Translate

মঙ্গলবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৮

প্রেমে পড় না ওঠা*

#প্রেমে_পড়া_না_ওঠা
#রচনায় #প্রিয়ম্বদাপ্রিয়া
         কলেজেরর তৃষাকে সেই স্কুল থেকে ভালোলাগে শান্তনুর। বরাবরই ও একটু চাপা স্বভাবের ছেলে তাই  মনে অনেক আবেগ থাকলেও তা যথাসময়ে, যথাস্থানে ব্যক্ত করতে পারে না। স্কুলেও তৃষা সব সময় বন্ধু বান্ধুবদের মধ্যে ঘিরে  থাকত শান্তনু তেমন ভাবে কোনো দিনই ওর খুব কাছে আসার সুযোগ পায়নি।যদিও ও ওর বন্ধুরদের মধ্যেই একজন  ছিল কিন্তু কোনও দিনই সেই  বিশেষ বন্ধুটি আর  হয়ে উঠতে পারেনি। বিশেষ হওয়ার  চেষ্টাটুকুও করেনি। মনে একটাই ভয় ছিল বেশী বাড়া বাড়ি করতে গিয়ে শেষ মেষ বন্ধুত্বটাই নষ্ট হয়ে না যায়।এখন তো স্কুল পেরিয়ে কলেজ হল আর তৃষাও এল ঐ একই কলেজে।কলেজ করিডোর পেরতে শান্তনুর  চোখ পড়ল ক্লাস রুমে। জিওগ্রাফি ক্লাস চলছে তৃষা ফার্স্ট বেঞ্চে বসে মন দিয়ে বোর্ডে তাকিয়ে রয়েছে। পাশেই শান্তনুর  ম্যাথসের ছাত্র শান্তনু ওদের ক্লাসের পড়ায় মন দিল।
           





       ক্যন্টিনে ঢুকতেই  অরুপ ওর গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে ওর সমস্যার কথা বলতে শুরু করল ..."আর বলিস না। রোজ রোজ ঝগড়া হয় কাল তো একটা নোট নিয়ে ঝামেলা হল কেন আমি ওকে আগে না দিয়ে আত্রৈকে দিয়েছি। তুই ভালো আছিস বস সিঙ্গল আছিস।"সেই সময় ওদের মাঝে যোগ দিল তৃষা ..."তোরা কি বকছিলি রে।"বলে তৃষা শান্তনুকে বলল ..."তুই ম্যাথসে এত ভালো আমায় একটু হেল্প কর না। জানিস তো পাসে ম্যাথস নিয়েছি।"শান্তনু আগ্রহের সঙ্গে বললো..."বল না কোথায় আটকাচ্ছে।"
..."বলব। দাঁড়া.. "তৃষা ব্যাগ থেকে খাতা বের করল।টেবিলের উপর রেখে শান্তনুর দিকে তাকিয়ে দেখাল এই গুলো দেখ তো।শান্তনুও মন দিল তৃষার খাতায়।






        দুজনের বন্ধুত্ব অনেক দিনের তাই শান্তনু অনেক চাইলেও ঐ বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার ভয়ে কিছুই বলতে পারে না। এদিকে কদিন ধরে সৌরভকে ওর সঙ্গে বেশীর ভাগ সময় কাটাতে দেখে মনে মনে বেশ রাগও হয়। শান্তনু খেয়াল করেছে সৌরভ যেন বেশী ওর কাছে ঘেঁষার চেষ্টা করে। ক্লাস চলাকালীন ওর ডাইরির দিকেই ঝুঁকে কি খোঁজে ভগবান জানে। একদিন সাহস জুগিয়ে ভাবল তৃষাকে ওর মনের কথা  জানাবে।তারপর যা হয় দেখা যাবে। সকাল থেকেই সেদিন মনে খুব উত্তেজনা। বাথরুমের শাওয়ারের নীচে অন্যদিনের থেকে আজ একটু বেশী সময়ই নিল।আলমারি খুলে ফেভারিট ব্লু চেকের শার্ট সঙ্গে ব্রাউন জিনসটা বের করল। আয়নার সামনে রোলার দিয়ে চুল আঁচড়াতে মগ্ন শান্তনুর দিকে মা গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে ও হঠাৎ খেয়াল করতেই লজ্জা পেয়ে গেল..."কি হল ও ভাবে দেখছ কেন? "মা মুখ চেপে হাসে ..."এত সাজছিস যে !কাউকে পছন্দ হল নাকি।"শান্তনু মায়ের কথায়  আরো লজ্জা পেল।প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বললো ..."খেতে দাও তো।আমি এখুনি বেরব। আজকাল সবাই কলেজে ভালো ভাবে রেডি হয়ে যায়। "বেরবার আগে চুপিসারে ডিওটাও বেশ করে স্প্রে করে নিল।




        কলেজে ঢুকেই ও খুঁজল তৃষাকে কিন্তু তৃষার দেখা মিলল না।কয়েকটা ক্লাস করার পর বুঝল ওর সকল পরিকল্পনায় জল ঢেলে তৃষা কলেজ কামাই করে বসেছে। কলেজ ক্যাম্পাসে বন্ধুদের যুগল দেখে  মনটা কেমন  ফাঁকা লাগে।মনটা চায় শুধু তৃষাকে। 
          






           তৃষাকে কিছু বলা হল না ঠিকই কিন্তু  সকল ঢিলেমি আর  অলস্যতার দিন পেরিয়ে চলে এল পরীক্ষার দিন। সকল ছাত্র ছাত্রীদের মত শান্তনুও আসন্ন পরীক্ষার জন্য পড়ায় মনোনিবেশ করেছে। এরই মধ্যে একদিন তৃষা বাড়িতে হাজির..."শান্তনু আমি ম্যাথসের কয়েকটা জায়গায় আটকেছি প্লিজ হেল্প কর।"অনেক গুলো ম্যাথসের প্রবলেম নিয়ে এসেছে তৃষা।শান্তনু মনোযোগ দিয়ে ওকে বোঝাতে শুরু করল। তৃষা যখন খাতা খুলে ওর বোঝান অঙ্ক করতে মন দিল তখন শান্তনুর সকল মন সংযোগ কেড়ে নিল তৃষার খোলা চুল ওর কোমল ঠোঁট ওর সুন্দর মুখ। তৃষা ওর দিকে এক ঝলক তাকাতে শান্তনু তৎক্ষণাৎ ওর চোখটা সরিয়ে নিল। তৃষা এক গাল হেসে বলল ..."একদম বুঝে গেছি। থ্যাঙ্ক ইউ। "ও যখন চলে যাবে তখনও শান্তনু ভাবল কিছু বলবে কিন্তু বলতে পারল না। 





         ফার্স্ট ইয়ারে পরীক্ষার শেষ দিন ।পরীক্ষা দিয়ে সব বন্ধুরা ফাঁকা ক্লাস রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে শান্তনুর খুব একঘেয়ে লাগছিল।উঠে যাবে তখনই তৃষা ঢুকল ওদের ক্লাসে।গোলাপী সালোয়ারে মিষ্টি তৃষাকে ওর স্ট্রবেরী আইসক্রিমের মতন লাগছিল ও বলেই ফেলল ..."লুকিং লাইক আ স্ট্রবেরী আইসক্রিম। "তৃষা ওর পাশে এসে বসল। ও থাকলে সব  সময় চারিপাশটা অন্যরকম লাগে শান্তনুর। গল্পের মাঝে দিপান্বীতা বলে বসল ..."তোদের চোখে প্রেমটা কি বল? "এক এক মনীষী এক এক বক্তব্য পেশ করলেন ..."প্রেম একটা ফিলিংস। জোর করে হয় না কখনও প্রথম দেখায় হয় মানে যাকে বলে লাভ ইন ফার্স্ট সাইট। "স্নেহা বলল ..."কখনও পুরো জীবন পেরিয়ে গেলেও হয় না। "এরই মাঝে তৃষাকে জিজ্ঞাস করল শান্তনু ..."তোর কেমন ছেলে পছন্দ। "তৃষা ঠোঁট উল্টে  বলল ..."আমি কখনও ভাবিনি। "সবাই মিলে ধরল ..."আজ তৃষাকে দিয়েই শুরু হোক বল একটা ছেলের মধ্যে তোর কি রকম গুন চাই। "তৃষা বড়ই ঝামেলায় পড়ে ..."আমি কেন তোরা বল না আমি ওসব ভাবিনি। "শান্তনুর দিকে তাকিয়ে তৃষা বলে ..."তুই বল তোর কেমন মেয়ে পছন্দ। "শান্তনু মুখ ফসকে বলে ফেলে ..."একদম তোর মতো। "সবাই এক সুরে ..."হুম..."করে ওঠে। দিপান্বীতা বলে ..."কবে থেকে শুনি আমরা তো টের পাই নি। "তৃষা পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন দেখে দ্বিধায় পড়ে সকলে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে ও কি করবে বুঝে উঠতে না পেরে এক লাফে বেঞ্চ থেকে নেমে ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে যায়। শান্তনু ভাবে এতদিন বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার ভয়ে ও কিছু বলেনি তবে আজ কেন সকলের সামনে বলে ফেলল। শান্তনুও ওর পিছন ছুটল ..."তৃষা শোন। "তৃষা অসন্তুষ্ট হয়ে ওর দিকে ফিরে তাকাল। শান্তনু বলে ..."ও ভাবে উঠে গেলি কেন? "
 ..."আমরা দুজন সেই স্কুল থেকে বন্ধু তুই হঠাৎ সবার সামনে আমায় এভাবে বললি কেন?"
..."এটা পুরোপুরি আমার মনের কথা এতে যদি তোর খারাপ লাগে তাহলে সরি। আমি আবার আগের মত বন্ধুত্বটাই রাখতে চাইব। "তৃষা কোনও কথা না বললেই চলে গেল।





       শান্তনুর পুরো দিনটা আজ খারাপ গেল একবার ভাবল কেন বলতে গেল আবার ভাবল ভালোই হয়েছে একদিন বলতেই হত ওর যদি কোনও ফিলিংস না থাকে তাহলে এই বিষয়ে না ভাবাই ভালো। একদিন কলেজ লাইব্রেরীর সামনে দুজনের দেখা শান্তনু একটু দ্বিধায় তাকাল তৃষা হালকা হেসে বলল ..."পড়াশোনা কেমন চলছে তোর? "
..."ভালোই। "
..."আমার মনে হয় তোর এখন পুরোপুরি পড়ায় কনসেনট্রেট করা উচিত। "শান্তনু ভ্রূ কুঁচকে বলে ..."কেন? তুই কি করে ভাবলি আমার মন পড়ায় নেই। সেদিন তোকে আমার ভালোলাগে বলেছিলাম বলে ভাবছিস।সেটা পুরো আমার ব্যাপার তুই টেনশন নিস না। "কথা গুলো শুনে খুব রাগ হয় তৃষার এই তো বলেছিল বন্ধুত্ব রাখতে চায় বন্ধু হিসাবে যদি সৎউপদেশ দেয় তাতে অত কথার কি আছে ও শুধু বলল ..."তুই আমার অনেক পুরনো বন্ধু তাই ভাবলাম তোকে বলি সামনের সেকেন্ড ইয়ারের পরীক্ষায় ভালো মার্কস আনার চেষ্টা কর। "তৃষা যতই পড়াশোনার কথা বলছে অকারণেই শান্তনু রেগে যাচ্ছে। যেহেতু ওর মনের কথা  তৃষা জেনে গেছে তাই কেন যেন ওর মনে হচ্ছে তৃষা ওকে বোঝাবার চেষ্টা করছে তৃষার জন্য ওর ফিলিংসটা ঠিক নয়। ও রেগে গিয়ে বলে ..."তুই নিজের পড়ায় মন দে না।আমারটা আমি বুঝে নেব। ম্যাথসের জন্য তো আমার সাহায্যই নিস। "ওর কথার ঝালে তৃষারও মেজাজটা গরম হল ..."আর তোর সাহায্য নেব না এব্যাপারে নিশ্চিন্তে থাকিস। "বলে তৃষাও গট মট করে চলে গেল। ও চলে যাওয়ার পর শান্তনুর মনে হল অকারণেই বেকার কথা গুলো বললো। 







        বেশ কিছুদিন হল দুজনের কথা নেই।তৃষাও ওর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে না বরং একটু এড়িয়েই যায়। শান্তনু ইদানীং ওরই ক্লাসের দিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব শুরু করেছে। হঠাৎই ওর সুন্দর মনের কোণায় ইগো নামক আগাছা জন্মেছে যার জন্য  শান্তনুর মনে হয় ও তৃষাকে দেখাবে ওরও গার্লফ্রেন্ড আছে। ও মোটেই তৃষার অনুরাগী নয়। দিয়ার সঙ্গে যখনই সময় কাটায় শান্তনুর চোখ সব সময় খোঁজে তৃষাকে। তৃষা কি ওকে দেখছে এই ভাবনার জন্যই যেন দিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব। 






          তৃষাও ওদের দেখেছে কিন্তু কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি ওর কাছ থেকে। এদিকে কলেজে পড়ার চাপ রোজই বাড়ছে । সকলে নিজের ভবিষ্যত জীবনের পরিকল্পনায় ব্যস্ত। পরীক্ষার শেষ।কিন্তু শান্তনুর  রেজাল্ট আশানুরুপ হল না। ম্যাথসের থার্ড পেপারটা খুবই খারাপ এদিকে পাশের বিষয়ের ফিজিক্সের মার্কস দেখে নিজেরই মাথা ঘুরছে। মন ভার করে লাইব্রেরীর রুমে মাথায় হাত দিয়ে বসে। হাতে মাত্র একটা বছর প্রচুর পরিশ্রম করলে তবে যদি মনঃপূত ফল পাওয়া যায়। আগে পড়ার সময় মনে চাপ থাকত না কিন্তু এখন তো বিগত দিনের পরীক্ষার দরিদ্র নম্বর গুলো মাথার ভিতর নাচা নাচি শুরু করেছে। প্রিয় বিষয় অঙ্ক যে এভাবে ধোকা দেবে তা ভাবে নি শান্তনু হঠাৎই যেন নিজেকে খুব পিছিয়ে পড়া প্রজাতি মনে হচ্ছে। চিন্তিত শান্তনু চোখ মেলে দেখে সামনে তৃষা দাঁড়িয়ে। পরনে হালকা তুঁতে রঙের সালোয়ার কাঁধে ব্যাগ।ওর দিকে তাকিয়ে। শান্তনু কি বলবে বুঝে উঠতে পারল না তৃষা বলল ..."কি করলি শান্তনু তোর উপর সকলের এত প্রত্যাশা ছিল তুই সেই স্কুল থেকে অঙ্কে তুখোড় ছিলি এত খারাপ করলি কি করে। "শানতনু মুচকে হেসে বলল ..."তুই আমার কাছে অঙ্ক করা ছেড়ে দিয়েছিস তাই। "তৃষাকে মুখ গোমড়া করে থাকতে দেখে শান্তনু বললো ..."দূর পাগল! আমি তো মজা করছিলাম তুই একদম ইয়ার্কি বুঝিস না! "তৃষা  বলল ..."প্রেমে পড়া ভালো শান্তনু কিন্তু এই প্রেমের জন্য জীবনে মুখ থুবড়ে পড়া ঠিক  নয়। কারও সঙ্গ যদি তোকে উঠতে সাহায্য করে তার জন্য আমার হাত সবসময় তোর দিকে বাড়িয়ে রাখব কিন্তু তোকে পিছিয়ে পড়তে দেখতে চাইব না। "শান্তনুর চোখে মুখে হতাশার ছায়া সরে গিয়ে উজ্জ্বল দুটো চোখে তৃষাকে জিজ্ঞেস করল..."তুই আমার জন্য ফিল করিস? আই মিন তোর জীবনে আমি ইমপরটেন্ট। "তৃষা বললো ..."আমরা বন্ধু ছিলাম থাকব। সেই হিসেবে তুই আমার কাছে ইমপরটেন্ট।"
শান্তনু মাথা নিচু করে রইল।তৃষা ওর কাঁধে হাত রেখে বললো ..."জীবন তো অনেক বড় শান্তনু কখন কি হয় আমরা কেউ জানি না। হয়ত এমন একদিন আসবে যেদিন তোর মনে হবে আমি তোর কাছে একটা ছেলেমানুষী ছিলাম মাত্র।"শান্তনু মাথা নেড়ে বললো ..."তা হবে না কোনো দিনও!"
তৃষা হাসল ..."আমি চাইব যেন এমনটাই হয়! "বলে তৃষা চলে গেল। শান্তনু চুপ চাপ বসে রইল বেঞ্চের এক পাশে। তৃষার মনের উপর তো কোনো জোর নেই শান্তনুর যেমন জোর নেই নিজের মনের উপর।সেকেন্ড ইয়ারের রেজাল্টটা মনে পড়তে মনে হল না এবার সময় এসেছে মনকে বাগে আনার। আর তৃষা নয় এবার শুধু শান্তনু। শান্তনু ভাববে শুধু নিজের কথা। আর তৃষা না হয় থাকুক মনের কোণে হালকা ভালো লাগা হয়ে সারা জীবনের ভালো বন্ধু হয়। 


©Pryamboda priya 
অনুভূতির আসর-Anuvutir asor 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন