Translate

শনিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৮

যখন_দূরে গেলে*

#ক্ষণিকের_দূরত্ব
#রচনায়#রিমা_বিশ্বাস( প্রিয়ম্বদা_প্রিয়া)
         আয়ুষীর কলেজের চিত্ররূপের উপর ক্রাশ।ওর কানের পাশের লম্বা জুলফি, ওর চুলের কায়দা, ওর পেটানো চেহারা ভীষণ আকর্ষণ করে আয়ুষীকে। যখনই চিত্ররূপ ওর সামনে আসে আয়ুষী এক ফাঁকে ঠিক দেখে নেয় ওকে।ওর বন্ধুরা সবাই জানে আয়ুষী পছন্দ করে চিত্ররূপকে।একদিন ক্লাসে অরুন্ধুতী বলল..."চিত্ররূপ তোর কথা জিগ্যেস করছিল।"কথাটা শোনামাত্র ওর হার্টবিট বেড়ে গেল ও উত্তেজিত ভাবে বলে ..."কি জিগ্যেস করছিল?"অরুন্ধুতী সামনের দিকে তাকিয়ে ওকে চাপা স্বরে বলল ..."ক্লাসের শেষে বলব ম্যাম দেখলে ঝাড় খাব।"আয়ুষীর আর ম্যামের 'মিরর ইমেজ' এর ক্লাসের কিছুই মস্তিষ্ক গোচর হল না।মনে হল কখন ক্লাস শেষ হবে আর ও অরুন্ধুতীর কথা শুনবে। ম্যামের লেকচার আজ বড়ই বোরিং  হচ্ওছিলর এবং সারাক্ষণ ক্লাস শেষ হওয়ার অপেক্ষায় বসে রইল।বেল পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আয়ুষী বেশ উৎফুল্ল হয়ে উঠল।ম্যাম বেরিয়ে যেতেই ও অরুন্ধুতীকে জিগ্যেস করল..."কি বলছিল চিত্ররূপ?"অরুন্ধুতী বলল ..."তোর নাম জানতে চাইছিল?''আয়ুশী আগ্রহী ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে রইল।অরুন্ধুতী আর কিছু বলছে না দেখে আয়ুষী আবার জিগ্যেস করল ..."ব্যাস আর কিছু না।"অরুন্ধুতী বলল ..."না।"শুনে একটু নীরাশই হল মেয়েটা।ফর্সা রোগা পাতলা চেহারার আয়ুশীর জীবনে প্রথম কাউকে এতটা ভালো লেগেছে।স্কুল জীবনের ওর পছন্দের হিরো ছিল স্পাইডার ম্যান রাত্রে বেলা স্পাইডার ম্যানকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছে।বর্তমানে স্পাইডার ম্যান ওর মানসপট থেকে ফিকে হয়েগেছে এখন চিত্ররূপ বর্ণময় হয়ে ওর স্বপ্ন রাজ্যে বিচরণ করে।কলেজ থেকে বেরবার সময় একদিন অরুন্ধুতী বলল ..."চিত্ররূপ তোর জন্য কলেজের বাইরে অপেক্ষা করছে।"আয়ুষী ওর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে ..."তুই চল আমার সঙ্গে।"অরুন্ধুতী বলে ..."অসম্ভব তোদের মাঝে আমি নেই তুই একা যা।"আয়ুষী বেশ উত্তেজিত হয়ে ওর সঙ্গে দেখা করতে গেল।হৃদস্পন্দনের গতিবেগও বৃদ্ধি পেয়েছে। চিত্ররূপ ওকে দেখে মিষ্টি করে হাসল।খানিক্ষণ দুজনেই নীরব।তারপর চিত্ররূপ বলল ...."তোমাকে আমার বেশ ভালো লাগে বন্ধুত্বের আগেও আমি তোমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাই।"বলে আবার চিত্ররূপ ওর দিকে তাকিয়ে রইল। আয়ুষী লাজুক ভাবে বলল ..."আই অলসো লাইক ইউ।"ফিজিক্সের আয়ুষীর সঙ্গে কেমিস্ট্রির চিত্ররূপের রাসায়নটা এভাবেই শুরু হয়।চিত্ররূপ নিজে আয়ুষীকে প্রপোজ করবে ভাবলেই বিষয়টা বেশ উপভোগ করে আয়ুষী।চিত্ররূপ ওর ব্যাপারে বেশীই পজেসিভ আয়ুষী তা লক্ষ্য করেছে এটা ভেবে একটু বেশীই ভালো লাগে ওর।চিত্ররূপের প্রত্যাশাও ওর প্রতি খুব বেশী।আয়ুষীকে ফোনে যদি কোনও সময় না পায় চিত্ররূপ সঙ্গে সঙ্গে রেগে যায় তাই আয়ুষী সব সময় তটস্থ থাকে।সেদিন ফোনটা সাইলেন্ট ছিল আয়ুষী মন দিয়ে প্র্যাকটিকাল খাতায় নোট লিখছিল চিত্ররূপ সাত বার ফোন করেও ওকে পায় না।রাত্রে বেলায় শোবার সময় আয়ুষী মোবাইল চেক করে দেখে সাতটা মিসড কল।সঙ্গে সঙ্গে ও চিত্ররূপকে কল ব্যাক করে কিন্তু চিত্ররূপ ফোন ধরে না আয়ুষী  অনেক গুলো ম্যাসেজ পাঠায় ও তারও উত্তর দেয় না আয়ুষী দেখতে পাচ্ছে চিত্ররূপ অন লাইনে তবু ওকে রিপলাই করছে না।পরের দিন কলেজে গিয়েও চিত্ররূপ ওর সঙ্গে কথা বলল না। আয়ুষী মন খারাপ করে ক্যন্টিনে বসে।অরুন্ধুতী ওকে বলে ..."তুই চিত্ররূপকে এত ভয় পাস কেন? তুই  কি ইচ্ছে করে ওর ফোন ধরিস নি? ও কেন এত ওভার রিয়াক্ট করছে?"আয়ুষী তো চিত্ররূপের বিরুদ্ধে কিছুই শুনতে নারাজ ও বলল ..."ওর স্বভাবটাই ঐ রকম ছোট খাটো ব্যাপারে অভিমান হয়ে যায়।"অরুন্ধুতী খুব বিরক্ত হয় ..."অসহ্য... আমি হলে এমন ছেলের সঙ্গে জীবনে কথা বলতাম না।"সারা দিন চিত্ররূপ ওর সঙ্গে কথা বলল না আয়ুষী অনেক চেষ্টা করেও ব্যার্থ।অরুন্ধতীর ওকে দেখে খুব রাগ হয় ও বার বার বোঝায় ..."চিত্ররূপ মোটেও তোকে ভালোবাসে না।যদি ভালোবাসত তাহলে সামান্য কারণে এত মেজাজ করত না।"আয়ুষী কিছুই শুনতে চায় না ও শুধু চিত্ররূপের সঙ্গে কথা বলতে চায়। বাড়ি ফিরে আবার ওকে ফোন করল।চিত্ররূপ ফোন ধরায় আয়ুষী উৎফুল্ল হয়ে বলে..."রাগ কমল।"চিত্ররূপ ভারি গলায় বলে ..."এতবার ফোন করতে হয় কেন তোমাকে? "মিষ্টি করে আয়ুষী জানায় ..."আর এরকম হবে না।কিন্তু তুমি আমার সঙ্গে কথা বন্ধ করলে আমি পড়ায় মন দিতে পারি না। প্লীজ আমার সঙ্গে এমন কর না"              চিত্ররূপের মান ভঙ্গ হওয়ার পর আয়ুষী বেশ খোশ মেজাজে আছে।একদিন ক্লাসে  অ্যাটোমিক ফিজিক্সের বইটা মুখের সামনে খুলে বসে আছে যদিও পড়ার নামে বন্ধুরা বেঞ্চের এদিক ওদিক বসে আড্ডাই দিচ্ছিল।জয়দেব হঠাৎ ওর বইটা হাতে নিয়ে বলল ..."এই বইটা কবে থেকে খুঁজছিলাম।কাল ফেরত দিয়ে দেব।"আয়ুষী বলল ..."কোনও ভাবেই দিতে পারব না চিত্র আমার কাছে চেয়েছে।"জয়দেব বলল..."আজ চিত্ররূপ কলেজেই আসেনি।কাল আমি কলেজে বইটা নিয়ে আসব তুই তখন ওকে দিয়ে দিস।''আয়ুষী ওর কথায় রাজি হয়ে যায়।জয়দেব বরাবর ওকে না না ভাবে নোট দিয়ে সাহায্য করে তাই ও আর জয়দেবকে মানা করতে পারল না।বাড়ি ফিরে দেখে সবাই সিনেমা যাওয়ার প্ল্যান করেছে।আয়ুষী সঙ্গে সঙ্গে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ল।বেশ রোম্যান্টিক মুভি। সিনেমা দেখতে দেখতে আয়ুষীর বার বার মনে পড়ল চিত্ররূপের কথা।হিরো যখনই হিরোইনকে না না ভাবে খুশি করার চেষ্টা করছিল আয়ুষীর মনে হচ্ছিল যদি চিত্ররূপ ঐ রকম করে ওকে এতটা গুরুত্ব দিত।বাড়িতে এসে নিজের ফাঁকা ঘরে খুব ইচ্ছে হল ওর সঙ্গে ফোনে একটু  কথা বলার।ও সমানে চিত্ররূপকে ফোন করে গেল কিন্তু চিত্ররূপ ফোন ধরল না।খুব রাগ হল আয়ুষীর ভাবল ও রিংব্যাক করলে কিছুতেই ফোন ধরব না।মুখ ভার করে ফোনটা হাতে নিয়ে বক্স জানলার ভিতরে ঢুকে বসল।রাত্রে বেলার সময় চারিদিক নিস্তব্ধ আকাশের মেঘের মাঝে আঁধখানা চাঁদটা মাঝে মধ্যে উঁকি মেরে আবার মেঘের মধ্যে লুকিয়ে যাচ্ছে।এমন একটা প্রেমময় বাতাবরণে ফোন করল চিত্ররূপ।আয়ুষী হাজার চেষ্টা করেও ওর ফোনটা রিসিভ না করে থাকতে  পাড়ল না..."কতবার ফোন করলাম ধরলে না কেন? "
..."শুনতে পাইনি।"
..."আমি না ধরলে রাগ কর কেন? "
..."তুমি তো সব সময় ফোন নিয়ে ঘুরে বেড়াও তাই ফোন না ধরলে রাগ হয়।"আয়ুষী খুব আল্হাদ করে বলল ..."আজ একটা সিনেমা দেখলাম।খুব ভালো লাগল সিনেমার হিরোটা ওর হিরোইনকে কি ভালোবাসত।তুমি কখনও আমাকে অত গুরুত্ব দাও না।"চিত্ররূপ নীরস ভাবে বলল ..."ওগুলো মুভিতেই হয় রিয়েল লাইফে হয় না।"
            পরদিন কলেজে ঢুকেই চিত্ররূপ বলল ..."অ্যাটোমিক ফিজিক্সের বই কোথায়? "আয়ুষী বলে ..."জয়দেব আসুক ওর কাছে আছে।"চিত্ররূপ বিরক্ত হয়ে বলে..."আমি চেয়েছিলাম তুমি জয়দেবকে দিলে কেন? "আয়ুষী খুব চিন্তায় পড়ে যায় জয়দেব না এলে আজ চিত্ররূপকে ক্ষান্ত করা মুশকিল।আয়ুষী ব্যাকুল হয়ে জয়দেবের অপেক্ষা করতে লাগল কিন্তু জয়দেব এল না। আয়ুষী মনে মনে জয়দেবকে দোষারোপ করল কথার দাম নেই এদের উপর বিশ্বাস করলে মুশকিলেই পড়তে হয়।কাঁচু মাচু হয়ে চিত্ররূপকে বলে ..."সরি,চিত্র বইটা আমি কাল ঠিক এনে দেব।"ব্যাস চিত্ররূপ সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরিত হয়ে উঠল ..."তুমি আমার সঙ্গে কোনও কথা বলবে না আমার তোমার এই দায়িত্ব জ্ঞানহীনতা একদম পছন্দ নয়।"বলেই ও খুব রূঢ় ভাবে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।অরুন্ধুতী সব খেয়াল করেছে ও বলে..."তুই কি ওর দাস যে ও যা বলবে তা না করলেই ও মেজাজ দেখাবে আমি বুঝি না এটা তোর কেমন ভালোবাসা।"আজকের ব্যবহারে আয়ুষীও খুব আহত হয়।রোজ রোজ চিত্ররূপকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে কোথায় যেন ওর নিজের ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে আগে কখনও কারও ভালোলাগা বা ভালো না লাগা নিয়ে ও এতটা ভাবেনি।তাই ভাবল হয়ত ওর সঙ্গে দূরত্ব রাখাই ঠিক চিত্ররূপকে ও ভালোবাসে কিন্তু চিত্ররূপ ওকে মোটেও ভালোবাসে না।আয়ুষী ধীরে ধীরে নিজেকে ওর কাছ থেকে সরিয়ে নিল।চিত্ররূপকে ও ফোন করে না চিত্ররূপও কোনও সময় ওকে ফোন করে না।কলেজে দেখা হলে দুজনে অচেনা মানুষের মতনই আচরণ করে।
          একদিন কলেজে বাবাই আর জয়দেবের মাঝে সামান্য একটা বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কি বাঁধে।আই.পি.এল-এর দুটো টিম নিয়ে কোন টিম বেস্ট সেই বিষয় যে যার অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে শুরু হয় তর্ক এবং তর্ক পরিণত হয় ঝগড়ায়।দুজনে উত্তেজিত হয়ে একে অপরকে ধাক্কা ধাক্কি শুরু করেছে।আয়ুষী ওদের মাঝে মধ্যস্থতা করতে যায় কিন্তু অসফল হয়। আয়ুষী জয়দেবকে কিছু বলতে যাবে জয়দেব ওকে অসতর্কবসত ধাক্কা দেয় আয়ুষী পড়ে গিয়ে ওর মাথাটা বেঞ্চের কোণায় লেগে কেটে সঙ্গে সঙ্গে রক্ত পড়তে থাকে।জয়দেব ভয় পেয়ে ছুট্টে যায় আয়ুশীর কাছে ওর মাথা দিয়ে তখনও রক্ত ঝড়ে পড়ছে।সব ছেলে মেয়েরা ঘিরে ধরেছে জয়দেব জলের বোতল থেকে জল নিয়ে রুমাল ভিজিয়ে ওর ক্ষত স্থানে বার বার  ধরছে ভয়ে অনুতাপে ওর মুখ চোখ শুকিয়ে গেছে।ভিড়ের মাঝে আয়ুষী দেখে চিত্ররূপ।হন্ত দন্ত হয়ে এসে ও আয়ুষীকে বলে ..."ঠিক আছ তুমি।"আয়ুষী কিছু বলার পরিস্থিতিতে নেই।চিত্ররূপ সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি বুক করে ওকে সোজা ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে যায়। ডাক্তারবাবু ড্রেসিং করে দিলেন ক্ষত বেশী গভীর না হওয়ায় স্টীচে প্রয়োজন হয়নি।আয়ুষী ওর আচরনে একটু অবাকই হয়।পরদিন কলেজে ঢুকতেই চিত্ররূপ ছুটে এসে বলে..."আজ কেন কলেজ এলে? কাল এতটা চোট লেগেছিল আজ রেস্ট নেওয়া উচিত ছিল।"আয়ুষী নির্বাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে।চিত্ররূপ আর কোনও কথা বলল না মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইল।আয়ুষী এগিয়ে গেল চিত্ররূপ ওর দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে।আয়ুষী দোতলা ওঠার জন্য সিঁড়ির দিকে এগল।সিঁড়িতে জয়দেবের সঙ্গে দেখা।ওকে দেখে জয়দেব অনুতপ্ত হয়ে বলল ..."আমার জন্য তোর এমন চোট লাগল।আমায় মাফ করে দে প্লীজ।"আয়ুষী হেসে বলে..."আমি জানি। তুই কি ইচ্ছে করে করেছিস ওটা একটা অ্যকসিডেন্ট ছিল।"চিত্ররূপ দ্রুত ওর কাছে আসে.."জয়দেব তোমায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল তাও ওকে হেসে হেসে বলছ ঠিকাছে কোনও অসুবিধে নেই।আমাকে একবারও বললে না চিত্র ঠিকাছে আবার আগের মতন হয়ে যাই চল।"জয়দেব মুচকে হেসে চলে গেল।আয়ুষী চুপ চাপ দাঁড়িয়ে চিত্ররূপ বলল ..."তুমি আমার সঙ্গে কথা বলতে না আমার খুব কষ্ট হত।"আয়ুষী আস্তে করে বলল ..."কখনও বল নি কেন? "
..."এখন তো বলছি।তোমার কপালে চোট দেখে আমি আর নিজেকে আটকাতে পারিনি।"আয়ুষী হাসল।চিত্ররূপ ওর মাথার ব্যন্ডেজে হাত দিয়ে বলল ..."ব্যথা।"আয়ুষী বলল ..."তুমি এত রুক্ষ ব্যবহার করলে আমি ব্যাথা পাই।"চিত্ররূপ বলল..."তুমি দূরে চলে যাওয়ার পর বুঝেছি তুমি আমার কাছে কত গুরুত্বপূর্ণ আমাকে তোমার মতন কেউ বোঝে না।আই লাভ ইউ আয়ুষী।স্বপ্নেও তোমাকে ব্যাথা দেওয়ার কথা ভাবব না।"©Pryamboda priya 
অনুভূতির আসর Anuvutir asor 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন