Translate

বুধবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৮

ফিরে আসা ***


          #ফিরে_আসা
      #রচনায় #প্রিয়ম্বদাপ্রিয়া
         "সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি সারা দিন যেন আমি ভালো হয়ে ..."জোরে জোরে পড়তে পড়তে বই থেকে চোখ সরিয়ে রাজু দেখল মা কাজে ব্যস্ত। বই বন্ধ করে পায়ে চটি গলিয়ে বেরিয়ে গেল বাইরে। পল্লী গ্রাম এলাকা চারিদিকে গাছ গাছালি দু পাশে বাঁশ বন মাঝ খানে চওড়া রাস্তা। রাজু একা একাই বেশী ঘোরে।ধান  খেতের আল বেয়ে হাঁটে। খেতের পাশে সারি সারি কলা গাছ লাগান। বংশি কাকা পুকুরে গরু চান করায় এসব কিছু দেখতে ও'র খুব ভালো লাগে। গাছ পালা ও'র বন্ধু যেন খোলা আকাশ উন্মুক্ত বাতাস ঐ হাওয়ায় দোল খাওয়া ধান খেত ও'কে হাতছানি দিয়ে ডাকে। রাজুর একটি বন্ধু আছে সে হল ময়না। ময়না পাখি নয় সুন্দর ফুট ফুটে একটি মেয়ে। ময়নার বাবার গুড়ের ব্যবসা।শীত কালে পাটালি ,ঝোলা গুড় বেঁচে গরম পড়তে তালপাটালি আর বাকি সময় খেতের চাল থেকে মুড়ি চিড়ে। রাজুর বাবা চাষি। এক সময় ওদের অনেক জমি জায়গা ছিল ফসল ভালো না হওয়ায় ধার দেনায় পড়ে অর্ধেক জমি এখন মহাজনের কাছে বন্দক।ময়নার কাছে এসে রাজু বলল ..."কি রে তালপাটালি আনিস নি। "ময়না হাত বাড়িয়ে তালপাটালি বের করে বলল ..."অত সহজে নয়। তোর না খুব বুদ্ধি!আগে আমায় কাঠবেড়ালি ধরে দে তারপর। "ওর বয়সী আর পাঁচটা ছেলের থেকে রাজুর বুদ্ধি অনেকটাই বেশী তা ওদের এলাকার অনেকে জানে।স্কুলের পড়াশোনায় এগিয়ে না থাকলেও কারিগোরিতে বেশ পটু। নিজে হাতে ফাঁদ তৈরী করে বিন্দু পিসির বাড়িতে ইঁদুর ধরেছে। আরও অনেক ফন্দি জানে রাজু। ময়না আবার চ্যালেলঞ্জ করেছে বুদ্ধির প্রমাণ দিলে তবে তালপাটালি দেবে। রাজু একটু চিন্তা করে সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধি খাটিয়ে নিল। একটা ছোট্ট কুড়াল এনে মাটি খুড়ে গর্ত করল। তারপর পাতলা দুটো কাঠের পাটাতন জোগাড় করল। কুড়াল দিয়ে ওগুলোকে সাইজ করে কেটে পাটাতনের দুই প্রান্ত লম্বা আর মাঝখান চওড়া রাখল লম্বা দিকটা মাটিতে লম্বা চ্যানেল করে বসাল পাটাতনে ফুটো করে সুতো দিয়ে বাঁধল।সুতো দিয়ে বাধায় পাটাতন দুটো জানলা বন্ধ হওয়ার মতো রইল এদিকে নীচে গর্ত। রাজু এবার পেয়ারাটা পাতলা পাতলা করে কেটে পটাতনের উপর রেখে দিল। যেই কাঠবেড়ালি পেয়ারা খেতে আসবে অমনি শরীরের ভারে গর্তে পড়ে যাবে আর জানলার মতো পাটাতন বন্ধ হয়ে যাবে। ময়না ওর কারিগোরি মন দিয়ে দেখল। রাজু জামায় হাত ঝেড়ে বলল ..."এবার দে ময়না আমি কত খাটলাম। "ময়না অত সহজে ভোলার নয় ..."এই বুঝি তোর কাঠবেড়ালি। দাঁড়া আগে কাঠবেড়ালি তোর ফাঁদে আসুক তারপর। "দুজনে ফাঁদ পেতে আবার ঝাপা ঝাপি ছোটা ছুটি করতে করতে চলে এল পুকুর পাড়ে। রাজুর মা কাপড় কাচছিল।ছেলের নাচা নাচি দেখে ধমকালো ..."রাজু তোর পড়াশোনা নেই ?এবার মার খাবি ঘরে যা!"বকা খেয়ে বাড়ি ফেরার পথে একবার ফাঁদের কাছে গিয়ে দেখে ঠিক গর্তে কাঠবেড়ালি।  গর্ত থেকে তুলে ময়নার হাতে দিয়ে বলল ..."নে তোর কাঠবেড়ালি।আর দে আমার তালপাটালি!"বাধ্য হয়ে ময়না ওর হাতে ধরাল তালপাটালি।



       পড়াশোনায় মন নেই রাজুর। প্রতি ক্লাসে একবার করে ফেল করে। এখন ক্লাস থ্রি যদিও সিক্সে পড়ার কথা। ময়না ক্লাস ফাইভে পড়ে যদিও সে রাজুর থেকে ছোট। সব ছেলে মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে অথচ রাজু এক জায়গায় দাঁড়িয়ে। উঁচু ক্লাসের ছেলেরা রোজই খেপায়।একদিন ফেলুয়া ফেলুয়া খেপাতে বেজায় চটে রাজু। ওর চেয়ে লম্বা একটা ছেলের গলা ধরে ঝুলে পড়ল। তারপর সবাই মিলে মার লাগাল বেচারাকে। এই রকম অপমান সহ্য হয় না কোনও রকমে পড়াশোনায় মন বসিয়ে মাধ্যমিক অবধি পড়ল রাজু।এদিকে বাড়িতে দিনে দিনে অভাব বাড়ছে। নিজের জমি বলতে এখন তিন বিঘা মতো। সেখানে রাজুর বাবা মরসুমি সবজি চাষ করে। লাভ খুবই কম হয়। মায়ের চেহারাটাও দেখলে মায়া হয় রাজুর। গাল দুটো ভেঙে গেছে গলার হাড় গুলো বেরিয়ে।ফর্সা গায়ের রং তামাটে হয়ে গেছে।এত বয়স তো হয়নি মায়ের। বাবার চোখে মুখে বড় হতাশা। দুঃখী দুটো চোখ জমি গুলো দেখে। রাজুর মনে হয় বই খাতা ফেলে টাকা কামায়। অনেক টাকা ।ওদের জমি গুলো ছাড়ায়। মাকে সোনার গয়না গড়ে দেয় কিন্তু কোথায় পাবে এত টাকা। বাবা বলে ..."চাষ করে কি করবি? পেট ভরতে হলে চাকরি করতে হবে ।রাজু পড়াটা ভালো করে কর।অনেক কষ্ট করে পেটে গামছা বেঁধে তোকে পড়াচ্ছি। "রাজু শোনে। এক এক সময় বড্ড চাপ বেড়ে যায় ওর। ও ভরসা ওদের বাড়ির। কি করবে রাজু! পারবে তো সব সমস্যা মেটাতে! 



     ক্লাস টুয়েলভ হল রাজুর। পুজো আসছে। আকাশে প্যাঁজা তুলোর মতন মেঘের মাঝে সূর্যের ঝলকে চারিদিকে ঝক ঝক করছে। নদীর ধারে কাশ ফুল,শিউলি গাছ ভরা শিউলি ফুল, জানান দিচ্ছে শরতের আগমনের। সকাল বেলা রাজু মাঠের ধার দিয়ে হেঁটে চলল। সামনের শিউলি গাছের নীচে শিউলি ফুল বিছিয়ে রয়েছে। যেন নিদ্রাচ্ছন্ন শিশু মায়ের কোল থেকে পড়ে আরেক মায়ের কোলে মিশে আছে। শিশির ভেজা সকালে যুবতী ময়না শিশির ভেজা শিউলি ফুল কুড়চ্ছিল। রাজুর ছেলেবেলার সঙ্গী ময়না।এখন ও'রা দুজনেই বড় হয়ে গেছে। আগের মতো মেলা মেশা হয় না। তবে মাঝে মধ্যে দেখা হয়।আজ হঠাৎই ময়নাকে দেখে রাজুর কদমটা থেমে গেল। ও'র খোলা লম্বা চুল, পাতলা কোমর,চেহারায় সদ্য যৌবনের ছোঁয়া হয়ত আকৃষ্ট করল রাজুকে। ময়না রাজুর দিকে তাকাতে রাজু চোখ নামিয়ে নিল। যেন ময়না ও'র চুরি ধরে ফেলেছে। ময়না ডাকল ..."এই রাজু শোন। "
..."আমি তোর থেকে বড় আমায় তুই বলবি না। "একটু মেজাজে বললো রাজু।
..."তাহলে কি বলব এই যে শুনছ। "বলে ময়না হেসে গড়াল। তন্বী শরীর হাসির সঙ্গে নুইয়ে পড়ছিল এদিক ওদিক। ময়না হাসছে ওর খোলা চুল দুলছে ও আনমনে চুল গুলো সরাচ্ছে পেছন দিকে।রাজুর লজ্জায় ফর্সা কান দুটো লাল হয়ে গেল। ময়না বলে ..."কি রে তুই যে উচ্চমাধ্যমিক দিবি তা আমি ভাবি নি।আমি ভেবেছিলাম তুই জীবন ভর ফাইভেই থাকবি! "
..."তা ভাববি কেন? গরিবের অনেক জ্বালা পেটে খিদে নিয়ে পড়া সহজ নয়। বুঝল! "বলে হঠাৎই জ্বলে উঠল রাজু।ময়না বুঝল হয়ত ও'র দুর্বল জায়গায় চোট পড়েছে।চুপ করে গেল ও। ধীর স্বরে বললো..."রাজু আমি তা বলি নি। আমিও কি বড়লোক বাড়ির মেয়ে। "রাজু কি বুঝল কে জানে হাঁটা ধরল হনহনিয়ে।
    



      দেখতে দেখতে পুজো এসে গেল। ওদের গ্রামে আবার প্রতি পুজোয়  রামলীলা হবেই । অষ্টমীর সন্ধ্যায় 'রামলীলা 'হচ্ছে।ময়নাও দেখছিল কিন্তু বসে বসে একঘেয়ে লাগায় মাঝখান থেকেই উঠে এল।মাঠ পেরতে ফাঁকা রাস্তায় দুটো ছেলে বাইকে করে যাচ্ছিল। নারী শক্তি আরাধনার দিন নিজের যৌন লালসা তৃপ্ত করার জন্য নারী শরীর উপভোগ করার সুন্দর সুযোগ তারা হাতছাড়া করতে চাইল না। হামলা করল ময়নার উপর। ময়নার মুখ চেপে ধরল। দুজন মিলে একজনকে শিকার করা সহজ।যেন ময়না একটা উপাদেয় খাদ্য বা এমন নিরীহ জীব যাকে যে করে হোক বাগে আনতে পারলেই কার্যসিদ্ধি করতে পারবে।যেমন করে কশাই ধরে ছাগল পাঁঠা বা মুরগী ঠিক তেমনই। ময়না ছটফট করছিল। ছাড়াতে চাইছিল নিজেকে।কিন্তু পারছিল না ওদের সঙ্গে।তখনই আচমকা পেছন থেকে রাজু ছুটে এল।করল দুটোকেই চিৎ। পাশে পড়ে থাকা বাঁশ তুলে বেদম পিটিয়ে রক্তাক্ত করল  দুজনকে। ময়না কাঁদছিল অঝরে।রাজুর উন্মত্ততা দেখে ময়না ছুট্টে গিয়ে থামালো রাজুকে ।
..."রাজু ছেড়ে দে ঐ নোংরা রক্তে তুই হাত ময়লা করিস না। "তাও যেন নিজেকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছিল না রাজু। ক্লান্ত হয়ে আসছে শরীর তাও মেরে চলেছে ওদের পা দিয়ে বাঁশ দিয়ে। দুটো ওলট পালট হচ্ছিল মাঠে। মদ খাওয়ায় হুঁশ কম ছিল ওদের।রাজুর উচিত রাগের কাছে হেরে যাচ্ছিল ওদের কামুক শক্তি। ময়না জড়িয়ে ধরল রাজুকে..."শান্ত হ রাজু শান্ত হ! "অঝোরে কাঁদে ময়না ভিজে যায় রাজুর বুকের কাছের শার্ট। রাজু ময়নাকে সামলে নিজে শান্ত হয়। 



    শীতের এক পড়ন্ত বেলায় আকাশটা রাঙা। চারিদিকে লাল আলোর ছটা। ময়না  রাজুর গায়ে হেলান দিয়ে বসেছিল।বলল...."রাজু বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য দেখা শোনা শুরু করছে।" দরিদ্র বাবা। বেকার রাজু। কোন মুখে ময়নাকে নিজের জীবনে চাইবে।তবে ময়নাকে যে ভালবাসে রাজু চুপচাপ  বসে থাকেই বা কি করে।ময়না আবার বললো ..."কি রে বল!আমি কি করব এখন।"নীরব রাজু তাকাল ময়নার দিকে। কি বলবে ওকে! কাজ চাই যে করেই হোক টাকা রোজগার করতেই হবে।নইলে কি ভরসা দেবে ময়নাকে।লম্বা শ্বাস ছেড়ে রাজু উঠে দাঁড়াল। জিগ্যাসু নয়নার দিকে চেয়ে বললো ..."একটু সময় দে নয়না! "



বেশ কিছুদিন ভাবল রাজু। একদিন দেখা হল বিনায়কদার সঙ্গে। গাঁয়েরই ছেলে।আগে তো কোনো কাজকম্ম তেমন করত না। ঘুরে বেরাত এদিক সেদিক। কখনও খেতের সবজি কখনও বাগানের ফল লোকের বাড়ির মুরগী চুরি করে বেরাত। স্কুলেও যেত মুখ দেখাতে তাও ক্লাস ফোর পর্যন্ত গেছে।কিন্তু বিনায়কদাকে দেখে তো মনে হচ্ছে অবস্থা বেশ ভালো। জামা কামড় দামি। পকেট থেকে বড় মোবাইল বের করে কথা বলছে কারো সঙ্গে। কবজি ঘড়িটাও অনেক দামী।এগিয়ে গেল বিনায়কদার কাছে। নাকে এল বডি স্প্রের তীব্র গন্ধ।..."বিনায়কদা যে! ''হেসে বললো রাজু। 
..."আরে রাজু! কি খবর বল! "
..."তুমি একদম বদলে গেছ বিনায়কদা।অনেক বড়সড় মানুষ হয়েগেছ মনে হচ্ছে! "বিনায়ক প্যান্টটা কোমরের উপর টেনে তুললো। হাসছে বিজ্ঞের মতন ..."হুম। সময়! সবই সময়! "বলে পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করল বিনায়ক। কায়দা করে একটা সিগারেট ধরল ঠোঁটের ফাঁকে একটা সিগারেট এগিয়ে দিল রাজুর দিকে। রাজু মাথা নাড়ল ..."আমি খাই না এসব। সিগারেটের প্যাকেটেই লেখা থাকে ইনজুয়েরাস টু হেল্থ! তাও কি কারণে লোকে খায় কে জানে। আদি ফুসফুসে আর তামাকের ধোঁয়া ভরতে চাই না! "
..."ধুস! ওগুলো বাচ্চা বাচ্চা কথা। পুরুষ মানষদের সিগারেট না খেলে হয়! অত তুতু পুুতু করলে পুরুষ মানুষদের চলে না! "
..."সিগারেট খেয়ে আমায় পুরুষ হওয়া প্রমাণ করতে হবে না বিনায়কদা। ঐ কথা গুলো আমার কাছে বাচ্চাদের মতন অযৌক্তিক। "
..."আচ্ছা আচ্ছা বাদদে ওসব এখন কি করছিস বল! "প্রসঙ্গ বদলে বললো বিনায়ক।লম্বাশ্বাস ফেললো রাজু..."কিছু না! একটা কাজ দিতে পারবে? "
..."বলছিলি না পুরুষ মানুষ হওয়া তোকে সিগারেট খেয়ে প্রমাণ করতে হবে না। ''বলে এদিক ওদিক তাকাল বিনায়ক। রাজুর দিকে এগিয়ে এল কিছুটা ..."দম আছে তো বল! কাজ আছে আমার কাছে! "কোনো রকম চিন্তা ভাবনা না করে রাজি হয়েগেল রাজু। বললো ..."হ্যাঁ হ্যাঁ আমি রাজি কি করতে হবে শুধু বলো!"ঠোঁট বেঁকিয়ে হাসল বিনায়ক। কাঁধ চাপড়াল রাজুর।



বিনায়কের  সঙ্গে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে এল রাজু।বিনায়ক ওর মালিকের কাছে রাজুকে নিয়ে এল।উনি বললেন শুধু উনি যে ঠিকানা দেবেন সেখানে পার্সেল পৌছাতে হবে। ও'র সঙ্গে দুজন ছেলেও থাকবে। প্রত্যেকবার পার্সেল ডেলিভারির সঙ্গে পাঁচ হাজার করে দেবে তারপর বেতন বাড়বে।শুনে অবাক হল রাজু।দারুণ ব্যাপার!এত সহজে যদি টাকা রোজগার করা যায় তবে বাবা কেন হাল টানে।কেন লোকের এত অভাব। না কি সবাই জানে না সঠিক লাইন ধরতে! রাজুর ভাগ্য ভাল তাই না বিনায়কের সঙ্গে দেখাটা হল।রাজু মন দিল কাজে। সব মন সব ধ্যান এখন শুধু এই নতুন কাজ। তবে এই কাজে ঢুকে রাজু জানল ধীরে ধীরে যে অজান্তেই ও স্মাগলিংএর দুনিয়ায় ঢুকেগেছে ।আরো যত গভীরে ঢুকল তত জানল পার্সেলে অস্ত্র থাকে। গাঁজা, ড্রাগ থাকে থাক। তাতে কি ওর। ওর টাকার দরকার। ও না করলে অন্য কেউ করবে। কিন্তু রাজুর পয়সা চাই।বন্দকের জমি ছাড়াবে।ময়নাকে বিয়ে করবে। মাকে গয়না বানিয়ে দেবে।রাজু বড়লোক হবে। ওর তো বিচার করার দরকার নেই। সিগারেট স্মোকিং ইজ ইনজুরিয়স টু হেল্থ লোকে তা জেনেও সিগারেট খায় তবে রাজুই বা এমন কি অপরাধ করছে! এই কাজে ঢুকে ও দেখেছে কত বড় বড় লোক আছে এখানে। তাদের কাছে রাজু নস্যি! ক্ষুদ্র জীব মাত্র! 



      বেশ কিছু টাকা জমিয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরল রাজু। বাপ মায়ের গর্বে ছাতি চওড়া হয়ে গেল। ছেলে লায়েক হয়ে শহর থেকে টাকা কামিয় এনেছে।রাজু দামি প্যান্ট শার্ট পরে সবার নাম করে জিনিস নিয়ে  ময়নাদের বাড়িতে গেল। ময়নার মা তো খুশিতে আটখানা গ্রামের ছেলের এমন উন্নতি। ওদের অবস্থাও তো ভালো না। বিয়ে দিতে গেলে কত খরচ। কিন্তু রাজু তো কিছু নেবে না শুধু ময়না কে বিয়ে করবে। তাই রাজুকে মানা করার কারণই নেই।সকলে খুশি গাঁয়ের দোকান থেকে মিষ্টি আনানো হল কত গল্প করল সকলে।



        ওদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গ্রামের খেতে এসে বসল দুজন। ময়না আর রাজু। যেমন বসত খেলাধুলোর দিন গুলোতে।রাজুর মনে অনেক শান্তি। ময়না ওর পাশে বসে পেয়ারা খাচ্ছিল।ওর হাত থেকে ও'র আধ খাওয়া পেয়ারাটা নিয়ে এক কামড় দিয়ে খেতের জমিতে চিৎ হয়ে শুল রাজু । ময়না জিজ্ঞাস করল ..."শহরে তুই কি করিস রাজু? "
..."বড় চাকরি। "
..."সোজা পথে এত কম সময়ে এত টাকা রোজগার করা যায় না। কি করে তুই এত টাকা করলি তা আমি জানি। "বলে ময়না মুখ ঘুরিয়ে নিল।রাজু রেগে গেল।সোজা হয়ে উঠে বসল টানটান হয়ে..."তুই বেশী বুঝিস। "ময়না শ্বাস ছেড়ে বলে ..."তোর শার্টের গন্ধ শুঁকে বুঝেছি।তুই আর সেই রাজু নেই। দুর্গন্ধ ঢাকার জন্য তুই সুগন্ধি লাগিয়েছিস। তোর চেখে সেই সরলতা নেই। তুই চোর রাজু ।তোর চোখে মুখে সব ধরা পড়ে গেছে।তুই সেই রাজু নস যাকে আমি ভালবাসিতাম । যদি আবার আমার চেনা রাজু হতে পারিস তখন আমার কাছে আসিস। রাজু আমি গরিবের মেয়ে।কলমি শাক সেদ্ধ করে খেতে পারব। আমার একটাও সোনার গয়না চাই না। আমার বাপের গুড়ের ব্যাবসা চালাব বা কোনও সৎ পাত্রকে হয়ত বিয়েও করব কিন্তু তোর টাকায় জীবন কাটাব না তুই নষ্ট হয়ে গেছিস।"বলে উঠে দাঁড়াল ময়না।রাজু উত্তেজিত হয়ে যায়। বলে ..."খিদে পেটে অত বড় বড় কথা বলতে নেই ময়না। পারবি না ওভাবে থাকতে।বলা সহজ পেটে যখন টান পরবে সব সৎ অসৎ এক হয়ে যাবে।  "ময়না শান্ত ভাবে বললো ..."তবে সেদিন ঐ জন্তু গুলোর থেকে আমায় বাঁচালি কেন। ওরা যা অন্যায় করে ছিল তুইও তাই করছিস। তোর সঙ্গে ঐ জন্তু গুলোর কোনও তফাত নেই। " বলে ঝড়ের বেগে ওখান থেকে চলে গেল ময়না। 




      বুক ভরা চাপ  আর বোঝা নিয়ে  রাজু ঘরে ফিরে এল। ঘরে এসে দেখে স্কুলের শ্যমল মাস্টার এসেছে। মা গর্ব করে বলছে ..."মাস্টার মশাই আপনারই দান। আপনি পড়িয়ে লিখিয়ে রাজুকে লায়েক করেছেন। কত বড় চাকরি করে আমার রাজু। কত গুণ থাকলে এত টাকা রোজগার করে মানুষ। "রাজু শুনছিল। যত শুনছিল তত কষ্টটা দলা পাকিয়ে আসছিল বুকের ভিতর।খাটে শুয়ে চোখ তুলে দেখল জানলার দিকে।মাঠে একটা গরুর পিঠে শালিক বসে আছে। গরু হাঁটছে শালিক গরুর পিঠে চড়ে এগোচ্ছে ।খানিক পরে শালিকটা উড়ে পালাল চলে গেল ও'র ঝাঁকে। ফিরে গেল নিজ বাসায়। রাজু খাটে শুয়ে চোখ বুজল। ও গ্রামের ছেলে। মাটির সোঁদা গন্ধে ওর প্রাণ ভরে যায়। ও' চাষার ছেলে ও'র রক্তে চাষ বাস। পড়াশোনা শিখেছে ।ও'র বাবা যে সব ভুল করেছে ও করবে না। বিজ্ঞানের পথ ধরে চাষ করবে। ঐ জমিতেই ভালো ফলন হবে। লাভ হবে ।পরিশ্রম করবে। কম রোজগার হবে ভরপেট হয়ত খেতে পারবে না কিন্তু গ্রমের মাটি কোনও দিন ও'র শরীর ও'র আত্মাকে মলিন হতে দেবে না।বুক ভরে বাইরের সতেজ বাতাস ভরে নিল ফুসফুসে। বেশ হালকা লাগছে এতদিন কোথাও যেন জমে ছিল একটা অজানা বোঝা আজ যেন সরে গেল সেই বোঝাটা। চোখের সামনে ভেসে এল ময়নার মুখটা বুকে ছেয়ে গেল ভাললাগা ভালবাসা আর শান্তির একটা হালকা আবরণ।©Pryamboda priya 
অনুভূতির আসর-Anuvutir asor ফেসবুক পেজ 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন