Translate

শনিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৮

অবশেষে *

    #অবশেষে 
#রচনায়#প্রিয়ম্বদাপ্রিয়া
        বাড়ির ছাদের উপর খোলা আকাশের নীচে তিন বন্ধু গানের লড়াইতে মেতেছে। সন্ধে গড়িয়ে রাত।চারিদিকে বেশ শীত শীত নীল গিটার বাজিয়ে সব গানে তাল দিচ্ছে। মীরা গাইল ..."অভি না যাও ছোড় কে দিল অভি ভরা নহি......"দেবজিত ওর গানের শেষ অক্ষর তুলে আবার গান ধরল। মীরার মা ছাদে উঠে বললেন..."কি রে তোরা সারা রাত ছাদে কাটাবি। "আসর ভাঙল তিন গায়কের মধ্যে দু জন নিজের বাড়ির পথে রওনা দিল। নীল বলল ..."দেবজিত এবার জমিয়ে ঠাণ্ডাটা  পড়ল বল। "দেবজিত দু হাতের পাতা ঘষে বলে ..."ভালোই তো তোর কোম্পানি জমিয়ে গিজার বেঁচল।"
..."কোম্পানির লাভ হবে তাতে আমার কি রে।"বলে নীল প্রসঙ্গ বদলাল ..." দেবজিত তোকে বলা হয় নি মীরা আমার জন্য একটা জ্যাকেট কিনেছে কি ব্রাইট কালার।"নীলের কথার সুরটা শুনেই দেবজিত বুঝল ওকে শোনাবার জন্যই বলছে তাই সেও  বলল ..."আমার জ্যাকেটের কালারটা ব্রাইট রয়াল ব্লু তোরটা কি? "নীল একটু চটল তার মানে মীরা দুজনের জন্যই কিনেছে। কিন্তু নিজের রাগটা দেবজিতের সামনে প্রকাশ করল না। তিন বছর আগে গানের সূত্রেই মীরার সঙ্গে দেবজিতের পরিচয়। নববর্ষের অনুষ্ঠানে গান গাইতে এসেছিল মীরা। দেবজিতের ক্লাব 'আমরা যুবক'সব আয়োজন করেছিল। সেখানে বড় বড় শিল্পীরা গাওয়ার পর শেষ পারফর্মেন্সটা মীরার ছিল। অসাধারণ গানের গলা  দর্শকরা যারা উঠে যাচ্ছিল আবার ঘুরে বসেছিল। সেই থেকে পরিচয়। দেবজিতের মাধ্যমেই নীলের সঙ্গে পরিচয় হয় মীরার। নীল আর দেবজিত ছেলেবেলার বন্ধু কিন্তু বর্তমানে তাদের সম্পর্ক পরিবর্তিত হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়।মীরার কাছে আসার জন্য দুজনেই না না টোপ ফেলে ।
             মীরার  নৈনিতালে  একটা  গানের প্রোগ্রাম আছে নীল শোনা মাত্র মীরার মাকে আশ্বস্ত করল..."কোনও চিন্তা নেই মাসিমা আমি নিয়ে যাব এমনিও আমার অনেক ছুটি পড়ে আছে। আমার কোনও অসুবিধা হবে না।"দেবজিত লেট করে ফেলল। নীল ফোন করে দেবজিতকে সুখবরটা দিয়ে দিল  ..."দেবু আমি আর মীরা গানের প্রোগ্রাম করতে যাচ্ছি। "দেবজিত রাগে দিল ফোনটা কেটে। এমনিতেই ব্যাঙ্কের কাজে বাইরে যেতে হচ্ছে ।নিরুপায় দেবজিতের দু হাত বাঁধা। 
        পঁচিশে  বৈশাখে দেবজিতের ক্লাবের অনুষ্ঠানে একটা গান থাকবে  মীরার।নীল আর দেবজিত দুজনেই জামাই সাজে সেজেছে। কে কাকে দেখে রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে ওদের থেকে প্রাণবন্ত ও আনন্দ উচ্ছাসে পূর্ণ পুরুষ এই মুহূর্তে ধরা তলে কেউ নেই। ধুতি পাঞ্জাবি পরা নীলের গলায় আবার আছে সোনার চেন। দেবজিতের নজর যাচ্ছে বার বার ওর চেনটার দিকে। মীরা বলল ..."বাবা দু জনে কি মাঞ্জা দিয়েছ।কার হৃদয় লুন্ঠনের প্রচেষ্টা চলছে শুনি। "নীল লাজ্জা পেয়ে হেসে বলল ..."সে আর বুঝল কই। "মীরা নীলের হাতটা চেপে বলল ..."কে গো বল বল। "দেবজিত অস্বস্তিতে পড়ল আমতা আমতা করে বলে ..."ওর একটি প্রেমিকা আছে  কিন্তু আমি এখনও প্রেয়সীর সন্ধানে।"নীল রাগে হয়ে যায় লাল। অনুষ্ঠান শুরু মীরা গান ধরল। খোলা মাঠের উপর মঞ্চ হালকা হাওয়ায় ওর কপালের এলো মেলো চুল গুলো উড়ছে।সুরের সঙ্গে সঙ্গে মীরার মুদ্রিত চোখ ওর লম্বা গ্রীবা ঠোঁটের সঞ্চালনে মোহিত দুই যুবক। গানের সঙ্গে ওরা ওদের স্বপ্ন সুন্দরী প্রেয়সীর সঙ্গে স্বপ্ন রাজ্যে নিজেদের  হারাল। মীরা গান শেষ করে নীলকে জিজ্ঞাসা করল ..."বল তোমার গার্লফ্রেণ্ডের নাম। "নীল একটু আদুরে সুরে  বলল ..."দেবুর কথা ছাড় তো নিজে পাঁচটা মেয়ের সঙ্গে ঘুরছে  তাই আমাকেও ওর মধ্যে জুড়ে দিল। আমি সিঙ্গল। "মীরা অভিমানী গলায় বলে..."তার মানে তুমি আমায় বলবে না। "বড় মুশকিল কি করে বোঝায় নীল দিবা রাত্র ও'কে নিয়েই ভাবে অথচ বলতে পারে না। সেই স্বপ্ন সুন্দরী বলে কি না ও'র অন্য প্রেমিকা আছে। অনুষ্ঠান পর্ব মিটল নীল সোজা দেবজিতকে বলে ..."এটা কি হল? তুই ফালতু কথা বললি কেন যে আমার প্রেমিকা আছে।"দেবজিত পাঞ্জাবির হাতা গুটিয়ে বলে ..."কি ফালতু বলেছি তোর কলেজে অনুরাধা কে ভালো লাগত না।"
..."কি বাজে বকছিস। বল না তুই জেলাস মীরা আমাকে লাইক করে তাই তুই জেলাস। "দেবজিত উত্তেজিত হয়ে যায় ..."মীরা তোকে লাইক করে ?ঐ সব ভুল ভ্রান্তি নিয়ে থাকিস না। ও' আমার সঙ্গে খুব ক্লোজ সব কথা শেয়ার করে। কাকিমা বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে সে কথা ও' আমাকে বলেছে কারণ ও' আমায় পছন্দ করে। "দুই বন্ধুর মাঝে মীরা বিতর্ক তুমুল পর্যায় পৌছল এবং  মনোমালিন্য হয়ে  দুজনের কথা  বন্ধ। 
        বর্ষার এক রাতে বাইরে বৃষ্টি পড়ছে মাঝে মধ্যে বিদ্যুতের ঝলকানিতে আকাশ আলোয় সাদা আবার অন্ধকার নিজ অস্তিত্বে বিরাজমান। চারিদিকে জলের ছোট খাটো তরঙ্গ নানা ধ্বনি সৃষ্টি করছে কল কল ছল ছল। দেবজিতের মোবাইলের রিং টোনে ..."শ্রাবণের ধারা..."বাজতেই মীরা নাম মোবাইল স্ক্রীনে ভেসে উঠল দেবজিত হ্যালো বলতেই মীরা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল ..."দেবজিত আমার ভীষণ একা একা লাগছে। বাড়ি থেকে বাবা মা বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে আমি কি করব।"দেবজিত বীর পুরুষের মতন দৃঢ় কন্ঠে বলল ..."তোমার ভয়ের কিছু নেই আমি কালই তোমার মা বাবার সঙ্গে কথা বলব। "
..."ও'রা শুনবে না আমার তোমার সঙ্গে বিশেষ কথা ছিল। "
..."বল মীরা বল শুধু একবার বল আমি সব সময় তোমার সাথে। "মীরা স্বস্তির সঙ্গে বলল ..."আমি জানতাম তুমি সব সময় আমার সঙ্গে আছ। তাহলে কাল দেখা হচ্ছে। "ফোন রেখে দেবজিত পাশ বালিশটা জড়িয়ে ধরে চুমু খেল। সকাল হতেই পৌছে গেল মীরার সঙ্গে সাক্ষাতের নির্দিষ্ট স্থানে। মীরা প্রেম বৈরাগী বেশে ।পরনে গেরুয়া শাড়ি মোটা  লম্বা বেনীর আন্দোলনে দেবজিতের হৃদয় স্পন্দনের গতি বেগ বৃদ্ধি পেল। মীরা দেবজিতের কাছে এসে বসল ঠোঁটের কোণায় হালকা হাসি দেবজিতের নজর পড়ল অরেঞ্জ লিপস্টিকে রঞ্জিত গোলাপের পাপড়ির মতন উন্মেলিত মীরার ঠোঁটের উপর। দেবজিত অজান্তেই একটু লজ্জা পেয়ে নিজের চুলে একবার হাত বুলিয়ে নিল। মীরা ও'র কানের জয়পুরি ঝুমকার পুঁতিতে আঙুল দিয়ে হালকা স্পর্শ করে একটু লাজুক ভাবে বলল ..."দেবজিত তোমায় কি ভাবে বলি বুঝে উঠতে পারছি না। "দেবজিত অপলক দৃষ্টিতে মীরার মুখের দিকে তাকিয়ে। হঠাৎই মীরা হাত নেড়ে কাউকে ডাকল দেবজিত পেছন ফিরে দেখে লম্বা চওড়া এক যুবক। মীরা বলল ..."দেবজিত ও' গিরিধারী আমরা অনেক দিন রিলেশনে ছিলাম দু জন লুকিয়ে বিয়ে করেছি ওরা মারোয়াড়ি তাই আমাদের বাড়ি থেকে মেনে নিচ্ছে না। গিরিধারীর বাবা ও'কে বিজনেস থেকে বের করে দিয়েছে। তুমি তোমার ব্যাঙ্ক থেকে যদি কিছু টাকা লোনের ব্যবস্থা কর তাহলে ও নিজের বিজনেস শুরু করবে। আমার স্বাধীন ভাবে থাকব। "দেবজিতের চারিপাশটা নিমিষে অন্ধকার হয়ে গেল নিজেকে আজকের মত অসহায় এর আগে কখনও  মনে হয় নি। বাড়ি ফিরে সোজা ফোন লাগাল ..."নীল আমার উপর রাগ করেছিস ভাই। "ফোনের ওপাশ থেকে নীল বলল ..."আমিও খবর পেয়েছি আমাকে ওদের নতুন বাড়িতে গিজার লাগাতে বলেছে। "©Pryamboda priya 

অনুভূতির আসরAnuvutir asor~

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন