Translate

শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৮

পুনরায় *


#পুনরায়
#রচনায় #(প্রিয়ম্বদাপ্রিয়া)
        ক্লাস ফোরের অঙ্ক দিদিমণি নবনীতা ব্ল্যাক বোর্ডে সরল বোঝাচ্ছেন।ছাত্র ছাত্রীরা সকলে ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে তাকিয়ে।নবনীতা যত্ন সহকারে ফার্স্ট,সেকেণ্ড,থার্ড ব্র্যাকেটের রহস্য উদ্ঘাটন করে চলেছে। লাস্ট বেঞ্চ থেকে হি হি খি খি আওয়াজ শুনে টেবিলে কাঠের ডাস্টার চাপড়ে চেঁচাল..."কি হয়েছে.. মুখে আঙুল দিয়ে বস।"পিছন বেঞ্চ থেকে ছোট্ট খাট্টো একটি মেয়ে এগিয়ে এল ..."দিদিমণি দীপমাল্য আমায় এই চিঠিটা দিয়েছে।"ওর ছোট্ট হাত থেকে দু ভাঁজ করা কাগজের টুকরটা খুলে দেখে ...ডেরা মৌটুসি আমি তোকে ভালাবাসি।তুই আমায় ভালাবাসিস।"প্রচণ্ড হাসি পেল অসাধারণ  বানানের প্রেম পত্রটা দেখে বিশেষত ইংরেজি শব্দ ডিয়ার এর বিকৃত রূপ ডেরা।ও কোনও রকমে হাসি সংবরণ করে চোখ পাকিয়ে বলল ..."দীপমাল্য.. বেঞ্চের উপর উঠে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাক।স্কুলে পড়তে এসে এই সব হচ্ছে।"দীপমাল্য টুকুস করে কান ধরে স্মার্টলি বেঞ্চের উপর উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল।ক্লাস ফোরের বছর আটের এই প্রেমিকটিকে দেখে খুব হাসি পাচ্ছিল নবনীতার।




      টিফিনের সময় টিচারস রুমে ঢুকে দেখে সকলে হাসি ঠাট্টা করছে। গায়ত্রী দিদিমণি মন দিয়ে রাজমা রুটি খাচ্ছেন। রেবা দিদিমণি ফোনে বরের সঙ্গে মিষ্টি প্রেমালাপে মগ্ন। আজকের ক্লাসের ঘটনাতে নবনীতারও মনে পড়ে গেল ওর ছোটবেলার কথা।তখন ক্লাস টু।ও আর রণজয় সব সময় এক সঙ্গে ঘুরত। এখনও নবনীতার পরিষ্কার মনে আছে রণজয়ের ফর্সা টুকটুকে গোলগাল চেহারাটা। একদিন রণজয় বলেছিল নবনীতা চল তুই আর আমি বিয়ে করে নি তাহলে আমরা সব সময় এক সঙ্গে থাকতে পারব। কেউ আলাদা করতে পারবে না। নবনীতাও এক মুহূর্ত দেরি না করে ওর প্রস্তাবে রাজি হয়ে ঘাড় নেড়ে বলেছিল ..."এখুনি বিয়ে করেনি চল।"ব্যস মিঞা বিবি রাজি তো ক্যায়া করেগা কাজি! দুজনে একে অপরের ওয়াটার বোতল দিয়ে মালা বদল  সেরে নিয়েছিল।আমাদের বিয়ে হয়েগেল বুঝলি বলেছিল রণজয়।এখন ভাবলে সত্যি হাসি পায়।রণজয় তো ক্লাস ফোরের পর স্কুল ছেড়ে চলে গিয়েছিল।তারপর আর দেখাই হয়নি ওর সঙ্গে। তবু স্মৃতিতে রয়েগেছে শৈশবের নরম দিন গুলোর কথা।
     



       বাড়ি ফেরার পথে আজ আবার ব্যঙ্কে যাওয়ার কথা।এই শনি রবি পর পর ব্যঙ্ক বন্ধ।ব্যঙ্কে ঢুকে ক্যাশ কাউন্টারে চেকটা জমা দিতে ক্যাশ কাউন্টারের অল্প বয়সী ছেলেটি নবনীতার মুখের দিকে দু বার তাকাল। তৃতীয় বার তাকাতে নবনীতার খুব বিরক্ত লাগল। ছেলেরা মুখের দিকে হাঁ করে তাকালে ওর খুব রাগ হয়।ও বলল ..."সই মিলছে না নাকি? "ছেলেটি মৃদু হেসে বলল ..."না না ঠিকাছে।"নবনীতা গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।বাড়িতে আজ আবার বড় মাসির আসার কথা। বড় মাসির মেয়ে তিন্নি আর ও একই বয়সী। তাই আজকে ওর মনটা বেশ চঞ্চল।কখন বাড়ি যাবে আর তিন্নির সঙ্গে আড্ডা জুড়বে সেই কথা ভাবছে ক্ষণে ক্ষণে।বাড়িতে ঢুকেই অতিথিদের দেখতে পাবে। বাড়ি যেতে যেতে নবনীতার দুপুর হয়ে যায়।সকালে স্কুলের এই এক সুবিধে দুপুরের ভাত খেয়ে একটু ঘুমানো যায়। কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে তিন্নি লাফা লাফি শুরু করল..."কত দেরি করলি! আজ স্কুলে না গেলেই হত।সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি।"বড় মাসি ওকে বকল ..."দাঁড়া মেয়েটাকে একটু বিশ্রাম নিতে দে। সবে বাড়িতে ঢুকেছে।"




     স্নান সেরে দুপুরে সকলের সঙ্গে গল্প করে খাওয়ার আনন্দই আলাদা। তিন্নি আবার ওদের বাড়ির গাছের গন্ধরাজ লেবু নিয়ে এসেছে। মুসুড়ির ডাল গন্ধরাজ লেবু দিয়ে মেখে ভাতের গরস মুখে পুরে নবনীতা চোখ বুজে বলল ..."তিন্নি কি বুদ্ধি করে এনেছিস আর কিছু লাগে না।মা মাংস তুলে নাও আমি এই দিয়েই খাব।"বড় মাসি রসিকতা করে বললো..."ওরে তোর বরের অনেক পয়সা বাঁচবে। শুধু ডাল ভাত খেয়ে থাকবি আর আমরা তোর বিয়েতে একটা গন্ধরাজ লেবুর গাছ দিয়ে দেব।"নবনীতা বললো ..."প্লিজ মাসি ঐটে দিয়োই। ঐ গন্ধরাজ লেবু গাছ আমার চাই। নইলে আমি বিয়ের পিঁড়িতেই বসব না। "তিন্নি পাশ থেকে ফোড়ন কাটল ..."আর যদি তোর বরের গন্ধরাজ লেবুতে অ্যালার্জি থাকে। মানে ধর গন্ধটা সহ্য হয় না এমন কোনো ব্যাপার স্যাপার হলে? "
..."ক্যানসেল! সোজা বিয়ে ক্যানসেল করে দেব!"মা ধমকাল ..."ঠিকাছে ঠিকাছে তখন নয় দেখা যাবে। লেবুর জন্য বিয়ে ভাঙছে। যত সব পাগলের প্রলাপ।"
..."পাগলামী নয় মা।আমি কেন স্যক্রিফাইস করব?"
..."চুপ করবি! পাগল একটা উফ! দেখত দিদি! "বড় মাসি হাসছে মিটি মিটি।




খাওয়া দাওয়া সেরে দুই বোন সারা দুপুর আড্ডা দিল।সন্ধের দিকে  নবনীতা বলল ..."চল ফুচকা খেয়ে আসি।মেন রোডের ধারে ঐ বটতলার নীচের ফুচকাওয়ালাটা দারুণ বানায়।"তিন্নিও উঠে পড়ল। নবনীতার কানের কাছে এসে বললো ..."ফুচকার জলে গন্ধরাজ লেবু দেয় তো!"ওর কথায় হেসে উঠল ওরা দুজনেই। সেজে গুজে বেরল দুই বোন।বটতলার নীচের ফুচকাওয়ালা সামনে দাঁড়িয়ে দুজন।শালপাতা হাতে  দুজনের দৃষ্টি ফুচকার দিকে হঠাৎ একজন নবনীতার পাশে এসে দাঁড়াল।ফুচকাওয়ালা তার দিকে শাল পাতা এগিয়ে দিতে নবনীতা তাকিয়ে দেখে ব্যঙ্কের যুবকটি। সঙ্গে সঙ্গে নবনীতার ফুচকা খাওয়ার ইচ্ছেটাই চলে গেল। মনে মনে রাগ হল। ভাবল বড্ড ত্যাঁদড় ছেলে তো! সকালেও মুখের দিকে বার বার  তাকাচ্ছিল। এখন আবার পাশে দাঁড়িয়ে ফুচকা খেতে চলে এল। নবনীতা কয়েকটা খেয়ে বলল ..."আর দিতে হবে না।"তিন্নি বলে ..."কেন রে ভালো মেখেছে তো !আরও কয়েকটা খা।"নবনীতা দেখে ছেলেটি মুচকে হাসছে আর বার বার তাকাচ্ছে ওর দিকে। নবনীতার আরো বিরক্ত লাগল। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে গায়ে পড়ে ভাব করতে চাইছে। ও বলল ..."চল আর খেতে হবে না। "
   




         রাত্রে বেলায় নবনীতা আর তিন্নি আবার জমিয়ে আড্ডায় বসল। না না হাসি ঠাট্টার মাঝে তিন্নি পুরনো দিনের অনেক কথা বলছিল।ওদের ছোটবেলার কথা। তিন্নি বললো ..."মনে আছে নবনীতা তুই একবার  দৌড়াতে গিয়ে চৌকাঠে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়েছিলি।ভুরুর  উপর তোর কি জোর চোট লেগেছিল।"নবনীতা নিজের ভ্রূতে হাত দিয়ে তিন্নিকে দেখাল ..."এই দেখ না সেই চিহ্ন এখনও বয়ে চলেছি। তিনটে স্টীচ পড়েছিল।"
..."হুম। দাগটা যায়নি বল! "
..."না! "বলে নবনীতা খাটে শরীরটাকে এলিয়ে দিল।রাত্রে বেলার মেঘহীন পরিষ্কার আকাশ। কালো আকাশটার বুকে তারা গুলো চক মক করছে।দূর থেকে জানান দিচ্ছে আমরা আছি আমরা থাকব! একটা ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে।যেন সঙ্গে নিয়ে আসছে কত স্মৃতি কত গন্ধ কত কথা। এমন সুন্দর পরিবেশে মনটাও একটু ভাবুক হয়ে পড়ে।তিন্নিকে নবনীতা জিজ্ঞেস করল ..."তুই প্রেমে বিশ্বাস করিস ? "তিন্নি বললো ..."তুই করিস না। "নবনীতা চুপ করে রইল। তিন্নি বললো ..."তুই যা সবার উপর কর্তৃত্ব ফলাস। তোর তো একদম শান্ত শিষ্ট পাত্র চাই। "বলেই তিন্নি মুখ চেপে হেসে বলল ..."তোর তো আবার মোচওয়ালা ছেলে পছন্দ নয়। দেখবি তোর কপালে ঐ মোচই জুটবে। "নবনীতা বেদম চটে ..."এমন অভিশাপ দিতে হয়? আমি কিছুতেই ঐ গোঁপওয়ালা ছেলেকে বিয়ে  করব না। "তিন্নি ওর মুখ চোখ দেখে হাসতে হাসতে খাটে শুয়ে পড়ল। নবনীতা বলল ..."জানিস আজ ব্যঙ্কে একটা গোঁপওয়ালা ছেলে হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল! এত বদমাশ আজ ফুচকা খেতেও দেখি ঠিক পাশে এসে দাঁড়িয়ে।ওর কথায় আবার হাসে তিন্নি ..."দেখবি তোর ঠিক গোঁপওয়ালা ছেলেই জুটবে।"
..."বলিস না তিন্নি! "নাকি সুরে বললো নবনীতা।
       




        বড় মাসিরা চলে যাওয়ার পর বাড়ি আবার ফাঁকা। নবনীতাও ওর রোজকার রুটিনে ব্যস্ত।সকালে উঠে স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল।তখন মা ডাকল চেঁচিয়ে ..." এদিকে আয় নবনীতা তোর বাবার শরীরটা কেমন করছে। "নবনীতা ছুট্টে পাশের ঘরে গিয়ে দেখে বাবা খাটে শুয়ে ছটফট করছে। মায়ের মুখ চোখ কালো। মা বলল ..."কাল মাঝ রাত থেকে তোর বাবার পেটের কোণায় ব্যাথা ছিল। কদিন ধরে কোমর পিঠেও ব্যাথা।কাল দুবার বমিও করেছে।এখন আর ব্যাথা সহ্য করতে পারছে না।" নবনীতা ভয় পেয়ে যায়। অস্থির হয়ে পড়ে।মা কে বলে ..."রাতে আমাকে ডাকনি কেন? "বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে জিগ্যেস করে ..."খুব কষ্ট হচ্ছে বাবা। "বাবা ব্যথায়া কিছুই বলতে পারল না।মুখ চোখ ব্যথায় কালো হয়ে গেছে। নবনীতা সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারকে ফোন করায় উনি লক্ষণ গুলো শুনে বললেন মনে হয় গল ব্লাডারের স্টোনের ব্যথা। ইমিডিয়েট হসপিটালাইজড করতে হবে।"বাড়িতে যা টাকা ছিল তাই দিয়ে নবনীতা মাকে বলল তুমি বাবাকে নিয়ে হসপিটালে যাও আমি এ.টি.এম থেকে  টাকা তুলে আনি। "বাড়িতে অ্যম্বুলেন্স এল পাশের বাড়ির হীরক কাকু বলল ..."চলুন আমিও সঙ্গে যাই। "নবনীতাও একটু সাহস পেল।নইলে একা মাকে অ্যাম্বুলেন্সে অসুস্থ বাবার দায়িত্বে পাঠাতে ভয় হচ্ছিল। বাড়ি থেকে তড়িঘড়ি বেরিয়ে ছুটতে ছুটতে এ.টি.এম এ ঢুকে টাকা তুলতে গিয়ে কিছুতেই টাকা তুলতে পারে না। বার বার এ.টি.এম ম্যাশিনের স্ক্রীনে 'এরর' ম্যাসেজ ফুটে উঠেছে। টেনশনে নবনীতার কপাল মাথা ঘামে ভিজে যায় কিছু বুঝতে না পেরে আবার ব্যাঙ্কে ছোটে। ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে এ.টি.এম কার্ড রিনিউ করা হয়নি। তখন খেয়াল হল অনেক দিন ধরেই গাফিলতি করে কার্ডটা রিনিউ করতে আসা হয়নি। এদিকে তাড়াহুড়োয় সঙ্গে পাশ বইটাও আনেনি। এমন সময় হীরক কাকু ফোন করে বলল ..."নবনীতা তাড়া তাড়ি এস টাকা জমা না করলে নার্সিংহোম ভর্তি নিতে চাইছে না। "এমন একটা চাপের পরিস্থিতিতে নবনীতার মাথা কাজ করছিল না খুব কান্না পাচ্ছিল। ওর চোখ মুখ লাল পুরোপুরি বিধ্বস্ত অবস্থা।তখনই সেই ক্যাশ কাউন্টারের ছেলেটি ওর কাছে ছুট্টে এসে বলে ..."কি হয়েছে? "নবনীতা মুখ কাঁচুমাচু করে সব বলল। ছেলেটি বলল ..."কোনও টেনশন নিতে হবে না আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।"নবনীতা বলল ..."আমি পাশ বই চেক বই কিচ্ছু  আনিনি।তাড়াহুড়োয় শুধু এ.টি.এম কার্ডটা নিয়ে এসেছি।আমার অ্যাকাউন্ট নাম্বার মনে থাকে না। আমি কিছুই বলতে পারব না।"ছেলেটি বলল ..."নিশ্চিন্তে থাকুন।"ছেলেটি নবনীতার এ.টি.এম কার্ড থেকে অ্যাকাউন্ট নাম্বার বের করে টাকা তোলার ব্যবস্থা করল। টাকা পেয়ে নবনীতা  বলল ..."আপনি অনেক সাহায্য করলেন।"টাকা ব্যাগে পুরে ও ব্যঙ্ক থেকে বেরবে ঠিক তখন  ছেলেটি বলল ..."এত গুলো টাকা নিয়ে বিপদের সময় আর একা যাবেন না।আমি আপনার সঙ্গে যাচ্ছি চলুন।"এক পলক নবনীতা তাকাল ছেলেটির দিকে। অবাক হল। এখনও কেউ বিনাসার্থে কারো জন্য কিছু করে!




টাকা নিয়ে হাসপাতাল পৌঁছতে বাবার অ্যডমিসন হল। ছেলেটি হসপিটালের সব ফর্ম্যালিটি করল। বিকেলে অপারেশন হল নবনীতার বাবার। নবনীতা ছেলেটিকে বলল ..."আপনার উপকার কোনও দিনও ভুলব না। "ছেলেটি বলল ..."ওসব কথা এখন থাক।"




     দুদিন পর নবনীতার বাবা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন। নবনীতার মনে হল একবার ব্যাঙ্কে গিয়ে লোকটার সঙ্গে দেখা করা উচিত। যতই মুখের দিকে হাঁ করে তাকাক ও সেদিন অনেক সাহায্য করেছে। তাই একটা ধন্যবাদ তো জানাতেই হয়! সেই মত ব্যাঙ্কে গিয়ে সেই অপরিচিত যুবকটিকে বলে ..."সে দিন আপনি আমায় বিরাট বিপদ থেকে বাঁচিয়েছিলেন। আমি যে কি বলে আপনাকে ধন্যবাদ জানাব বুঝে উঠতে পারছি না।" ছেলেটি বলল ..."আমার সঙ্গে এক কাপ চা খেয়ে ধন্যবাদ জানাতে পারেন।"নবনীতা মুচকি হাসল। বললো ..."চলুন তবে তাই যাই! "
       




     দুজনে এক সঙ্গে ক্যঁফেতে বসে।চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ছেলেটি বলল ..."আমার নাম রণজয়।তুমি বোধ হয় আমাকে ঠিক চিনতে পারনি।"আপনি থেকে তুমি বলাতে এবং চিনতে না পারার কথায় নবনীতা  ভুরু কুঁচকে তাকাল।আজব ব্যাপার এ হঠাৎ তুমিতে নেমে এল কেন!আবার বলে কি না চেনে!রণজয় বলল ..."সেদিন যখন চেক জমা দিতে এসেছিলে তখন নবনীতা দত্ত নামটা দেখে তোমার দিকে তাকাই।ভালো করে দেখতে দেখলাম ভুরুর উপর কাটা দাগটাও আছে। সেই দিনই চিনেছি।তোমার মুখটা কিন্তু খুব একটা বদলায়নি। "নবনীতা অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে। রণজয় বলে ..."এখন যদি আমাদের বিয়েটা অস্বীকার কর আমার কিছু করার নেই। "
নবনীতা বলল ..."বিয়ে?আপনি কি পাগল? "
..."ও! তবে ভুলে গেছ! "বলে রণজয় চায়ের কাপে চুমুক দিল।ওর চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার ভঙ্গিতে যেন কিছু মনে পড়ল নবনীতার। চোখ ছোট করে তাকাল রণজয়ের দিকে তারপর মুখে হাত দিয়ে বলে ..."রণজয়... রণজয় বসু... সরস্বতী বিদ্যামন্দিরের রণজয় বসু। "রণজয় চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে বললো ..."হুম! তোমার বর রণজয়ও বলতে পার! তাহলে বেশী খুশি হতাম।এখন যদি বল আমাকে পছন্দ হচ্ছে না তাহলে আমার কিছু করার নেই।"নবনীতা মুখ চেপে হাসে।বলে ..."তোমার মনে আছে সেই কোন ছোট্ট বেলার কথা।"
..."প্রথম বিয়ে কি কেউ ভোলে! কবে থেকে বউটাকে খুঁজছিলাম অনেক খুঁজে যখন  পেলাম তখন সে  তো আমাকে দেখলেই ফোঁস করে ওঠে। আমি কত চেষ্টা করি কিন্তু তোমার কাছে আসতে তুমি যা রেগে যেতে তা তোমার মুখ চোখ বলে দিত।"বলে হাসল রণজয়।তারপর বললো ..."তা এখন বল আমার শ্বশুর মশাই কেমন আছেন? "নবনীতা চোখ সরু করে বলে ..."তুমি নিশ্চিত। আমি তোমায় হাজবেন্ড হিসেবে মেনে নেব। "রণজয় হতাশ ভাবে বলল ..."ও, মেনে নেবে না। "নবনীতা ওর মুখ দেখে হেসে ফেললো।ওর গোঁপের দিকে আঙুল তুলে বললো ..."আমার গোঁপ পছন্দ নয়। "
..."এই গোঁপটার জন্য তুমি পুরো মানুষটাকে রিজেক্ট করে দেবে।"বলে চোখ বড় বড় করে তাকাল রণজয়। খুব হাসল নবনীতা।বললো ..."না রিজেক্ট করব না। আমার ছোট্ট গোল গাল রণজয়কে যতটা পছন্দ ছিল এই কদিনে এই গোঁপওয়ালা রণজয়কেও ততটাই পছন্দ হয়েগেছে।"©Pryamboda priya
অনুভূতির আসর-Anuvutir asor

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন