Translate

শনিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৮

ইন্টারভিউতে সাক্ষাত*

#ইন্টারভিউতে_সাক্ষাত
#রচনায় #(প্রিয়ম্বদাপ্রিয়া)
        কল সেন্টারের ইন্টারভিউ চলছে নির্বাচিত কয়েকজন ক্যানডিডেট অপেক্ষারত। মোহনার বুকটা একটু ধুক পুক করছে আর পাঁচজনের পর ওর ডাক।ইনসট্যান্ট কোনও একটা টপিকের উপর অনর্গল ইংলিশের ঝড় তুলতে হবে। টাইট জিনস আর রেড টপে সামান্য উত্তেজিত মোহনাকে এক যুবক বেশ কিছুক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছিল। ওর পাশের চেয়ারে বসে একটু গলা ঝাঁকিয়ে সে বলল ..."টেক আ ডিপ ব্রেথ।"মৃদু হেসে মোহনা তাকায়।ছেলেটি বলে ...তুমি টেনশন নিচ্ছ এটা যেন ইন্টারভিউ কতৃপক্ষ বুঝতে না পারে। "মোহন বলল ..."এটা আমার ফার্স্ট ইন্টারভিউ। "ছেলেটি হাসল ..."আমারও...ওয়েল আমার নাম রাজ মিত্র।"





    মোহনার আগেই রাজের ডাক পড়ল। মোহনা মৃদু উত্তেজনায় অপেক্ষারত এবার ওর পালা।ও ভিতরে ঢুকে দেখে স্যুটেড বুটেড চারজন ব্যক্তি বসে। ওকে বলা হল মডার্ণ টেকনোলজি কি ভাবে আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলেছে তার উপর একটা স্পীচ দাও।বেশ মনঃপূত টপিক মোহনা সুন্দর ভাবে বলে গেল তারপর প্রশ্নের রাউণ্ড। কাস্টোমার কোনও স্কীম বুঝতে না পারলে তাকে কত ধৈর্য সহকারে বোঝাবে কি ভাবে বোঝাবে তার একটা ডেমো দেখাতে বলা হল।একটা স্কীম ওর সামনে তুলে ধরে বলা হল এবার কাস্টোমারকে কি ভাবে কনভেন্স করাবেন। এই স্টেজে মোহনা একটু টাল মাটাল খেল এবং বুঝল এই যাত্রায় চাকরিটা ফসকে গেল। ইন্টারভিউ শেষে মোহনা অফিসের বাইরে বেরিয়ে দেখে রাজ তখনও দাঁড়িয়ে। ওর মেজাজটা মোটেও ভালো নেই ম্লান ভাবে ভ্রূ নাচিয়ে জিজ্ঞাস করল ..."কেমন? "রাজ বলল ..."ঠিকিই আছে তবে ওয়ার্কিং এক্সপিরিয়েন্স নেই সেই জন্য ভাবছিলাম। "মোহনা হতাশ ভাবে বলল..."আমার ভালো হয়নি। "রাজ ওর ফোন বের করল ..."তোমার নামম্বার দাও আমার ফোন নাম্বারটাও রাখ কোন জব ইন্টারভিউয়ের খবর পেলে নয় একে অপরকে জানাব। "
            




     বসন্তের এক সকাল মোহনা বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে। কোথা থেকে ভেসে আসছে কোকিলের মিষ্টি ধ্বনি। হালকা হাওয়ার মধ্যে ঝড়ে পড়ছে শুষ্কতা।মোহনার মোবাইলটা বাজতে ঘরে ঢুকে ফোনটা রিসিভ করল। ..."রাজ, কেমন আছ? কোনও খবর?"
..."খবর কিছু নেই তোমার খবর নেওয়ার জন্য ফোন করলাম।"মোহনা বলল ..."জি.কের বই খুলে বসেছি ভাবছি কমপিটিটিভ পরীক্ষায় বসব।"
..."বেশ তো আজ বিকেলে কি করছ? "
..."কিছু না। "
..."আমারও কোনও কাজ নেই চল দুজনে বসে কোথাও আড্ডা দেওয়া যাক। "মোহনা একটু চিন্তায় পড়ল। প্রথম ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে পরিচয় তার সঙ্গে বেরন কতটা সঙ্গত। ও একটু দ্বীধায় বলল ..."না.. আজ হয়ত বেরন হবে না। "
  ..."ঠিকাছে তোমায় জোর করব না।"বললো রাজ।
         




     কদিন পর একটা ইন্টারভিউয়ের খবর পেয়ে মোহনা ফোন করে রাজকে  বললো ..."সামনের সপ্তাহে একটা ইন্টারভিউ আছে ওখানে তোমার সি.ভি পাঠিয়ে দাও। "রাজ বিশেষ উৎসাহ দেখাল না। মোহনা জোর দিল ..."চল না তুমি থাকলে আমার সাহস বাড়ত। একদম অচেনা জায়গায় আমার খুব নার্ভাস লাগে একজন চেনা শোনা কেউ থাকলে ভালো হয়। "সব শুনে রাজ  রাজি হওয়ায় বেশ সাহস পেল মোহনা। 




       ইন্টারভিউ হবে পাঁচতলার বিল্ডিংয়ের অফিসে। বিল্ডিংয়ের গেটের সামনে মোহনা দেখল রাজ ওর জন্য   দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখে ঘরির দিকে তাকিয়ে বলল ..."তোমার ইন্টারভিউ।আমি তোমার আগে এসে দাঁড়িয়ে আছি।"মোহনা অবাক হয় ..."ইন্টারভিউ তুমি দেবে না। "রাজ মুচকে হেসে বলল ..."তোমায় সাহস দিতে এলাম। "মোহনা বলে ..."সেকি শুধু শুধু এলে আমার খুব খারাপ লাগছে। "
..."ইন্টারভিউ ভালো ভাবে দাও তো! পরে নয় খারাপ ভালো বিচার করবে। "




      এই বারও ইন্টারভিউয়ের পর মোহনা আন্দাজ করল চাকরির সম্ভবনা ক্ষীন।দুজনে এক সঙ্গে ফুটপাথ ধরে হাঁটছে রাজ বলল ..."অত হতাশ হয়েও না একটা কিছু ঠিক জুটে যাবে ।আমি ভাবছি ম্যানেজমেন্টের কোর্সে ভর্তি হব।"
..."ভালো তো! আমি কি করব বুঝে উঠতে পারছি না।"
..."লেগে থাক ঠিক জুটবে কিছু একটা!"

            দুজনে অনেকটা সময় এক সঙ্গে কাটাল। ওর সঙ্গে গল্প করে মোহনা জানল রাজের বাবা একজন ইনসিওরেন্স এজেন্ট। কখনও ভালো রোজগার হয় কখনও খুবই টানা টানিতে সংসার চলে। সেরকম ভাবে কোনও দিনই উনি পয়সা রোজগার করতে পারেন নি। বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো নয় তাই জোর করে কোনও কোর্স করার কথাও বলতে খারাপ লাগে ওর। ভেবেছিল পার্ট টাইম কোনও জব করে তার সঙ্গে ম্যানেজমেন্ট করবে কিন্তু তাও হয়ে উঠছে না। ওর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই একটা ফোন এল রাজের বেশ উত্তেজিত ভাবে ফোনে কথা বলার পর রাজ  বলে ..."মোহনা আমার কলসেন্টারের জবটা হয়ে গেছে। ওদের অফিস থেকে ফোন এসেছিল।"ওর চোখে মুখে আনন্দ দেখে খুব ভালো লাগল মোহনার।বললো..."অনেক অভিনন্দন ।তুমি তো আর বেকার রইলে না। আর নিশ্চই আমার কথা মনে পড়বে না। "ও এক গাল হেসে বলল ..."কি যে বল! যখন ডাকবে তখনই পাবে।"





          একদিন সকালে মোহনাকে রাজ ফোন করে এক নিশ্বাসে বলে গেল ..."প্লিজ প্লিজ তোমার হেল্প দরকার।আজ বিকেলে দেখা করতেই হবে। ''মোহনা কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগই পেল না। বিকেলের সাক্ষাতে রাজ বলে..."প্রথম স্যালারী পেয়েছি। মায়ের জন্য একটা শাড়ি কিনব। আমি আবার ঐ শাড়ি টারি ঠিক বুঝি না চল না পছন্দ করে দেবে। "মোহনা বলে ..."বাবা এই ব্যাপার! আমি তো ঘাবড়ে গিয়েছিলাম কি জানি কি হল। "
..."তুমি আমার জন্য ঘাবড়ে গিয়েছিলে জেনে আমার বেশ ভালো লাগল!"বলে রারসিকতার ভঙ্গিতে তাকাল ।মোহনা মুখ চেপে হেসে বলে ..."ঢং করো না তো। "
..."আচ্ছা আমার জন্য আর কি ভাব? "
..."কিছুই ভাবি না।এবার চল শাড়িটা কিনি। "রাজ ওর মায়ের জন্য শাড়িটা কেনার পর একটা  তৃপ্তি ছড়িয়ে গেল ওর চোখ মুখে ।বললো ..."নিজের টাকায় মার জন্য শাড়ি কিনব ভাবিনি।আজ খুব ভালো লাগছে।"শাড়িটা হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখতে দেখতে ওর চোখে মুখে মায়ের জন্য আবেগ ফুটে উঠতে দেখে মোহনার মনটাও হঠাৎ রাজের প্রতি সংবেদী  হয়ে উঠল।মোহনার মনের আবেগ আলতো করে ছুঁয়ে গেল ছেলেটা।রাজ ওর পকেট থেকে একটা পারফিউমের বক্স বের করে বলল..."এটা তোমার জন্য। "মোহনা বলে ..."কেন বাজে খরচ করলে।"
..."বাজে খরচ করিনি বুঝে খরচ করেছি ।এই পারফিউমের সুগন্ধ যেন আমাদের বন্ধুত্বেও ছড়িয়ে পড়ে।"বলে হাসল রাজ।
           




      বাড়ি ফিরে পারফিউমের শিশিটা নাকের কাছে ধরে সুমিষ্ট গন্ধের সঙ্গে মোহনার মনটা আজ একটা ভালোলাগার অনুভূতিতে হারিয়ে গেল ।যেন ও শুনতে পেল ওর হৃদস্পন্দনে রাজের নাম বারং বার  ধ্বনিত হচ্ছে।বিগত কিছুদিন ধরে  ওর সঙ্গে মিশে বুঝেছে ছেলেটা খুব দায়িত্বশীল।নিজের পায়ে দাঁড়াবার জন্য  সবসময় চেষ্টা করে যাচ্ছে।মোহনার ব্যাপারেও যথেষ্ট যত্নশীল। ওর সঙ্গে যখনই বেরিয়েছে মোহনা খেয়াল করেছে ও সব সময় ওকে আগলে রাখে।রাজকে ভালো লাগে মোহনার।হয়ত ভালোলাগাটা স্বাভাবিক কিন্তু বেশী কিছু ভাবতে চায় না মোহনা। রাজ হয়ত শুধু বন্ধুত্বের খাতিরে ওর সঙ্গে মিশছে। হয়ত ওর মনে ওর প্রতি কোনও বিশেষ অনুভূতি নেই।মোহনা বড্ড তাড়াতাড়ি কাউকে নিয়ে  এতটা ভাবছে।

            




     অনেক গুলো ইন্টারভিউ দিয়ে শেষমেষ  একটা  চাকরি পেয়ে যায় মোহনা।বেশ কিছুদিন হল চাকরিতে জয়েন করেছে ।কাজের ফাঁকে সময় পেলেই ফোনে কথা বলে রাজের সঙ্গে। ওর সঙ্গে কিছুক্ষন কথা বললেই যেন অনেকটা এনার্জি পেয়ে যায়। ওর সঙ্গে কথা না বললে মনে হয় দিনটাই আধা হয়ে রইল। রাজ কেমন যেন একটা হ্যাবিট হয়ে গেছে।





        অফিস থেকে বেরতে একদিন বেশ রাত হল। বার কয়েক রাজকে ফোন করল কিন্তু ও ফোন ধরল না।ভেবেছিল রাজের সঙ্গে বাড়ি চলে যাবে ওর অফিস খুব একটা দূরে নয়।আজ ওর ডে শিফট ছিল।কিন্তু রাজ ফোন না ধরায় বিরক্ত হয়ে মোহনা আর ফোনে ট্রাই না করে রাস্তায় বেরিয়ে একটা ট্যাক্সি দাঁড় করাতে যাবে তখন অফিসের এক সিনিয়ার কর্মী বললেন ..."আমার গাড়িতে চল পৌঁছে দেব।"ওনার গাড়িতে ওঠার পর ওনার আচরনে মোহনার একটু অস্বস্তি বোধ হল। হঠাৎ করে একটা নিম্ন মানের গান  হাই ভল্যুউমে চালিয়ে ওর দিকে বড়ই অশ্লীল দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন তিনি। এমন ভাবেই ওর দিকে তাকালেন যেন দর্শনের মাধ্যমেই ওর সকল রূপ সুধা পান করার জন্য পিপাসু তিনি। ওনার দৃষ্টি মোহনার মুখের পরিবর্তে বক্ষস্থলে কেন্দ্রীভূত। ঈষৎ অভদ্র আচরনের এই ব্যক্তিটি যখন মোহনাকে বলল ..."আজ রাত্রে কি প্ল্যান তোমার? "মোহনা তার উত্তরে বলল ..."গাড়িটা প্লিজ থামাবেন। "লোকটি ভ্রূ কুঁচকে তাকাতে মোহনা স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল ..."আমার গন্তব্য স্থল এসে গেছে। "মাঝ রাস্তায় গন্তব্য স্থল হতে পারে না কিন্তু ওনার উহ্য প্রস্তাবে যে মোহনা অসন্তুষ্ট হয়েছে তা বোঝার মতন যথেষ্ট বয়স তার হয়েছে। উনি গাড়ি থামাতে মোহনা কোনও রকম সৌজন্য বিনিময় না করেই এগিয়ে গেল। এত দিন রাজের সঙ্গে কত জায়গায় গেছে কিন্তু আজ অবধি ও কখনও সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেনি। আজ এই লোকটার নোংরা মনটা দেখে যেন গা গুলিয়ে উঠল মোহনার।তখনই  রাজ ফোন করায় ওর ফোনটা পেয়ে আর আবেগ আটকাতে পারল না মোহনা।কেমন যেন কেঁপে গেল গলার স্বর।  কাঁপা গলায় বলল ..."ফোন ধরলে না কেন আজ কত বিপদে পরতাম জান। "রাজ উদগ্রীব হয়ে বলে ..."কোথায় তুমি? কি হয়েছে! আমি এখুনি আসছি। "রাজের অপেক্ষায় বাসস্টপেই দাঁড়িয়ে রইল মোহনা কিছুক্ষন পর হাঁফাতে হাঁফাতে রাজ আসে ..."কি হয়েছে আমি বন্ধুর বাইকে এলাম। "ওকে দেখে এবার কোনও কথা না বলেই হাঁটা দিল মোহনা। রাজ বলে ..."কি হল কোথায় চললে? কি হয়েছে বল? "
..."দেখলাম তুমি আমার জন্য কতটা সিরিয়াস। "বলে আবার হাঁটা ধরল মোহনা। রাজ ওর পথ আটকে বলে ..."রাস্তার মাঝে তোমার আমার সঙ্গে মসকরা করতে ইচ্ছে হল। তোমার ফোন পেয়ে আমি কতটা টেনশনে পড়েছিলাম জান। "মোহনা ওর চোখের দিকে তাকাতে রাজ অধীর আগ্রহে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। মোহনা ঠোঁটের কোনায় লাজুক হাসি এনে বলল..."সারা জীবন আমার জন্য এই রকম টেনশন নেবে। "রাজ ভ্রূ কপালে তুলে বলে ..."তুমি আমাদের দুজনের কথা বলছ আই মিন আর ইউ সিরিয়াস অ্যাবাউট আস। "
..."এর আগে এতটা সিরিয়িসলি কখনও কিছু ভাবিনি। "রাজ একটা স্বস্তির নিশ্বাস নিয়ে  বলল ..."আমার তোমাকে ভালোলাগলেও বলতে পারি নি ভেবেছি হয়ত আমাদের সুন্দর বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যাবে তোমার সঙ্গে বন্ধুত্বটা নষ্ট হলে আমার কাছে কিছুই থাকত না। "মোহনা বাসল। বললো..."এখন তোমার কাছে আছি আমি  আর আছে আমাদের দুজনের মাঝের সুন্দর সম্পর্ক।"©Pryamboda priya 
অনুভূতির আসর-Anuvutir asor

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন