অন্য রাস্তায় লুঠতে হবে তাও ক'দিন পরে। "পরিকল্পনা মত ক'দিন পর ওরা আবার ফাঁদ পাতল এবার রাস্তার উপর পেরেক বিছিয়ে রেখেছে। একটা চার চাকার গাড়ি আসতে দেখে নন্টা বলে..."পটা আসছে ...মাল আসছে। "পেরেকে টায়ার পাংচার হয়ে খানিক দূরে গিয়ে গাড়ি থামতে পটা হামলা করল। গাড়ির ড্রাইভার একজন মহিলা ।সহজ শিকার।পটা ভোজালি দেখিয়ে বলে..."যা আছে সব দে। "মহিলা কম্পিত কন্ঠে বলে..."সব নিয়ে যাও আমাদের যেতে দাও আমাদের সঙ্গে অসুস্থ বাচ্চা আছে আমাদের তাড়াতাড়ি হাসপাতাল যেতে হবে । "পটা উঁকি মেরে দেখল মহিলার পাশের সিটে একটা বাচ্চা ঘুমচ্ছে। মহিলার সোনার চেন, দুল, মোবাইল পার্স লুঠে ও'রা আবার অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। 
       




       সকালে ঘুম থেকে উঠে অনেক রঙীন স্বপ্ন নিয়ে দু চোখ মেলল পটা। ঝুপড়ির জীর্ণতা মলিন বস্ত্র আবর্জনা সব কিছুর থেকে চিরতরে মুক্তি পাবে পটা। মোটা টাকা পেয়েছে এবার একটা স্টল দেবে একটা ভালো বাড়িতে ভাড়ায় উঠবে বিন্দি আর নিতাকে সেই ঘরে তুলবে। এবার ভদ্রলোক হবে পটা। বিন্দি আর রাগ করতে পারবে না।এবার সুখ ই সুখ।এমন সময় টিনের দরজার কড়াটা কেউ দম দম করে ধাক্কাল। যেন আচমকা অযাচিত কেউ ও'র স্বপ্ন ভঙ্গ করল। বিরক্ত হয়ে দরজা খুলতেই ও'র মাথার পেছনে চাটি মেরে ওর ঘেটি ধরল পুলিশ।এক ঠেলায় জিপে ওঠাল।  হঠাৎ অপ্রত্যাশিত পুলিশের অভিযানে হতভম্ব হয়ে যায় পটা। একটু আগেই তো ভাগ্য সদয় হয়েছিল তাহলে এমন পরিস্থিতি কেন।এমন তো ভাবেনি কোনো দিন।




     জেলে পুলিশের লাঠির ঘায়ে পটা সব স্বীকার করল।  চুরি ছিনতাই এর দায়ে জেলও হল পটার। জেলে অজস্র কয়েদির মাঝে পটা একা। বিন্দির চোখ দুটো সব সময় ওর পিছু করে যেন বলে..."পটা কেন এমন করলি কেন আমার বারণ শুনলি না। "কচি মেয়েটার মুখ মনে পড়ে মনে পড়ে ওর নরম হাত দুটো দিয়ে ওর চোর বাবার গলা জড়িয়ে ধরত। মেয়েটার চোখে কোনও দিনও প্রশ্ন ছিল না। সন্দেহ ছিল না। ছিল শুধু ভালবাসা। আচমকা  কানে এল ...পটা তোর সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। "ছুটে এল ও।' নিশ্চয়ই বিন্দি।ও ছাড়া কে আসবে ওর সঙ্গে দেখা করতে। ঠিক তাই।থমথমে মুখে ও'র দিকে তাকিয়ে বিন্দি।বিন্দির  মুখটা দেখে বুকটা ছ্যাৎ করে উঠল পটার।কেমন শুকিয়ে গেছে বউটা।হাঁ করে পটা তাকিয়ে রইল বিন্দির দিকে।বিন্দি গলার স্বর ক্ষীণ।ও বললো..."তোকে কে পুলিশে ধরাল জানিস? "পটার চোখের ভাব বদলালো। কি বলছে বিন্দি। একটা শ্বাস ছেড়ে বিন্দি বললো..."সেদিন যে ম্যাডামের গাড়ি  লুঠলি তার পেছনের সিটে আমি বসে ছিলাম ।ঐ ম্যাডামের বাড়িতেই থাকা খাওয়ায় ছিলাম আমি। ওনার মেয়েকে দেখা শোনা করতাম। তোর গলা শুনেই চিনেছিলাম তুই লুঠতে এসেছিস। আমার মেয়েটা সিঁড়ি থেকে পড়ে মাথায় চোট লেগেছিল ওকেই হাসপাতাল নিয়ে যাচ্ছিলাম। তোর জন্য সময়ে হাসপাতাল পৌছতে না পেরে মেয়েটার কত কষ্ট পেল। কত দিন  জ্ঞান ছিল না । আজ শশ্মান থেকে ফিরছি। তোর সব পাপ আমার কচি মেয়েটা ও'র ছোট্ট শরীরে নিয়ে নিল। কত কষ্ট পেয়ে কচি প্রাণটা চলে গেল পটা। সব তোর জন্য তোর লোভের জন্য। পরিশ্রম না করে লুঠের মালে দিন কাটাবার স্বপ্নের জন্য।" বলতে বলতে বিন্দির গলা ধরে আসছিল।আচল দিয়ে চোখের জল মুছল বিন্দি।ভেজা চোখে বুকে একরাশ বেদনা নিয়ে একাকি জীবন যুদ্ধে পারি দিল বিন্দি। পটা চেয়ে রইল শূন্য দৃষ্টিতে। কোনো ভাব বেদনা কিছুই যেন অনুভূত হচ্ছে না। দম বন্ধ লাগছে বার বার মেয়ের মুখটা ভেসে আসছে চোখের সামনে।কি করল ও। কার ক্ষতি করে নিজে লাভবান হতে চাইল! ওর ক্ষতিপূরণ হবে কি কোনো দিন। ©Pryamboda priya
28

অনুভূতির আসর  

কনক *


#কনক
#রচনায়#প্রিয়ম্বদাপ্রিয়া
        অনু চুপি চুপি এসে কনকের পেছন থেকে ভৌ শব্দ করে হালকা ধাক্কা দিতেই কনক চেঁচিয়ে  উঠল। অনু হো হো করে হেসে ওঠে ..."কি ভীতু রে তুই? "কনক ওর পিঠে চাটি মেরে বলে ..."আমিও ঐরকম পেছন থেকে হঠাৎ করে ভয় দেখাব তখন বুঝবি।"অনু ওর পাশে এসে বসল বলল ..."আচ্ছা সে নয় দেখা যাবে। এখন বল তো সুভাষদার কি খবর? দিল্লিতে গিয়ে সব ভুলে গেল বুঝি?"
..."আরে ও খুব ব্যস্ত থাকে। ইদানীং ফোনে কমই কথা হয়।এম.বি.এ করা যথেষ্ট টাফ্। "
..."যাই বল কনক সুভাষদা হঠাৎ করে এম.বি.এ করার ডিসিশনটা নিল বিয়েটা করে গেলেই পারত।"অনুর কথায় একটু বিরক্ত হয়ে কনক বলল ..."বিয়ের ঢের সময় আছে। এখন ও ভালো করে সেটল হোক আমিও তো বি.এডএ ভর্তি হব। "অনু হাসল আলগা ভাবে। 
        কনকদের বন্ধু মহলে সবাই জানে সুভাষ আর কনক চার বছর ধরে  রিলেশনে আছে। কনকের তো এখনও মনে আছে সরস্বতী পুজোয় হলুদ শাড়ি পরে যখন কনক কলেজের পুজোয় পুষ্পাঞ্জলি দিতে গিয়েছিল সেই প্রথম ওকে দেখেই সুভাষ প্রেমে পড়ে গিয়েছিল। কনকের পাশে এসে দাঁড়াতেই মেরুন পঞ্জাবী পরা ছেলেটাকে দেখে একটু লজ্জা লেগেছিল কনকের। এক সঙ্গে অনেক সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছে ওরা দুজনে। সুভাষকে দেখে বন্ধুরা যখন কনকের লেগ পুল করত ..."ঐ দেখ তোর বর আসছে। "খুব হাসি পেত।  মনে মনে উপভোগ করত ঐ দুষ্টুমি খুনসুটির প্রত্যেকটা মুহূর্ত।তারপর সুভাষ কলকাতায় একটা চাকরিও করছিল কিন্তু ভালো পোস্ট আর পজিশনের জন্য এম.বি.এ করতে  দিল্লীতে চলে গেল। প্রায় এক বছর হতে চলল সুভাষ দিল্লীতে। প্রথম প্রথম দিনে চার পাঁচবার ফোনে কথা হত তারপর সেই সংখ্যাটা কমে দাঁড়ায় দিনে দুবার এখন কথা শুধু হোয়াটসঅ্যাপে।কনকের মাঝে মধ্যে মনে হয় কি এমন ব্যস্ততা পরমুহূর্তে মনে হয় পড়াশোনা করতে গেছে কত রকম সমস্যা আছে হয়ত না না ভাবে সময় বের করতে পারে না। 
     






 এদিকে একদিন মাসি ফোন করে বলল ..."কনক আমি বাড়ি শিফট করছি তুই এলে ভালো হত। "কনক আবার ঘরের কাজে খুবই পটু। বিশেষ করে জিনিস পত্র আনপ্যাক করে তা সুন্দর ভাবে গোছাতে কনকের জুড়ি মেলা ভার। তাই মাসির কথা মত চলে গেল নতুন ফ্ল্যাটে। ওখানে গিয়ে দেখে সব প্যাক করা মালপত্র ফ্ল্যাটের করিডোরে রাখা। সিঁড়ি বেয়ে কুলি লড়ি থেকে জিনিস পত্র বয়ে আনছে।এর মধ্যে একটা ছেলে এক পাঁজা বই ওর হাতে ধরিয়ে ..."ধর....ধর"বলে চলে গেল। কোনও মতে বইগুলো আগলে এক কোণে দাঁড়িয়ে কনক। প্রচন্ড ওজন কি করে। ছেলেটি ঘরের ভিতর থেকে বাইরে এসে বলল ..."এ কি দাঁড়িয়ে রইলে যে ভিতরে এস। "নিজের মাসির বাড়িতেই কেমন যেন অচেনা পরিবেশ লাগল ওর। ঘরে ঢুকেই একটা পিজবোর্ডের  বাক্সের উপর বই গুলো রাখল। মাসি বলল ..."কনক এই দেখে আমার মেজ ননদের ছেলে ঋষি। "ছেলেটা বলল ..."আমাদের আগেও দেখা হয়েছে। "কনক ভ্রূ কুঁচকে বলে..."কোথায়?"মাসিও অবাক। সকলের রহস্য ভেদ করে ঋষি বলে..."কেন টুবলুর অন্নপ্রাশনে ওকে দেখেছিলাম। "মাসি তো হেসে গড়ায় ..." তখন তো তোর মাত্র সাত বছর বয়স। "ঋষি লাগাতার সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা করে বেশ ক্লান্ত।চাদরে মোড়া সোফায় গা এলিয়ে বলে..."আমার সব মনে থাকে। "দুপুরে মাসি গরম গরম খিচুড়ি আর অমলেট বানিয়ে খেতে ডাকল ওদের দুজনকে। ঋষি তো খিচুড়ি দেখে নাক সিটকে বলে ..."আমি কিছুতেই খাব না এ জিনিসটা আমার একদম সহ্য হয় না। "মহা বিপদে পড়ে মাসি। মাসি জানত ঋষি খিচুড়ি খায় না কিন্তু ঝামেলার মাঝে তাই করেছিল কনক বলল ..."তাহলে আজ উপোস কর। "
..."ভারি নিষ্ঠুর তো তুমি?"কোমরে হাত দিয়ে ওর সামনে এসে  বললো ঋষি।
..."কোনও উপায় নেই নয়।এই খিচুড়ি খাও না হলে উপোস।"বেচারা আর ঝামেলায় গেল না। অনিচ্ছা সত্তেও বসে পড়ল খেতে।বিকেলে ঋষি চলে যাওয়ার পর মাসি বলল ..."ঋষি ভালো চাকরি করে। তোর ওকে কেমন লাগল। "মাসির ইশারা বুঝতে পেরে কনক একটু ঝামেলায় পড়ে। ও চুপ করে রইল। মাসি বলল ..."আমার খুব ইচ্ছে তোদের বিয়ে হোক।"কনক মাটিতে বসে মোড়ক খুলে শোপিস গুলো শোকেজে সাজাচ্ছিল মাসির কথাটা শুনেই  এক লাফে উঠে দাঁড়ায় ..."ওয়েট... ওয়েট আমি কিন্তু বিয়ের জন্য একদম রেডি নই। "মাসি একটু হকচকিয়ে যায়। বলে ..."এখনই তো বলছি না। তবে ঋষি কিন্তু ভাল ছেলে। দেখতে শুনতেও তো মন্দ নয়। "
..."প্লিজ মাসি। আমি অলরেডি একজনের সঙ্গে রিলেশনে আছি। সেখানে ঋষি যত ভালোই হোক না কেন আমি ভাবতে চাই না। "মাসি চুপ করে গেল। এসব ব্যাপারে মনের ইচ্ছেটাই সব।





     এদিকে ক'দিন ধরে সুভাষের কোনো পাত্তা নেই। ফোন করলে রিং হয়ে যায় ও ফোন ধরে না ।মেসেজ করেও লাভ হয় না। কনক মন মরা হয়ে শুয়ে।ভিতর ভিতর টেনশনও হচ্ছে সুভাষের জন্য।তখনই সুভাষের ফোন। কনক এক লাফে ফোন ধরে বেশ উত্তেজিত গলায় বলে ..."কি আশ্চর্য ফোন ধরছ না কেন? "
..."একটু ব্যস্ত ছিলাম।"ফোনে সুভাষ বললো। 
..."এত ব্যস্ত যে আমার কথা মনে পড়ে না।আমায় মিস কর না তুমি ? "
কথাটা এড়িয়ে গিয়ে সুভাষ অন্য কথা বলতে শুরু করল। কনক ওকে  বিরক্ত  করার জন্য বলল ..."আমার নতুন একজন বন্ধু হয়েছে ওর নাম ঋষি ভীষণ হ্যাণ্ডসাম।আমাকে লাইক করে জানো! "সুভাষের গলার স্বরের বিশেষ পরিবর্তন হল না।ও শুধু বলল ..."ভালোই তো নতুন নতুন বন্ধু তৈরী কর। ঘোর ফের আনন্দ কর জীবন তো একটাই।"এই রকম কিছুই আশা করে নি কনক।ভেবেছিল সুভাষ হয়ত একটু হিংসা করবে বা রাগ দেখাবে কিন্তু ওর তো কোনও হেল দোলই নেই।কনক ভাবল দিল্লিতে গিয়ে সুভাষ বড্ড বেশী আধুনিক হয়েগেছে নিজের গার্লফ্রেণ্ডের প্রতি কোনো পজেসিভনেসই নেই।না কি ও কনককে এতটাই বিশ্বাস করে যে মাঝে সন্দেহ অ
বিশ্বাস কিছুই আসতে দেয় না। ভেবে ভালই লাগল কনকের। 



  বি.এড কলেজে বেশ কিছু দিন হল কনক ভর্তি হয়েছে।রোজ রোজ ক্লাস পড়ার চাপে কদিন ধরে ও ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।একদিন কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার সময় বাসে দেখা হল অনুর সঙ্গে। অনু যেন ওকে দেখে না দেখার মত করে রইল। কনক ওর পিঠে চাটি মেরে ডাকে..."কি রে চিনতে পারছিস না। "অনু ঘাবড়ে যায় তার সঙ্গে আরও চমকে ওঠে কনক। অনুর পাশেই দাঁড়িয়ে সুভাষ।ও যেন বিশ্বাসই করতে পারে না ।সুভাষ এখানে কি করে এল এর তো দিল্লিতে থাকার কথা। এখানে বাসে আবার অনুর সঙ্গে। ভাবনা চিন্তা গুলো তালগোল পাকিয়ে গেল।ওরা দুজনে একে অপরের হাত ধরে ওরই সামনে দিয়ে চলে গেল। কনক অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।যেন কোনো এক দুঃস্বপ্নে রয়েছে ও। বাস থেকে যখন নামল তখন প্রায় সন্ধে। রাস্তায় স্ট্রীট লাইট জ্বলে গেছে আকাশে আবছা আলো দেখা যাচ্ছে কিন্তু ও যেন চারিদিক অন্ধকার দেখছে নিজের চোখকেই তো বিশ্বাস হচ্ছে না।মাথা ঘুরছে ।পা দুটো টলছে সেই সময় একটা বাইক ওর গা ঘেসে   বেরিয়ে যেতে একটা অপরিচিত হাত এক ঝটকায় টেনে আনল ওকে অচৈতন্য মনটা শরীরের ঝাঁকুনিতে সচেতন হল। দেখে ঋষি ওর হাতটা শক্ত করে ধরে ও ধমকের সুরে বললো ..."সন্ধের পর থেকে চোখে দেখ না। "কনক ওর কোনও কথারই উত্তর দিতে পারল না কেমন যেন ওর  দম বন্ধ হয়ে আসছে গা গুলিয়ে উঠছে  শুধু বলল ..."আমার শরীরটা ভালো লাগছে না। "ঋষি বোধ হয় কিছু একটা বুঝল ওর চোখ মুখ দেখে।বেশী কথা না বাড়িয়ে ওকে বাড়ি পৌছে দিল। সারা রাত চোখে ঐ দৃশ্যটা ওকে এতটুকুও ঘুমতে দিল না চোখ বুজলেই খালি দেখছে অনুর হাত ধরে সুভাষ বাস থেকে নেমে গেল।ওকে দেখেও দেখল না এমন কি কোনো রকম প্রতিক্রিয়াও দেখাল না। ওরা কবে থেকে ওকে অন্ধকারে রেখেছে কিছুই টের পায় নি কনক। দিনের পর দিন ওর প্রিয় বন্ধু আর ওর প্রমিক ওকেই আড়াল করে দুজনে দুজনের মাঝে রিলেশন তৈরি করে নিয়েছে। এমন নির্দয়তার সঙ্গে বিশ্বাস ভাঙতে মনে গভীর আঘাত পায় কনক। আত্মবিশ্বাস হারায়।এমনকি হারায় ব্যবহারের স্বাভাবিকতা সব সময় চুপচাপ। কথা না বলে একা বসে থাকা। বাড়ির লোক ব্যাপারটা ভাল ঠেকছে না দেখে সাইক্রিয়াটিস্টের সাহায্য নেয়। সেখানে ডক্টর বলেন কনক ডিপ্রেসনে ভুগছে ।মনের আত্মবল ফেরাতে  জীবনের স্বাভাবিকতা আনতে ়সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে কাউনসিলিং করে যেতে হল বেশ কিছুদিন ধরে।  নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড আর প্রেমিকের কাছ থেকে পাওয়া এমন অপ্রত্যাশিত আঘাতে স্বাভাবিক ভাবে দিন গুলো কাটাতে ব্যর্থ হয়ে পড়েছিল কনক।মন থেকে এতটাই ভেঙে পড়েছিল যে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করতে হল।একরকম লড়াই করতে হল নিজের শরীরের মনের ভাব আবেগ গুলোর সঙ্গে।এমনকি বি.এড কোর্সটাও  বন্ধ হয়ে গেল মাঝ পথে কেমন যেন হঠাৎই বদলে গেল কনকের জীবন।
            




বাড়ির লোকের সমর্থনে আর অনেক দিনের কাউনসেলিংএ  ধীরে ধীরে স্বভাবিক হয়ে উঠল কনক। একদিন স্নান সেরে জানলার সামনে বসে রোদে চুল শুকচ্ছিল তখনই মাসির ফোন করল। মাসি বললো ..."ঋষির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ।অনেক দিন পর একটা শুভ অনুষ্ঠান পাব। সবাই মিলে খুব আনন্দ করব।দেখবি কত মজা হবে। তুই কিন্তু শিফন জর্জেট পরবি সকলের সঙ্গে মিশলে দেখবি মন ভালো হয়ে যাবে।এই বিয়ে বাড়িটা দরকার ছিল। সবার সঙ্গে দেখা সাক্ষাত হবে কথা বলবি।খুব আনন্দ হবে দেখিস" মাসি বুঝিয়ে গেল না না ভাবে। এই বিয়ে বাড়িটা না কি ওর মেডিসিনের কাজ করবে। কনক শুনল চুপচাপ। একবার মনে এল এই ঋষির সঙ্গে বিয়ের কথা হয়েছিল ওর। তখন লাফিয়ে উঠেছিল।তখন সব ভরসা ছিল সুভাষ। সুভাষের কথা মনে আসতেই নিজেকে সামলে নিল। কনক যাবে ঋষির বিয়েতে। আনন্দ করবে। ও তো ঋষির প্রতি কোনও দিনও আকৃষ্ট হয় নি তবে কেন যাবে না আর যাকে ভালোবেসে ছিল বর্তমানে তার প্রতি কোনও অনুভূতিই আর জীবিত নেই।
       





     ঋষির বিয়েতে কনক সুন্দর ভাবে সেজে গুজে পুরনো সব যন্ত্রণা পিছনে ফেলে আনন্দে ভাসল।ওকে দেখে ঘোষাল পরিবারের পছন্দ হয়ে গেল।বিয়ের প্রস্তাব এল ঘোষাল পরিবারের তরফ থেকে। কনকের পরিবারও আপত্তি করল না ।ভাল ফ্যামিলি বাড়ির বড় ছেলে মানসের রোজগার ভাল দেখতে শুনতে ভাল তবে আর আপত্তির জায়গা কোথায়। বাড়ির লোকের উপর পুরো আস্থা রেখে কনকও রাজি হয়ে গেল বিয়েতে। অতীতের ক্ষত সারিয়ে সমস্ত মলিন স্মৃতি ভুলে  কনক নতুন জীবনে পা ফেলেল। 




       বিয়ের পর থেকেই কনক দেখেছে মানস ওকে সব বিষয়ে গুরুত্ব দেয়। কোনো কাজ কনকের সঙ্গে আলোচনা না করে করে না। ওর ছোট বেলার সব কাণ্ডকারখানা এমন কি প্রথম ক্রাশ কলেজের বিফল প্রেম সব বলেছে ওকে। মানস বড্ড খোলামেলা কোনো কথা লুকতে জানে না। কনক ভাবে তবে ওই বা কেন সব খুলে বলবে না মানসকে।তারপর ভয়ও পেয়েছে সব শুনে যদি উল্টো প্রতিক্রিয়া হয় কিন্তু মানসের সঙ্গে কথায় কথায় কনক একদিন সব বলে ফেলে।বলে হালকাও লাগে। অন্য কারো কাছ থেকে এত ঘটনা জানার চাইতে কনকের কাছে জানাটাই ঠিক বলে মনে হল কনকের। ধীর স্থির স্বভাবের পরিণত মনস্কের মানস সব শুনল শান্ত মনে তারপর বলল..."এখন তুমি আমার কনক, তোমাকে সব ঝড় ঝাপটা থেকে আগলে রাখার দায়িত্বটাও আমার।"মানসের কথা গুলো যেন ওর তৃষ্ণার্ত হৃদয়ে প্রেমের বারি বর্ষণ করল। নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেল কনক। 




এদিকে মানসের ছোট ভাই আবার বৌদি ভক্ত।দুই ভাই পিঠো পিঠি এবার দেওরের পাত্রী নির্বাচনের পালা।এক পাত্রীর সন্ধান এনেছেন শ্বশুর মশাই। সবাই বলল আগে মানস আর কনক দেখে আসুক তারপর বাড়ির বড়রা দেখবে। সকলের কথায় ওরা দুজন পাত্রী দেখতে হাজির হল।কিন্তু পাত্রী দেখে কনকের চক্ষু চড়ক গাছ। এ পাত্রী আর কেউ নয় ওর বিশ্বাস ভাঙার পাত্রী অনু। কথাবার্তার মাঝে কনক বলল ..."আমি অনুর সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই। "সকলে ব্যাস্ত হয়ে অনুর সঙ্গে কনকের নিভৃতে সাক্ষতের ব্যবস্থা করল। কনক অনুর চোখের দিকে তাকিয়ে বলল ..."কেন ?"অনু ওর চোখের দিকে তাকাতে পারল না কেঁদে ফেলল ..."আমায় মাফ কর আমি জানি আমি কতটা নীচে নেমে গিয়েছিলাম কিন্তু সুভাষের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা টেকে নি ও আরেক জনের সঙ্গে রিলেশনে ... ঠিক যেমন তোর সঙ্গে ..."কনক বলল ..."আমায় ঈশ্বর বাঁচিয়েছেন তাই আমি মানসকে পেয়েছি কিন্তু তুই তো ব্যক স্ট্যাবার অনু তুই একটা মেয়ে হয়ে আমার মনের সঙ্গে খেলে আমার পিঠে ছুড়ি মারলি কি করে তোকে আমি কোনও দিনই  বিশ্বাস করতে পারব না।" অনু কথার উত্তর দিতে পারল না। মনসের সঙ্গে ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল কনক।মানস বললো কি গো পছন্দ হল? হাসল কনক আজ ওর হ্যা না এর উপর অনুর এবাড়িতে প্রবেশ নির্ভর করছে যে নাকি একদিন ওকে ওরই জীবনে অসহায় করে দিয়েছিল। কনক মাথা নাড়ল ..."উহু। একে পছন্দ করা মানে সব জেনে বিপদ ডাকা! "মানস ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। কনক বললো ..."বিশ্বাস ঘাতক কে মাফ করা বোকামি!"
..."মানে এই কি সেই! "চোখ বড় করে মাথা এক পাশে হেলিয়ে সঙ্গতি প্রকাশ করল কনক। দুজন হাঁটা ধরল পাশাপাশি। কনকের বড্ড ভাল লাগছে। ভাল লাগছে মানসকে পাশে পেয়ে।ভাল লাগছে আজকের দিনটা।মনে অনু সুভাষের প্রতি কোনো ক্ষোভ ছিল না ঠিকই তবে আজকের ঘটনাটায় মনে হচ্ছিল লড়াই করে ঘুরে দাঁডাতে পারলে একটা সুযোগ ঠিক আসে। সুযোগ আসে নিজেকে প্রমাণ করার নিজের সততার মূল্য পাওয়ার।©Pryamboda priya

অনুভূতির আসর-Anuvutir asor ফেসবুক পেজে আরো গল্প রইল 

শনিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৮

অবশেষে *

    #অবশেষে 
#রচনায়#প্রিয়ম্বদাপ্রিয়া
        বাড়ির ছাদের উপর খোলা আকাশের নীচে তিন বন্ধু গানের লড়াইতে মেতেছে। সন্ধে গড়িয়ে রাত।চারিদিকে বেশ শীত শীত নীল গিটার বাজিয়ে সব গানে তাল দিচ্ছে। মীরা গাইল ..."অভি না যাও ছোড় কে দিল অভি ভরা নহি......"দেবজিত ওর গানের শেষ অক্ষর তুলে আবার গান ধরল। মীরার মা ছাদে উঠে বললেন..."কি রে তোরা সারা রাত ছাদে কাটাবি। "আসর ভাঙল তিন গায়কের মধ্যে দু জন নিজের বাড়ির পথে রওনা দিল। নীল বলল ..."দেবজিত এবার জমিয়ে ঠাণ্ডাটা  পড়ল বল। "দেবজিত দু হাতের পাতা ঘষে বলে ..."ভালোই তো তোর কোম্পানি জমিয়ে গিজার বেঁচল।"
..."কোম্পানির লাভ হবে তাতে আমার কি রে।"বলে নীল প্রসঙ্গ বদলাল ..." দেবজিত তোকে বলা হয় নি মীরা আমার জন্য একটা জ্যাকেট কিনেছে কি ব্রাইট কালার।"নীলের কথার সুরটা শুনেই দেবজিত বুঝল ওকে শোনাবার জন্যই বলছে তাই সেও  বলল ..."আমার জ্যাকেটের কালারটা ব্রাইট রয়াল ব্লু তোরটা কি? "নীল একটু চটল তার মানে মীরা দুজনের জন্যই কিনেছে। কিন্তু নিজের রাগটা দেবজিতের সামনে প্রকাশ করল না। তিন বছর আগে গানের সূত্রেই মীরার সঙ্গে দেবজিতের পরিচয়। নববর্ষের অনুষ্ঠানে গান গাইতে এসেছিল মীরা। দেবজিতের ক্লাব 'আমরা যুবক'সব আয়োজন করেছিল। সেখানে বড় বড় শিল্পীরা গাওয়ার পর শেষ পারফর্মেন্সটা মীরার ছিল। অসাধারণ গানের গলা  দর্শকরা যারা উঠে যাচ্ছিল আবার ঘুরে বসেছিল। সেই থেকে পরিচয়। দেবজিতের মাধ্যমেই নীলের সঙ্গে পরিচয় হয় মীরার। নীল আর দেবজিত ছেলেবেলার বন্ধু কিন্তু বর্তমানে তাদের সম্পর্ক পরিবর্তিত হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।মীরার কাছে আসার জন্য দুজনেই না না টোপ ফেলে ।
             মীরার  নৈনিতালে  একটা  গানের প্রোগ্রাম আছে নীল শোনা মাত্র মীরার মাকে আশ্বস্ত করল..."কোনও চিন্তা নেই মাসিমা আমি নিয়ে যাব এমনিও আমার অনেক ছুটি পড়ে আছে। আমার কোনও অসুবিধা হবে না।"দেবজিত লেট করে ফেলল। নীল ফোন করে দেবজিতকে সুখবরটা দিয়ে দিল  ..."দেবু আমি আর মীরা গানের প্রোগ্রাম করতে যাচ্ছি। "দেবজিত রাগে দিল ফোনটা কেটে। এমনিতেই ব্যাঙ্কের কাজে বাইরে যেতে হচ্ছে ।নিরুপায় দেবজিতের দু হাত বাঁধা। 
        পঁচিশে  বৈশাখে দেবজিতের ক্লাবের অনুষ্ঠানে একটা গান থাকবে  মীরার।নীল আর দেবজিত দুজনেই জামাই সাজে সেজেছে। কে কাকে দেখে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে ওদের থেকে প্রাণবন্ত ও আনন্দ উচ্ছাসে পূর্ণ পুরুষ এই মুহূর্তে ধরা তলে কেউ নেই। ধুতি পাঞ্জাবি পরা নীলের গলায় আবার আছে সোনার চেন। দেবজিতের নজর যাচ্ছে বার বার ওর চেনটার দিকে। মীরা বলল ..."বাবা দু জনে কি মাঞ্জা দিয়েছ।কার হৃদয় লুন্ঠনের প্রচেষ্টা চলছে শুনি। "নীল লাজ্জা পেয়ে হেসে বলল ..."সে আর বুঝল কই। "মীরা নীলের হাতটা চেপে বলল ..."কে গো বল বল। "দেবজিত অস্বস্তিতে পড়ল আমতা আমতা করে বলে ..."ওর একটি প্রেমিকা আছে  কিন্তু আমি এখনও প্রেয়সীর সন্ধানে।"নীল রাগে হয়ে যায় লাল। অনুষ্ঠান শুরু মীরা গান ধরল। খোলা মাঠের উপর মঞ্চ হালকা হাওয়ায় ওর কপালের এলো মেলো চুল গুলো উড়ছে।সুরের সঙ্গে সঙ্গে মীরার মুদ্রিত চোখ ওর লম্বা গ্রীবা ঠোঁটের সঞ্চালনে মোহিত দুই যুবক। গানের সঙ্গে ওরা ওদের স্বপ্ন সুন্দরী প্রেয়সীর সঙ্গে স্বপ্ন রাজ্যে নিজেদের  হারাল। মীরা গান শেষ করে নীলকে জিজ্ঞাসা করল ..."বল তোমার গার্লফ্রেণ্ডের নাম। "নীল একটু আদুরে সুরে  বলল ..."দেবুর কথা ছাড় তো নিজে পাঁচটা মেয়ের সঙ্গে ঘুরছে  তাই আমাকেও ওর মধ্যে জুড়ে দিল। আমি সিঙ্গল। "মীরা অভিমানী গলায় বলে..."তার মানে তুমি আমায় বলবে না। "বড় মুশকিল কি করে বোঝায় নীল দিবা রাত্র ও'কে নিয়েই ভাবে অথচ বলতে পারে না। সেই স্বপ্ন সুন্দরী বলে কি না ও'র অন্য প্রেমিকা আছে। অনুষ্ঠান পর্ব মিটল নীল সোজা দেবজিতকে বলে ..."এটা কি হল? তুই ফালতু কথা বললি কেন যে আমার প্রেমিকা আছে।"দেবজিত পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে বলে ..."কি ফালতু বলেছি তোর কলেজে অনুরাধা কে ভালো লাগত না।"
..."কি বাজে বকছিস। বল না তুই জেলাস মীরা আমাকে লাইক করে তাই তুই জেলাস। "দেবজিত উত্তেজিত হয়ে যায় ..."মীরা তোকে লাইক করে ?ঐ সব ভুল ভ্রান্তি নিয়ে থাকিস না। ও' আমার সঙ্গে খুব ক্লোজ সব কথা শেয়ার করে। কাকিমা বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে সে কথা ও' আমাকে বলেছে কারণ ও' আমায় পছন্দ করে। "দুই বন্ধুর মাঝে মীরা বিতর্ক তুমুল পর্যায় পৌছল এবং  মনোমালিন্য হয়ে  দুজনের কথা  বন্ধ। 
        বর্ষার এক রাতে বাইরে বৃষ্টি পড়ছে মাঝে মধ্যে বিদ্যুতের ঝলকানিতে আকাশ আলোয় সাদা আবার অন্ধকার নিজ অস্তিত্বে বিরাজমান। চারিদিকে জলের ছোট খাটো তরঙ্গ নানা ধ্বনি সৃষ্টি করছে কল কল ছল ছল। দেবজিতের মোবাইলের রিং টোনে ..."শ্রাবণের ধারা..."বাজতেই মীরা নাম মোবাইল স্ক্রীনে ভেসে উঠল দেবজিত হ্যালো বলতেই মীরা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল ..."দেবজিত আমার ভীষণ একা একা লাগছে। বাড়ি থেকে বাবা মা বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে আমি কি করব।"দেবজিত বীর পুরুষের মতন দৃঢ় কন্ঠে বলল ..."তোমার ভয়ের কিছু নেই আমি কালই তোমার মা বাবার সঙ্গে কথা বলব। "
..."ও'রা শুনবে না আমার তোমার সঙ্গে বিশেষ কথা ছিল। "
..."বল মীরা বল শুধু একবার বল আমি সব সময় তোমার সাথে। "মীরা স্বস্তির সঙ্গে বলল ..."আমি জানতাম তুমি সব সময় আমার সঙ্গে আছ। তাহলে কাল দেখা হচ্ছে। "ফোন রেখে দেবজিত পাশ বালিশটা জড়িয়ে ধরে চুমু খেল। সকাল হতেই পৌছে গেল মীরার সঙ্গে সাক্ষাতের নির্দিষ্ট স্থানে। মীরা প্রেম বৈরাগী বেশে ।পরনে গেরুয়া শাড়ি মোটা  লম্বা বেনীর আন্দোলনে দেবজিতের হৃদয় স্পন্দনের গতি বেগ বৃদ্ধি পেল। মীরা দেবজিতের কাছে এসে বসল ঠোঁটের কোণায় হালকা হাসি দেবজিতের নজর পড়ল অরেঞ্জ লিপস্টিকে রঞ্জিত গোলাপের পাপড়ির মতন উন্মেলিত মীরার ঠোঁটের উপর। দেবজিত অজান্তেই একটু লজ্জা পেয়ে নিজের চুলে একবার হাত বুলিয়ে নিল। মীরা ও'র কানের জয়পুরি ঝুমকার পুঁতিতে আঙুল দিয়ে হালকা স্পর্শ করে একটু লাজুক ভাবে বলল ..."দেবজিত তোমায় কি ভাবে বলি বুঝে উঠতে পারছি না। "দেবজিত অপলক দৃষ্টিতে মীরার মুখের দিকে তাকিয়ে। হঠাৎই মীরা হাত নেড়ে কাউকে ডাকল দেবজিত পেছন ফিরে দেখে লম্বা চওড়া এক যুবক। মীরা বলল ..."দেবজিত ও' গিরিধারী আমরা অনেক দিন রিলেশনে ছিলাম দু জন লুকিয়ে বিয়ে করেছি ওরা মারোয়াড়ি তাই আমাদের বাড়ি থেকে মেনে নিচ্ছে না। গিরিধারীর বাবা ও'কে বিজনেস থেকে বের করে দিয়েছে। তুমি তোমার ব্যাঙ্ক থেকে যদি কিছু টাকা লোনের ব্যবস্থা কর তাহলে ও নিজের বিজনেস শুরু করবে। আমার স্বাধীন ভাবে থাকব। "দেবজিতের চারিপাশটা নিমিষে অন্ধকার হয়ে গেল নিজেকে আজকের মত অসহায় এর আগে কখনও  মনে হয় নি। বাড়ি ফিরে সোজা ফোন লাগাল ..."নীল আমার উপর রাগ করেছিস ভাই। "ফোনের ওপাশ থেকে নীল বলল ..."আমিও খবর পেয়েছি আমাকে ওদের নতুন বাড়িতে গিজার লাগাতে বলেছে। "©Pryamboda priya 

অনুভূতির আসরAnuvutir asor~