Translate

শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৮

উন্নত মন

#উন্নত_মন
#রচনায় #প্রিয়ম্বদাপ্রিয়া
         রান্না ঘরে আদা পিষতে পিষতে মা মেজাজে বলে গেলেন ..."শোন সৌভিক নতুন ব্যবসা শুরু করেছিস মন দিয়ে কর কিন্তু প্রেম করে একটা মেয়ের হাত ধরে যদি বলিস মা আমি একেই বিয়ে করব তবে কিন্তু ঝাঁটা পেটা করব। আমি ঐটে সহ্য করব না বৌ আনব আমার পছন্দের।"সৌভিক বিরক্ত হয়ে মায়ের কথা গুলো শুনল। বিড় বিড় করে বলতে লাগল মায়ের ঐ বৌ আনব নিজের পছন্দে।কেন আমি পছন্দ করতে পারি না।দাদা মুচকে হাসল ..."ঐ ভুলটি কর না বাবু তোর বৌদিকেও মা পছন্দ করেছে তোর বৌটিও মায়ের পছন্দেই আসবে।" বৌদিও এইসকল বার্তালাপের মাঝে ফোড়ন কাটল ..."সৌভিক পছন্দ করে কাউকে আনলে ঐ ঝাঁটা পেটাটা দেখতে পাব কি বল।" সৌভিক রাগে গজ গজ করে ওঠে ..."কেমন বৌদি তুমি এখনও কাউকে পছন্দই হল না আর তুমি আমার ভবিষ্যতের ঝাঁটার বাড়ির দৃশ্য কল্পনা করছ।"দাদা হাসে ..."আগে ব্যবসাটা ভালো করে দাঁড় করা তারপর প্রেম করবি।"
   


      সৌভিক বেরল দোকানের পথে। কলেজ পড়া কালীনই সৌভিক ঠিক করেছিল ও স্বাধীন ব্যবসা করবে।একটা দোকান ভাড়া নিয়ে কসমেটিক্সের ব্যবসা শুরু করেছে। সকাল বেলা দোকান খুলে ধুপ ধুনো দিয়ে রোজকার মতন দোকান খুলেছে। দু চার জন কাস্টমার এসেছেন।তার মধ্যে দেখে দোলনক।ওকে দেখে  একগাল হাসল সৌভিক।বললো..."আরে দোলন যে কেমন আছ? "দোলন ম্লান ভাবে বললো ..."ভালোই।"একটা শ্যাম্পু কিনে কেমন মন মরা ভাবে চলে গেল দোলন।একটু অবাক লাগল সৌভিকের। কলেজের বন্ধু পবিত্রর বোন দোলন। মাত্র ঊনিশ বছর বয়সে ওর বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। ভালো ছেলে পেয়েছিল বয়স বেশী ছিল কিন্তু ভালো চাকরি দেখে বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল। আজ অনেক দিন পর আবার দেখা হল। দোকানে বসে সৌভিকের স্মৃতি থেকে ভেসে এল দোলনের বিয়ের কথা। সব বন্ধুরা মিলে খুব মজা করেছিল। আজও মনে আছে ওদের বিয়েতে লেমন রসগোল্লাটা সবার খুব ভালো লেগেছিল।
..."দাদা বাজারে ভালো ডিও কি এসেছে। "কাস্টমারের আগমনে আবার সৌভিকের ধ্যান ভাঙল।
     




       দুপুরে দোকান বন্ধ করে বাড়ি গিয়ে খাওয়া দাওয়া করতে যায় সৌভিক।দুপুরে বাইরে খাঁ খাঁ  করছে রোদ রাস্তায় ট্র্যাফিক বিনা ক্লান্তিতে এগিয়ে চলেছে। ফুটপাথের উপর একটা নেড়ি কুকুর রাস্তায় পড়ে থাকা খাবারের প্যাকেট শুঁকছিল।চারিপাশটা কেমন শূন্য তাও সব কিছুই তো আছে।সকলের গন্তব্য স্থলে পৌছবার তাড়া।দুপুরের তাপের হাত থেকে রেহাই পেতে ঘরের শীতল ছায়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিল সৌভিক। বাসস্টপে গিয়ে দেখে দোলন দাঁড়িয়ে। রোদের তাপে মুখ চোখ কালো চুল ঘামে ভেজা। সৌভিক বলল ..."কি গো ভর দুপুরে কোথায় চললে? "দোলন ফ্যাকাসে চোখে তাকিয়ে রইল।সৌভিকের মনে হল ওর মনের অবস্থা মোটেও ভালো নেই হয়ত মন খুলে সমস্যার কথা বললে খানিকটা স্বাভাবিক হতে পারবে। তাই বললো ..."চল তো আমার সঙ্গে দোকানে।এই রোদ্দুরে কোনও কথা হয় না। "সৌভিক ওকে সঙ্গে করে আবার দোকানে ফিরে এল।
..."বল তো তোমার কি হয়েছে? সকালেও কেমন যেন দেখলাম। "দোলন প্রথমে একটু ইতস্তত করছিল তারপর বললো ..."অনেক সমস্যায় আছি। "সৌভিক বলে ..."আরে সেই সমস্যাটাই তো শুনব বলে তোমায় বাসস্টপ থেকে দোকানে নিয়ে এলাম। "দোলন যেন সৌভিকের কথায় খুব আপন বোধ করল।বললো ..."আমি মোটেও ভালো নেই গো। বিয়ের প্রথম প্রথম বুঝিনি তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে শুরু করলাম আমার হাজবেন্ড বড্ড সংকীর্ণ মানসিকতার মানুষ। কথায় কথায় আমায় সন্দেহ করে। এক একদিন আমাকে বাড়িতে লক করে রাখে।বন্ধু বান্ধব কারও সঙ্গেই কোনও যোগাযোগ রাখতে দেয় না। অনেক দিন পর বাড়িতে এসেছিলাম ও অফিস ট্যুরে গেছে সেই সুযোগে অনেক ঝামেলা করে এসেছি। বাড়িতে সব জানে তাও কেউ কিছু বলে না আমার পাশে দাঁড়াবার কারই প্রবৃত্তি নেই আমি যতই অভিযোগ করি বাড়িতে শুধু বলে সব ঠিক হয়ে যাবে। দু বছর ধরে তো সহ্য করছি ঠিক কোথায় হল।" বলে দোলন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সৌভিক বলল ..."তুমি নিজে কিছু কর। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে কিছু করার চেষ্টা কর কারও ভরসা করছ কেন। "দোলন মৃদু হাসল ..."ঊনিশ বছর বয়সে আমার বিয়ে হয়েছে আমি মাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। কি দাঁড়াব। "
..."তাহলে কি করবে কিছু ভেবেছ সারা জীবন বন্দি হয়ে থাকবে? লড়বে না? "দোলন চুপ করে রইল সৌভিক আবার বলল ..."আমার দোকানে একজন হেল্পার চাইছিলাম তুমি চাইলে করতে পার। আর বন্দি জীবন থেকে যদি মুক্তি চাও তার জন্য আমি আছি তোমার পাশে ভয় পেও না। "

      সেদিন কোনও কথার উত্তর না দিয়েই চলে গেল দোলন। সৌভক বেশ কিছুদিন ভেবেছিল দোলনের কথা। মেয়েটার কত ছোট্ট বয়সে বিয়ে হয়ে গেল এখন কেমন কষ্টে আছে। যদি কিছু ওর জন্য করা যেত তবে খুব ভালো লাগত সৌভিকের।
       



       প্রায় দু মাস পর একদিন সকালে সৌভিক দেখে ওর দোকানে দোলন এসে হাজির। ওকে দেখে একটু অবাক হল সৌভিক।দোলন বলল ..."তোমার কাজটা কি এখনও ফাঁকা আছে।"সৌভিকের দোকানে কাজটা তখনও খালিই ছিল। ও বললো ..."হুম। তা তুমি দোকানে কাজ করবে? "
মাথা নাড়ল দোলন। ওকে দেখে মনে হচ্ছিল ও কাজটা সত্যি করতে চায়।সৌভিকও রাজি হয়ে গেল।




সৌভিকের দোকানে কাজটা পাওয়ার পর মনোযোগ সহকারে কাজে মন দিল দোলন।পরিশ্রমী মেয়েটা কখনও কাজের হিসেব করে না।নতুন জিনিস এলে তাতে ডিসকাউন্ট অনুযায়ী প্রাইস লেবেল করা। ঝাড়পোছ করা, কাস্টমারদের জিনিস পত্র দেখানো,সব নিখুঁত ভাবে করে দোলন। দোকানের কোথায় কি আছে সব ওর নখ দর্পনে। একদিন দোকান বেশ ফাঁকা যাচ্ছিল। দুজনেই চুপচাপ বসে। তখন দোলন হঠাৎ বলল ..."জান তোমার কথা গুলো আমার মনে বেশ জোর জুগিয়েছিল। "সৌভিক বলে ..."কেমন করে? "
..."ঐ যে বলেছিলে লড়বে না বন্দি থাকবে। আমি ভাবলাম লড়েই দেখি না বিয়ের কিছু গয়না বেঁচে নিজেই উকিল ঠিক করলাম। কেস ফাইল করলাম।বাড়িতে বলেছি আমার জন্য তোমাদের কোনও চিন্তা করতে হবে না আমি নিজের ব্যবস্থা করে নেব রোজ রোজ একজনের কাছে লাঞ্ছিত হওয়ার চেয়ে মনে হয় বাইরে বেরিয়ে সংগ্রাম করা ভালো। বাড়ির লোক প্রথমে রাগ করেছিল তারপর আমার জেদের কাছে হার মেনেছে। "সৌভিকের বেশ ভালো লাগে দোলনের আত্মবিশ্বাস। কারও সমর্থন ছাড়াই ও এগিয়ে চলেছে। এই অল্প বয়সে মেয়েটা কি শুধু সৌভিকের কথাতেই আত্মবিশ্বাস পেয়েছে! না কি দোলনের মনের বল সত্যি অসামন্য। সচারচর মেয়েরা এত সাহস পায় কোথায় যখন বাড়িতে কোনো সাপর্ট থাকে না।




      একদিন দোকানে এক নব দম্পতি এসেেছ।বৌটিকে দেখেই মনে হচ্ছে নতুন বিয়ে হয়েছে। তার স্বামীটি তাকে পারফিউম কিনে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল কিন্তু বৌটির কোনও গন্ধই পছন্দ হয় না। এদিকে স্বামীটিও ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।কিন্তু সে তো না না কারণ না না বাহানা দিয়ে চলেছে। কিছুতেই তার কিছু পছন্দ হয় না।শেষ মেষ কিছুই পছন্দ করতে না পেরে তারা একটি লিপস্টিক কিনল। এসব দেখে দোলন মুখ বেঁকিয়ে বলে ..."ন্যাকাম! নতুন বিয়ে হয়েছে তো তাই! দুদিন যাক হাড়ে হাড়ে টের পাবে।"সৌভিক হাসে ..."তুমি পাগল আছ।"
..."পাগল কেন হব! ঐ সব প্রেম ট্রেম আমার ঢং মনে হয় সব দুদিনের। "সৌভিক বলে ..."না গো প্রেম একটা অনুভূতি। মনের মানুষ যখন জীবনে আসবে তখন দেখবে আবেগ নিজে থেকেই প্রকাশ পাবে। "দোলন খুব হাসে ..."তোমার যেন তাই হয়! আমার সব আবেগ ফুরিয়ে গেছে। "
..."ফুরয় নি! মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছে। যত দিন বেঁচে আছ ততদিন আবেগ তোমার সঙ্গে থাকবে। "
..."তুমি এত ভালো ভালো কথা বল কি করে গো! কেউ আছে নিশ্চয়ই। "
..."তাকে খুঁজিনি।"

      দোলন মুখে হাত দিয়ে আশ্চর্য প্রকাশ করে বলে ..."খুঁজতে হয় বুঝি।"





     রাতে বিছানায় শুয়ে অন্ধকার ঘরে নীল রঙের নাইট ল্যাম্পের মধ্যে হঠাৎ দোলনের হাসি খুশি মুখটা দেখল সৌভিক। কি বয়স ওর মাত্র একুশ বছর। কখনও হা হা করে হাসে কখনও মন মরা হয়ে বসে থাকে। এতটুকু জীবনে যে আঘাত ও পেয়েছে তাতে হয়ত স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে কিন্তু বাঁচতে তো হবে ওকে।স্বপ্ন ছাড়া বাঁচা যায়।সৌভিকের চোখে রঙীন স্বপ্ন।মনে অনেক ভালোবাসা আজ যেন হঠাৎ ওর সব ভালোবাসা দোলনকে দিতে ইচ্ছে করল।যদি জীবনে কেউ আসেই তবে দোলন কেন নয়।একদিন সৌভিক দোলনকে বলল ..."তুমি এত বড় জীবনটা একা থাকবে?"দোলন বলল ..."কি করব বল।"
..."আমার তোমাকে ভালো লাগে। আমি সোজা কথা বলতে ভালোবাসি আমায় বিয়ে করবে। "দোলন চোখ বড় বড় করে বলে ..."আমি ডিভোর্সি!"সৌভিক বলে ..."তুমি না বললেও আমি জানি। আমার তোমাকে ভালো লাগে। আমি মন্দ লোক নই এটা আমাকে যারা চেনে তারা প্রত্যেকেই বলে। তুমি আমায় বিশ্বাস করতে পার।"দোলন চোখ নামিয়ে নিল ..."জানি।অন্য লোক না বললেও আমি জানি। তাও মনে হয় আমার উপর তোমার খুব মায়া।তাই আমায় নিয়ে এত ভাবছ। "সৌভিক বলে ..."আমার তোমাকে খুব ভালো লাগে। তোমার কথা মনে পড়লে আমার মন ভালো হয়ে যায়। তোমার সঙ্গে যতক্ষণ থাকি মনে হয় সব কিছুর সঙ্গে আমি লড়তে পাড়ব অনেক কিছু করার উৎসাহ পাই। কি জানি যদি এটাই ভালোবাসা হয় তবে ভালোবাসা বলতে পার। "দোলন বলল ..."আমি অত কথা বলতে পারি না শুধু তোমার ভালো চাই আমার কথা ভেবে তুমি এমন সিদ্ধান্ত নিও না। "সৌভিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে দোলনকে জীবন সঙ্গী করবে। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে মাকে নিয়ে যিনি প্রেমই পছন্দ করেন না সেখানে দোলনের তো ডিভোর্স হয়ে গেছে। সমাজের সঙ্গে লড়া যায় কিন্তু  বাড়ির সঙ্গে বিশেষ করে মায়ের সঙ্গে লড়া তো বেশী কঠিন  ।
       



     একদিন মনে অনেক সাহস জুগিয়ে সৌভিক মাকে বলল ..."আমি একজনকে ভালোবাসি।" মা চোখ ছানা বড়া করে বলে ..."যা ভয় করতাম ঠিক তাই ঘটালি। সৌভিক আমি কিন্তু আগে যা বলেছিলাম এখনও তাই বলব আমি মত দেব না। "সৌভিক করুণ ভাবে মায়ের কাছে এসে মাকে জড়িয়ে ধরল ..."মা আমি তোমার শিক্ষায় মানুষ হয়েছি। ভালো মন্দ বিচার করতে তুমি আমায় শিখিয়েছ তবে আজ আমার পছন্দে তোমার বিশ্বাস নেই কেন? তুমি কি চাও না আমি যার সঙ্গে ভালো থাকব তাকে আমার জীবনে আনি। "মা ছেলের কথায়  কিছুটা নরম হল..."মেয়ে দেখে যদি আমার পছন্দ না হয় তখনও তুই জেদ করবি? "
..."জেদ কেন বলছ মা। যদি না চাও তাহলে তাকে কোনও দিনও আমার জীবনে আনব না কিন্তু আমাকেও তুমি অন্য কারও সঙ্গে বিয়ের জন্য ফোর্স করবে না। "বলে সৌভিক বেরিয়ে গেল। বৌদির কাছে মা শুনল মেয়েটি ডিভোর্সি। সারা দিন মাও কান্নাকাটি করে মুখ ভার করে শুয়ে রইল। দুপুরে সৌভিক ওর সঙ্গে দোলনকে বাড়ি নিয়ে এল। রোগা পাতলা চেহারার মেয়েটা ভয়ে জড় সড় হয়ে দাঁড়িয়ে। মা ওকে দেখে ভুরু কুঁচকে রইল। দোলন ওনার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল কিন্তু উনি কোনও কথা বললেন না। সৌভিক বলল ..."মা ও দোলন। মাত্র ঊনিশ বছর বয়সে ওকে বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল শুধু ছেলেটার ভালো চাকরি দেখে। কিন্তু দিনের পর দিন অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ও ঐ বিয়ে থেকে বেরিয়ে আসে। আমি ওকে সম্মান করি। পছন্দ করি ও আমাকে খুব ভালো করে বোঝে।"সৌভিক না না ভাবে দোলনের গুণ ওর প্রতি ওর ভাবনা সবই বলে গেল মা কে। কিন্তু উনি গুম হয়ে বসে রইলেন।মাকে কোনও কথার উত্তর দিতে না দেখে দোলন বুঝল সৌভিকের মায়ের ওকে অপছন্দ।ও বললো..."আপনি নিশ্চন্তে থাকুন মাসিমা আমি সৌভিকের জীবনে আসব না।"বলে হাসি মুখে দোলন বেরিয়ে গেল। সৌভিক ভাবেনি মা এমন করবে। খুব খারাপ লাগল ওর। বলল ..."একটা বাচ্চা মেয়ের কাছে তুমি অনেক ছোট হয়ে গেলে মা। "
       




বেশ কিছুদিন পর দোকানে একদিন দোলন সৌভিককে বলল ..."তোমার দোকানে কাজ করে যা বেতন পেতাম সেখান থেকে বিউটিশিয়ান কোর্স করেছি। একটা পার্লারে চাকরি পেয়েছি। তোমার কাছ থেকে যা সাহায্য পেলাম তা কোনও দিনও ভুলব না। যদি একটা শেষ কথা রাখ.. "বলে আগ্রহের সঙ্গে সৌভিকের দিকে তাকিয়ে রইল দোলন। সৌভিক হাসল ..."তোমার শেষ কথা মায়ের ইচ্ছে মত বিয়ে।সেটা হবে না। তুমি চাও জোর করে কাউকে বিয়ে করে তার এবং আমার জীবনটা নষ্ট করি। "দোলন কোনো কথা বললো না। চলে গেল।




        দেড় বছর হতে চললো  সৌভিক একাই দোকান সামলায়। কেমন যেন চুপ চাপ হয়ে গেছে ও। দিন রাত দোকান আর বাড়ি।কথা কম বলে বাড়িতে প্রায় থাকেই না। দোলনও পার্লারের কাজে ব্যস্ত।পরিশ্রমী হওয়ায় সবাই ভালোবাসে ওকে তার উপর ওর হাতের কাজ ভালো। একদিন দোলন  পার্লারের কাজে ব্যস্ত ছিল তখন দেখে সৌভিকের মা ঢুকলেন ওদের পার্লারে। দোলন এক গাল হেসে বলল ..."মাসিমা আসুন কি করাবেন? "পার্লারের মালিক তন্দ্রাদিকেও দোলন জানাল ..."উনি আমার পরিচিত।ম্যাডাম ওনার পরিবারের আমার উপর অনেক দান। "সৌভিকের মাকে দোলন আবার খুব আপন ভাবে জিজ্ঞাস করল ..."বলুন কি করাবেন? "উনি দোলনের হাতটা চেপে ধরলেন ..."আমার আগের সৌভিককে ফিরিয়ে দিতে পারবে?"দোলন হকচকিয়ে যায়।সৌভিকের মা বললো ..."তোমাদের ছেলে মানুষ ভেবেছিলাম কিন্তু এতটা বয়স হয়েও মনের দিক থেকে পরিণত হতে পারি নি। বড় সংকীর্ণ ছিল মনটা। তোমাদের দেখে অনেক কিছু শিখলাম।এই বুড়ো বাচ্চাটাকে তোমরা মাফ করবে না!"দোলনের চোখের কোণে জল চলে এল।




       রাতে দোকান থেকে বাড়ি ফিরে সৌভিক দেখে ওর ঘরে মায়ের সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছে দোলন। ও অবাক হয়ে যায়। গত দেড় বছরে প্রায় কোনো যোগাযোগই ছিল না ওর সঙ্গে।বলে ..."তুমি? "মা বলো ..."কেন তোর মা বুঝি খুব খারাপ। দোলন আমার সঙ্গে এসেছে। "সৌভিক কিছুই বুঝতে পারে না।
 ..."আধুনিক যুগে এসে সেকেলের মানসিকতায় পড়ে ছিলাম।আমাকে তো তোরা সেখান থেকে বের করে আনলি।"বললো সৌভিকের মা।সৌভিকের মাথায় সস্নেহে হাত রাখলেন উনি..."আমি  সব সময় তোদের সুখ চাই। "সৌভিক মাকে জড়িয়ে ধরল।বুকটা হালকা লাগল হঠাৎ করেই। দোলন হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে ।সৌভিকের মা হাত বাড়িয়ে ওকে কাছে ডেকে নিলেন। দোলন জড়িয়ে ধরল ওনাকে।সৌভিক এক ফাঁকে তাকাল দোলনের দিকে দোলনের হাতটা ধরল আস্তে করে। দোলন ওর দিকেই চেয়ে। বড্ড হালকা লাগছে দুজনেরই শরীর আর মন।কবে একদিন যেন মিলে গিয়েছিল ওদের মন। টের পাইনি কেউ। আজ আবার ফিরে পেল পুরনো ভালোলাগাটা।আবার ফিরে পেল দুজন দুজনকে।এবার পাকাপাকি ভাবে মিলে যাবে দুজনে। ©Pryamboda priya
অনুভূতির আসর-Anuvutir asor facebook page 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন