Translate

মঙ্গলবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৮

রঙের ছোঁয়া

#রঙের_ছোঁয়া
#রচনায়#প্রিয়ম্বদাপ্রিয়া
        রায়না স্নান সেরে আয়নার সামনে বসে হাতে পায়ে ময়শ্চারাইজার লাগাচ্ছিল তখনই ওর মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল। তাড়া তাড়ি করে হাতের মশ্চারাইজারটা দু হাতের তালুতে ঘষে হাতটাকে শুকনো করে ফোনটা ধরল।পিয়ালীর ফোন।ইদানীং রায়নার বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে কথা বলতে বিশেষ ভালো লাগে না।পিয়ালী বলল ..."কি রে আজকাল কি রকম যাচ্ছে তোর দিন।"রায়না একটু ঠাণ্ডা ভাবেই বলল ....''ঠিকই আছে।"ওর কথার মাঝের শীতলতা যেন পিয়ালীকে  বেশী উত্তেজিত করে দিল..."সে কি রে ,নতুন বিয়ের পর কেউ এমন হালকা ভাবে ঠিকই আছে বলে নাকি? আমি আর শুভ তো এখনও সেই কলেজ লাইফের মতনই রঙীন প্রেমিক যুগল। এই উইক এণ্ডে শুভ আমাকে মন্দারমনি নিয়ে যাচ্ছে।উফ্ এত এক্সাইটেড লাগছে তাই তোকে ফোন করলাম।"রায়না বেশী কিছু উচ্ছাস প্রকাশ না করে চুপ করে রইল কিন্তু পিয়ালী চুপ করার নাম নিল না ও বলেই গেল..."রায়না এই জন্য তোকে বলেছিলাম প্রেম কর প্রেম কর ঐ সম্বন্ধ করে বিয়েতে কোনও এক্সাইটমেন্ট নেই।তুই তো শুনলি না দেখ ধীরে ধীরে যদি তোর বেরঙ জীবনে রঙ আসে।"ফোনটা খাটে ছুড়ে মন মরা হয়ে খাটের উপর শুল রায়না। পাখার ব্লেডের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগল। বরাবরই ও চাইত ওর বন্ধুদের মতন ওর জীবনে কেউ আসবে।অচেনা অজানা সেই পুরুষ যে ওকে প্রেমের অনুভূতি করাবে কিন্তু সেই প্রেম সেই সকল অনুভূতি মন আর অনুভব করতেই পারল না। রায়নার জীবনে কেউ অনুপ্রবেশ করার আগেই বাড়ি থেকে সম্বন্ধ করে বিয়ে দিয়ে দিল।এখনও ধ্রুবজ্যোতির সঙ্গে ও ঠিক সাবলীল হয়েই উঠতে পারেনি।দুপুর বেলা লাঞ্চ টাইমে ধ্রুবজ্যোতি ওকে একবার ফোন করে কিন্তু রায়না যেন কিছু কথাই খুঁজে পায় না শুধু কি করছিলে? লাঞ্চ করেছ? শরীর ভালো আছে? এই রকম গতানুগতিক বোকা বোকা প্রশ্নের বাইরে আর কোনও কথা পায় না।ধ্রুবজ্যোতিও তাই।গুনে গুনে কথা বলে। বাড়িতে শ্বশুর শাশুড়ি আর দেওরের মাঝে রায়না আরও জড়ো সড়ো হয়ে যায়।ধ্রুবজ্যোতি তো তখন ওর দিকে তাকাতেও লজ্জা পায়।এই রকম নিরস প্রেমহীন সাদা কালো জীবন মোটেও চায়নি রায়না।খাটের উপর উপুড় হয়ে শুয়ে ফেসবুক খুলে দেখে সায়নী আর পার্থ গালে গাল লাগিয়ে ঠোঁট পাউট করে ছবি পোস্ট করেছে।শুধু কি সায়নী আর পার্থ! ওর বন্ধুরা তো রোজই নিত্য নতুন কায়দায় ছবি তুলেই যাচ্ছে। কিন্তু রায়নার জীবনে এগুলো দুর্ঘটনার মতন। সেদিন ধ্রুবজ্যোতি বলল ..."এই বুধবার আমি দিল্লি যাচ্ছি।"মনে অনেক রঙীন স্বপ্ন জেগে উঠেছিল রায়নার। ভেবেছিল এবার হয়ত ধ্রুবজ্যোতি বলবে ..."তুমিও চল আমরা তো হানিমুনেও যায়নি।"কিন্তু ওর সকল আশায় জল ঢেলে অত্যন্ত নিরস ভাবে ধ্রুবজ্যোতি জানাল ..."অফিস ট্যুরে যাচ্ছি এক সপ্তাহ পর ফিরব।"শুনতে এত বিরক্ত লেগেছিল তাও মুখে কিছু প্রকাশ করেনি।কোনও রকম মান অভিমান না করেই কর্তব্য করার মতন ওকে ওর লাগেজ প্যাকিংএ সাহায্য করেছে।উফ লাইফটা এত নিরস রঙ হীন হবে সত্যি ভাবেনি রায়না।
         




 সকাল থেকে  রায়না মুডটা আজ বেশ ভালো।রান্নাঘরে গিয়ে নিজেই সব গুছিয়ে বসেছে কেক বানাবে বলে। আজ বসুন্ধরাদির জন্মদিন।ওর সেই ছোট্ট বেলার গানের শিক্ষিকা বসুন্ধরাদির জন্মদিনে প্রত্যেক বছর নিজে হাতে কেক বানিয়ে নিয়ে যায় রায়না। বিয়ের পর এটা প্রথম বসুন্ধরাদির জন্মদিন ওর ইচ্ছে ছিল ধ্রুবজ্যোতিকে সঙ্গে নিয়ে যাবে কিন্তু সে তো দিল্লিতে তাই রায়না একাই গেল। সঙ্গে বানিয়ে নিয়ে গেল দিদির প্রিয় চকোলেট কেক।বসুন্ধরাদির বয়স ষাট ওনার ছাত্র ছাত্রীরাই উদ্যোগ নিয়ে ওনার জন্মদিনের অনুষ্ঠান করে। ফর্সা গোল গাল চেহারার স্নেহশীল বসুন্ধরা ওনার কোমল হাতটা যদি কারও মাথায় রাখে সঙ্গে সঙ্গে সেই ব্যক্তি তার অনুগত হয়ে যায়।রায়না ওর বানানো কেক নিয়ে বসুন্ধরাদির বাড়িতে ঢুকতেই দেখে বাড়িতে নানান বয়সের ছাত্র ছাত্রীর ভিড়। ক্ষুদ দের েরা শোর গোল করছে। ওদের নেতৃত্ব করছে জিতেন। সবার হাতে একটা বেলুন ধরিয়ে বলছে ফোলাও কে কত বড় বেলুন ফোলাতে পার।বর্ষা বসুন্ধরাদির বাড়িটা ফুল আর নীল লাল গোল্ডেন স্ট্রীমার দিয়ে সাজিয়েছে ।রায়না ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সবাই চেঁচিয়ে উঠল..."বেকারীর লোক এসেগেছে। "বরাবর রায়নার কেকই কাটা হয় তা জানে সকলে।




      সন্ধে বেলা কেক কাটা হল।বসুন্ধরাদি আর কাজলী মাসি বাড়িতেই অনেক পদ রেঁধেছিল।ক্ষুদে সদস্যরা পড়েছিল রায়নার দায়িত্বে। ভালো করে খেতে পারে না অথচ কি সুন্দর হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গায়।রায়না আবার ওদের নিজে হাতে খাইয়ে দিলে। রাতে সবাই বাড়ি ফিরে গেল।রায়না বলল আজ দিদি তোমার কাছেই থাকব দিদি বললেন ..."সেকিরে নতুন বরকে ছেড়ে এই বুড়িটার সঙ্গে থাকতে ইচ্ছে করছে।"রায়না ঠোঁট বেঁকাল।রাতে বিছানায় দিদি আর রায়না পাশাপাশি শুয়ে।ঘুম আসছিল না কারই।একটু বেশী পরিশ্রম হলে এক এক দিন ঘুমটা উবে যায়। রায়না হঠাৎ জিগ্যেস করল ..."দিদি তুমি আরেকটা বিয়ে করলে না কেন? কত অল্প বয়সে তোমার হাজ়বেন্ড মারা গিয়েছিল। তুমি এত সুন্দর দেখতে ছিলে সোনার মত তোমার গায়ের রঙ কি নরম কোমল চেহারা তোমার।তুমি এখনও কত সুন্দর তবে তো অল্প বয়সে আরও রূপবতী ছিলে। কেন আরেকটা বিয়ে করলে না।"দিদি হাসল..."ওকে যে ভালোবেসে ছিলাম। তাই আর কাউকেই ওর জায়গটা দিতে পারব না ও আজও আমার সঙ্গে আছে। ও তো আমার মনের বল আমার শক্তি সব ও। "রায়না আগ্রহের সঙ্গে বলল ..."তোমরা লাভ ম্যারেজ করেছিলে।"দিদি হাসল আবার বলল ..."বাবা মা পাত্র ঠিক করেছিল সম্বন্ধ করেই বিয়ে হয় তারপর ওকে ভালোবেসে ফেলি।"রায়নাকে আস্তে করে একটা শ্বাস ছাড়তে দেখে উনি বললেন ..."কি ব্যাপার বল তো! সকাল থেকেই দেখছি তুই কেমন যেন আনমনা। সব কাজ করছিস কিন্তু কোথাও যেন উচ্ছাসের অভাব।"রায়না ঠোঁট উল্টে বলে..."আমার কেমন একটা বিয়ে হল বসুন্ধরাদি আমি কিছু বুঝতেই পারছি না কেমন যেন যন্ত্রের মতন জীবন আমাদের কোনও আবেগ নেই প্রেম নেই আমার একদম ভালো লাগে না।সব বন্ধু বান্ধবরা কি আনন্দে আছে বেশীর ভাগ বন্ধুরই লাভ ম্যারেজ হয়েছে ওরা তো সেই গায়ে হলুদ থেকে বৌ ভাত পর্যন্ত কত সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করেছে আবার বিয়ের পরেও না না ভাবে দিন কাটাচ্ছে কিন্তু আমি তো আমার বরের সঙ্গে একেবারেই ফ্রি হতে পারি না।"বসুন্ধরাদির কপালে ভাঁজ পড়ল।একটু উদ্বিগ্ন হয়ে জিগ্যেস করলেন..."কেন? ধ্রুবজ্যোতির কথা বার্তা কি খুব রুক্ষ।"রায়না বলল ..."না সেরকম কিছু নয়।"বসুন্ধরা ওর জাদুময় স্নেহের ছোঁয়ায় রায়নার মাথায় হাত রেখে বললেন ..."তুই কি চাস? "রায়না বলে ..."সবাই যেমন আনন্দ উৎফুল্লে নিজের জীবন সঙ্গীকে নিয়ে দিন কাটায় আমি তাই চাই।আমি জীবনে রঙ চাই। কিন্তু ধ্রুবজ্যোতি ভীষণ বোরিং ও বেশী কথা বলে না আর একেবারেই রোম্যান্টিক নয়।"
..."তুই রোম্যান্টিক? "রায়না চনমনে মুখে তাকাল।সোজা উঠে বসে বলল ..."ভীষণ!আমি তো দিন রাত স্বপ্ন দেখি কিন্তু বাস্তবটা একদম আলাদা।"বসুন্ধরাদি ঠোঁট চেপে হাসল। বলল ..."তাহলে তোকেই প্রথম পদক্ষেপটা নিতে হবে।"ভ্রূ কুঁচকে রায়না বলে ..."কেমন করে?"
..."তুই শুরু কর।হয়ত ও ভাবছে এখনকার মেয়ে তুই হঠাৎ করে অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠতা অপছন্দ করতে পারিস তাই হয়ত তোকে বোঝার চেষ্টা করছে।তাই তুই ওর সঙ্গে প্রথমে বন্ধুত্বটা সেরে ফেল।এবার যখন ও দিল্লি থেকে ফিরবে বলবি চল দুজনে বাইরে কোথাও যাই।তারপর তোর পছন্দ অপছন্দ গুলো বলবি। একে অপরকে বোঝার চেষ্টা কর।মনে কর ধ্রুবজ্যোতি তোর বয়ফ্রেণ্ড এই ভাবেই প্রেমের আরম্ভ কর।দেখবি তোদের প্রেম সকলকে ছাপিয়ে যাবে।"রায়না দিদির কথায় বেশ উদ্যোম পেল।মনে মনে ঠিক করে নিল এবার ওকেই উদ্যোগী হতে হবে। অধীর আগ্রহে ধ্রুবজ্যোতির অপেক্ষায় বসে রইল।




   দিল্লি থেকে ফিরেই ধ্রুবোজ্যোতি সবার আগে বাড়ির লোকের সঙ্গে বেশ অনেকটা সময় কাটাল। তারপর ঢুকল নিজের ঘরে। বেশ অভিমান হল রায়নার। নতুন বউএর সঙ্গে কোনও রকম কথা না বলে মা বাবার সঙ্গেই সব কথা বলে চলেছে।আরে লোকে আগে তো নতুন বউকে গুরুত্ব দেয়।তারপর ভাবল না ঠিকই আছে ফ্যামিলিকেও টাইম দেওয়া দরকার। নইলে ব্যালেনস হবেই বা কি করে!ধ্রুবজ্যোতি ওর ব্যাগ থেকে একটা বক্স বের করে একটু সঙ্কোচের সঙ্গে বলল ..."দেখো তো এই সেট টা কেমন? "রায়না ঠোঁট বেঁকাল। কি জানি কার জন্য এনেছে।যা ফ্যামিলি প্রীতি এখুনি হয়ত বলবে অমুকের মেয়ের জন্য এনেছি বা তমুকের নাতীর জন্য এনেছি।ওর মুখের আব ভাব দেখে ধ্রুবোজ্যোতি একটু নিরাশ হল ।মন দিল নিজের প্যাকিং আনপ্যাক করতে।রায়না বাক্স খুলে দেখল খুব সুন্দর একটা চেন সঙ্গে পেন্ডেন্ট তার সঙ্গে কানের দুল।রায়না নিজের মনে বিড় বিড় করল আমার জন্য মোটেও আনেনি।ধ্রুবজ্যোতি ওর দিকে তাকাল আড় চোখে।রায়না নিরুত্তাপ ভাবে বলল ..."ভালো।"ধ্রুবজ্যোতি আবার লাগেজ আনপ্যাক করতে লাগল। রায়না ওর এইরকম উদাসীন ব্যবহারেই বেশী রুষ্ট হয়। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বসুন্ধরার কথা মনে পড়াতে নিজেই ওকে জিগ্যেস করল ..."কার জন্য এনেছ এই সেট টা? "ধ্রুবজ্যোতি খানিকক্ষণ চুপ করে রইল।তারপর বলল ..."কেন তোমার ভাল লাগেনি।"রায়না আবার বিরক্ত হয়। উফ্ এই ছেলেটা সোজা কথার উত্তর দেয় না কেন।বলল ..." খুব ভাল।"
..."এটা তোমার জন্য এনেছি। "মৃদু হেসে বললো ধ্রুবজ্যোতি। ওর কথাটা শুনে মনটা নেচে উঠল রায়নার।তাহলে ধ্রুবজ্যোতি দিল্লিতে গিয়েও ওর কথা ভেবেছে। তাই মনে করে ওর জন্য গিফট নিয়ে এসেছে। রায়না বলল..."আজ রাতে বাইরে ডিনার করবে।"ধ্রুবোজ্যোতি বলে ..."বাবা মাকে বলেছ। "রায়নার আবার বিরক্ত লাগে। উফ এই ছেলেটা কি কখনই বাবা মা কাকা মেসো এই পল্টন ছাড়া কিছুই ভাবতে পারে না।রায়না ওর কাছে এসে বলল ..."শুধু তুমি আর আমি আর কেউ না।"ধ্রুবজ্যোতি লাজুক ভাবে হাসল।বলল ..."ঠিকাছে।"



       রায়না মাঝে মধ্যেই ধ্রুবজ্যোতিকে খুঁটি নাটি সব জিগ্যেস করে। ওর সঙ্গে কথা বলে রায়না বুঝতে পেরেছে ধ্রুবজ্যোতি স্বভাবগত ভাবে চাপা। তাই নিজে থেকে মনের কথা প্রকাশ করতে পারে না। রায়নাই এগিয়ে এসে শুরু করে বন্ধুত্ব।রোজ অফিসের যাওয়ার আগে নিজেই পছন্দ করে ধ্রুবজ্যোতির শার্ট প্যান্ট বের করে দেয়।ফেসবুকে ছবি পোস্ট করবে বলে ধ্রুবজ্যোতির গলা জড়িয়ে  দুজনে এক সঙ্গে না না রকম ছবি তুলে পোস্ট করে।তা দেখে ফেসবুকের বন্ধুরা  বিশেষ উৎসাহ না দেখালেও বসুন্ধরাদি মাঝে মধ্যে ফোনে রায়নাকে বেশ এনকারেজ করেন।




একদিন দুপুরে ধ্রুবজ্যোতি রেস্ট নিচ্ছিল।রায়না এসে শুল ওর পাশে।বলল ..."আমি তোমায় ধ্রুব বলে ডাকব অত বড় নাম ডাকতে আমার ভালোলাগে না। "ধ্রুবজ্যোতি বলে..."যেমন তোমার ভাল লাগে তাই ডেকো। " ..."ধ্রুব তুমি আমায় প্রপোজ করলে না তো।"একটু আদুরে সুরে বললো রায়না।ধ্রুবজ্যোতি হাসে।বলে ..."বউকে কেউ প্রপোজ করে? "
..."কেন করবে না? বিয়ে হয়েগেছে বলে তোমার মনে হয় আমাকে পাওয়ার চেষ্টা করার দরকার নেই।"ধ্রুবজ্যোতি বলে ..."তুমি এখনও ছেলে মানুষ ঐ সব স্কুল কলেজে হয়।বিয়ের পর মানুষ ফ্যামিলি প্ল্যানিং করে।বউকে প্রপোজ করে?"খুব রাগ হয় রায়নার।বেচারি নিজে উদ্যোগ নিয়ে ওর এত কাছে আসার চেষ্টা করে চলেছে অথচ এই বেরসিক লোকটা কিছুতেই একটুও প্রেম টেম করতে ইন্টারেস্ট দেখায় না। রায়না মুখ গোমড়া করে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।সব চেষ্টা বেকার। যার মধ্যে বিন্দুমাত্র প্রেম ভাব নেই সে হবে রোম্যান্টিক। রায়নাই বোকা বেশী বেশী আশা করে বসেছিল। সব বেকার।এখন মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। যে স্বভাবগত ভাবে রোম্যান্টিক  হয় না তাকে জোর করে কিছুই শেখান যায় না।





জীবন আবার আগের ধারায় বইতে শুরু করল।রায়না আবার নিরুত্তাপ।শুধু মুখ বুজে ঘরের কাজ করে। শাশুড়ির সঙ্গে সঙ্গে রান্নায় হাত লাগায়। যেমনটা ধ্রুবজ্যোতি মেপে ঝেপে কথা বলে ও ততটুকুই মেপে ঝেপে উত্তর দেয়।আগের মতন যখন তখন ধ্রুবজ্যোতিকে নিয়ে এটা ওটা ট্রাই করে না। এদিক সেদিক ঘুরতে যাওয়ার বায়নাও করে না। হঠাৎ করেই নিবে গেছে ওর সব উচ্ছাস।
               একদিন বেশ রাত হয়েগেছে ধ্রুবজ্যোতি তখনও বাড়ি ফেরেনি।অনেক বার ফোন করেও ওকে ফোনে পায়নি রায়না।অফিসে ফোন করে জেনেছে ধ্রুবজ্যোতি অনেক্ষণ বেরিয়ে গেছে। আজব ব্যাপার তবে গেল কোথায় ছেলেটা! চিন্তায় চিন্তায় পাগল হচ্ছে  রায়না অথচ বাড়ির লোক নিশ্চিন্তে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।রায়না একবার বারান্দায় দাঁড়াচ্ছে একবার ঘরে ঢুকছে।স্বস্তি পাচ্ছে না কিছুতেই।রাত বাড়ছে অথচ ধ্রুবজ্যোতির কোনো পাত্তা নেই।শ্বশুর শাশুড়ির ঘরে ঢুকে শাশুড়িকে জাগাল।জিগ্যেস করল..."ও এখনও ফিরল না কেন? "উনি বললেন ..."ও ফিরবে খন তুমি শুয়ে পড়।"অবাক হল রায়না। এরা কেমন সব লোকজন। ছেলেটা বাড়ি ফিরল না তাতে কোনো চিন্তা নেই এদের।নিজের ঘরে এসে খুব কাঁদল রায়না। রোজ যেখানে সাতটা সাড়ে সাতটায় ধ্রুবজ্যোতি বাড়ি ফেরে সেখানে রাত প্রায় সাড়ে বারোটা বাজে তাও বাড়ি ঢোকেনি ধ্রুবজ্যোতি। রাগও হচ্ছে ফোনটা ধরছে না কেন? আবার ভয় হল  বাজে কিছু ঘটল না তো।কাউকে কিছু বলতে না পেরে  একাই কেঁদে গেল রায়না।প্রায় রাত একটা নাগাদ ঘরে ঢুকল ধ্রুবজ্যোতি। ওকে দেখেই  রায়না এক পলকে ছুট্টে গিয়ে জড়িয়ে ধরল ধ্রুবজ্যোতিকে।জড়িয়ে ধরেই কান্না । ধ্রুবজ্যোতি বলে..."এ কি কাঁদছ কেন? "চোখের জল দুহাতে মুছে কাঁদো কাঁদো গলায় রায়না বলে ..."তুমি আসছিলে না আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।"ধ্রুবজ্যোতি আলতো করে রায়নার চোখের জল মুছে বলল ..."তুমি বলেছিলে না তোমার স্টোনের নূপুর ভালো লাগে তাই অফিস থেকে বেরিয়েই সোনার দোকানে যাই একটা দোকানেও লেটেস্ট ডিজাইনের স্টোনের নূপুর নেই সব মোটা মোটা তোড়া নয়ত সিঙ্গল চেন। খুঁজতে খুঁজতে পুরো উল্টো দিকে চলে আসি গড়িয়াহাট থেকে চলে আসি বউ বাজার।ওখানে একটা দোকানে ঠিক তোমার যেমন পছন্দ সেইরকম নূপুর পেলাম।আসার পথে দেখি বাস ট্যাক্সি কিচ্ছু চলছে না ধর্মঘট।অনেক হুজ্জুতি করে বাড়ি ফিরলাম।"বলে ও পকেট থেকে নূপুর বের করে রায়নার হাতে দিল।জ্বল জ্বল চোখে তাকিয়ে রইল রায়নার দিকে।মৃদু হেসে জিগ্যেস করল ..."পছন্দ হয়েছে? "
 ..."তুমি ফোন ধরছিলে না কেন? "অধৈর্য ভাবে বললো রায়না।ধ্রুবজ্যোতি বলে ..."কেন তুমি যে বল তোমার সারপ্রাইজ ভালো লাগে তাই তোমার ফোন ধরিনি।বাড়িতে বলে দিয়েছিলাম যেন সবাই খেয়ে নেয় তোমায় কিছু না বলে।"বলেই ধ্রুবজ্যোতি এক গাল হাসল।ভ্রূ নাচিয়ে বলল ..."কি কেমন লাগল আমার সারপ্রাইজ। বেশ রোম্যান্টিক না। "ওকে দেখে মনে হচ্ছে যেন বিশ্বজয় করে এসেছে নয় তো একটা ওয়ার্ল্ড কাপ তো এনেইছে।রায়নার খুব রাগ হল নূপুরটা ছুড়ে ফেলে দুমা দুম ধ্রুবজ্যোতির বুকে দিল কয়েক ঘা। ধ্রুবজ্যোতি বলে ..."কি গো খেপে গেলে নাকি? "রায়না বলে ..."এই তোমার রোম্যান্স? এমন রোম্যান্সে দরকার নেই। আমি চিন্তায় চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম আরেকটু দেরি করলে আমার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেত। তুমি যেমন আছ তেমনই থাক।কোনো সারপ্রাইজ চাই না আমার। "বলে ও খাটে ধপ করে বসল রায়না । ধ্রুবজ্যোতি ওর পাশে বসল ওর গা ঘেঁসে। রায়না মুখ বেঁকাল। ধ্রুবজ্যোতি বলল ..."একটা বিষয় পরিষ্কার হল।"রায়না কর্কশ ভাবে বলে ..."কি? "
..."তুমি আমায় খুব ভালবাস।"রায়নার চোখ বেয়ে আবার জল গড়িয়ে পড়ল। ধ্রুবজ্যোতি মাটিতে পড়ে থাকা নূপুরটা তুলে রায়না পায়ে পরিয়ে দিয়ে বলল ..."আই লাভ মাই রোম্যান্টিক ওয়াইফ।"©Pryamboda priya
অনুভূতির আসর-Anuvutir asor(ফেসবুক পেজ)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন