Translate

শনিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৮

সম্পর্কের সমীকরণ


#সম্পর্কের_সমীকরণ(রিপোস্ট)
#রচনায় #রিমা_বিশ্বাস(প্রিয়ম্বদা_প্রিয়া)


           চঞ্চলের আজকের দিনটা ভালোভাবে মনে থাকবে৷জোরে অটো চলছে দুপাশ থেকে নাকে মুখে হাওয়া ঢুকছে। মনের ভেতরে একটা সন্তোষ।চঞ্চলের বড় দাদা অপরূপের বার কয়েক সম্বন্ধ ঠিক হয়েও ভেঙে গেছে৷অপরূপের বত্রিশ বছর বয়স হয়েছে আত্মীয় পাড়া প্রতিবেশীদের মধ্যে কানাঘুষা নানা কথা শোনা যাচ্ছিল৷শেষ পর্যন্ত চঞ্চল তার পিসেমশাইয়ের সঙ্গে বাগুইহাটিতে এসে মেয়ে পছন্দ করে এল৷তারপর দেখাশোনা সেরে আজ বিয়ের দিন ঠিক করে বাড়ি ফিরছে৷
               চঞ্চল আর অপরূপ তিন বছরের ছোট বড়৷বরাবরই দুই ভাইয়ের ভাব৷অপরূপ ভাইয়ের অত্যাচারে আজ অবধি নতুন শার্ট কিনে  পরতে পারেনি৷নতুন শার্ট কিনলে আগে চঞ্চল পরবে তারপর দাদা৷এই আবদার ভালোও লাগত অপরূপের৷অপরূপ শান্ত স্বভাবের লাজুক প্রকৃতির আর চঞ্চল তার ঠিক উল্টো৷সামনে দাদার বিয়ে ছোট বেলায় তাদের বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তাই বিয়ের সব দায়িত্ব এখন দু ভাইয়েরই৷চঞ্চল বিয়ের কার্ডে নাম লিখছে আর বলছে "মা তুমি একটু সামলে এত উল্টো পাল্টা বক না আগের বার পেতলের পিলসূচ চাইতে গিয়ে একটা সম্বন্ধ কেটে গেছে৷"মাও ক্ষেপে উঠে বলেন—"হ্যারে একা তোদের বড় করলাম এখন তুই আমায় কথা বলা শেখাবি৷"অপরূপ এসে ভাই ও মায়ের মাঝে মধ্যস্থতা করে,বলে..."দুজনেরই মন্তব্যের মূল্য আছে।শুধু মাথা ঠাণ্ডা রাখ!"চঞ্চল বলে ..."ভয় নেই তোর বিয়ে পর্যন্ত সব সামলে রাখ!"অপরুপের চোখে মুখে অস্বস্তি। বলে ..."আমি সেইজন্য বললাম। "মা মুখ টিপে হাসে..."এবার তোরা শুরু করলি!"






       বিয়ে হল সুশৃঙ্খল ভাবে। বিয়ের পর চঞ্চল বৌদি সুবর্নাকে সবসময় আগলে রাখে৷ যতই হোক সে সম্পর্কে ছোট দেওর কিন্তু সম্বন্ধ করে তো সেই বলতে গেলে দাদার বিয়ে দিয়েছে। তাই তার দায়িত্বও অনেক৷ আবার দাদা বৌদির সঙ্গে বেশীক্ষণ সময় কাটালেও মুশকিল তখন বৌদির উপর রাগ হয়৷চঞ্চল যতই বিজ্ঞ হওয়ার চেষ্টা করুক না কেন ছেলে মানুষি তো তাকে ছাড়ে না৷অপরূপ তা বোঝে তাই বেশীর ভাগ জায়গায় ভাইকে সঙ্গে নিয়ে যায়।পাছে তার আবার অভিমান না হয় এই ভেবে বৌদিকে পেয়ে দাদা ওকে গুরুত্বই দেয় না ৷





কয়েক বছরের মধ্যে এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানও আসে ওদের পরিবারে৷ভাইঝিকে পেয়ে চঞ্চলের আননন্দের সীমা নেই অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে ছোট মুন্নীকে নিয়ে খেলায় ব্যাস্ত হয়ে পরে৷মুন্নীর জন্য ক্লিপ,সুন্দর সুন্দর ফ্রক,খেলনা সব চঞ্চল নিজে হাতে কেনে৷আর মুন্নী তো কাকা কে দেখলে সব খেলা ছেড়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে।সেটাই হয় চঞ্চলের পুরস্কার।
       মুন্নীর  অন্নপ্রাশনের দিন বাড়িতে লোকজনের ভিড়। তারপর নানান ছোটখাটো নিয়ম কানুন পালন করতে হচ্ছে৷মুন্নী সকাল থেকে কান্না জুড়েছে মাসি, মামা ,দাদু কেউ সামলাতে পারে না৷চঞ্চল ছুটে এসে বলল "আমায় দাও ও আমায় চেনে ৷"মুন্নী তো কাকাকে দেখে যেন সজন দেখতে পেয়েছে আই উই করে চলে গেল কাকার কোলে ৷চঞ্চল গর্বে বুক ফুলিয়ে মুন্নীকে কোলে নিয়ে বেশ দুলকি চালে প্রস্থান করল।মুন্নী দুধের শিশু কিন্তু তাও কত ভালবাসা বোঝে৷সবাই বলাবলি করল"ও  চঞ্চল তোর বৌ তো খুব ভাগ্যবতী হবেরে কি সুন্দর বাচ্চা সামলাতে পারিস"৷চঞ্চলের জেঠিমা বলল"এবার এই ছোঁড়াটার বিয়ের ব্যবস্থা কর ৷"  মহিলারা মিলিত ভাবে উলুধ্বনী দিলেন৷এই সব দেখে লজ্জা লাগল চঞ্চলের আবার ভালোও। দাাদা কে দেখে যে মনে বিয়ের সাধ জাগেনি তা তো নয়।
           কয়েক বছর হল চঞ্চলেরও বিয়ে হয়েছে ৷মুন্নীর এখন বছর তিনেক বয়স। সেই অধিকারের ব্যাপার কাকার উপর কাকিমার অধিকার। ছোট হলেও এ ব্যাপারে মুন্নী সজাগ৷কাকিমার উপর মাঝে মাঝে রাগ হয় কাকিমা বকলে মিছিমিছি কাঁদে পাছে কাকা এসে কাকিমাকে বকে।বিয়ের পর কাকাকে যেন কেড়েই নিয়েছে কাকিমা এখন আর অফিস থেকে এসে মুন্নীকে নিয়ে খেলে না সোজা ঢুকে পড়ে কাকিমার ঘরে।একটুকুও ভালোলাগে না মুন্নীর৷




এদিকে চঞ্চলের ট্যুরের চাকরি।মাঝে মধ্যেই অফিসের কাজে ট্যুরে যেতে হয়৷সেই কাজের জন্যই শিলিগুড়ি গিয়েছিল। সেখান থেকে সবার জন্য জিনিস নিয়ে এসেছে নিজে হাতে প্যাকেট খুলে সব জিনিস দেখাচ্ছে এমন সময় চঞ্চলের স্ত্রী শতরূপা বলে ওঠে "ঐ গোলাপি ছাতাটা আমার"সঙ্গে সঙ্গে মুন্নী বলে"না আমা.."৷মুন্নীর কথায় সবাই হো হো করে হেসে ওঠে৷'আমার আমার'বলে মুন্নীকে কোলে তুলে চঞ্চল গোল হয়ে ঘোরে অনেক দিন পর কাকার কাছে এমন দুরন্ত আদর পেয়ে হাসিতে গড়িয়ে পড়ে মুন্নী৷বিয়ে হলেই বা মুন্নীর প্রতি চঞ্চলের ভালোবাসার তো ঘাটতি হয়নি শুধু সময়টা ভাগ হয়েগেছে। সময়টা দিতে হয় স্ত্রী কে যেটা স্বাভাবিকও৷





       বর্ষার এক সকালে চারিদিকে বৃষ্টিভেজা ৷সকাল থেকে বৃষ্টি কাজের লোক আসেনি সুবর্না বাসন মাজছে শতরূপা বাটিতে দুধ রুটি নিয়ে খাওয়াচ্ছে মুন্নীকে।দুধ রুটি খেতে খেতে শতরূপার পেটে হাত দিয়ে মুন্নী বলল" তোমাল পেতে কি আছে কাম্মা?"শতরূপা মুন্নীর মুখে চামচ তুলে বলল"তোমার ভাই আছে"৷সুবর্না কলের গতি কমিয়ে বলল"কেন বোনও তো হতে পারে"৷
—"কেন দিদি তোমার মেয়ে বলে কি আমারও মেয়ে হবে নাকি৷"বললো শতরূপা।





      দুই জায়ে মাঝে মধ্যেই অধিকার আর শ্রেষ্ঠ্যতের ঠান্ডা লড়াই চলে।কখনও চলে কে বেশী সুন্দরী আর কে বেশী ভালো সাজগোজ করে সুন্দরী কখনও চলে কার রান্নার হাত ভালো কখনও বা কার বুদ্ধি বেশী এই প্রতিস্পর্ধায় ইন্ধন জোগান অবশ্য ওদের মা শাশুড়ি৷মাঝরাতে শতরূপার লেবার পেন উঠতে নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হল।সকলে হাসপাতালেই রয়ে গেল শুধু মুন্নীকে নিয়ে শাশুড়ি থেকে গেলেন বাড়িতে।
        সকাল বেলা চারিদিক রোদ ঝলমল পরিষ্কার আকাশ।কয়েকদিন পর শতরূপা ছেলে কোলে ঘরে ঢুকল৷চঞ্চল মোবাইলে ভিডিও করে ছেলের গৃহ প্রবেশ রেকর্ড করছে৷উলুধ্বনি ফুল ছড়িয়ে চঞ্চলের পুত্রের গৃহ প্রবেশ হল৷বাড়িতে আয়া রাখা হয়েছে। মুন্নী ছুট্টে গিয়ে ছোট ভাইকে ধরতে গেলে আয়া চোখ বড় করে বলে "তুমি হাত ধুয়েছ ?যাও এখন ধরবেনা"৷তা দেখে অপরূপ খবরের কাগজ ফেলে ছুট্টে মুন্নীকে কোলে তুলে নেয়৷যে মুন্নীর সঙ্গে  কেউ উঁচু গলায় কথা বলে না সবসময় তোলা তোলা করে রাখা হয় তাকে চোখ রাঙাবে আয়া? এব্যাপারটা কি মেনে নেওয়া যায়৷তাছাড়া চঞ্চলের ছেলে হল বলে কি মুন্নী ফেলনা হয়ে গেল। ও তো বাড়ির প্রথম সন্তান। তাই মুন্নীর কোনো রকম তাচ্ছিল্য সহ্য হয় না অপরূপের।
            নদীর বেগের মত সময়ও বয়ে যায়। গতি আসে চঞ্চল -অপরূপের সংসারেও৷ মুন্নী আর গুবলুও একটু বড় হয়েছ৷মুন্নীর জেদ বায়নাও দিনে দিনে বেড়েছে।ইদানিং স্কুল থেকে ফিরে ব্যগ ওয়াটার বোতল ছুড়ে ফেলে টিভির সামনে বসে পড়ে৷দিদিকে দেখে ছোট্ট গুবলুও দিদির পাশে এসে বসে পড়ে৷দুজনে কার্টুন দেখতে মগ্ন৷চঞ্চল দেখতে পেয়ে ছুটে এসে টিভি বন্ধ করে ধমকায় মুন্নীকে"খালি টিভি!নিজের চোখ খারাপ করবি সঙ্গে ভাইটারও"৷সুবর্নার দেওরের আচরণ ভালোলাগেনা তা বিরক্ত প্রকাশের মধ্যে বুঝিয়ে দেয়।মুন্নীকে আজকাল চঞ্চল সব সময় রূঢ় ভাবে কথা বলে। পারলে যেন চড় চাপ্পড় কষাবে৷ মুন্নীও তিল চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে৷ছোট্ট ঘটনা অহেতুক অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়ায় ৷





      মুন্নীর  পরীক্ষার রেজাল্ট বেড়িয়েছে। বেশীর ভাগ সাবজেক্টেই   'C'পেয়েছে৷ অপরূপ আর সুবর্নার কপালে ভাজ।সবে ক্লাস টু  যদি এখনই  এত খারাপ হয় তবে উঁচু ক্লাসে কি করবে৷সুবর্না বলে "আমি বুঝতে পারিনা ওর কোথায় অসুবিধা।পড়ার সময় তো সব বোঝে।পরীক্ষার সময় কি করে কে জানে!"শতরূপা আটা মাখছিল৷আটা মাখতে মাখতে আটা মাখার পাত্র হাতে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এল ডাইনিং হলে। এসে বলল"দিদি আমার মনে হয় ক্লাসে লাস্ট বেঞ্চের বাচ্চা গুলো থাকেনা কিছু পড়া বোঝেনা কিন্তু ভয়ে জিজ্ঞাস করে না তারপর পরীক্ষায় ফেল করে৷ মনে হয় মুন্নীরও সেরকম কিছু অসুবিধা হচ্ছে"৷চঞ্চলও আলোচনায় যোগ দিল "হুম ,শতরূপা চাইল্ড সাইকোলজি ভালো বোঝে৷বৌদি ও ঠিকই বলছে।ও বোঝে না অথচ ভয়ে এমন ভান করে যেন সব বুঝেছে।তুমিও তো কম বক না তাই ভয় পায়৷"রেজাল্ট বিভ্রাটে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শেও কোনও সমাধান হল না ৷তবে কাড়ি কাড়ি অসন্তোষ জমল মনের ভিতর। সুবর্ণা রাগল ও মেয়ে পড়াতে পারে না যত বোঝে শতরূপা কেন ক্লাস টু তে মেয়ের রেজাল্ট খারাপ হয়েছে বলে এদিকে অপরূপের মোজাজ খাট্টা হল ওদের ব্যাপারে আগ বাড়িয়ে টিপ্পনী করতে কে বলেছিল শতরূপা কে। লাস্ট বেঞ্চার্সদের নিয়ে এত নলেজ তা নিজেই কি তাই ছিলি!
   




 প্রত্যেক বছরই মুন্নীর জন্ম দিন বড় করে করে অপরূপ আর সুবর্ণা।জন্মদিনের অনুষ্ঠানে সব কচিকাচাদের ভিড়৷অনেক গিফটের প্যাকেট চকোলেটের বাক্স এলোমেলো ভাবে ছড়ান৷গুবলু এক একটা গিফট দেখছে চকোলেটের বাক্স খুলছে আর দু একটা মুখেও পুরছে৷এই দেখে অপরূপ সুবর্নাকে ঈশারা করে  সব তুলে রাখতে বললো ৷মেয়ের অধিকারে গুবলুর হস্তক্ষেপ বরদাস্ত হয়না অপরূপের৷অপরূপ মেয়ের ব্যাপারে হঠাৎই যেন বেশী সংবেদনশীল বা মেয়ের অধিকার নিয়ে হয়ত একটু বেশী রক্ষণশীল হয়ে উঠেছে মনে হয় ও যদি সজাগ না হয় তবে সবাই ঠকিয়ে নেবে মেয়ের হকের জিনিস৷





      একদিন দুপুরে মুন্নী আর গুবলুর মাঝে টিভির রিমোট নিয়ে তুমুল ঝগড়া ৷ঝগড়া করতে করতে গুবলু মুন্নীকে ধাক্কা দেয়  মুন্নীও ধপাস করে পড়ে যায় ৷অপরূপ হঠাৎ রেগে গুবলুকে জোর ধমক দেয়"বড় সাহস হয়েছে তোমার এত বড় দিদিকে মারছো"৷সঙ্গে সঙ্গে গুবলু ঠোঁট ফুলিয়ে কান্না জোড়ে। রিমোট যুদ্ধ ছোটখাটো তান্ডবের রূপ নেয়৷কেউ কোনো কথা বলে না শুধু ভিতর ভিতর গুমড়য়। এই ভাবেই চলতে থাকে সকলের জীবন৷অপরূপ আর চঞ্চলের মধ্যের ভালোবাসা কোথাও যেন ভাগ হয়ে যায় হয়ত ভাগ হয়ে যায় ওদের সন্তানদের মধ্যে৷
   




         সুবর্না ছোট থেকে ভালো কবিতা বলত। বিয়ের পর সেইসব চর্চা চলে গেছে তাই সেই শখ পূরণের জন্য মুন্নীকে কবিতার ক্লাসে ভর্তি করিয়েছে৷শতরূপাও সময় নষ্ট না করে গুবলুকে গিটার ক্লাসে ভর্তি করে দিয়েছে। কোনো বিষয়ে ওরা পিছিয়ে থাকতে নারাজ৷বাড়িতে লোকজন এলে মুন্নী কবিতার বই আর গুবলু গিটার নিয়ে অতিথী দর্শকদের মনোরঞ্জনে লেগে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে চলে সুপ্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতা ৷




সামনে পুজো তাই অপরূপ আর সুবর্না পুজোর শপিংএ বেড়িয়েছে৷বাড়িতে আছে মুন্নী আর চঞ্চলরা। মায়েরও বয়স বেড়েছে। খুব একটা বাইরে বেরন না। মুন্নী ডাইনিং হলে পড়ছিল তখন কলিংবেলের আওয়াজে মুন্নী দরজা খুলে দেখে পাড়ার পুজো কমিটির সভাপতি মনোজ দত্ত৷মনোজ বাবু বললেন "চঞ্চল এবার পাড়ার ছোটদের নিয়ে পুজোর অনুষ্ঠান করব তাই বলতে এলাম৷"চঞ্চল হেসে হেসে বললো —"হ্যা জেঠু গুবলু paticipate করবে ও ভালো গিটির বাজাতে পারে"৷শতরূপাও ছুটে এসে গুবলুকে বলল"যা বাবু যা গিটারটা নিয়ে আয়"৷গুবলু নাচতে নাচতে গিটার এনে মনোজ দাদুকে শোনাচ্ছে চঞ্চল পাশে দাঁড়িয়ে পেছনে হাত রেখে মনোসংযোগের সঙ্গে ছেলের গিটারের টুং টাং শুনছে শতরূপা মনোজ বাবুর জন্য চায়ের কাপ এগিয়ে উদ্বিগ্ন ভাবে ছেলের দিকে চেয়ে রইল৷মনোজবাবু খুশী হয়ে বলে গেলেন"বাহ্ চঞ্চল তোমার ছেলের তো খুব প্রতিভা ওর নামটা আমি নিয়ে নিলাম এবারের বিজয়া সম্মিলনীতে ওর একটা সোলো পারফরমেন্স থাকবে৷"বাড়ি ফিরে অপরূপ সব শুনে বলে "মুন্নীও তো কবিতা বলতে পারে ওর নামটা দিলি না"৷চঞ্চল বলল"কই মুন্নীতো কিছু বলল না"৷অপরূপ বলে ..."ও কি বলবে ও তো বাচ্চা তোরা বলতে পারলি না!"চঞ্চল মুখ বেজার করে রইল ।রাগল ভিতর ভিতর ছেলেটা গিটার বাজাবে তার আনন্দ নেই ওর মেয়ের নাম দিইনি সেটা হল আলোচনার বিষয়। আরে মানুষ মাত্রই ভুল হয় না হয় হয়েছে তাছাড়া এখন তো মুন্নী বাচ্চা না ও বললে কি চঞ্চল বারণ করত। অপরূপ গুম হয়ে রইল। বিজয়া সম্মিলনীতে গুবলু পারফর্ম করল কিন্তু অপরূপরা দেখল না। ওরা সেইদিনই বেরিয়ে পড়ল সুবর্নাদের বাড়ি বিজয়া করতে৷
        দিওয়ালীতে যখন বাচ্চারা বাজি পটকা ফাটাচ্ছে৷মুন্নীকে ডেকে পাড়ার অল্প বয়সী মেয়ে নিরূপা বলল "মুন্নী দেখ তোর ভাই সকাল থেকে আমাদের বাড়ির সামনে পটকা ফাটাচ্ছে কিছু বলতে যাব তখন পালিয়ে যাচ্ছে এগুলো কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।ওকে বারণ কর৷"মুন্নী নিরুত্তাপ ভাবে উত্তর দিল "আমার ভাই নয় খুড়তুতো ভাই ও কে আমি কেন বলতে যাব! "
                চঞ্চল আর অপরূপের সন্তানদের মাঝে এই 'তুতো'সম্পর্ক  সকলের অলক্ষ্যে তৈরী করেছে একটা অদৃশ্য দেওয়াল৷যার উচ্চতা দিনে দিনে বাড়বে  কিন্তু এই দেওয়াল না যাবে ভাঙা না যাবে পার করা৷

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন