Translate

শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৮

প্রেমে পরিণতি *

#তিক্ততা_পেরিয়ে
#রচনায় #প্রিয়ম্বদা_প্রিয়া

            চারিপাশের পরিবেশটা বেশ থম থমে।দেবযানী মুখ ভার করে সোফার এক কোণে বসে।বাবা গজ গজ করে বলে বেরিয়ে গেলেন ..."আমার কথাই শেষ কথা আমার ছেলেবেলার বন্ধু দীলিপ।ওর ছোট মেয়ের সঙ্গেই অয়নের বিয়ে দেব। এখানে আমি কারও কথা শুনব না।"অয়ন কোনও কথার প্রতিবাদ না করে চুপ করে বসে রইল। বাবা বেরিয়ে যাওয়ার পর দেবযানী বলল ..."কি রে তুই চুপ করে রইলি কেন? তুই আজকালকার ছেলে বাবা যার সঙ্গে বিয়ে দেবে তুই তাকেই বিয়ে করবি। তোর কোনও পছন্দ অপছন্দ নেই।"অয়ন কিছু বলতে যাবে সঙ্গে সঙ্গে দেবযানী ওর কথা থামিয়ে বলতে শুরু করল ..."যে মেয়েটার কথা বাবা বলল না, আমি ওকে ভালো করে চিনি একই স্কুলে পড়তাম তো।আমার চেয়ে জুনিয়ার হলে কি হবে এক নম্বরের বদমাশ মেয়ে ছিল। ছোট্ট থেকে পাকা। কত ছেলের সঙ্গে প্রেম পত্র বিনিময় করত তা আবার আমি জানি না। "অয়ন ভ্রূ কুঁচকে মুখটা বিরক্ত করে রইল। মা একটা ট্রেতে আম পোড়া সরবত এনে একটা গ্লাস দেবযানীর হাতে ধরিয়ে দিলেন..."বেশী করে বরফ দিয়েছি এটা খেয়ে ঠাণ্ডা হ। কি করবি! বাবার যখন ইচ্ছে তখন তুই এত বিরোধ করছিস কেন? "দেবযানী মায়ের উপর মেজাজ করে ..."তুমি তো তোমার হাজবেন্ডের বিরুদ্ধে কিচ্ছু বলবে না তাতে ছেলের সর্বনাশ হোক। "মা এক ধমক দেয় ..."দেবযানী। আমি কিছু বলছি না বলে তোর খুব মুখ বেড়ে গেছে। "দেবযানী এক লাফে উঠে দাঁড়ায় ..."বিয়ের পর মেয়েদের আর নিজের বাড়িতে কোনও মূল্য থাকে না ঐ মেয়ে ঘরে আনলে দেখবে তোমার সংসার দুদিনে কেমন ভাঙে। ওর দিদিও তাই করেছে বিয়ের এক বছর যেতে না যেতেই আলাদা হয়েছে তুমিও তৈরী থেকো। "বলে দেবযানী আম পানার সরবত সামনের টি টেবিলে ঠক করে রেখে রেগে গট মট করে চলে গেল। অয়ন জানলার দিকে তাকিয়ে আকাশ কুসুম ভাবতে লাগল কি জানি বাবা কোন ডাকিনীকে ঘরের বৌ করার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছে। 





      অয়ন বরাবরই দিদির নেওটা। সব ব্যাপারে দিদির পরামর্শ নেয় অথচ বাবা এতটা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে অয়ন কোনও প্রতিবাদ করার জায়গাই পাচ্ছে না। বাবা আবার বলেছেন, ছেলে হিসেবে তোমার দায়িত্ব আমার সম্মান রাখা আমি ওদের কথা দিয়েছি তোমায় বিয়ে করতে হবে।বাবা অবশ্য কথা দেওয়ার আগে ওকে রিয়াকে দেখে আসতে বলেছিল ও দেখেওছে তখন অয়নের পছন্দ হয়েছিল বলেই বাবা কথা দিয়েছে এখন দিদি বেঁকে বসেছে তাই অয়ন দ্বিধায় পড়েছে। রিয়ার ছবিটা একবার বের করে এক দৃষ্টিতে দেখল। কোমল চেহারার মেয়েটার মৃদু হাসির পিছনে আবার এমন খলনায়িকাও থাকতে পারে ভেবে একটু অবাক হল। 
        





         দিদির সকল বাঁধা নিষেধ উড়িয়ে দিয়ে রিয়ার সঙ্গেই অয়নের বিয়ে ঠিক  হল। বর সজ্জায় অয়ন যখন গাড়িতে উঠল দিদিও ওর পাশে ওর টোপরটা হাতে ধরে বসল। সারাক্ষণ গাড়িতে বুদ্ধি দিল ..."প্রথম থেকেই শক্ত হবি।একবার যদি ও তোর নাগালের বাইরে চলে যায় তখন দেখবি সারা জীবন তোকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাবে। "অয়ন দিদির কথা গুলো গাঁট বাঁধে নিল।শুভ দৃষ্টির সময় রিয়া যেমন সুন্দর ভাবে অয়নের দিকে তাকাল অয়ন যেন একটু বিরক্ত হয়েই ওর দিকে তাকিয়ে শুভ দৃষ্টি সারল।








         বিয়ের পর নব বধূর আগমনে বাড়িতে সকলে আনন্দিত।আত্মীয়স্বজন পাড়া প্রতিবেশীর নতুন বৌ দেখার আগ্রহ। তার সঙ্গে একটু আলাপ করার ইচ্ছে। অয়নের মা তার নতুন বৌটির যত্নে ব্যস্ত। সবাইকে বলছেন ..."বাচ্চা মেয়ে গো। সবে গ্র্যাজুয়েট হয়েছে এত ধকল সইতে পারে তাই মুখ চোখ শুকনো লাগছে না হলে ও তো একদম পুতুলের মতন দেখতে।"রিয়ার লজ্জা লাগছিল কথা গুলো শুনে।আবার ভালোও লাগছে আজকের অনুষ্ঠান ওকে ঘিরে সবাই ওর জন্য এসেছে।
ভাত কাপড়ের কিছু আগে একটা লাল শাড়ি পরে খাটের মাঝখানে চুপটি করে বসে রিয়া। চোখে তার লজ্জা। মাথায় আলগা ভাবে  ঘোমটা দেওয়া।সিঁথি ভর্তি সিঁদুর।আত্মীয়দের মধ্যে কেউ কেউ ওর হাতটা ধরে গয়না নিরীক্ষণ করে জানতে চাইছেন বালাটা কে দিল চুড়টাও কি বাবা দিয়েছেন  বাড়ি থেকে কটা হার পেলে। রিয়া আস্তে আস্তে সব কথার উত্তর দিচ্ছে।অয়নের মা বললেন চল চল ভাত কাপড় দেওয়ার সময় হয়ে গেছে। সকলে সমবেত হয়ে হলঘরে জরো হল।অয়ন সাদা পায়জামা পাঞ্জাবি পরে দাঁড়িয়ে।ফর্সা বলিষ্ঠ চেহারার অয়নের দিকে লাজুক ভাবে একবার তাকাল রিয়া। অয়নের চোখে মুখে কোনও আনন্দ নেই ও যেন কোনও ভাবে প্রতরিত হয়েছে। ওর দিদির কথায়  রিয়ার সম্বন্ধে একটা নেগেটিভ ইমেজ তৈরী হয়ে গেছে অয়নের মনে। রিয়াকে দেখেই অয়নের মনে হয় রিয়ার পরিবার ওর বাবাকে ভুলিয়ে জোর করে অয়নের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে।এই শান্ত শিষ্ট স্বভাবের মেয়েটার পূর্বে অনেক পুরুষ বন্ধু ছিল বর্তমানে ও অয়নকে নিজের মুষ্টিতে আবদ্ধ করার না না প্রচেষ্টা চালাবে। রিয়া ওর দিকে মিষ্টি করে হাসলে অয়ন মুখ গোমড়া করে থাকে। ওর দিকে তাকালে অয়নের মনে হয় এর আগেও কত ছেলের সঙ্গে এই সব ছলনা করেছে। ফুলশয্যার রাতে অয়ন অনেক রাত করে ওদের শোবার ঘরে ঢোকে। রিয়া অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। অয়নের বিতৃষ্ণা এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে ও ঘুমন্ত নতুন বৌটির দিকে একবার তাকাতেও ইচ্ছে হল না।বার বার মনে হচ্ছে ওকে ইউজ করা হয়েছে। এখন এদের ইচ্ছেয় ওকে এই বিয়েটাকে সারা জীবন বইতে হবে।
       






           বিয়ের বেশ কিছুদিন পর  রিয়া একদিন একটা লাল সুতো নিয়ে অয়নের হাতটা ধরে বাঁধতে যাবে অয়ন ছিটকে সরে আসে।রিয়া থত মত খেয়ে বলে ..."মা তোমার জন্য পুজো দিয়েছিল তাই এই সুতোটা বাঁধতে বলেছে।"অয়ন মুখ চোখ বিকৃত করে বলে ..."ঐ সব কুসংস্কার নিজের বাড়িতে গিয়ে করবে আমার এই সব পছন্দ নয়। "নতুন বরের কাছে এমন কর্কশ শব্দ শুনে ওর চোখে জল চলে আসে ওকে দেখে অয়ন বলে ..."কথায় কথায় কান্নাকাটি আমার একদম অসহ্য লাগে। "বলে জোরে পা চালিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল । রিয়া একলা ঘরে দরজা বন্ধ করে খুব কাঁদে। বিয়ের পর থেকে অয়নের রুক্ষ আচরন ও খুব একটা গায়ে মাখেনি।নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার সঙ্গে অয়নের ব্যবহারে অত নজর দেয়নি। ভেবেছে হয়ত স্বভাবটাই এমন নিরস গোছের তবুও  মনের কোথাও ওরও একটা প্রশ্ন ছিল অয়ন কি এই বিয়েতে খুশি নয়। আজ ওর ব্যবহারের তীব্রতায় সেই অস্পষ্ট প্রশ্নের একটা উজ্জ্বল উত্তর পেল রিয়া। 





        বেশীর ভাগ সময় রিয়াও এখন মন মরা হয়ে থাকে।অয়ন সব সময় যেন রেগে আছে।তাই নিজে থেকে ওর সঙ্গে কথা বলতে ভয়ই হয় ওর।একদিন সন্ধেবেলায় অফিস থেকে ফিরে অয়ন দেখে মা বাবা বাড়িতে নেই কাজের লোক দরজা খুলে বলে..."বাড়িতে শুধু নতুন বৌ আছে মাসিমা মেসোমশাই দিদির বাড়ি গেছে। "নিজের ঘরে ঢুকে অয়ন দেখে অন্ধকার ঘর। ওর ঘরের সামনে একটা লম্বা বারান্দা আছে সেখানে থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে। অয়ন ধীর পায়ে দরজার কাছে গিয়ে দেখে রিয়া বারান্দার এক পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। জ্যোৎস্নার রাত। চাঁদের আলোয় সিক্ত মেয়েটাকে একা দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখে খুব মায়া হল অয়নের কিন্তু মুখে কিছু বলতে পারল না। ঘরে খাটে চুপ করে বসে রইল। ও জানে রিয়া ওর ব্যবহারের জন্যই কাঁদছে তাতে অয়নের খারাপ লাগলেও ওকে কাছে ডেকে শান্ত করাতেও ওর আত্মঅহমিকায় বাঁধে।দিদির কথা মত ও একটা বাজে মেয়ে এটাই ঠিক তাই অয়নকে ভাঙলে চলবে না ওকে শক্ত থাকতে হবে।তবু এতটা কি রুক্ষ হওয়া ঠিক।বার বার ভেবেও রিয়াকে ডেকে কিছুই বলতে পারল না। কোথায় যেন বাঁধল তা নিজেও টের পেল না অয়ন।হয়ত হঠাৎ করে নরম হওয়াটা সহজ নয় কঠোরতার মধ্যে ইগো চলে এলে সহজ হওয়াটা জটিল হয়ে যায়।







       একদিন মা বলল ..."তোদের মাঝে সব ঠিক ঠাক আছে তো অয়ন। রিয়ার চোখ মুখ কেমন যেন বসে গেছে। নতুন বৌ এর এমন চেহারা হয় নাকি?ওদের বাড়ির লোক দেখলে কি বলবে। বাচ্চা মেয়েটার সঙ্গে আপনারা কি এমন ব্যবহার করেন যে ওর চেহারাটা এমন খারাপ হয়ে গেছে। "রিয়াকে ডেকে মাথায় হাত বুলিয়ে উনি বললেন ..."তোর কোনও অসুবিধে হলে আমায় বলবি। আয় আজ তোর চুল বেঁধেদি। "বলে মা সুন্দর করে রিয়াকে সাজিয়ে দিলেন অয়নকে বললেন ..."আজ রিয়াকে নিয়ে বাইরে কোথাও ঘুরে আয়।"অয়ন মুখ চোখ বিরক্ত করে বলে ..."আমি কোথাও যেতে পারব না। "মাও চোখ পাকিয়ে বলে ..."আমি না শোনার জন্য বলিনি অয়ন।বড়দের কথা অমান্য করে তাদের অসম্মান করার শিক্ষা তো আমি তোকে দি নি। "অয়ন পরিস্থিতি গম্ভীর হয়ে যাচ্ছে দেখে রিয়ার সঙ্গে বেরল।







         রাস্তার ধারে একটা আইসক্রিমের দোকানে দাঁড়িয়ে দুজনে আইসক্রিম খাচ্ছে। সেই সময় একজন মাঝ বয়সী ভদ্রলোক রিয়ার দিকে এগিয়ে আসতে রিয়া একগাল হেসে ওনাকে প্রণাম করল। ভদ্রলোক ওর মাথায় একবার হাত রেখে অয়নের দিকে তাকিয়ে বললেন..."কি ইয়ংম্যান রিয়াকে খুশিতে রাখ তো?"রিয়া অয়নের দিকে তাকিয়ে বলল ..."উনি আমার কলেজের স্যার। "অয়ন আইসক্রিম হাতেই কোনও রকমে হাত জোড় করে প্রণাম জানাল। ভদ্রলোক বললেন ..."খুব ভালো মেয়ে পেয়েছ।ও আমার সব থেকে প্রিয় ছাত্রী।তবে খুব অভিমানী।তাই সামলে থেকো ভায়া। "বলে  উনি হাসতে হাসতে চলে গেলেন। অয়ন আড় চোখে শুধু দেখল রিয়াকে।
            




       একদিন অফিসে ব্রেক নিয়ে অয়ন বাড়ি ফেরে। সকাল থেকেই শরীরটা ভালো ছিল না জোর করেই অফিস গিয়েছিল ভাবল বাড়ি গিয়ে রেস্ট নেব। ঘরে ঢুকতে গিয়ে দিদির গলা পেল।ভাবল ভালোই হল দিদিকে বলবে মাথা টিপে দিতে আর কড়া এক কাপ চা বানাতে।কিছুটা এগোতে ওদের বেড রুমের কাছে যেতে শুনল দিদি যেন রিয়াকে কিছু বলছে।অয়ন দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে শোনে দিদি বলছে ..."তোর বাবার অনুরোধ রাখার জন্যই অয়নের তোর সঙ্গে বিয়েটা হল।অয়ন তো কিছুতেই এই বিয়েতে রাজি ছিল না। আমার ভাইকে তো আমি চিনি ওর সব পছন্দ ওর জীবনের সব কিছুর ডিসিশন আমি নি। আমি ওর জন্য পাত্রি ঠিক করেছিলাম তা তো আর হল না। অয়নের যে মেয়েটাকে কলেজ লাইফে ভালো লাগত আমার ইচ্ছে ছিল তার সঙ্গেই বিয়েটা দি। যাক গিয়ে...। "বলে দিদি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।অয়নের অবাক লাগে দিদি কেন রিয়াকে মিথ্যে কথা বলল। ওর তো কারও সঙ্গেই প্রেম ভালোবাসা ছিল না। অয়ন ঘরে ঢুকতে দিদি একটু থতমত খেয়ে গেল যেন ওর চুরি ধরা পড়ে গেছে ..."কি রে হঠাৎ এলি! তোর তো এটা অফিসে থাকার সময়।"অয়ন কোনও কথার উত্তর দিল না।






         রাতে অয়নের জ্বর এল। সকাল বেলায় ডাক্তার দেখে ওষুধ পত্র দিয়ে গেলেন।মা বলল ..."রিয়া ওর মাথা ধুয়ে গা স্পঞ্জ করাতে হবে তুই করে দে আমি ওর জন্য একটা ঝোল ভাত করি। "রিয়া তার শাশুড়ি মার কথা মত সব কাজ করল।দু তিন দিনের মাথায় অয়নও সুস্থ হয়ে উঠল।  মা বললেন ..."লক্ষ্মী বৌ হয়েছে আমার। জানিস তো অয়ন কাল ওদের পাড়ার একজন ভদ্রমহিলা এসেছিলেন গাছের পেয়ারা নিয়ে। রিয়ার কি প্রশংসা করে গেলেন। ও পেয়ারা খেতে ভালোবাসে তাই ওর জন্য বয়ে নিয়ে এসেছিলেন। "রিয়া কোনও কথায় কোনও রকম প্রতিক্রিয়া না দিয়ে আলমারি খুলে ব্যাগ গোছাতে লাগল। মা বললেন ..."কোথায় যাস রিয়া।"
..."বাড়ি"
..."এখন যাবি! অয়ন যে এখনও ভালো ভাবে সেরে উঠল না। দুদিন পর যা।অয়ন তোকে পৌঁছে দেবে। "রিয়া স্থির দৃষ্টিতে মার দিকে তাকিয়ে বলল ..."তুমি ওর দিদিকে ডেকে নাও। ওর ভালো মন্দ দিদি বোঝে কি না। আমি আর ওর বোঝা হতে পারব না। "বলে ব্যাগের চেনটা এক ঝটকায় টেনে  কাধে ব্যাগ নিয়ে  রিয়া বেরিয়ে গেল। মা কৌতুহলী ভাবে ভ্রূ যুগলে প্রশ্ন চিহ্ন এনে অয়নের দিকে তাকালেন। অয়ন নিরুত্তর।মা বললেন ..."কি চলছে তোদের মাঝে? "অয়ন চুপ করেই রইল। কোনো উত্তর না পেয়ে অয়নের মা আরো অধৈর্য হলেন।মেয়েটা কি বলে গেল। গেলই বা কেন।উনিও  রুদ্র মূর্তি ধরলেন ..."রিয়া বাড়ি ছেড়ে কেন গেল উত্তর দে ?এই সংসারে আমি এখনো মরিনি। মরলে যা চাইবি নয় করিস!"অয়ন থতমত খেয়ে যায়। কি বলবে। ঝগড়াঝাঁটি তো হয়নি যা হয়েছে সবই মনে মনে।এদিকে মা উত্তেজিত হয়ে  চোখ মুখ লাল হয়ে  প্রেসার বেড়ে সারা শরীর কাঁপছে। অয়ন ভয় পেয়ে যায় মাকে কোনও রকমে শান্ত করে  যা যা হয়েছে  সব খুলে বলে। মা সব শুনে মাথায় হাত দেয়।বলে..."তুই এত বোকা এত ইমম্যাচুয়র তা তো জানতাম না।একটা মেয়ে বাড়ি ঘর নিজের লোক সবকিছু ছেড়ে তোর ভরসায় তোর সঙ্গে এসেছিল। তুই ওকে বিয়ে করে এনেছিলি ।তার সঙ্গে এমন দুর্ব্যবহার।তাও দেবযানীর কথায়। দেবযানী চিরকালের জেদি।ওর ইচ্ছায় তোর বিয়ে না হওয়ায় ও তোদের সম্পর্কে বিষ ঢেলে গেছে আর তুই সেই বিষ খেয়ে গেলি।আর তার বিরূপ প্রতিক্রিয়ার প্রভাব ফেললি তোদের সম্পর্কে। কবে সেই স্কুলে ও কাউকে চিঠি পাঠিয়েছিল না ওকে কেউ চিঠি দিয়েছিল তাতে মেয়েটার চরিত্রের বিচার করলি ।এত ছোট মন তুই কোথায় পেলি অয়ন। আজ আমার নিজের শিক্ষায় ঘেন্না হচ্ছে যেমন আমার মেয়ে যে নিজের জেদের জন্য ভাইয়ের জীবন নষ্ট করতে দ্বিধা করে না তেমন আমার ছেলে যার সংকীর্ণ মন একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করল।"অয়নের মা তখনও খাটে বসে রাগে অভিমানে কাঁপছে ।অয়ন ধপ করে মাটিতে বসে মায়ের কোলের কাছে মাথা রেখে পা দুটো জড়িয়ে ধরে। মা  বললেন ..."যদি রিয়াকে এবাড়িতে ফিরিয়ে আনতে না পারিস তবে ভবিষ্যতে আমার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখবি না।আমি কেন তোর বাবা জানলে সে কাউকে মুখ দেখাতে পারবে না। নিজেদের বন্ধু মহলে কি রেপুটেশন হবে তোর বাবার সেটা ভেবছিস?"
           







          পরদিন সকালে অয়ন রিয়াদের বাড়ির কলিং বেল বাজতে রিয়াই দরজা খুলল ।ওকে দেখে একটু অবাক হয়েই তাকিয়ে রইল। বাড়ির সকলে অয়নকে দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তাদের আচরনে অয়ন বোঝে রিয়া বাড়িতে কিছুই বলেনি। রিয়ার মা বলল ..."তোমায় কেমন শুকনো শুকনো দেখাচ্ছে শরীর ভালো নেই বুঝি। "অয়ন বলল ..."আমার কদিন আগে জ্বর হয়েছিল এখনও ভালো সুস্থ হয়ে উঠিনি আমি রিয়াকে নিতে এসেছি। "রিয়ার মা ব্যস্ত হয়ে ওঠে। রিয়াকে বকাবকি করে ..."অসুস্থ ছেলেটাকে ছেড়ে তুই চলে এলি এটা আমি তোর কাছ থেকে আশা করিনি।"অয়ন বলে ..."ওকে কিছু বলবেন না। আমার উপরে রাগ করে ও এসেছে।"সকলের সামনেই অয়ন বলল ..."রিয়া আই অ্যাম সরি! প্লিজ বাড়ি চল। "মা বলেন ..."স্বামী স্ত্রীর ঝগড়ায় কেউ ঘর ছেড়ে আসে। তুমি চিন্তা করো না অয়ন আজকের দিনটা থাকো।  কাল নয় দুজনে এক সঙ্গে যেও। "






          রিয়া ওদের ঘরে  কোনও রকম ব্যবহারের পরিবর্তন না করেই  বিছানা ঠিক করতে লাগল। অয়ন কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। রিয়াও একটু বেশী ব্যস্ত হয়ে ঘর গোছাতে শুরু করে দিয়েছে।অয়ন ওর কাছে এসে ওর হাতটা ধরে বলল ..."একটু বোস।"রিয়া শান্ত ভাবে ওর পাশে বসল। অয়ন বলল ..."আমাদের মাঝে একটা অস্বস্তি ছিল ঠিকই কিন্তু আমি আর কোনো রকম মন মালিন্য আমাদের মাঝে আনব না। চলো ফ্রেশ ভাবে লাইফ শুরু করি!"রিয়া বললো ..."মা পাঠিয়়েছেন তোমাকে! "অয়নের মাথাটা নীচু হয়ে গেল।
..."মা আর দিদি যা বলে তুমি তাই কর? তোমার নিজের ব্যক্তিত্বর এতো অভাব! "রিয়ার রাগটা খুবই স্বাভাবিক তা বুঝল অয়ন।বললো ..."দিদিকে খুব বিশ্বাস করতাম আমার হয়ত এটাই সব থেকে ভুল হয়েছে।তবে সব ভুলে কি নতুন ভাবে শুরু করা যায় না!"লম্বা শ্বাস ফেলে রিয়া বললো ..."যায়! "
..."সব ভুলে?"রিয়া বললো ..."তোমার গার্লফ্রেণ্ডকে ভুলতে পারবে! "এবার হেসে ফেললো অয়ন ..."গার্লফ্রেণ্ড তো কোনো কালে ছিল না তবে একটা বউ পেয়েছি যাকে আর রাগাতে চাই না! "ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটল রিয়ার বললো ..."মনে থাকবে! "
..."এবার থেকে শুধু তুমিই আমার মনে থাকবে। "কথা দিয়ে পরিস্থিতি হালকা করতে পরিস্থিতিই শিখিয়ে দিয়েছে অয়নকে।রিয়ার দিকে তাকাল অয়ন।রিয়াও তাকাল অয়নের চোখে।মাঝে ছিল না  কোনো ভুল বোঝাবুঝি কোনো ইগো । আজ নতুন করে হল ওদের শুভ দৃষ্টি।


"©Pryamboda priya 
অনুভূতির আসর-Anuvutir asor (ফেসবুক পেজ )

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন