Translate

সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৮

ঈশানীর বর*

#ঈশানীর_বর
#রচনায় #প্রিয়ম্বদাপ্রিয়া
       ..."বাহ্ ভালো খরচা করেছে তো। "
..."হুম একমেয়ের বিয়ে তাই কোনও শখ আহ্লাদ পূরণ করতে বাকি রাখেনি।"
     বুফে কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে বাটার চিকেন মনের সুখে খেতে খেতে চশমা পরা বছর পঞ্চান্নর সমরেশ বাবু বললেন..."আমার মেয়েটার জন্য একটা ভালো ছেলে খুঁজছি।"রক্তিম ওনার মামার ছেলে বলল ..."সুমিতাদির ছেলেটা কিন্তু খুব ভালো পেশায় ইঞ্জিনিয়ার এক ছেলে আর একদম সিদে সাধা ছেলে খুব শান্ত ছেলে। "
..."কে সুমিতাদি বল তো?"
..."আরে দিদির ননদের ছেলে মনে নেই সুমিতাদি এককালে কি সুন্দরী ছিল বিয়ের আগে আসত তো আমাদের বাড়িতে। "
..."হ্যাঁ হ্যাঁ  মনে পড়েছে। বাবা ওর ছেলে আবার এত বড় হয়ে গেল।"
..."আমাদের ঈশানী এত বড় হয়ে গেল যে তুমি পাত্র খুঁজছ....ঐ দেখ ঐ লম্বা ছেলেটা।"
..."কোনটারে... "
..."আরে ঐ যে চশমা পরা ছেলেটা দেখ আইসক্রিম খাচ্ছে।"
     




       পুরো বিয়ে বাড়ি সমরেশ সুমিতার ছেলেটিকে পর্যবেক্ষণ করে গেলেন মেয়েদের দিকে কেমন করে তাকাচ্ছে কত বার তাকাচ্ছে কত কথা বলছে কি বলছে দেখে শুনে ছেলেটিকে বেশ ভালো লাগল তার।ঈশানী তো তার প্রাণের টুকরো। বাবা মায়ের আদরের ঈশানী যে  ভীষণ মেজাজি। সৌন্দর্যের দিকে ভগবান কোনও রকম কার্পণ্য করেনি। এক ঢাল কালো ঘন চুল।ক্ষীণ কোটি গৌড় বর্ণা আর মোহময়ি নয়ন যুগল তেমনি তীক্ষ্ণ ওর বাক্য বাণ।চঞ্চল জেদি মেয়েটির জন্য সমরেশ বাবু একজন শান্ত স্বভাবের পাত্র চাইছেন। সুমিতার ইঞ্জিনিয়ার ছেলেটিকে বেশ মনে ধরেছে তার। ঈশানী তো  শোনার সঙ্গে সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল ..."না না আমি বিয়ে করব না।ও সব আমার পোষাবে না আমি তোমাদের সঙ্গেই থাকব। "সমরেশ বাবু অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে মেয়েকে রাজি করাল। বলা  হল ..."ছেলেটি তুই যা চাইবি তাই করবে। তোর সব কথা শুনবে তারপর আমরা তো আছি ভয় কি তোর।"ঈশানীও রাজি হয়ে গেল। বিশেষ করে এত সুন্দর সুন্দর শাড়ি আর জুয়েলারী সেট মা যখন দেখাল তখন ঈশানীর  মনে হল একটা রিস্ক তো নেওয়াই যায়।





         সুন্দরী প্রাণবন্ত ঈশানীকে দেখে সুমিতাদের পরিবারের পছন্দ হয়ে গেল। লাজুক শান্ত কিষানু ভালো করে ঈশানীকে দেখল কি না তা নিয়ে সমরেশ বাবু সংশয়ে রইলেন। ওনার একটা সুপ্ত ভয় রয়েই গেল তার এই উগ্রচণ্ডী মেয়েটি কিষানুর কি হাল করবে এবং কিষানু ওকে কতটা সামলাবে।
   




        বিশাল সমারহে ধুম ধাম করে ঈশানী কিষানুর বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের প্রথম রাত কিষানুর মনে উত্তেজনা আর আবেগ নিয়ে সুন্দরী স্ত্রীর কোমল হাতটা ধরতেই ঈশানী এক ঝটকায় হাত সরিয়ে বলল ..."ফার্স্ট নাইটে এত ক্লোজ হওয়ার চেষ্টা ভুলেও করবে না। "থতমত খেয়ে কিশানু বলে ..."আমি তো রিং পরাতে যাচ্ছিলাম।"
..."কোথায় রিং? "
পকেট হাতরে আংটি না পেয়ে ও বলে ..."মনে হয় মার কাছে আছে।"মুখ ভ্যাঙিয়ে ঈশানী শুয়ে পড়ল। কিষানু বসে বসে ভাবল কি জানি ঠিক হল না বোধ হয়। আংটি তো কিনেছিল হয়ত মায়ের কাছেই রেখে দিয়েছে। প্রথম দিনই ঈশানীর ওর উপর কেমন ইমপ্রেসন হল তা নিয়ে ভাবনায় পড়ল কিষানু।






        ঈশানী  খুব মুডি ওকে কিষানুর পরিবারও সামলে চলে।কথা কম বলে সারা দিন নিজের মতন থাকে।কখনও গান শুনছে কানে হেডফোন লাগিয়ে। কখনও টি.ভি দেখছে কখনও ফোনে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা।বাড়িতে কেউ কিছু বলে না।কি বা বলবে সবাই জানে ঈশানী বাড়িতে ভীষণ আদুরে ছিল তাই ওর অভ্যস্ত লাইফ স্টাইল থেকে বেরবার জন্য ওর সময় লাগবে। এমনিতেই কিষানুর মা বাবা খুবই ভদ্র এবং উন্নত মনের মানুষ তাই তারাও কখনও কোনো ভাবে ওর রোজকার রুটিন পরিবর্তনে বাধা দেন না।
একদিন রাতে ঈশানী কিষানুকে  বলল..."আমরা বন্ধুরা সবাই মিলে হলি ডে  তে  যাব! গোয়া!"বিয়ের পর বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারটা ঠিক পছন্দ হল না কিষানুর বললো ..."বন্ধুদের সঙ্গে।তুমি একা যেতে চাইছ! "
..."অফকোর্স! কেন আমি একা যেতে পারি না!"
..."পার।কিন্তু এখন তোমার বিয়ে হয়েগেছে... "ব্যস বিয়ে হয়েগেছে শুনেই মাথাটা হঠাৎ গরম হয়ে গেল ঈশানীর। বিয়ে হয়েগেছে বলে কি সব কিছু বদলে যাবে। বিয়ের আগে যা করত তা এখন করা যাবে না।এমনতেই ও সামান্য কারণে রেগে যায়। শর্ট টেম্পার।সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজনায় গলা কাঁপা শুরু ..."কি বলতে চাইছ। বিয়ে হয়ে গেছে মানে এখন আর আমার ইচ্ছে খাটবে না।"ওকে দেখে কিষানু বোঝে পরিস্থিতি গম্ভীর হয়ে যাচ্ছে।ও পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বলে ..."আচ্ছা ঠিকাছে আমি তোমায় নিয়ে যাব। "
 ..."তুমি কেন নিয়ে যাবে আমার উপর তোমার বিশ্বাস নেই।আমি যাব একাই যাব.. "



মহা মুশকিলে পড়ে কিষানু একা একা বিয়ের পর  বাড়ির বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে থাকা ঘুরতে যাওয়া  ওর বাড়ির লোক মোটেও পছন্দ করবে না।কেউ হয়ত মুখে কিছু বলবে না তবে অসন্তুষ্ট হবে।এদিকে ঈশানী দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও যাবেই এবং একা। কিষানু বলল..."চল আমরা দুজনে কোথাও ঘুরে আসি আমাদেরও তো নতুন বিয়ে হয়েছে।আমরা এক সঙ্গে না সময় কাটালে বন্ধুত্ব হবে কি করে।চল না হয় আজ থেকেই শুরু করি। "কিষানুর যুক্তিতে ঈষানী ক্ষান্ত হল।ঈশানী যত তাড়াতাড়ি রেগে যায় তত তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডাও হয়ে যায়। শুধু ওকে ঠাণ্ডা মাথায় বোঝাতে হবে কোনো রকম জোর করা চলবে না। তা খানিকটা বুঝেছে কিষানু।





      কিষানু একটা  শপিং মলে নিয়ে আসে ঈশানীকে। সেখানে একটা ডিজাইনার সালোয়ার আবদার করে বসল সে ..."কিষানু আই ওয়ান্ট দিস।"বিয়ের পর প্রথম ঈশানী কিছু আবদার করেছে না করে কি করে কিন্তু সালোয়ারটার দাম দেখে ওর ঘাম ছুটতে শুরু করেছে। এক্সপেনসিভ মলে একটা ব্রেসলেটই পাঁচশ টাকা থেকে শুরু সালোয়ারটার দাম টোয়েন্টি থাউসেন্ড অনলি। কিষানু বলে ..."এই রকম সালোয়ার দোকানে অনেক সস্তায় পাওয়া যায় শুধু শুধু এত দাম দিয়ে কেন নেবে। "
..."ওগুলো ডিজাইনার নয়।মেটেরিয়াল আলাদা। ওগুলো ডুপ্লিকেট আমি এটাই নেব।"
বৃথা বাক্য ব্যয়  করে ঈশানীকে না চটিয়ে কিষানু বাধ্য হয়েই  কিনল কিন্তু তার জন্য অফিসে ট্যাক্সির বদলে বাসে যেতে শুরু করল। হিসেবি স্বভাবের কিষানু সব সময় সামঞ্জস্য রেখে খরচা করতে পছন্দ করে।ছোট থেকে এভাবেই বড় হয়েছে ও।অর্থ থাকলেই তার অপব্যয় করতে হবে এমনটা মনে করেন না কিষানুর বাবা। ছেলেও তাই জানে।





         এক দুপুরে কিষানু ফোনে বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিল। ঈশানী সুন্দর করে হাতে নেল পলিস লাগাচ্ছিল কিষানুকে বলতে শুনল..."সামনের মাসে আমি ব্যাঙ্গালোর যাব কোম্পানি থেকে পাঠাচ্ছে। "ঈশানী ওর ফোন রাখার সঙ্গে সঙ্গে বলল ..."তুমি ব্যাঙ্গলোরে যাচ্ছ?"
..."হ্যাঁ"
..."তাহলে আমিও তখন দার্জিলিং যাব। বাড়িতে সবাই যাচ্ছে।"
..."তুমি আমার সঙ্গে ব্যাঙ্গালোরও যেতে পার আমি ওখানে অফিস ওয়ার্কের পর অনেকটা সময় পাব।"
..."আগে বল নি কেন সব ঠিক করে বলছ। আমি যাব না আমি দার্জিলিং যাব।"কিষানুর মন খারাপ হয়ে যায় তাহলে কি ঈশানী ওকে পছন্দ করে না।কোনো সময় কিষানুর সঙ্গে তেমন ভাবে কথা বলতেও চায় না।এক সঙ্গে ঘুরতে যাওয়াটা ওর বাড়ির লোকের সঙ্গে যেতে পছন্দ অথচ ওর সঙ্গে নয় ।







          ঈশানী সব সময় বর,বিয়,বিয়ের পরের পরিবর্তন এগুলো কিছুই মানতে নারাজ। ও এখনও মুক্ত বিহঙ্গের মতন বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে ঘোরা হৈ চৈ আড্ডা এসবই পছন্দ করে।কিষানুকে যে কোনো অ্যটেনশন দেওয়া প্রয়োজন এমনটা মাথাতেই আসে না ওর। ও শুধু নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে ভালোবাসে। বিয়ের পর আজ অবধি রান্না ঘরটা কেমন তাও চোখে দেখেনি। একদিন রাঁধুনি কামাই করল কিষানুর মারও জ্বর। বাধ্য হয়ে ঈশানী রান্না ঘরে ঢুকল। রান্না ঘরটা ওর যুদ্ধের ময়দান মনে হচ্ছে।মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে। কিষানু ওকে দেখে মুচকে হেসে বলল ..."বাহ্ আজ তাহলে কি খাওয়াচ্ছ। "
..."তুমি হোটেল থেকে খাবার আনাও আমি কিছু পারি না। "কিষানু তা আন্দাজ করেই ছিল ও হেসে ফেলল। ঈশানীর রাগ হয়ে গেল ..."আমি পারি না বলে তোমার হাসি পাচ্ছে। "
..."না না হাসি পাবে কেন।"বলে ও আরও জোরে জোরে হাসতে লাগল। এবার ঈশানীর গাল কানের লতি নাকের ডগা লাল হতে শুরু করেছে দেখে   কিষানু হাসি থামিয়ে  বলে ..." মায়ের শরীর খারাপ বাইরের খাবার কি করে দেব? "
 ..."আমি জানি না। "
..."ঠিকাছে আমি করছি।"

 কিষানু নিজেই খিচুড়ি চাপালো।ঈশানী মন দিয়ে কিষানুর রন্ধন কৌশল দেখল। সেদিন কিষনুই  সবাইকে খেতে দিল এবং অবশ্যই অফিস থেকে ছুটি নিল।
     




          ব্যাঙ্গালোরে কিষানু যাওয়ার পর ঈশানীও দার্জিলিং ঘুরে এল।তারপর  এদিক ওদিক ঘুরে বেরাতে লাগল। মনে মনে চাইছিল কিষানু ওকে নিতে আসবে ।কিন্তু কিষানু তো ওকে নিতেই আসছে না  বেশ কিছুদিন হয়ে গেল  কিষানু ব্যাঙ্গালোর থেকে ফিরে এসেছে।  রোজই ফোনে কথা হয় কিন্তু কিষানু একবারও বলে না কবে আসবে। অভিমানে মন রোজ রোজই ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ছে।কেন নিতে আসছে না ফোনেও বলে না কবে আসব একদিন বন্ধুদের সঙ্গে শপিং করতে গিয়ে  পামেলার সঙ্গে দেখা ..."কি রে ঈশানী তোকে আজ অবধি তোর বরের সঙ্গে দেখলাম না। সব সময় বন্ধুদের সঙ্গে টো টো করছিস। কিষানু খুব বোরিং নিশ্চয়ই। ওকে দেখলেই মনে হয়। ঠিক সোস্যাল নয়।মানে মুখচোরা টাইপের না... "কান মাথা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল।কিষানু কেমন তা জাজ করার পামেলা কে।ও জানে কিষানুকে। ও নিতান্ত ভদ্র একটি ছেলে তাকে আনসোস্যাল বলে কি প্রমাণ করতে চাইছে পামেলা। স্বভাব মত রাগে গলা কেঁপে গেল।কি বলবে ঠিক করে উঠতে পারছে না।কাঁপা গলায় বললো  ..."ও ভীষণ বিজি। ওর ফালতু সময় নেই। তাই আমাকে ওর সঙ্গে দেখিস না।ও ভীষণ স্মার্ট আর রিজার্ভ। অকারণে বক বক করে না রে ।"কথা গুলো বলতে বলতে চোখের কোণে অজান্তেই জল চলে এসেছিল ওর। কেন তা বুঝল না ঈশানী।
 পামেলা একটু ভয় পেয়ে গেল। ভাবল হয়ত ওর দুর্বলতায় আঘাত করা হয়েছে ও বললো ..."আরে আমি তো ইয়ার্কি করছিলাম। "ঈশানী তখনও রাগে কাঁপছে। কেউ কিষানুকে বোরিং আনসোস্যাল বলাতে তা
কোনো ভাবেই  সহ্য করতে পারল না ও।




          বাড়িতে ফিরে চান সেরে সবে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে বসেছে বাবাকে বলতে শুনল..."আমার মেয়ের বিয়েটা বেশী তাড়াহুড়োয় দিয়ে দিলাম। মেয়ে তো মোটেই সুখি হয়নি।বেশীর ভাগ সময় ও এখানে থাকে কি জানি শ্বশুর বাড়ির লোকজন মনে হয় সুবিধার নয়। "ঈশানী ওর বাবার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে বলে ..."কেন তুমি কিষানুর বাড়ির লোককে খারাপ বললে। "বাবা হতচকিত হয় ..."তুই তো এই খানেই বেশীর ভাগ সময় থাকিস। তাই আমি ভাবলাম ওরা নিশ্চয়ই ভালো না।"
..."ও তোমরা এসব ভাব!"বলে রাগে কাঁপতে কাঁপতে ঈশানী গটমট করে ব্যাগ পত্তর নিয়ে রওনা দিল কিষানুর বাড়ি।





 ঘরে ঢুকেই চিৎকার ..."কিষানু আই হেট ইউ... "স্তম্ভিত কিষানু ভাবে আমি আবার কি করলাম। কেঁদে কেঁদে ঈশানী বলতে লাগল ..."আমি কবে থেকে বাবার বাড়িতে পড়ে আছি তুমি আমাকে আনার প্রয়োজন বোধ কর না। "কিষানু স্বভাব মত শান্ত স্বরে বললো ..."তুমি তো ইচ্ছে মত যাতায়াত কর।"
..."তুমি চাও যাতে আমি তোমার সঙ্গে না থাকি। "বলতে বলতে কেঁদে ফেললো ঈশানী।
...''তুমি ঠিক কি চাও আমি বুঝতে পারছি না ঈশানী। "বললো কিষানু।ঈশানী চুপ করে রইল। ঈশানীর সমস্যা হল ও মনের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তার সঙ্গে মনের আবেগ ব্যক্ত করতেও পারে না। ও কিষানুকে ভালোবেসে ফেলেছে তা সম্বন্ধে ও নিজেও অবগত নয় তাই কি করবে ও কিছুই বুঝতে পারে না।ঈশানী নিজেকেই বুঝতে পারে না।কখনও খারাপ লাগে কখনও ভালো। কেন খারাপ লাগছে ভালো লাগার কারণটা কি তা বিশ্লেষণ করতে অসমর্থ ও।





          একদিন সন্ধের সময় বাড়িতে কেউ নেই ।ঈশানী অনেক শখ করে কিষানুর জন্য আলু কাবলি বানিয়েছে কিন্তু এতপরিমাণে ঝাল দিয়েছে যে বেচারা তো কিছুটা খেয়েই চোখের জলে নাকের জলে অবস্থা। ঈশানী বলে ..."একটু সহ্য কর আমি মধু আনছি। "কিষানু অস্থির হয়ে উঠল হু হা করে বলে ..."আমি তো সহ্যই করছি। "ওর মুখে এক চামচ মধু দিয়ে ঈশানী বলে ..."কাকে সহ্য করছ? অামাকে? "
..."আর নয় তো কি! তোমাকে সহ্য করা সহজ নাকি! তার চেয়ে শুকনো লঙ্কার ঝাল সহ্য করা সহজ। "কিষানু নেহাত তার বৌএর সঙ্গে রসিকতার ছলে কথাটা বললেও ঈশানী তো মোটেও সেটা রসিকতা মনে করল না। কেঁদে কেটে একাকার। কিষানু বুঝিয়ে পারে না। ওর বক্তব্য তুমি মুখে বলতে পার না আসলে তুমি সত্যি সত্যি আমায় সহ্যই করো।কিষানুর হাজার অনুরোধ শত চেষ্টা বিফল করে ঈশানী হাজির হল সোজা বাবার বাড়ি। কিষানু হাজার বুঝিয়েও ওর এক কথা ..."তোমাকে আর আমায় কষ্ট করে সহ্য করতে হবে না।"




        বেশ কিছুদিন হল ঈশানী নিজের বাড়িতেই আছে। কিষানুও মন মরা। ঈশাানীর বন্ধু বান্ধবরা একদিন সবাই মিলে ধরল ,কত দিন হল মুভি দেখি না চল।ইদানীং ওর এসব কিছুই ভালো লাগে না।কিন্তু  সবাই মিলে জোর করাতে ও বেরল। সিনেমা হলের সামনে দেখে কিষানুও ওর বন্ধুদের সঙ্গে। কিষানু হাসি হাসি মুখ করে এগিয়ে এল। ঈশানী মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইল।ঈশানীর বন্ধুরা কিষানুকে দেখে বলে ..."কি গো বৌএর পেছন পেছন চলে এলে।"
..."না না আমি তো বন্ধুদের সঙ্গে এসেছি।"বন্ধুরাও হাসা হাসি করে বলল ..."ঈশানী তোর বর কিন্তু তোর জন্য আসেনি।"পামেলা বলে ..."আমার মনে হয় ঈশানীকে সামলান কিষানুর কম্য নয় ও বড্ড গোবেচারা। "সঙ্গে সঙ্গে পামেলার বয় ফ্রেণ্ড শীতাংশু বলে ..."এ কি ভাই তুমি তোমার বৌকে সামলাতে পার না।একটা মাত্র বউ তাও .... "বলে সেও কৌতুক করে হাসতে থাকে। সঙ্গে বাকিরাও তাল দেয়। কিষানু মুখ কাঁচু মাচু করে দাঁড়িয়ে। এবার ঈশানী ওর ধৈর্য্য হারায়।  চোখ মুখ লাল করে বলে ..."আমার হাজবেন্ডকে নিয়ে এমন উলটো পালটা কথা বললে আমি ভুলে যাব তুমি পামেলার বয় ফ্রেণ্ড। "শীতাংশুও রোয়াব নিয়ে ওর দিকে দু কদম এগিয়ে আসে  ..."কেন কি করবে? "কিষানু ওকে হাত দিয়ে দূরে ঠেলে বলে ..."আপনি আমার সামনে আমার স্ত্রীর দিকে এগিয়ে আসছেন।"
..."সামলে ভাই.. "অতি পরিপক্ব ছেলেটি আবার বললো।
..."আমার হোঁশ আছে তাই আমার সামলাবার প্রয়োজন নেই তবে যারা বেহুঁশ তাদের সামলানো  দরকার। ''সকলের হাসি মুছে গেল। বাতাবরণ ভারী হয়ে গেল।ঈশানী ছল ছলে চোখে কিশানুর হাত ধরে টানতে টানতে ওখান থেকে বেরিয়ে গেল।






 হলের বাইরে এসে ঈশানী  কিষানুকে বললো ..."তোমাকে কেউ কিছু বললে আমি সহ্য করতে পারি না। আমাকে নিয়ে হয়ত তুমি কোনও দিনও সুখি হবে না আমার মত মেয়ে হয়ত তুমি অনেক পাবে  কিন্তু আমি আর কিষানু পাব না। "ওর চোখে মোটা মোটা জল আর নাকের ডগাটা লাল হতে দেখে কিষানু   হেসে ফেললো। বললো ..."ওরে বাবা তোমার মত অনেক! তুমিই যথেষ্ট আমার জন্য। "ঈশানী  জড়িয়ে ধরল কিষানুকে  ..."আমি যখন তখন তোমায় জ্বালাতন করব। আমার সব অত্যাচার সহ্য করবে? "কিষানু চুপ করে রইল। ঈশানী ওকে চিমটি কেটে বলে ..."কি গো বল? "কিষানু ভয়ে ভয়ে বলে ..."বললেই তো মুশকিল তুমি যে কখন রেগে যাও আমি তো সেটাই বুঝি না। "ঈশানীর আলিঙ্গন আরও নিবিড় হল। ধীর স্বরে বললো ..."আর বুঝতে হবে না। আমি সব বুঝে গেছি। তোমাকে ছাড়া আমি  থাকতে পারব না। "©Pryamboda priya
অনুভূতির আসর-Anuvutir asor~facebook page

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন